প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
নিপুর কথাগুলো পুলিশের দুজন সদস্যই খুব মনোযোগ সহকারে শোনে। কথার মাঝে প্রশ্ন না করে বলার সুযোগ দেয়। এতে পুলিশের সুবিধা হলেও বিপদ বেড়ে গেলো নিপুর। পুলিশের সন্দেহ আরো গাঢ় হতে শুরু করলো।
- কিন্তু তুমি অযথা নুপুরকে খুন করতে গেলে কেনো? শুভর সাথে সম্পর্ক হলেই বা সমস্যা কী ছিলো?
- না আমি তো খুন করিনি।
- চলে এসেছো আসল কথায়। তবে খুন করেছে কে?
- আমি জানি না।
- তুমি জানো। তুমি খুন না করলেও কেউ না কেউ তাকে খুন করেছে। তুমি সেটা জানো। তাছাড়া নুপুর যেভাবে খুন হয়েছে তাকে একা কেউ খুন করেনি। তোমার সাথে আরো অনেকেই ছিলো।
নিপু মনে মনে ভাবে তারা অযথাই কেনো আমাকে খুনি ভাবছে? আমি কি এমন কোনো কথা বলেছি যে কথায় তাদের মনে হচ্ছে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে আমার সম্পৃক্ততা আছে। অপরদিকে পুলিশ প্রায় নিশ্চিত নুপুর হত্যাকাণ্ডের সাথে নিপু জড়িত। কিন্তু প্রমাণ পাওয়া যাবে কীভাবে? তাকে কীভাবে আটক দেখানো যায় ভাবে ওসি। আরেকটা সিগারেটে আগুন ধরায় অফিসার ইনচার্জ। টেনশন টেনশন চেহারায় তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের দিকে তাকায়।
- তুমি কী মনে করো মেহেদী?
- স্যার। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে নিপু জড়িত। আমি শতভাগ নিশ্চিত। আর তাকে আটক করে কোর্টে সোপর্দ করুন। পরে রিমান্ড চাইতে হবে। দেখবেন মাইরের ডরে সব বেরবের করে বলে দিবে।
মনে ভয় ধরে নিপুর। পুলিশ পারে না এমন কোনো কাজ নেই। দেখি পুলিশকে কিছু বলে সুযোগ নেয়া যায় কি না। অবশ্য দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টার কথোপকথনে নিপুর মনের ভয় অনেকাংশেই কমে গেছে। পুলিশের সাথে স্বাভাবিক আচরণের ভানও ধরতে শিখে গেছে। এবার বুকে সাহস নিয়ে নিপু ওসিকে উদ্দেশ্য করে বলে, স্যার আমি কি বাড়ি যেতে পারি?
- শালা বাড়ি যাওয়া লাগবে না। তোকে চৌদ্দশিকে ঢুকাবো।
- স্যার আমার অপরাধ কী?
- ও তুমি বুঝো না। খোকা বাবু? নবযাতক যেনো!
- স্যার কথা দিচ্ছি কাল বিকেলে এসে আপনার সাথে দেখা করবো। সামনে আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। আমার জীবনটা এখানেই শেষ করবেন না। জীবনকে উপভোগ করার একটু সুযোগ দিন। আর আমাকে প্যাঁচিয়ে কী হবে? আমি যতো দূর জানি সবটুকুই বলেছি।
ওসি ভাবে কী মছিবত। একটা হত্যার অন্যতম সম্ভাব্য আসামী কী দেদারছে কথা বলে যাচ্ছে। আচ্ছা শোন, কাল বিকেলে তুমি আসবে। তবে শোলকাকে সাথে করে নিয়ে আসবে। আর কিছু মালপানি নিয়ে আইসো। গত দুই দিনে পকেটে কোনো মালপানি ঢুকে নাই।
- স্যার হেই কথাইতো কইচি। মালপানি নিয়া আসমু। কিন্তু শোলকাকে কেনো আনবো?
- শোলকার সাথে কথা আছে। মামলার স্বার্থে ওর সাথে কিছু কথা বলতে হবে। তার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবো আমি নিশ্চিত।
- আমি পারবো না স্যার। আপনার প্রয়োজনে আমার কাকুকে ফোন করুন। তিনি নিজেই নিয়ে আসবেন।
- আচ্ছা। তাহলে তোমার কাকুর মোবাইল নম্বর দাও।
- জিরো ওয়ান...
