মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

রোদে পোড়া পালিশ
অনলাইন ডেস্ক

(পূর্ব প্রকাশিতের পর) ॥ নয়.

পরদিন বিকেলে নিপু থানায় হাজির। অবশ্য এর আগেই উপস্থিত হয় শোলকা ও তার বাবা পরিমল বৈদ্য। সাথে মা-ও এসেছে। পুলিশ কেনো একটা মেয়েকে থানায় ডেকে আনবে? চিন্তার যেনো অন্ত নেই তাদের। আমার মেয়েটাকে কেনো তারা প্যাঁচে ফেলতে চায়? ভগবান তুমি রক্ষা করো। আমার সহজসরল মেয়েটার যেনো কোনো বিপদ না হয়। রক্ষা করো ভগবান, রক্ষা করো মনে মনে বলছিলেন পরিমল। থানার গোলঘরে শোলকা ও তার বাবা-মা মিলে অপেক্ষা করছে। গোলঘর মানে যে অর্থে বুঝা যায় তা কিন্তু নয়। গোলঘর মানে হচ্ছে, থানায় কোনো বিষয় মীমাংসার জন্যে যে ঘরে বসা হয়। দেশের প্রায় প্রতিটি থানাতেই এমন ঘর আছে। যাকে গোলঘর বলা হয়। অনেক সময় মানুষ এ ঘরে বসে অপেক্ষা করে। বিশ্রাম নেয়। তবে এ ঘরে নিয়মিত বিভিন্ন অভিযোগের মীমাংসা বা সমঝোতা হয়। এমনও হয় কখনো কখনো কোনো কোনো ঘটনা এখানে বসেই ধামাচাপা দেয়া হয়। যদি গোলঘরের কখনো জবান খুলে যায়। তবে দুদক শুনলে অনেক পুলিশ অফিসারের চাকুরি না-ই হয়ে যাবে।

কখন ওসি তাদের ডাকবে? নিপু গোলঘরের দিকে দৃষ্টি যেতেই সবাইকে দেখতে পায়। তাই থানার ভেতরে না গিয়ে গোলঘরের দিকে আসে।

শোলকার বাবা পরিমল বৈধ্য বলে, কিরে? তুই থানায় কেনো? আমাকে বললেই তো একসাথে আসতে পারতাম।

- না কাকু আমাকে আজ দুপুরে ওসি ফোন করেছে আসার জন্যে। তাই আসলাম। আপনারা?

- আমাকে গতরাতে ফোন করেছে শোলকাকে নিয়ে আসার জন্যে। ওসি নিজে ফোন দিয়েছে। কী কথা আছে নাকি শোলকার সাথে। মেয়ে মানুষ একা ছাড়তে পারি না। তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি। তোকে ডেকেছে কেনো?

- আমি জানি না। ঠিক আছে। আমি গিয়ে দেখা করে আসি। আর শোন শোলকা, পুলিশের সাথে উল্টোপাল্টা কোনো কথা বলার দরকার নাই। যা যা প্রশ্ন করে তার যথাযথ উত্তর দিস। অতিরিক্ত কথা বলার দরকার নাই। আর না হয় কথার ফাঁকে প্রশ্ন করে তোকে ফাঁসাতে চাইবে। পরে ফেসে যাবি। সতর্ক থাকিস। হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ে শোলকা। শোলকার মুখ দিয়ে যেনো কেনো কথা বেরোয় না। স্তব্ধ তার মন। নিস্তব্ধ পৃথিবী। তবে নিপুর সাথে নিয়মিত কথা বলার চেষ্টা করে সে। নিপু কথা বলতে চায় না। আজ যেন শোলকাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায় নিপু। সে স্বপ্ন দেখে একটা নতুন পৃথিবীর। একটা নতুন ঘরের। যে ঘরে অফুরন্ত সুখ আর সুখ। থাকবে মান-অভিমান আর সীমাহীন ভালোবাসার আহ্লাদ।

