সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২২, ০০:০০

ভুল ভালোবাসা
ইয়াছিন দেওয়ান

একটা বাড়ির পাশে ফুটবল খেলা হচ্ছে। বিবাহিত আর অবিবাহিত দলের ফুটবল ম্যাচ। এমন সময় দুটো মেয়ে পাশ দিয়ে গেলো। মুহূর্তেই দুজনের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় সবুজের। ওদের একজনকে ভালো লেগে যায়। ফলে প্রতিদিনেই সেই মাঠে খেলতে যায় সবুজ। যার জন্যে যায় তার নাম রিপা। কিন্তু কোনো দিনেই রিপার সাথে দেখা হয় না সবুজের। তবুও অনেক আশা। অন্যদিকে প্রায়ই লুকিয়ে লুকিয়ে সবুজকে দেখতে আসে নাজনীন। সেভাবে নাজনীনের জন্যেই সবুজ এদিকে তাকায়। কিছুদিনের মধ্যেই ওদের মধ্যে চোখে চোখে ভাব হয়।

সবুজ ভাব জমায় অন্য কারণে। একে দিয়েই রিপার সাথে কথা বলতে পারবে। আর অন্যদিকে নাজনীন তাকে মনে মনে স্বপ্নের পুরুষ মনে করে। একদিন সুযোগ বুঝেই সবুজ তার মনের কথা জানায়। বলে রিপার সাথে তার রিলেশন করিয়ে দেয়ার জন্যে। কথাটা শুনেই নাজনীনের ভেতরে ঝড় বয়ে যায়। তবুও ঠোঁটে মৃদু হেসে বলে। তার বান্ধবি তিনটা রিলেশন করে। একজনের সাথে খুব মাখামাখি প্রেম। সবুজের হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যায়। সেদিনের মতো আর কথা এগোয় না। দুজন দুজনের পথে চলে যায়।

সেদিনের পরে সবুজ অনেক দিন খেলতে যায় না। একদিন বিশাল বড় করে দাদা-নাতির ফুটবল খেলা আয়োজন করে এলাকার স্পোটর্স সংগঠন। তাই সবুজ বাধ্য হয়েই সেই জায়গায় যেতে হয়। মাঠের কাছেই নাজনীনদের বাড়ি। তাই যাওয়ার সাথে সাথেই সবুজকে দেখে ফেলে। তাকে রূপের মায়ায় ফেলতে নীল শাড়ি পরে। চোখে কাজল দেয়। কপালে লাল টিপ দেয়। আর ঠোঁটে হালকা লিপিস্টিক। সব মিলিয়ে দারুণ লাগে তাকে। দেখেই মুগ্ধ হয় সবুজ। মুহূর্তেই রূপের জালে আটকে যায়। আবার নিয়মিত ফুটবল খেলতে যেতে থাকে সে। এক সময় নাজনীনের প্রতি প্রেম প্রেম উপক্রম হয়। কিন্তু সে খারাপ জানবে বলে প্রপোজ করার সাহস পায় না। অন্যদিকে নাজনীন সবুজের মনের কথা পড়ে ফেলে। বিধাতা কিছু কিছু মেয়েদের এমন কিছু শক্তি দিয়েছেন যে, তাদের কেউ পছন্দ করলে তারা বুঝতে পারে। এমনি সবুজ ভীতু এটাও বুঝতে পারে। তাই একদিন সুযোগ বুঝে একটা ছোট ছেলেকে দিয়ে চিঠি লেখে। সাথে মোবাইল নাম্বার দিয়ে দেয়। সবুজ সেই চিঠি পেয়ে মহাখুশি। বেশ কিছুদিন ধরে প্রেম ভালোই চলছিলো। একদিন কথা বলার মাঝখানে মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ হয় যায় সবুজের। কিন্তু জরুরি কথাই বলতে ভুলে গিয়েছিলো। তাই মনে পড়তেই ওর বন্ধু আকাশের মোবাইল দিয়ে দুই মিনিট কথা বলেছিলো। কিছুদিন পর আবার টাকা না থাকায় আকাশেন কাছে আসে। আকাশ জানায় তার কাছে পঞ্চাশ মিনিট ফ্রি আছে। তুই শেষ কর সমস্যা নেই। আধাঘণ্টা কথা বলার পরে আকাশ বলে কিরে বন্ধু আমাদেরকে ভাবির সাথে কথা বলতে দিবি না?

