প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
স্বর্গীয় পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী নামটি যেমন ছিল দীর্ঘ, ঠিক তেমনি করে তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের ইতিহাসও যা কাগজের পাতার দু, তিন বা চার পৃষ্ঠায় লিখে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষা, সংস্কৃতি, সামাজিক, নাট্য, ক্রীড়াসহ সকল ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর বিচরণ এবং সকল ক্ষেত্রেই অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সুনিপুণ দক্ষতার সাথে। সাংগঠনিক ক্ষেত্রে সবাই তাঁকে পীযূষ দাদা বলে সম্বোধন করলেও পারিবারিক একটি সম্পর্কজনিত কারণে আমার সম্বোধন করতে হতো পীযূষ কাকা বলে। যদিও মাঝে মধ্যে ভুলে পীযুষ দাদা বলে সম্বোধন করতাম তাতেও শেষ রক্ষা হতো না। ঠিক তাঁর কর্তগোচরে আমার ভুলটি ধরা পড়ে যেত এবং সাথে সাথেই আদরের সহিত ধমক দিয়ে বলতো এই আমি তোর কেমন দাদারে গাধা। এতো বলার পরেও ভুল করিস কই তোর কাকিমাকেতো কখনও ভুল করে দিদি ডাকিস না। এমনি করে হাজারো স্মৃতি রয়েছে এই মহান মানুষটির সাথে। হয়তো আজ কাগজের পাতায় সব লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, তবে সেই সব স্মৃতি সংরক্ষিত রয়েছে মনের গহীনে স্মৃতির পাতায়, যা প্রায়শই বিশেষ কিছু মুহূর্তে নাড়া দিয়ে মনে করিয়ে দেই সেই হাস্যোজ্জ্বল মুখখানি। আর তখনই বেদনায় সিক্ত হয়ে আসে আমার দু’ চোখ। আর ভাবি এখন সে তো কেবলই স্মৃতি, যা আর কোনদিনও আমার সাথে ঘটবে না।
পীযূষ কাকা জীবদ্দশায় অনেক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারই ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সুদীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে সগৌরবে দায়িত্ব পালনের মধ্যেই বেজে উঠেছে মৃত্যুবেদনার সুর। পরলোকের আহ্বানে বহু পরিচিত সংগঠন পরিবার, সমাজ ও ইহজগতের মায়া ত্যাগ করে কাকার চলে যাওয়া আমাদের জন্যে চরম বেদনাদায়ক। আর বেদনাময় এই লগ্নে কাকার প্রতি জানাই আমাদের ব্যথাতুর হৃদয়ের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের সুনিপুণ সাংগঠনিক দক্ষতায় বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ আবৃত্তি ও সংগীত সাধনার একটি মহান তীর্থ হিসেবে চাঁদপুরে মর্যাদা লাভ করেছে। সংগঠনের সুশৃঙ্খল পরিবেশে সংগীতচর্চা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অগণিত শিক্ষার্থী, যাদের জীবনে পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরীর কল্যাণকর স্মৃতি অম্লান হয়ে আছে। তাঁর অপরিসীম জ্ঞানের আলোকে আলোকিত হয়েছে আমাদের জ্ঞানপিপাসু হৃদয়, যার প্রদর্শিত পথে আমাদের অগ্রগমন হয়েছে অনেক সহজ-সরল। তাই কাকার অতুলনীয় অবদান আমাদের হৃদয়ে চিরদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এই মহান ব্যক্তির ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে আমাদের হৃদয়ের আবেগ প্রশমিত হয়েছে। এক মহান উদার হৃদয়ের সান্নিধ্যে আমরা এসেছিলাম। তার অনাবিল স্পর্শ আমাদের জীবনের মহত্বের প্রেরণার উৎস। তাই পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরীর বিচ্ছেদ-বেদনা আমাদের কোমল হৃদয়কে গভীরভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে, তবুও অক্ষয় হয়ে থাক আমাদের মনের এই বেদনাময় স্মৃতি। তাঁর প্রেরণা আমাদের হৃদয়ে আলোকবর্তিকা হয়ে থাক। সবার মনেই তাঁর উজ্জ্বল জীবনের অনেক স্মৃতি গাঁথা রয়েছে পুষ্পমাল্যের মতো। তবুও আশা করি আমরা তাঁকে ভুলব না, তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবো তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের কর্ম ও সৃষ্টির মাঝে। সেই সাথে অনুরোধ জানাই তাঁর জীবদ্দশায় অনিচ্ছাকৃত ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্যে। সেই সাথে পীযূষ কাকার আত্মার পারলৌকিক সদগতি কামনা করছি।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, চাঁদপুর।