প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
শোলকা ভয় পায় মনে মনে। কিন্তু প্রকাশ করে না। চা-সিগারেট একসাথে খাচ্ছিলেন ওসি। মাথা নিচু করে বসে আছে শোলকা। ওসি বলে শোন মেয়ে, নিপুসহ তুমি নুপুরকে অযথা কেন খুন করতে গেলে?
- না স্যার আমি নুপুরকে খুন করতে যাবো কেন? ও আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসার পর থেকে একসাথেই চলেছি। ঘুরেছি। কিন্তু রাতে সে এভাবে মারা যাবে আমি কল্পনায়ও আনতে পারিনি।
- আমি যে কথা বলেছি সে কথা উত্তর দাও। কথা ঘুরাচ্ছ কেন?
- না স্যার কথা ঘুরাচ্ছি না। আপনি চাইলে গ্রামে গিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন। আমি আর নিপুর বিরুদ্ধে কেনো অপবাদ আছে কিনা?
- তুমি নিপুকে ভালোবাসো? শোলকা ভাবে, হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন কেন? নিশ্চয় নিপু কিছু বলেছে। তাইতো তিনি হুট করে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করছেন। একটু চুপ থেকে শোলকা বলে, জি¦ স্যার।
- নিপুকে বিয়ে করতে চাও?
- আগপিছ না ভেবেই বলে, হ্যাঁ।
- কিন্তু তোমাদের ধর্ম তো তা মেনে নেবে না। সমাজও নেবে না।
- স্যার আমি ওকে ভালোবাসি। যে কোনো মূল্যে আমি তাকে চাই। আমি তাকে ছাড়া বাঁচবো না।
- এজন্যেই তো বলি। তুমি আর নিপু নুপুরকে খুন করেছ।
- আমরা নুপুরকে খুন করতে যাবো কেন?
- কারণ নিপু নুপুরকে পছন্দ করে। তুমি জান। তোমার ইচ্ছেতেই নুপুর খুন হয়েছে। আমি ভুল বলেছি?
- না স্যার। আমি নিপুকে ভালোবাসি ঠিক। কিন্তু নুপুরকে খুন করতে চাইনি।
- তবে কেন খুন করেছ?
শোলকা এবার হতভম্ব হয়ে পড়ে। নিরব হয়ে যায়। শোলকা ভাবে কিভাবে তিনি ওসব বুঝলেন? তাহলে নিপু সব বলে দিয়েছে? আমার মাথা ঘুরাচ্ছে স্যার আমাকে যেতে দিন।
- শোন। আমার কাছে কোনো কিছু লুকিয়ে লাভ নেই। বরং সত্য কথা বলো আমি তোমাদের সেভ করার চেষ্টা করবো। আর সত্য যদি নাও বলো তবে আমাকে একান্তে কিছু সময় দাও। তুমি ও নিপু দুজনেই সেভ হয়ে যাবে।
ওসির কথা বুঝতে পারে না শোলকা। শোলকা বলে, কী সময় স্যার? সময়তো দিলামই।
- এভাবে নয় একান্তে সময় দিতে হবে। তুমি কি বুঝ? আগুনের কাছে মোম গেলে গলে যায়। তাছাড়া তোমাদের দুজনেরই মঙ্গল হবে। তুমি ভেবে আমাকে আগামী দিন জানাবে। না হয় ঝামেলা আরো বাড়বে। এবার শোলকা বুঝতে পারে ওসি তার কাছে কী চায়। বিষয়টি ভেবে মনে মনে অস্থির হয়ে উঠে শোলকা।
- আর ইচ্ছে করলে এখনও সময় দিতে পারো।
শোলকা ভাবে। যদি কিছু সময় দিলে জীবন রক্ষা হয়। ঝামেলা থেকে বাঁচা যায় তবে দিয়ে দিই সমস্যা কী? যা হবার হবে। এটাতো বিশদ জীবনে ছোট্ট একটা বিষয়। যা সময়ের আবর্তে ভুলে যাবো। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় সে। শোলকা বলে, আপনার ইচ্ছে স্যার। আমি শুধু নিপুকে চাই। যে কোনো বিনিময়ে। আর স্যার নুপুর হত্যা মামলায় অযথা আমাদের ফাঁসাবেন না।
ওসির বসার সিটের পেছেন একটা দরজা আছে। সেখানে ছোট্ট একটা কামরা আছে। মাঝে মাঝে ওসি সেখানে রেস্ট নেন। শোলকাকে ওই রুমের দিকে যেতে ইশারা করেন। শোলকা দরজার বাহিরের সিটকারি খোলে ভেতরে ঢুকে দরজা কিছুটা আড়াল করে দেয়। ওসি চেয়ার থেকে উঠে। দরজায় গিয়ে কনেস্টেবলকে বলে কেউ এসেছে?
- জ্বি স্যার। একটা ছেলে এসেছিলো। আমি বলেছি, কিছুক্ষণ পরে আসতে।
- ঠিক আছে। আমি মেয়েটার সাথে একটা হত্যা মামলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি। কেউ আসলে দশ মিনিট অপেক্ষা করতে বলবে। আমি আসল রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। তুমি এখানে থাকো। কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।
- জ্বি স্যার। আপনি যান। আমি আছি স্যার।
ভেতর দিয়ে এবার সিঁটকিনি আটকে দেয় ওসি। তারপর পাশের গোপন কামরায় ঢোকে। শোলকা মাথা নিচু করে বসে আছে। ঠিক দশ থেকে পনের মিনিট পর বেরিয়ে আসে দুজন। শোলকা টেবিলের সামনে বসে। ওসি এসে চেয়ারে বসে। শোলকাকে বলে মাঝে মাঝে এভাবে কিছু সময় দিয়ে যেও। সবসময় নয়। মাঝে মাঝে হলেই হবে।
- ঠিক আছে স্যার। আর আপনি আমাদের মুক্ত করুন। আর নিপুকে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। আমি আপনার সব শর্তে রাজি।
- তো ঠিক আছে। তুমি চলে যাও। দেখি বিষয়টা কী করা যায়।
শোলকা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিপু এগিয়ে আসছে। শোলকাকে জিজ্ঞেস করে, কী কথা হয়েছে? কোনো উল্টাপাল্টা কথা হয়েছে কি না জানতে চায় নিপু।
- না। স্যার বলছে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের ঝামেলায় ফেলবে না। আমি কথা বলেছি। কোনো সমস্যা হবে না। যাক, তাহলে ঠিক আছে। কাকা কাকিকে ডেকে বলে, চলুন। ঝামেলা সারছে। (চলবে)
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]
* লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]