- ওকে। তুমি তাহলে যাও। তবে কাল বিকেলে নিশ্চয়ই আসবে। কথার হেরফের যেনো না হয়। তাহলে তোমার খবর আছে। তোমার চৌদ্দগোষ্ঠীরও খবর আছে।
নিপু থানা থেকে বেরিয়ে পড়ে। হঠাৎ সখিনা বিবির কথা মনে পড়ে। সখিনা বিবির আত্মহত্যার পেছনের কারণ। কার প্ররোচনা। সখিনা বিবির উপর এতো চাপ যা শুধু চাকুরি কারণে করতে হয়েছে বলে মনে করে নিপু। যদিও সে ঘটনা আপনাআপনি চাপা পড়ে গেছে। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন পেছনের আমলনামা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। স্বচ্ছ আয়নায় তাকে যেমনি নিজের মুখ দেখা যায়। রিক্সা যোগে বাড়ি পৌঁছে নিপু। বাড়ি আসার পর নিপুর বাবা জানতে চায়, বিকেল থেকে তোকে ফোনে পাচ্ছি না। মোবাইল বন্ধ কেনো?
- থানায় ডেকেছিলো। ওসির সাথে কথা বলেছি। তিনি বারবার আমাকে প্যাঁচাচ্ছেন। তারা বলতে চায় আমি নাকি নুপুরকে খুন করেছি। বাবা বিশ্বাস করুন আমি খুন করিনি।
- পৃথিবীর কোনো পিতা-মাতাই সন্তান খুন করতে পারে তা বিশ্বাস করে না। আমিও করি না।
নিপুর কথা শুনে মাও ছুটে আসে। পিঠে হাত বুলিয়ে বলে কোথায় ছিলি? আমরা তোকে খুঁজে খুঁজে হয়রান। এমন একটা ঘটনার পর মাথা ঠিক থাকে?
- মা, পুলিশ আমাকে সন্দেহ করছে। মূলত কিছু টাকা খাওয়ার জন্যে তারা বিভিন্ন পাঁয়তারা করছে। এখন জোগাড় করে কিছু টাকা দেন। না হয় তারা আমাকে ফাঁসিয়ে দেবে। মামলায় পড়ে গেলে লাখ লাখ টাকা আর জীবনও চলে যেতে পারে। তাড়াতাড়ি কিছু টাকা ম্যানেজ করেন। আগামীকাল বিকেলে নিয়ে ওসির হাতে দিতে হবে। না হয় ঝামেলা আরো বাড়বে।
নিপুর মা-বাবা চিন্তায় পড়ে যায়। এখন টাকা পাবো কোথায়, কত টাকা লাগবে?
- অন্তত বিশ হাজার টাকা দিতে হবে।
নিপুর মা বলে, ঠিক আছে। আপাতত আমার বড় দাদাকে বলি ২০ হাজার টাকা দিতে। পরে অমলকে ফোন করে টাকা এনে দাদাকে শোধ করে দিবো। না হয় প্রয়োজনে এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ তুলবো।
নিপু বলে, তাই করেন মা। আমাকে বাঁচান। না হয় আমার জীবনটাই তারা শেষ করে দিবে।
নিপুর বাবা নারায়ণ শান্তিপুর গ্রামেই একটি ছোট্ট দোকান পরিচালনা করেন। দীর্ঘদিন তিনি দোকানের উপরেই সংসার চালাচ্ছেন। তবে সঞ্চয় বলতে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আর বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। নিপু ও ছোট মেয়ে ঝুমার পড়ালেখার খরচও এ দোকানের আয় দিয়েই মেটানো হয়। তাই সঞ্চয় যে অর্থে বলা হয়ে থাকে সে সঞ্চয় নারায়ণের কাছে নেই। তাই তো ইচ্ছে করলেই এখন বিশ হাজার টাকা একসাথে করা তার কাছে পাহাড় কেটে সমতল করার মতো। আর সংসারের বড় বড় প্রয়োজনীয় খরচ এখন সৌদি থেকে পাঠানো অমলের টাকাতেই মেটানো হয়। (চলবে)
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]