প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কিছু সময় নিরবতায় কাটে সবার। নিপু অপেক্ষায় থাকে কখন ওসির রুম থেকে লোকজন বেরিয়ে আসবে। লোকজন বেরিয়ে আসলেই নিপু ওসির রুমে ঢুকতে পারবে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে। চারিদিকে অন্ধাকার নেমে আসছে। বিপদগ্রস্ত মানুষ অন্ধকারকে ভয় পায়। অন্ধকারে জীবনের অনেক কিছু ঘটে যায়। যা প্রত্যাশিত বা অপ্রত্যাশিত। নিপু শোলকা একসাথে বসে আছে। মসজিদে মাগরিবের আজান পড়েছে। গোলঘরের লাইট জ্বলে উঠে। তবুও কোথায় যেনো আলো নেই। নিপু একটু আলোর প্রত্যাশা করে। আর ভাবে জীবনের কোন্ প্রান্তে এসে জীবন খুঁজে পায় মানুষ? মানুষ ভুল করে কেনো? ভুল মানুষকে কতোটা বিপদে ফেলে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সে। সময় গড়াচ্ছে। শোলকার বাবা এখন বিরক্ত হতে শুরু করেছে। পরিমল বৈদ্য কৃষক মানুষ। তবে কয়েকটা গরু লালন-পালন করে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় গরুগুলোকে পানি খাইয়ে গোয়ালঘরে নিয়ে তারপর সন্ধ্যায় বের হয়। কিন্তু আজ সব ওলট-পালট হয়ে গেছে।
পরিমল ভাবে যদি এমন হয় তবে বিকেলে না ডেকে সন্ধ্যার পর ডাকলেই তো হতো। গরুগুলোকে ঘরে নিতে পেরেছে কি না কে জানে? দাদাকে বলে এসেছি। যদি রাত হয় যেনো গরু গোয়াল ঘরে নিয়ে বেঁধে রাখে। তখন রাত আটটা। ওসির রুম থেকে লোকজন বেরিয়ে পড়ছে। সবার মুখে হাসি। মনে হয় তাদের পরিকল্পনা বা ইচ্ছে সফল হয়েছে। এবার নিপু উঠে দাঁড়ায়। হেঁটে যায় ওসির রুমের দিকে। ওসির রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে, আসবো স্যার?
- এসো এসো।
- আরেকটা বড় ঝামেলায় পড়েছি। এজন্যে তোমার সাথে কথা বলতে সুযোগ পাচ্ছিলাম না। কী করেছিস বল।
- এই নেন স্যার। এখানে বিশ হাজার টাকা আছে। আমি ছাত্র মানুষ বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে ঋণ করে টাকাটা এনেছি। আমার স্যার কোনো দোষ নাই। আমারে ঝামেলায় ফেইলেন না। আর আমার কাকাতো বোন ও কাকাণ্ডকাকী সবাই এসে গোলঘরে অপেক্ষা করছে।
- নিপু, একটা মার্ডার মামলা মাত্র বিশ হাজার টাকায় শেষ হয়? যাও মিয়া। পরে পারলে আরো কিছু ব্যবস্থা করে আইনো। আর শোলকাকে পাঠাও। তার বাবা-মাকে আসতে হবে না। তাদেরকে গোলঘরেই বসতে বলো।
- ঠিক আছে স্যার। তাহলে আসি?
- ঠিক আছে। পরে আরো কিছু টাকা ম্যানেজ করে নিয়ে এসো।
- স্যার। আমি চেষ্টা করবো। আমিতো আর চাকুরি করি না। ছাত্র মানুষ। টাকা পামু কই? আপনি বরং এর মধ্যে সারাইয়া দিয়েন।
- আচ্ছা যাও যাও। দেখি কী করা যায়।
নিপু ওসির রুম থেকে বেরিয়ে আসে। নিপু মনে মনে ভাবে কী আজবরে বাবা! ওসি সন্দেহভাজন আসামীর কাছ থেকে টাকা খায়? খাইবো না ক্যান? যে দিন পড়ছে? এখন টাকাই সব। ভাবতে ভাবতে গোলঘরের সামনে এসে হাজির হয় নিপু।
- শুনেন কাকা। আপনি এবং কাকি এখানে বসেন। আমি ওসির রুমে শোলকাকে দিয়ে আসি। ওসি স্যার কথা বলবে। তারপর আমিও আপনাদের কাছে চলে আসবো। নিপু ওসির রুমে শোলকাকে রেখে গোলঘরে চলে আসে।
নিপু বলে, কাকা নুপুরের ঘটনায় শোলকাকেও কিছু জিজ্ঞেস করবে মনে হচ্ছে। তাই ডেকেছে। খুব বিরক্তিকর বিষয়। আর আমাকে বলেছে আপনাদের কাছে থাকার জন্যে। তাকে যেনো সাথে করে নিয়ে যাই। দেখি কী হয়। অপক্ষো করি।
ওসি শোলকার দিকে না তাকিয়ে বসতে বলে। কলিং বেল চাপে। বাইরে থেকে কনেস্টেবল ছুটে আসে। জ্বি স্যার। আরো দুই কাপ চা দাও। শোলকা নিষেধ করে। আমি খাবো না স্যার।
ওসি শোলকার দিকে না তাকিয়ে বলে, আরে খাও খাও। যা হবার তো হয়েই গেছে। এখন আর দুশ্চিন্তা না করাই শ্রেয়।
- না স্যার আমি খাবো না। আপনি খান।
শোলকা এ বছর দশম শ্রেণীতে উঠেছে। স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়ে। ছাত্রী হিসেবেও খুব ভালো। ক্লাসে এক থেকে দশ এর মধ্যে রোল নম্বর থাকে। এ বয়সের মেয়েরা সাধারণত হালকাণ্ডপাতলা হয়। যদিও বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ বাচ্চারাই ভারি ও পেটি হয়ে যায়। শোলকা অবশ্য একটু পাতলা গড়নের। যে কারো ভালো লাগার কারণ হতে পারে। স্কুলেই অনেকগুলো প্রেমের অফার জুটেছে বড় ভাইদের কাছ থেকে। আর গ্রামের আশাপাশে তো অভাবই নেই। ওসিকে চা দিয়ে যায় কনেস্টাবল।
এবার ওসি প্যাকেট থেকে প্যাকেট খুলে শলাকা সিগারেট নেয়। এক হাতে চা। চুমুক দিতেই চোখ পড়ে শোলকার দিকে। ওসি চায়ে চুমক দিতে দিতে ভাবনায় পড়ে যায়। বাহ! মেয়েটাতো ভারি মিষ্টি!
- কী নাম তোমার?
- জি¦ স্যার শোলকা।
- কোন্ ক্লাসে পড়ো?
- আগামী বছর এসএসসি দিবো।
- ভালো ভালো। তুমি তো খুব সুন্দর। নিপুকে ভালোবাসো? আর ওকেই ভালোবাসতে হবে কেনো? শোলকা জবাব দেয় না।
ওসি সিগারেটে আগুন ধরায়। আর কনেস্টেবলকে ডেকে বলে আমার অনুমতি ছাড়া আর কেউ যেনো রুমে না ঢুকে। বাহিরে তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে। (চলবে)
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]
* লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]