প্রকাশ : ২৮ মে ২০২২, ০০:০০
দুই.
নিপু ট্যালেন্ট ছাত্র। দেখতে সুপুরুষও। ইচ্ছে করলেই আদর্শিক চরিত্র হিসেবে যে কেউ গ্রহণ করবে। স্কুল বন্ধুদের একটি কলম ধার দেয়নি কখনো সে। যদিও দিয়েছে, বিনিময়ে কিছু না কিছু নিয়েছে। বিষয়টি সবার অজানা। ঠুনকো বিষয়ে অনেক সম্পর্কে বিচ্ছেদ করেছে সে। একবার সুজনকে দশ টাকা ধার দিয়ে পনের টাকা দাবি করে নিপু। সুজন দাবি পূরণ করে। সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলেও কাউকে বুঝতে দেয়নি। আচমকা ক্লাসমেট রত্নাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমো এঁটে দেয়। ক্লাসের অন্যরা অবাক হয়। রত্না কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। যেনো আসমান থেকে বজ্রপাত পড়েছে। যদিও অন্য সহপাঠীরা চায়নি বিষয়টি হেড স্যার পর্যন্ত গড়াক। তবে এক কান-দু কান করে গন্তব্যে পৌঁছে নোংড়া তথ্য। রত্মা অভিযোগ দেয়নি। সে চেয়েছে বিষয়টা ক্লাসেই চাপা পড়ুক। কিন্তু অধ্যক্ষ জানতে চাইলে, নিপু স্বীকার করে। তড়িৎ এমন কাণ্ডে অধ্যক্ষের বেত্রাঘাতও জুটে কপালে। ক্লাসের ফাস্টবয় লাঞ্ছনার শিকার হোক তা কখনো চায় না সহপাঠীরা। যার সহজ রহস্য প্রচলিত আছে।
নিপুর ঘনিষ্ট বন্ধু শুভ। শুভরা যখন শান্তিপুর গ্রামে ছিলো তখন নিপুর সাথে দারুণ সখ্য গড়ে উঠে। শুভ নিপুদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করে নিজের বাড়ির মতো। কয়েক বছর আগে পাশের গ্রামে চলে আসার পরও সম্পর্কে এক ফোঁটাও ছেদ পড়েনি। বরং বেড়েছে। একসাথে লেখাপড়া, খেলাধুলা ও চলাফেরা। সময় ভালোই কাটছে। রঙিন। খুব রঙিন। যেদিন রত্নাকে নিয়ে কাণ্ড ঘটালো সেদিন শুভ স্কুলে যায়নি। পরে বিষয়টি শুনলেও তা বিশ্বাস করেনি। শুভর মনে বদ্ধমূল বন্ধু মানে বিশ্বাস। মানুষ সবাইকে বিশ্বাস করতে পারে না। ভালোবাসতে পারে না। তবে সহপাঠীদের মুখে বিষয়টি শুনে নিপুকে জিজ্ঞেস করেছিলো শুভ। নিপু অকপটে স্বীকার করে।
কিন্তু কেনো? নিপু কোনো সদোত্তর দিতে পারেনি। রত্মাকে নিপু কখনো প্রেমের প্রস্তাবও দেয়নি। রত্মার প্রতি ন্যূনতম ভালোবাসা উদয় হয়েছে এমন আভাসও ছিলো না। তবে হঠাৎ করেই কেনো নিপু এমন কাণ্ড ঘটালো? তবে কি রত্মাকে মনের অগোচরে ভালোবাসে নিপু? অথবা গোপনে প্রস্তাব দিয়েছে? এমন অসংখ্য প্রশ্ন দানাবাঁধে শুভর মনে। যদিও বিষয়গুলো মনের ভেতরে দিনদিন চাপা পড়ে।
এইচএসসি পাসের পর এনজিও সংস্থায় পার্টটাইম চাকুরি নেয় নিপু। কাজ কম। সপ্তাহে একদিন শুধু কিস্তির টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে তুলতে হবে। ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার নিপুকে নিজে থেকেই অফার দিয়ে চাকুরিটা দিয়েছে। এ এলাকায় পূর্বে যিনি কাজ করতেন তার উচ্চপদস্থ কর্ম হওয়ায় চাকুরি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি পুরো মাঠ গুছিয়ে গেছেন। তাই নিপুর জন্যে কাজটা সহজ হয়ে গেছে। নিয়মিত কিস্তির টাকা যেমনি উঠাতে পারে তেমনি দিনদিন গ্রাহক আরো বাড়তে থাকে। গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই ঋণ আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যারা কিস্তির টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খায় তারা নিপুর শরণাপন্ন হয়। এতে নিপুর সাথে গোপন সম্পর্ক গড়ে তোলে কেউ কেউ। সখিনা বিবির মতো অনেকেই তার গোপন সঙ্গী হয়েছে। নিপু সাদরে গ্রহণ করে। এতে ঋণগ্রহীতারা শুধু কিস্তি খেলাপীর সুযোগ পায়। ঋণজাল ছিঁড়তে পারে না। নিপুর চাকুরি চলতে থাকে। মানুষের ঋণ বাড়তে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই বাধে বিপত্তি। নিপু কিস্তির টাকা তুলতে পারছে না। তাই অফিস থেকে লোক এসে টাকা তুলতে সহায়তা করে। সখিনা বিবি যেদিন ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে ছিলো। বিষয়টিকে গ্রামের সাধারণ মানুষ কীভাবে নিবে বুঝতে পারেনি। শুধু সখিনা বিবির স্বামী রমিজ শেখ পুরো বিষয়টা জানে। শেষবার যখন কিস্তির টাকা তুলেছিলো পুরো টাকাটা জুয়া খেলে নষ্ট করেছে রমিজ। এরপর তিন কিস্তির টাকা বকেয়া পড়ে। নিপু বাধ্য হয়ে অন্য অফিসার নিয়ে চাপ দেয়। কিন্তু টাকা কোনোভাবেই দিতে পারে না সখিনা বিবি। কিস্তির টাকা দিতে গিয়ে কয়েকটা হাঁস আর মুরগি বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু টপকাতে পারেনি ঋণের কূপ।
সখিনা বিবি বলে, আর পারতাছি না দাদা। আমার হেতনে যে কাম করে। চুলায় আগুন জ্বলে না। কিস্তির টাকা হাত থাইক্কা নিয়ে কী করলো বুঝবার হারি না। একটা কানাকড়ি জমা রাইখতে হারে না। যে কাম করে পুরাডাই খরচ কইরালায়।
পরিবার শোষিতপুরুষ রমিজ শেখ দায়িত্বহীন। তাই সকিনা বিবি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অবশ্য সকিনা বিবির ঘটনার পরপরই নিপু সংস্থার চাকুরিটা ছেড়ে দেয়। মন দেয় পড়ালেখায়। (চলবে)
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]