মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

দাদুর মুখে সেদিনের কথা
অনলাইন ডেস্ক

দাদুর সাথে দিনিয়াত, মুমু ও রূহান সামনের সিঁড়ির উপর একসাথে বসা। রাত তখন আটটা বাজে। অনেক দিন পর দাদুর সাথে সবার একসাথে বসা। দিনে তেমন আড্ডা দেয়ার সময় হয় না। স্কুলে যেতে হয়। তাছাড়া দাদুও সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে। দাদুর সাথে দিনিয়াত, মুমু, রুহানের খুব ভালো সম্পর্ক। আজকে তাদের একটা ভালো আড্ডা জমবে। স্কুল ছুটি তাই রাতেও পড়ার বেশি চাপ নাই। দাদুও বেশ হাসি-খুশি। রাতের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে দাদু (দিনিয়াত, মুমু ও রূহানকে নিয়ে) সামনের সিঁড়িতে বসেছে। জোৎস্নামাখা রাত, খোলা আকাশ কার না ভালো লাগে। চাঁদমামার কিরণ মনকে প্রশান্ত করছে। দাদু সবাইকে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছো দাদুমণিরা? দিনিয়াত, মুমু, রুহান বললো, আমরা ভালো আছি দাদুভাই। দাদু বললো আমিও অনেক ভালো আছি। দাদু বললো, আজকে আমার খুব ভালো লাগছে। অনেক দিন পর তোমাদের সাথে অনেক ভালো সময় কাটবে।

দাদু হুট করে ঘরের ভেতর থেকে বাদামের একটি প্যাকেট এনে সবাইকে বললো, এই নাও তোমরা বাদাম খাও আর মজার মজার গল্প বলো। দাদুও সবার সাথে বাদাম খেতে লাগলো। এর মধ্যে দিনিয়াত বললো আচ্ছা দাদু বলো তো তোমাদের আগেরকার সেই দিনগুলো বেশি আনন্দময় ছিলো, না আমাদের বর্তমান সময়টা বেশি ভালো মনে হয় তোমার কাছে। মুমু বললো, শোনো দাদু তোমাদের চেয়ে আমাদের বর্তমান সময়কার মানুষের জীবন অনেক ভালো কাটে। রুহান বললো ঠিক বলেছো মুমু।

দাদুদের সেই সময়ে এতো রাস্তা-ঘাট ভালো ছিল না। পায়ে হেঁটে হেঁটে পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হতো সবাই। মুমু উঠে দাঁড়ালো শোনো দাদু ভাই ওরা সঠিক বলেছে। তোমাদের শৈশব দাদু তেমন আনন্দে কাটেনি। মোবাইল ছিলো না, ইন্টারনেট ছিলো না। কত কষ্টে দিন কাটতো দাদু। তাই না বলো? দাদু মিটিমিটি হাসতে লাগলো। নাতিদের কথা সব-ই শুনতে লাগলো। দাদু কোনো কথা বললেন না। ক্ষণিক বাদে দাদু বললো আর কোনো তোমাদের কথা আছে? দিনিয়াত বললো, হ্যাঁ দাদু, আছেই তো। তোমাদের যুগে এতো ঔষধ ছিলো না। অনেক রোগী মারা যেতো চিকিৎসার অভাবে। তোমাদের শৈশবে কিংবা তখনকার সময়ে তোমরা আমাদের মতো দোকান-পাটে এতো আড্ডা দিতে পারতে না। তেমন দোকান পাটও ছিলো না। খুব কষ্টে তোমাদের সময় কাটতো দাদু। আমি কি মিথ্যা বলছি দাদু? দাদু বললো আর কি কোনো কথা আছে কারো? রুহান বললো হ্যাঁ দাদু আমি একটু বলি, তোমাদের যুগে এতো দালান-কোঠা দেখতে পারোনি। এতো বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়িও দেখতে পারোনি দাদু ভাই। আমরা এগুলো অহরহ দেখতে পারি। এবার বলো দাদু তোমাদের তখনকার সময় ভালো ছিলো? না এখনকার আমাদের সময়টা বেশি ভালো। বলো দাদু বলে ফেলো। দাদু বললো, তোমাদের কথা এবার শেষ হয়েছে? সবাই একসঙ্গে বললো, হ্যাঁ দাদু শেষ হয়েছে। তাহলে শোনো এবার। আমাদের শৈশব ছিলো মজায় ভরপুর। সাজ সকালে ধানক্ষেতে ঘুরতাম মন খুশিতে। খেজুরের রস আনতে গাছি ভাইয়ের কাছে ছুটে যেতাম। বকুল ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যেতাম। শাপলা তুলতে বিলে ছুটে যেতাম। কতই না আনন্দ হতো। আর এখনকার সময়ে তোমরা অনেকে শাপলাভরা বিল দেখতেই পারোনি। মামার বাড়ি আগের মতো এখনকার সময়ে যাওয়া হয় না তোমাদের। খালে-বিলে মাছ ধরতাম। জাল টেনে টেনে মাছ ধরতাম। কতই না মাছ। সেই মাছের কথা বললে তোমাদের বিশ্বাস করতেই মন চাইবে না। তোমরা কয়টা মাছের নাম জানো? দিনিয়াত, মুমু, রুহান মুচকি হাসি দিলো। রুহান বললো না দাদু, বেশি মাছের নাম জানি না। খালে-বিলে এখন মাছ কম দেখা যায়। দিনিয়াত বললো, আরো শুনতে চাই দাদু। দাদু বললো, হ্যাঁ নিশ্চয় শুনবে দিনিয়াত। আমাদের যুগে আমরা নির্ভেজাল খাদ্য খেতাম। রোগ-বালাই কম ছিলো, ঔষধও কম ছিলো। এখন সব খাবার ভেজালে ভরপুর। ওহ্ ভালো কথা, তখন এতো মোবাইল-ফোন না থাকলেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নিয়েছি। সবার মাঝে আন্তরিক প্রীতি বজায় থাকতো। এখন যোগাযোগের এতো মাধ্যম থাকার পরেও তোমরা ক’জনের খোঁজ নিতে পারছো? আমাদের যুগে সবার মাঝে বন্ধুত্ব ছিলো। ঝগড়া-হানাহানি তেমন ছিলো না। এখন তো ভাইয়ে-ভাইয়ে দাঙ্গা দেখা যায় আরো কত সমস্যা। মুমু বললো, ঠিক বলেছো দাদু, আসলেই সত্য। রুহান বললো, আচ্ছা দাদু দেখেছো আমাদের গ্রামটা কতনা সবুজ-শ্যামল। তোমাদের সময়কার গ্রামের সৌন্দর্য্য নিয়ে আরেকটু বলবে আমাকে দাদু ভাই? শোনো রুহান গাছপালা এখন অনেক অনেক কমতে শুরু করেছে। মানুষ নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করে চলছে।

