মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

কোনো এক বৈশাখে
অনলাইন ডেস্ক

শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবছি, আজও নীলু আসবে দেরিতে। দেরি করে আসাটা তার রুটিন। এই তো গত ভালোবাসা দিবসে রোকেয়া হলের সামনে দাঁড়িয়ে। আসছি, আসছি দুই মিনিট বলে কাটিয়ে দেয় এক ঘণ্টা। ভেতরে ভেতরে অভিমানগুলো অতিথি হয়ে মনের দরজায় নক দেয় বারবার। নিচে নেমেই সে উল্টো আমাকেই দোষারোপ। আমি নাকি সব কিছুতেই তড়িঘড়ি করে চলি। এমন অবস্থা গিয়ে দাঁড়ায় আমার বিক্ষিপ্ত অভিমানগুলো তার অগ্নিঝরা কথায় পুড়ে যায়। আমি সরি বলে সব ঠিক করে নিই। চলতে থাকি আমাদের আগের পরিকল্পনায়।

বৈশাখের দিনটাতে ঘরে-বাইরে একই আমেজ। চারদিক মানুষ আর মানুষ। মৌমাছির মতো ছুটে চলছে। বৈশাখের আনন্দে মাতোয়ারা সবাই। বাঙালি জাতির সংস্কৃতির উৎসব। এই উৎসব জড়িয়ে আছে অনেক ঐতিহ্য। বৈশাখ এলে যেন গ্রামের কথা বেশি মনে পড়ে যায়। বৈশাখের দিন মানেই মেলা। মানুষ পাখির মতো দলবেঁধে ছুটে চলে মেলায় সবাই। মেলায় কত রকমের বাহারি খাবার। কত রকমের খেলা। তা লিখে শেষ করা যাবে না। বড়াপ্পু মোনালিসা- তার সঙ্গে কত দিন গিয়েছি বৈশাখের মেলায়। সে চুলের খোঁপার লাল ফিতা, পায়ের জন্য আলতা কিনতে যেত। সবচেয়ে বেশি পছন্দ ছিল তার হাতের চুড়ি। হরেকরকমের কাচের চুড়ি। মেলায় গেলে তার চুড়ি কিনতেই হবে। ছোট ভাইটার কথা মেলা হলেই তাকে নাগরদোলায় তুলতেই হবে। আমার কথা- মেলা হলেই গরম জিলাপি আর মিষ্টান্ন কিছু কিনে দিতেই হবে।

পেছন থেকে নীলু ডাক দিল, 'এই তুমি কি ভাবছ?'

পেছনে ফিরে নীলুর দিকে তাকালাম। চোখ যেন ফিরছে না। থমকে যাওয়া কোনো প্রবহমান স্রোত। আজ তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। প্রতিটি প্রেমিকের কাছেই তার প্রেমিকা সুন্দর। আমার কাছে আজ নীলুকে সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রার মতো লাগছে। আমার এমন থমকে যাওয়া দেখে নীলু বলল, 'এই কথা বলছ না যে। আজ তো দেরি করিনি।'

'নীলু এত তাড়াতাড়ি এসেছ? সেটা ভাবতেই তো আমি স্থির হয়ে গেছি।'

আমি নীলুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। চোখজুড়ে কী মায়া। মায়াবী হরিণের চোখ নীলুর চোখের থেকে সুন্দর হতে পারে না। ঠোঁটজুড়ে কাছে যাওয়ার আহ্বান।

'এই তুমি এখানে দাঁড়িয়ে এমনভাবে তাকিয়ে আছ? মনে হয় আমাকে জীবনে কখনও দেখনি। চলো আমাদের প্রোগ্রাম যেভাবে আগে থেকে ঠিক করেছি, সেভাবে এগিয়ে যাই।'

'আমি সৌন্দর্যের দেবী, বিশ্বসুন্দরী ক্লিওপেট্রা দেখিনি। তাই তোমাকে দেখছি মুগ্ধ নয়নে। কখনও এমন অনুভব হয়নি। আজ একটু বেশি হচ্ছে।'

কথা শেষ না হতেই নীলু রিকশা ডাকল। আজ আমাদের রবীন্দ্র সরোবরে সুমন মামার চটপটি দোকানে পান্তা-ইলিশ খাবার কথা। সেখান থেকে বিকেলে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে সিনেমা দেখার ইচ্ছে। ভালোবাসার ক্ষেত্রে বিশ্বাস আর বোঝাপড়াটা খুব জরুরি। আমার আর নীলুর ভেতর এই কেমেস্ট্রি ভালো জমেছে। আমাদের মান-অভিমান যে হয় না তা নয়। তবে সেটা অতটা স্থায়ী নয়। আমাদের বোঝাপড়াটা একটু ভিন্ন রকম।

নীলুর কথা, 'আমরা যেহেতু দুজনই শিক্ষার্থী তাই খরচের হিসাব-নিকাশ করে চলা প্রয়োজন। রেস্টুরেন্টে দুজন খেলাম; যা বিল হবে দুজন ভাগাভাগি করে দেব। বিয়ের পর এগুলো সব ফেরত নেব।' জাপানের এক বন্ধুর কাছে গল্প শুনছিলাম। তারা বন্ধুরা মিলে রেস্টুরেন্টে যাবে। খাবার শেষ বিল নেবে; যা মূল্য আসে তা ভাগ করে পরিশোধ করবে। আজকেও আমাদের একই পরিকল্পনা। রিকশায় উঠে কিছুদূর যেতেই যানজটে আটকে যাই। 'এই দাঁড়াও' বলে রিকশা থেকে নেমে গেল। কই যাচ্ছ বলতেই কোনো উত্তর না দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে একটি বাচ্চার কাছে ছুটে গেল। নীলুর এমন আচরণ আমাকে মুগ্ধ করে। আমাকে ইশরায় ডাকে। আমি বিরক্তিভাব নিয়ে কাছে যাই। রিকশা ছেড়ে দিই। কিছু বলার আগেই সে বলে, 'এই ছেলেটা সাহায্য চেয়েছে একজন পথিকের কাছে। সে কিনা সাহায্য না দিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।'

'নীলু, তুমি জান এরা বেশিরভাগ মিথ্যাবাদী হয়। তোমাকে ধোঁকা দিচ্ছে। রাস্তাঘাটে মানুষকে বেশি বিরক্ত করে।'

কথাটা বলতেই ছেলেটা হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিল। বিব্রতকর অবস্থা। নিজেকে অপরাধী মনে হলো। জানতে পারলাম, সে পাশের রাস্তার বস্তিতে থাকে। তার মা অসুস্থ। নীলু আর আমি তার মায়ের কাছে গেলাম। কাগজে মোড়ানো প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ কিনে চাল, ডালসহ বাজার করে দিলাম। আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওর দৈনন্দিন আয়ের জন্য কিনে দেওয়া হলো পাঁচ কেজি বাদাম। তাকে পরামর্শ দিল, সে যেন এই বাদাম বিক্রি করে লাভের টাকা দিয়ে মায়ের ওষুধ আর সংসারের টাকা জোগান দেয়। এই বয়সে তাকে হয়তো স্কুলে পাঠানো উচিত। কিন্তু সে সাধ্য নেই। কাজেই...।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়