নিপু ওসির রুমে প্রবেশ করে। অনেক মানুষের ভিড়। ওসি নিপুকে দেখে বলে, বাহিরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো। সাথে সাথে নিপু বের হয়ে থানার সামনের মাঠে চলে আসে। ওসির রুমে ভিড় হওয়ারও কারণ আছে। আজ ভোরে আকানিয়া গ্রামের বিলের মাঝে একটা যুবকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন। অর্থাৎ পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সকালেই যুবকের পরিচয় পাওয়া গেছে। নাম ফকরুল ইসলাম। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। সাচুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আগামীর ভবিষ্যৎ। শুধু ছাত্রলীগ নয়, ছেলেটা এতো ট্যালেন্ট যে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বও তার হাতে চলে আসতে পারে। অল্প সময়ে খুব ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেক ছাত্র তার অনুসারী। চমৎকার কথা বলতে পারে। সপ্তাহখানেক আগে সাচুয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে একটা সমাবেশে চমৎকার বক্তব্য উপস্থাপন করে। অবশ্য নীতিবাক্য পাঠ করেছে বেশি। যা সাধারণ ছাত্রদের মনে দাগ কাটে। বর্তমানে ছাত্র রাজনীতিতে অছাত্র চেয়ার দখল করে আছে। প্রকৃত ছাত্ররা রাজনীতিতে আসতে চায় না। যেসব ছাত্র ক্লাসরুমের শেষে বসে আড্ডা মারে ওরাই একসময় রাজনীতির প্রথম সারিতে চলে আসে। তবে সামনের বেঞ্চ থেকে দু-একজন আসলে অর্থাৎ মেধাবীরা আসলে পেছনে থাকা ছাত্ররা স্বভাবতই পিছিয়ে পড়বে। এছাড়া ওইদিন বক্তব্যে স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধেও কিছু কথা বলেছিলো ফকরুল। এসব কথা তার জীবনের জন্যে যমদূত হয়ে দাঁড়াবে-কে ভেবেছিলো? মূলত স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার নির্দেশেই ফকরুল মার্ডার। এখন উপজেলার শীর্ষ ক’জন রাজনৈতিকের সাথে ওসির বৈঠক চলছে। তাই নিপুকে ফিরিয়ে দিয়েছে ওসি। অবশ্য ওসি সরাসরি টাকা নিবে কিনা সে বিষয়ে দ্বিধা আছে। নিপু আবার ফিরে আসে গোলঘরে। সে শোলকার কাছেই বসে। কাকাণ্ডকাকীর সন্দেহ করার অবকাশ নেই। সন্দেহ করার কোনো কারণও নেই। অবশ্য শোলকা জানে তার মনের কী বাসনা। কতো স্বপ্ন নিপুকে ঘিরে। তাই তো শোলকার কাছে নিপুর বসাটা তার জন্যে বড় প্রাপ্তিই বটে। নিরবতা ভেঙে শোলকা বলে, আমাকে ওসি কেনো ডেকেছে?

- আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে তুমি সাবধানে জবাব দিও। আবারো বলছি, বাড়তি কোনো কথা বলার প্রয়োজন নাই।

ছোট্ট স্বরে শোলকা বলে, পুলিশ কিছু বুঝতে পেরেছে? শোলকার কথা নিপু বুঝতে পারেনি। বাবা-মা যেনো কোনো মতেই শুনতে না পায় সে জন্যে এতো ছোট করে বলা। কিন্তু নিপুতো শুনতে পায়নি। এবার আরো একটু সাউন্ড বাড়িয়ে বলে পুলিশ কিছু বুঝতে পেরেছে?

নিপু বলে, জানি না। তবে সন্দেহ করছে। মনে রাখিস, বাড়তি কিছু বলিস না। না হয় দুজনের জীবনই শেষ হয়ে যাবে। অথচ আমাদের জীবনতো এখনো শুরুই হয়নি। প্রয়োজনে শুভকে ফাঁসিয়ে দিবো। কিছু করার নাই। নিজে বাঁচলে বাপের নাম।

- আচ্ছা ঠিক আছে। তাছাড়া আমি কী বলবো? কিছু বুঝি না। প্যাঁচালেই হবে নাকি। পুলিশ যতই ঘ্যানর ঘ্যানর করুক আমি কিছু না জানলে কি বলবো?

তাদের এ ছোট ছোট কথা এক পর্যায় শোলকার বাবার কানে যায়। তারা কিছু বলছে আন্দাজ করতে পারে। কিন্তু কী বলছে বুঝা যাচ্ছে না।

- এই তোরা কি বলাবলি করচ? কোনো সমস্যা হইচে নাকি?

নিপু বলে, না কাকা। শোলকাকে বলেছি, পুলিশের সাথে যেনো আবল-তাবল কিছু না বলে। উল্টাপাল্টা কিছু বললে সমস্যা বাড়তে পারে। পুলিশ বলে কথা।

- আচ্ছা ঠিক আছে। জানি না। ভগবান কী বিপদ দিলো। রক্ষা করো ভগবান। তোমার কৃপা চাই। দয়া চাই। (চলবে)

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]

লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়