সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

একটি রহস্যময় ঈদ
অনলাইন ডেস্ক

বাহ! দেখতে দেখতে ৩০ রমজান চলে এলো। প্রত্যেক বারের মতো বাড়ির ছোট-বড় সবাই এসে ঝড়ো হলো আমাদের উঠোনে। সবাই এসেছে। ক্লাস ওয়ানের ছাব্বির, জান্নাত, নাহিদ, ফোরের লামিয়া, সানজিদা, নাফিজ, সাবিরা, নাইনের সৈকত, কলেজের সুমাইয়াসহ অনেকেই এলো। বরাবরের মতোই আমি এবং আমার বোন কেয়া সবকিছুর পরিকল্পনা করি। উঠোনে বড় করে লাভ আঁকা, আল্পনা দেয়া, রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো, চাঁদ উঠলে সবাইকে চকোলেট দেয়াসহ সব কিছু। যদিও শেষ রোজা, কিন্তু আমাদের দেখলে তা মনে হবে না। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সবাই কাজ করছে। আসরের আজান না দিতেই লাভ, আল্পনা দেয়া শেষ। বড় হয়েছি, তাই আম্মুকে কিছুটা সাহায্য করে আসলাম। নইলে আম্মুর বকা শুনতে হবে। রঙিন কাগজ লাগানোর জন্যে কাউকে গাছ বেয়ে উঠতে হবে। রনি আর সৈকত উঠলো, ছাদের কোণায় আর গাছগুলোতে লাগানো শেষ। এর মধ্যেই ইফতারের সময় হয়ে গেছে। তাই সবাইকে বললাম ইফতার শেষে আবার এসো সবাই। নতুন লাগানো লাল, নীল, গোলাপি আল্পনা চোখ জুড়িয়ে গেলো। সবাইকে বলা হলো রং শুকানোর আগে কেউ পা দেবে না আল্পনায়।

ইফতার আর নামাজ শেষে স্বাভাবিক যে ক্লান্তি আসার কথা, আনন্দে সেই ক্লান্তি মুহূর্তেই উড়ে গেলো। ফেলনা কলম সারা বছর জমিয়েছে সবাই, এখন সেগুলো আল্পনার চারপাশে লাগাচ্ছি আমি আর কেয়া। সবার চেয়ে বড় বলে আমাদের কথাই সবাই মেনে নেয়। কলম পোতা শেষ। দিয়াশলাই আর মোমবাতি আনার পালা। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে আামার পৌরনীতি বইয়ের উপরে রেখে এসেছি মোমবাতি আর দিয়াশলাই।

-এই যে নাও দিয়াশলাই!

ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম একটা লম্বা হাবাগোবা চেহারার ছেলে। আমি নিলাম হাতে। ছেলেটা মনে হয় আমাদের বাড়ির কারো আত্মীয় হবে। যাই হোক, কলমের মাথায় আগুন জ্বালানোর পর সোনালি আভায় ভরে গেলো পুরো উঠোন। সবার মুখের একরাশ হাসি ঈদের চাঁদকে টেনে আনছিলো। ইতিমধ্যেই মসজিদের মাইকে বলা হলো চাঁদ দেখা গেছে। সবার উচ্ছ্বসিত চিৎকারে বড়দের কানে তালা লেগে গেলো। মেজো কাকির বকার ভয়ে সবাই চুপ হয়ে গেলো। চকোলেট দিচ্ছি সবাইকে। সবাই খুশি। প্রতিবার টিউশনির টাকার একটা অংশ এভাবে ব্যয় করে অনেক আনন্দ পাই। সবশেষে ওই ছেলেটাকে দিলাম চকোলেট। ওই ছেলেটা ফটাকা নিয়ে এলো একগাদা। যদিও এসবে তেমন আগ্রহী নই আমরা, কিন্তু আল্পনার মাঝে চরকি ফটাকা ঘুরার দৃশ্যটা মনে গেঁথে থাকার মতো। লক্ষ করে দেখলাম ছেলেটা আমাদের কেউ না হলেও সবার সাথে বেশ মিশে গেছে এবং সবাইকে বেশ মাতিয়ে রাখছে।

তারপর ঈদের গান গাওয়ার পালা এলো। ছোটো-বড় সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হলো : ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