আমাদের সময়ে চারদিকে এতো গাছপালা ছিলো দেখলে অবাক হয়ে যেতে। কী মনোরম পরিবেশ আহ! এখনকার মানুষ বায়ু দূষণ, পানি দূষণের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। মাটি দূষণ তো চলছেই। গাছে গাছে ফল-ফলাদি আগের চেয়ে কমে আসছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে আমাদের কান ঝালাপালা হয়ে যেতো। তোমরা তো অনেকে সেই পাখিদের নামও বলতে পারবে না। পাখিদের আনাগোনা আগের চেয়ে খুবই কম চোখে পড়ার মতো। অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে যেতে চলছে। আগেকার সেই নির্ভেজাল পরিবেশটা হারিয়ে যেতে বসছে। সবুজ-শ্যামল রূপ আগের মতো ফিরিয়ে আনা সবার দায়িত্ব। মুমু বললো, দাদু ভাই সবমিলিয়ে তোমাদের সেই সময় অনেক ভালোই কেটেছে তাই না?

দাদু বললো, হ্যাঁ, আমাদের সোনালি সময়টা অনেক মধুর ছিলো। সকলের মন-মানসিকতা খুব ভালো ছিলো। কারো মনে কেউ আঘাত দিতো না। কারো মনে তাই অশান্তি ছিলো না। সবার মন সহজ-সরল ছিলো। এখনকার মতো সবাই সেসময় ধনী না থাকলেও কিংবা এতো বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি না থাকলেও আমরা কুঁড়েঘরে বসেও শান্তি সুখের দেখা পেতাম। তখনকার সময় আমরা অযথা সময় ব্যয় করতাম না। প্রচুর পরিশ্রমী ছিলাম আমরা। তোমরা তো কেউ কেউ বেশ মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছো। আমাদের তখনকার সময়ে বিকেল হলে দখিনা হাওয়ায় সবুজ ঘাসের উপর আড্ডা দিতাম, তবে বাজে কোনো আড্ডা ছিলো না। এখনকার মতো এতো দোকানপাট, বাজার না থাকলেও সে সময়ে বিকেল হলে খেলার মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম, রাখাল ভাইয়ের সাথে গল্প করতাম। সেই খেলার মাঠ, সেই ঘুড়ি আজ আগের মতো দেখা যায় না। আমাদের তখনকার সময়টা অনেক আনন্দে কেটেছে। এখনকার মানুষের জীবনমান উন্নত হলেও আমাদের পুরানো সেই দিন সোনালি দিন মন থেকে মুছবে নয়। অনেক ভালোবাসি সেই দিনগুলোকে। দিনিয়াত বললো আসলেই দাদু ঠিক বলেছো। আগে জানতাম না তোমাদের তখনকার জীবনযাপন কেমন ছিলো। খুব ভালো লাগছে প্রিয় দাদু ভাই। মনে হয় সে যুগে আমরা আবার ফিরে যাই। কিন্তু সময় ও ¯্রােত কারো জন্যে অপেক্ষা করে না দাদু। দিনিয়াত বললো এক ঘটনা শুনতে শুনতে রাত অনেক হয়েছে। মুমু বললো ঠিক বলছো দিনিয়াত। রুহান বললো, দাদু ভাই রাত অনেক হয়েছে। চলো ঘরে যাই। তোমাদের শৈশব আমাদের অনেক ভালো লেগেছে। দাদু বললো চলো এখন গিয়ে ঘুমাই। আবারো এ রকম সময় পেলে গল্প জমবে। চলো এখন ঘুমাই।

* লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়