প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
‘বিয়া তো বইলি না, বাপেরে একবারে খালি কইরা হের হরে নি বিয়া করবি। হুন বেডি, এহন যে জোয়ান আছত, গতর ভালা দেহায়, শইল্লো তো হাড্ডি ছাড়া গোশত নাই বেডা মাইনষেরে কাবু করবি কি দিয়া, কিছুই নাই তোর। তোর বাপেরও অতো ক্ষমতা নাই তোরে ভালা জমিদার পোলা দেইখ্যা বিয়া দিবো। মাইয়া মাইনষের দিলে মায়া থাকোন লাগে খালি নাম মায়া হইলেই হয় না। তোর তো মায়া বলতে কিচ্ছু না মনের ভিত্তে, আল্লাহ খোদা দিলেরে পাত্থর দিয়া বানাই দিছে নাইলে কি বাপের টেকা পইষার এমন আকাল দেইখ্যাও কেউ জজ বেরিস্টার হওয়ার লাইগা স্কুলে যাওনের নাম নিতো হারে। বেহায়া মাইয়া মানুষ। হুন বিয়াডা যে ভাইঙ্গা দিলি এহন খাবি কইত্তে, হরবি কইত্তে হ্যাঁ, আমারে ক একটু হুনি।...’
ঘণ্টাখানেক ধরে দাদির এমন কথাবার্তা শুনে দরজায় ছিঁটকিনি মেরে মেঝেতে ডান কাত গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে মায়া। আজ সে তার বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। বিয়ে ঠিক হওয়া ছিলো দুই-এক দিনের মধ্যেই তার বিয়ে হয়ে যেতো কিন্তু ছেলের বাড়ির কেউ তাকে আর পড়াশোনা করাতে বা চাকরি করতে দিতে রাজি ছিলো না তাই বিয়ে করবে না বলে আনাড়ি শুরু করে। জিদের কাছে হার মানতে হয় তার বাবাকে। দাদির বলা কটু কথাগুলো চুপচাপ শুনে নিয়ে টিউশনে যাওয়ার জন্যে তৈরি হয়ে নিলো মায়া। তার যে অনেক স্বপ্ন, স্বপ্নগুলো পূরণ করতে হবে। উনিশ বছর বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে তার সাথে সাথে স্বপ্ন নামক স্বাধীন পাখাকে বলি দিতে নারাজ সে।
অনার্স প্রথম বর্ষের বাংলা বিভাগে অধ্যয়ন করছে মায়া। নিজের পড়ার পাশাপাশি টিউশন করে নিজের সার্বিক খরচসহ পড়ার খরচাটুকু চালিয়ে নিতে পারে। বাবার উপর এখন শুধু তার খাওয়া আর ভার্সিটি আসা-যাওয়ার খরচ। এরপরেও দাদির থেকে খাওয়া পড়ার খোঁটা শুনতে হয় ভেবেই জিদ চেপে বসে মনের মধ্যে। না সে পড়াশোনা ছাড়বে আর না টিউশন। নিজের সম্পূর্ণ খরচ যেদিন নিজে চালাতে পারবে সেদিনের স্বপ্ন দেখে দেখেই দিন পার করছে মায়া। মায়ার এই স্বপ্নপূরণে তার মা-সহ আরো দুজন মানুষ তাকে অভয় দেয়, তার মাথার উপর ভরসার পূর্ণ ছায়া হয়ে আছে তারা। একজন তার ছোটবাবা আর অন্যজন তাঁর প্রিয়তমেষু।
এই তিনজন মানুষের ভরসায় নিজের সব প্রতিকূলতা, ভয়, সংশয়, ত্রুটি, সমাজের মানুষের কুরুচিপূর্ণ কথা মুখবুঝে সহ্য করে নিরলস পরিশ্রম করে নিজের স্বপ্নপূরণের পথ ধরে হেঁটে চলছে সে।