মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

রাজ্য ও রাজকন্যা
অনলাইন ডেস্ক

টানা চারবার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচনে ভয়ঙ্করভাবে পরাজিত হয়ে বদরুল চাচা এবার সিদ্ধান্ত নিলেন সোজাসুজি এমপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। একদিন আমাকে ডেকে বললেন, ‘বুঝলে গেদু, এলাকার মানুষ আমাকে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হিসেবে দেখতে চায় না’।

আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, ‘কেন চাচা! আপনি এমনটা কেন ভাবছেন?’

‘তাই যদি হতো তাহলে তারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতো। আসলে মানুষ চায় আমি এমপি হয়ে তাদের কথা সরাসরি সংসদে গিয়ে বলি’।

‘তার মানে আপনি এবার এমপি নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছেন?’

আমি মনে মনে ঢোক গিললাম। এই আধপাগলকে ভোট দেবে কে!

বদরুল চাচা বললেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এমপি নির্বাচন করবো। তোমার চাচিও সায় দিয়েছে। মলি অবশ্য প্রথমে গাইগুঁই করেছিলো। এখন সে-ও নরম হয়ে এসেছে।’

মলির কথা শুনে আমার বুকের ভেতর একটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কত দিন হলো আমি তার পেছনে ছুটেছি! অথচ তার কোনো সাড়াশব্দই নেই। বদরুল চাচা যদি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যান তাহলে এই সুযোগে মলির কাছাকাছি আসতে হবে। যেভাবেই হোক সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। আমি চাচাকে বললাম, ‘আমারও তাই মনে হয় চাচা। আপনার এমপি হওয়াই কর্তব্য। এই সব মেম্বার-টেম্বার হয়ে আসলে কোনো লাভ নেই।’

‘তুমি সাহস দিচ্ছ বাবা? আমার তো প্রচার-প্রচারণার লোক নেই। এই কাজটা কিন্তু তোমাকেই করে দিতে হবে।’

আমি খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। প্রচারের কাজ আমাকে দিয়ে কীভাবে হবে! আমার নীরবতা দেখে চাচা বললেন, ‘টাকাণ্ডপয়সা নিয়ে তোমাকে একদম ভাবতে হবে না। সব ব্যবস্থা আমি করে দেবো।’

এমপি নির্বাচন মানেই হলো নমিনেশনের ব্যাপার-স্যাপার। কিন্তু বদরুল চাচাকে নমিনেশন দিয়ে কোন্ দল ভরাডুবির শিকার হতে চাইবে! তিনি কোনো দল থেকেই নমিনেশন পেলেন না। তাই বলে বসে থাকবেন! স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলেন। এমপি তাকে হতেই হবে।

কদিন বাদেই প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গেলো। বদরুল চাচার পক্ষ হয়ে আমাকে মাঠে নামতে হলো। এর আগে আমি কখনও মলিদের বাড়ির চৌকাঠ মাড়াতে সাহস পাইনি। এই সুযোগে একদিন অন্দরমহলে ঢুকে পড়লাম। ঢুকতেই মলির সঙ্গে দেখা। তাকে দেখেই আমার বুকের ভেতরে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো।

মলি বললো, ‘কী ব্যাপার, প্রচার-প্রচারণা কেমন চলছে?’

আমি শুকনো গলাটা ঢোক গিলে ভিজিয়ে নিতে নিতে বললাম, ‘বেশ ভালো’।

‘লোকজনের সাড়া কেমন? স্লোগানের শব্দ তো কখনও শুনি না। বাবা না আপনাকে প্রচারণার দায়িত্ব দিয়েছে?’

‘হ্যাঁ দিয়েছে। কিন্তু এখন কেউ আর মাগনা স্লোগান দিয়ে গলা ভাঙতে চায় না...’

‘বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিলেই তো হয়।’

‘টাকা নিতেই তো এলাম।’

আমি বোকার মতো হেসে বললাম।

বদরুল চাচার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাইরে বের হয়ে এলাম। মলি পেছন থেকে ডাক দিয়ে বললো, ‘দেখবেন, প্রচার-প্রচারণায় যেনো কোনো ঘাটতি না থাকে।’

‘অবশ্যই দেখবো। এটা আমার নৈতিক দায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে।’

‘আর আজকে স্লোগান শুনতে চাই; বিশেষ করে আপনার কণ্ঠের।’

