প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২২, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
নুপুর স্বপ্ন দেখে একদিন তাদের স্বপ্নের একটা পৃথিবী হবে। যে পৃথিবী একান্তই দুজনের। একসময় নতুন অতিথি আসবে। যারা সারাক্ষণ ঘর আলোকিত করে রাখবে। উন্মাদনায় মাতিয়ে রাখবে চতুর্পাশ। প্রথমে ছেলে হলে নাম রাখবো পৃথিবী। আর মেয়ে হলে মেদেনী। দুইটি নামের অর্থ এক। তারপরেও ইচ্ছে বলে কথা।
ওদিকে শুভ পেছনের সব স্মৃতি ভুলে যায়। জীবনে কতো ফুলকে যে পছন্দ করেছে তার কোনো হিসেব নেই। যদিও কোথাও স্থায়ী ঠিকানা করা হয়ে উঠেনি। অথবা সুযোগ হয়নি। সুযোগ হয়ে উঠেনি। তবে এতো সময় পর এসে সব যেনো মনের মতো হয়ে যাচ্ছে। নুপুর যে একটা ডানাকাটা পরী। মানুষ এতো সুন্দর হয় কী করে? অবশ্য সবই সৃষ্টিকর্তার ইশারা। শুভর মন উদাস উদাস। অর্থনীতিতে তৃপ্তি বা উপযোগ বিধিতে যে ব্যতিক্রম আছে। সে ব্যতিক্রমের মধ্যে ভালোবাসা বা ভালোলাগা অর্ন্তভুক্ত করা প্রয়োজন।
শুভ রাতে যখন নিপুদের বাড়ি থেকে ফিরে আসে। শুধু শরীর আসে মন আসে না। খাঁচা আসে পাখিটা শুধু প্রিয় মানুষের এপাশ ওপাশ ঘুরে। উড়তে থাকে। এ এক অকৃত্রিম ভালো লাগা। নুপুর আসার পর থেকে নিপু শুভকে তাদের বাড়িতে থাকতে বলে না। যদিও আগে প্রতিদিনই বলতো, ‘শুভ আজ থেকে যা। আমরা রাতে একসাথে গল্প করতে করতে ঘুমাবো। নিজেদের লেখা-পড়া, স্বপ্ন বা ইচ্ছে নিয়ে কথা বলবো। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজাবো।’
একবার শুভকে নিপু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তার বউয়ের সাথে শুধু একরাত রাখবে। তরুণ বয়সে সব কিছুকেই সম্ভব মনে হয়। যদিও বাস্তবতা মাকড়সার জালের মতো। কোন্ সুতো কোন্দিক দেয়ে প্যাঁচ খেলে বোঝা কঠিন।
নিপু বলে, আমার বাসররাতে তুই আমার সাথে থাকবি। আমরা একসাথে গল্প করতে করতে রাত কাটিয়ে দিবো। বউ হয়তো রাগ করবে। অথবা মেনে নেবে না। তবুও আমি তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলবো।
শুভ বলে, আরে দূর; এসব কথা শুধু মুখে বলা যায় বাস্তবের সঙ্গে কখনো মেলানো যায় না।
ওসব এখন আর নিপুর মনে নেই। তার মনে শুধু নুপুরের ভাবনা। নুপুরের ইচ্ছে জানা। নুপুরকে নিয়ে স্বপ্ন সাজায় নিপু। মনে মনে গোপনে। কতো শত স্বপ্ন। কল্পনায় একটা পৃথিবী আঁকে। যে পৃথিবী একক মালিকানা তার। নিজের মতো করে সাজাবে। নিজের মতো করে রাঙাবে। কিন্তু এতে যদি শুভ বাধ সাদে এমন ভাবনা মনে আসতেই অস্থির হয়ে উঠে নিপু। না। আমি যে কোনো মূল্যে নুপুরকে চাই। এর সমানে যতো বাধা আসুক আমি সব বাধা অতিক্রম করবোই। শুভতো ছোট্ট বিষয়। প্রয়োজনে আমি শুভর নামও বন্ধুর খাতা থেকে কেটে দেবো। আমার কোনো বন্ধু লাগবে না। এক শুভ ছাড়া আমার কোনো বন্ধু নেই। তাতে কি হয়েছে? কিচ্ছু হয়নি। পৃথিবী বসে থাকে না কারো জন্যে। একটা বন্ধু গেলে ইচ্ছে করলে হাজারটা বন্ধু জোটানো যায়। না হয় বন্ধু ছাড়াই থাকবো। কিন্তু একটা নুপুর গেলে আরেকটা নুপুর আমি পাবো না। সুতরাং নুপুরকে আমার পেতেই হবে।
নিপু নুপুরের সিদ্ধান্ত জানতে চায়। নুপুর কিছু বলে না। শুধু মাথা ন্যূয়ে বসে আছে। অবশ্য দুজনেই খুব ছোট্ট ছোট্ট শব্দে কথা বলছে। পাশের কেউ যেন না শোনে। নিপু বলে, চলো বাইরে যাই। আজ পূর্ণিমা রাত। দুজনে রাত দেখি। একটু কথা বলি।
- এখন রাত কয়টা বাজে?