-অবশ্যই। নে কথা বল।

আকাশ-নাজনীনের মধ্যে জানাশোনা হয়ে যায়। বাকি বিশ মিনিট কথা বলে আকাশ। কিন্তু সবুজ কিছুই মনে করে না। মাঝে মধ্যে সবুজকে কলে না পেলে আকাশের মাধ্যমে খবরাখবর নেয় নাজনীন। একদিন আকাশ সবুজকে খোঁচা মেরে বলে। তোর প্রেমিকা আমাকে পছন্দ করে। আমি চাইলেই তোর প্রেমিকা নিজের করে নিতে পারি। সবুজ উত্তেজিত হয়ে যায়। বলে তুই যদি সত্যই করতে পারিস, তবে আমাদের মধ্যে বাজি হোক। অতঃপর দুই হাজার করে বাজি ধরা হয়। আকাশ শর্ত জুড়ে দেয়। বলে, তুই দেড় মাস কোনো যোগাযোগ করবি না। সবুজ মেনে নেয়। সে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে প্রেমিকার উপরে। তার সাথে প্রতারণা করবে না নাজনীন। আসলে অতিরিক্ত বিশ্বাস মানুষের কষ্টের কারণ হয়। এদিকে সবুজকে না পেয়ে অস্থির হয়ে যায় নাজনীন। সবুজের কাছে নক করে। সবুজও সুযোগ বুঝে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। মন খারাপের সময় আকাশকে পেয়ে ভালে লাগে নাজনীনের। যোগাযোগহীন অধিংকাশ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। সবুজ আর নাজনীনের ক্ষেত্রে তা-ই ঘটে। সুযোগ বুঝে আকাশ প্রপোজ করে। নাজনীন ছবি চায়। আকাশের সম্মাটনেস ছবিগুলো দেখে পাগল হয়ে যায় নাজনীন। যদিও এর আগে থেকেই নাজনীন ওর মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে পটে গিয়েছিলো। আর যখন জানতে পেরেছে ওর অনেক টাকা আছে। তখন রিলেশন করার জন্যে পাগল হয়ে ছিলো। কারণ সবুজ ততোটা ধনী ছিলো না। তাছাড়া তেমন লম্বাও না। এদিকে সবুজ আকাশ এক মাস কল দিবে না বলেও দুইদিন পরে পরে কল দেয়। কিন্তু সে দেখে নাজনীনের ফোন সারাদিন ব্যস্ত দেখায়। অথচ তার সাথে দুই মিনিটও ভালো করে কথা বলে না।

একসময় সবুজ কাজের জন্যে ঢাকা আসতে হয়। ফলে ব্যস্ততার জন্যে ফোন দিতে পারেনি। আসলে ব্যস্ততা নয় রাগ-অভিমানের কারণে সে কল দেয়নি। কখনো কখনো প্রিয় মানুষদের সাথে কথা বলতে সময় নয়, ইচ্ছের প্রয়োজন হয়। দিন দিন নাজনীনের প্রতি সবুজ ফুলে উঠছিলো। আচমকাই আকাশ সবুজকে জানায়। ওদের রিলেশন গভীর পর্যায়ে চলে গেছে। নাজনীন মন উজাড় করে তাকে ভালোবাসে। আকাশ চাইলেই যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে। রাগের বসে সবুজও বলে দেয়। ওর সাথে আমি রিলেশন রাখবো না। রাখতে চাই না। ওর প্রতি রুচি উঠে গেছে! আকাশ চাইলেই যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।

ছয় মাস পরেই সবুজ-নাজনীনের হঠাৎ দেখা হয়ে যায়। তাকে দেখেই সবুজ মুখ ফিরিয়ে চলে আসতে চায়। কিন্তু হঠাৎই ওর পায়ে ধরে কেঁধে উঠে। জানায় সে মারাত্রক ভুল করেছে। আকাশ ওর সবকিছু কেড়ে নিয়ে চলে গেছে। সবুজের খারাপ লাগে। সে বলে আমার জন্যেই তোমার ক্ষতি হয় গেলো। নাজনীন বলে, না, না তোমাকে কি দোষ দিব বলো? আমিই ভুল করেছি। লোভ করেছিলাম। তাছাড়া এটা আমার পাপের শাস্তি। রিপা আজও সিংগেল। আমার দোষেই আমি পাপী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়