মলি মিটিমিটি হাসছে। তার হাসি দেখে আমার সব ভয় ও জড়তা কেটে গেলো। আজকে সেই লেভেলের স্লোগান হবে। মোড়ে এসে লোক-লস্কর জোগাড় করে ফেললাম। পকেট থেকে টাকার বা-িল বের করতেই আশপাশ থেকে আরও কয়েকজন এগিয়ে এলো। মজার ব্যাপার হলো, যেসব লোক সব সময় বদরুল চাচার বিরোধিতা করে তারাও এখন স্লোগান দিতে আমার সঙ্গে এসে শামিল হলো।

লোকজন তো জোগাড় করে ফেললাম। এখন স্লোগানে নেতৃত্ব দেবে কে? মাঝবয়সী এখলাস চাচা এগিয়ে এসে বললেন, ‘বাবা, তুমি সেই প্রথম দিন থেকেই পরিশ্রম করে আসছো। তুমি নেতৃত্ব না দিলে কী চলে!’

এখলাস চাচার কথায় সকলে সমস্বরে স্লোগান দিয়ে বলল, ‘অবশ্যই। গেদু ভাই ছাড়া স্লোগান হতেই পারে না।’

আমি এবার মহাফ্যাসাদে পড়লাম। স্লোগান দিতে হলে আমাকে বলতে হবে, বদরুল ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র, আমার ভাই তোমার ভাই বদরুল ভাই বদরুল ভাই...।

কিন্তু ঘটনা হলো, আমি জীবনেও তাকে চাচা ছাড়া অন্য কিছু বলে ডাকিনি। আজকে সেটা না হয় ম্যানেজ করে নেয়া যেতো। কিন্তু মলির বাবাকে আমি কীভাবে ভাই বলে স্লোগান দেবো!

আমার ইতস্তত ভাব দেখে এখলাস চাচাই আবার এগিয়ে এলেন। তিনি বললেন, ‘গেদু মিয়া এতো চিন্তা কিসের?’

‘চাচা, কী বলে স্লোগান দেবো?’

‘কেনো? বলবে বদরুল ভাই...’

‘কিন্তু উনি তো আমার চাচা হন...!’

‘ধুর মিয়া! তোমার আপন চাচা নাকি! আর নির্বাচনের সময় চাচাকে দু-একবার ভাই ডাকলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।’

এখলাস চাচা খিক খিক করে হাসতে লাগলেন। তার সঙ্গে বাকি সবাই গলা মিলাল।

স্লোগান শুরু করে দিলাম। মলিদের বাড়ির সামনে গিয়ে গলাটা যেনো আরও চড়ে গেলো। জানালা দিয়ে মলিকে উঁকি মারতে দেখলাম। তার মুখে তখনও হাসি লেগে রয়েছে।

নির্বাচনের দিন আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। লোকজনের হাবভাব খুব একটা সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। কারও মুখে বদরুল চাচার নাম পর্যন্ত নেই। তবে কী তিনি হারতে চলেছেন! তিনি হেরে গেলে তো বড় বিপদ হবে আমার। অনেক কায়দা কৌশল করে মলিকে রাজি করিয়ে এনেছি। এখন শুধু নির্বাচনে জয়লাভ করাই বাকি। শেষমেশ আমার সব পরিশ্রম প- হয়ে না যায়!

বদরুল চাচা এদিকে কোথাও যাচ্ছিলেন। আমাকে রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাড়ির ভেতর ডেকে নিয়ে গেলেন।

‘বুঝলে গেদু, জনগণ না চাইলে আসলে কখনও তাদের প্রতিনিধি হওয়া সম্ভব নয়। আর নিজের ঘর থেকেই যদি উৎসাহ না পাওয়া যায় তাহলে নেতা হয়েও লাভ কী!’

আমি চাচার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। এই সময়ে এসে এসব কী বলছেন তিনি!

‘আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

‘কী আবোলতাবোল বলছেন!’

আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম।

ইতিমধ্যে মলি এসে ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়েছে। তার দিকে চেয়ে বদরুল চাচা বললেন, ‘মলির মায়ের কাছ থেকে শুনলাম তোমরা পরস্পরে পছন্দ করো। আমি চাই আগামী নির্বাচনে আমার জামাই হিসেবে তুমিই অংশগ্রহণ কর। কি, রাজি আছ তো?’

রাজ্য জয়ের আনন্দ তখন আমার ওপর ভর করেছে। রাজ্য ও রাজকন্যা দুটোই একসঙ্গে পেতে চলেছি। রাজকন্যা তো রাজি আছে এখন জনগণ রাজি থাকলে পরের নির্বাচনে দাঁড়িয়েও যেতে পারি।

* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়