- সাড়ে ১১টা।
- মানুষে দেখলে কী বলবে? পূর্ণিমা রাত যতই সুন্দর হোক কলঙ্ক মুছে দিতে পারবে না। আমি যাবো না। আপনি যা বলার এখানেই বলেন।
- গ্রামের মানুষ এতো রাত জাগে না। দিনমজুরের কাজ করে ক্লান্ত হয়ে প্রথম রাতেই ঘুমিয়ে পড়ে সবাই। চলো যাই।
নিপু হাত ধরে নুপুরের। কিন্তু ওই হাত বেশিক্ষণ কব্জায় রাখতে পারলো না।
নুপুর একটু জোর করে হাত ছাড়িয়ে নেয়। এতে নিপুর কিছুটা অপমান বোধ হয়। নিপু বলে, তুমিতো আমার বেয়াইন। আমার সাথে বাইরে যেতে সমস্যা কোথায়?
- আমি সমস্যার কথা বলছি না। আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া এতো রাত করে ঘরের বাইরে যাবার কী প্রয়োজন?
- প্রয়োজন আছে। তুমি চলো।
- এখানেই বলুন। আমিতো শুনতে পাচ্ছি। বুঝতেও অসুবিধা হচ্ছে না। বলুন।
নুপুরের এমন কথায় চুপসে যায় নিপু। আর বেশি কিছু না বলে নিজের খাটে ফিরে যায়। পরদিন সকালেই নিপু ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। দুপুরের দিকে শুভ আসে। শুভ নিপুকে খোঁজ করে। কিন্তু কোথাও নিপুকে পাওয়া যায় না। নিপু বাড়িতে না থাকায় তাদের ঘরেই বসে থাকে শুভ।
নিপুর মা বলে, সকালে ছেলেটা কোথায় গেলো একবার বলেও গেলো না? সকালে নাস্তাও করেনি। ওদিকে নুপুর আজ সকাল থেকে মন খারাপ করে বসে আছে। কি হয়েছে জানি না। শুনেছি তার বাবা তাকে নিতে আসবে।
- কাকি মা। আমিও ফোন করেছি ধরে না। কী হয়েছে?
- জানি না। ঘরেতো তেমন কিছুই হয়নি। শুধু তোমার কাকা গতকাল বিকেলে বাড়িতে নিজে নিজে আবল-তাবল বকেছে। ছেলে একটা জোয়ান হইছে। কোনো কাম-কাইজ করে না। এইভাবে চলতে থাকলে কেমনে হইবো? আর খাবার খাইলে শরীর আরাম পায়। পুষ্টি পায়। কিন্তু খাওনেরও অভিশাপ আছে। খাবারের বদলে কাম করতে অয়। না হয় খাবারেও অভিশাপ দেয়। বদহজম হয়। কিন্তু ওসব কথাতো নিপুর কান পর্যন্ত যায় নাই। তখন নিপু বাড়ি ছিলো না।
- হয়তো কেউ তাকে বলেছে। তাই হয়তো রাগ করে আছে। আচ্ছা অসুবিধা নাই। কিছুক্ষণ পর হয়তো আমাকে কল করবে। তখন বুঝতে পারবো কোথায় আছে সে। কিন্তু আমার বেয়াইনের কী হইছে কাকী?
- কে জানে সকাল থেকে আনমনা হয়ে বসে থাকে। সকাল থেকে বলছে তার বাবাকে খবর দিতে বাড়ি চলে যাবে। আমি বলি আরে মাইয়া আইচচ কয়দিন বেড়াইয়া যায়। দেখা যাইবো কয়দিন পর বিয়া হইয়া যাবো। তখন আর ঠিক মতো বেড়াতে খেলাইতে পারবি না। শুধু না না করে। মেয়েটা শুধু বলে বাড়ি চলে যাবে।
- এখন কোথায় আছে নুপুর?
- ওই যে ঘরের ভেতরেই আছে। রাতে ওখানে ঘুমাইছে। ওখানেই বইসা আছে। সকালে একটু বের হইলেও আবার যে ঘরে ঢুকছে। আর বাইর হয় না। যাও তুই গিয়ে জিজ্ঞেস করতো শুভ। কী হইছে মাইয়াডার।
শুভ দ্রুত ঘরে ঢুকে। নিপুর রুমে কেউ নাই। ঠিক উত্তরের রুমে ঢুকেই দেখে নুপুর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। শুভ কি করবে ভেবে পায় না। গায়ে হাত দেয়া ঠিক হবে কিনা নিজেকে প্রশ্ন করে। গলা শুকিয়ে আসছে। একটু জল খাওয়াবেন বেয়াইন? শুভর কথা শুনে উঠে বসে নুপুর। বুকের ওড়না ঠিক করে। বিধ্বস্ত চেহারা। মনে হয় রাতে ঘুমায়নি। তারপরেও যেন মায়া উপছে পড়ে মুখে। অবশ্য প্রেমিক পুরুষদের বেলায় এমন ভাবনা আসা স্বাভাবিক। শুভ বলে, কী হয়েছে? মন খারাপ কেন? আমার কথা শুনে?
- না। আপনার কথা শুনে মন খারাপ হবে কেন? মা-বাবার কথা মনে পড়েছে। তাই একটু খারাপ লাগছে।
- তুমি মিথ্যে বলছ? গতকালও তুমি কত উচ্ছ্বল ছিলে। কিন্তু আজ হঠাৎ এত মন খারাপ হবে কেনো? (চলবে)
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]