বড়রাও যেনো বেশ উপভোগ করছে। বদরাগী মেজো কাকিকেও দেখা গেলো উঁকি দিতে। এটা দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছিলো। আমার চোখ পড়লো ওই নতুন ছেলেটার উপর। এই যা! ওর তো নামই জানা হলো না, কার কি হয়! আচ্ছা পরে জেনে নিবো। একটু আগে ওর গায়ে বোধহয় লাল পাঞ্জাবী দেখেছিলাম, এখন কালো পাঞ্জাবী কেনো? মনে হয় ভুল দেখেছি। এ রকম হাবিজাবি ভাবা বন্ধ করে সবার সাথে আনন্দে যোগ দিলাম। মনে হচ্ছে যেনো ছোটবেলায় ফিরে এসেছি। রাত নয়টা বেজে এসেছে, মানে মেহেদী লাগানোর পালা। এইবার যতো বড় আপু, আন্টি আছে সবার কাছে ভিড় শুরু হলো। আমি আর আমার বোনও কয়েকজনকে মেহেদী লাগিয়ে দিলাম। ওই ছেলেটা আসছে মেহেদী লাগানোর জন্যে। আমার বোন তখন লামিয়াকে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছিলো। তাই বাধ্য হয়েই আমিই মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছিলাম ছেলেটাকে। কিন্তু ওর হাত যেনো মাঘ মাসের হিমশীতল হাত। চুপচাপ লাগিয়ে দিলাম। সবাই আবার উঠোনে ঝড়ো হলো যে যার মেহেদী দেয়া হাত দেখাতে। ছোট ছাব্বিরের কিসের সাথে ধাক্কা খেয়ে মেহেদীর সাজ নষ্ট হয়ে গেলো। কেয়ার বিশেষ আবিষ্কার ‘লাভা’ জ্বালানো হলো। নারকেলের মালায় বালি, পলিথিন, কেরোসিন মিশিয়ে আগুন জ্বালালো কেয়া। আগুনের উত্তাপে উপরের রঙিন কাগজগুলো উড়ছিলো। ১ ঘণ্টা জ্বলার পর নারকেলের মালাসহ জ্বলতে লাগলো আগুন। এইদিকে সবার হুল্লোড় তো আছেই। ওই ছেলেটা নেচে-গেয়ে মাতাচ্ছে সবাইকে। রাত ১০টা, সবাই যে যার ঘরে ফিরতে লাগলো। হঠাৎ আমার মনে পড়লো ওই ছেলেটার নামই তো জানা হলো না! থাক কাল যেনে নেবো। কারো আত্মীয়ই তো হবে। আমাদের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় চাঁদ দেখা যাচ্ছিলো না। আমাদের দুই বোনের হাতে মেহেদী থাকায় আম্মু ভাত খাইয়ে দিলেন। ঘুমাতে গিয়ে বহু কথা আমাদের। হাতের মেহেদীর গন্ধ শুঁকে বলছি এই তো ঈদের গন্ধ। কখন যে চোখে ঘুম নেমে এলো কে জানে! ঘুম ভাঙলো আম্মুর ডাকে। প্রিয়া, ওই প্রিয়া উঠ। উঠে, নামাজ পরে গেলাম উঠোন ঝাড় দিতে। সবাই হাত ধোয়ার পর মেহেদী দেখাচ্ছে। আম্মুকে সাহায্য করে এসে গেলাম গোসল করতে। সচরাচর বড়রা পরে গোসল করলেও আমরা সকাল সকাল করি। নতুন গোলাপি ড্রেসটা পরলাম, হালকা সাজলাম। এর মধ্যেই আব্বুদের ঈদের নামাজ পড়া শেষ। সেমাই খেলাম। আমার আবার সেমাই না হলে ঈদ ঈদ লাগে না। কেয়া আবার সেমাই পছন্দই করে না। আব্বুর কাছ থেকে মোটা সালামি পেয়ে আম্মুর কাছে গেলাম, আম্মুর কাছ থেকে পাওয়া সালামীর পরিমাণ অতো বেশি না হলেও বিশেষ কিছু ছিলো আমার কাছে। সবাই ঝড়ো হলাম উঠোনে। সবাই হাজির। কিন্তু ওই ছেলেটাকে আর দেখা গেলো না। অনেক জিজ্ঞেস করার পরও জানা গেলো না ছেলেটা কার আত্মীয় ছিলো। আহ! ওর নামটাও জানা হলো না। সবারই মনে হলো অদ্ভুত কেউ ছিলোও। এরপর আর কখনো আমাদের এইদিকে ছেলেটিকে দেখা যায়নি। আমরা সেদিন অনেক মজা করলাম, সবার বাসায় গেলাম। আমাদের কিছু মেহমান আসলো। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে প্রশ্ন একটাই, ছেলেটা কে? আর কোথা থেকেই বা আসলো?

বহু সালামি শেষে গুনছিলাম কত পেলাম। কেয়া বললো আপু তোর দিয়াশলাইটা তো ওই যে ফ্রিজের উপরে। তা-ও একটা না সাতটা...আমি নির্বাক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়