প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
স্বাধীনতা আমার
স্বাধীনতা আমার এক সাগর রক্তের প্রতিচ্ছবি
লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ, মা-বোনের সম্ভ্রম
নোনাজলে বুক ভাসানোর স্মৃতিচিহ্ন।
স্বাধীনতা আমার নেতার তর্জনী-ডাক
কম্ভুকণ্ঠের দরাজ সুর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠভর্তি যোদ্ধাশ্রোতা।
স্বাধীনতা আমার বীরসেনানীর রাইফেলের সাঁ সাঁ শব্দ,
মিছিলের গান; বেতারের সুর-
মাটিতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ
মায়ের আর্তনাদ, বোনের আহাজারি,
বাবার অশ্রুমাখা চোখ।
স্বাধীনতা ব্যাংকার, কামানের বিরুদ্ধে
গ্রাম্য যুবক মালেক, রহিমের শূন্যে উঁচিয়ে ধরা থ্রি-নট থ্রি রাইফেল, স্টেনগান
লাল-সবুজ মানচিত্রের পতাকা।
স্বাধীনতা কবির লেখা কবিতা
শিল্পির রং-তুলিতে আঁকা ছবি, দ্রোহ আর সাহসের নাম;
ভয় হারানো জনতার দেদীপ্যমান শপথ,
মুক্তির নেশা।
স্বাধীনতা আমার ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের স্বদেশ
দেশমাতৃকার মুক্তির চেতনা, দ্রোহ আর আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়ার শপথ, শোষকদের ত্রাস।
স্বাধীনতা আমার শোষণ, বঞ্চনাকে পরাহত করার এক সংগ্রাম
জেল, জুলুম, ধ্বংস আর দুঃসহ অন্ধকারের ইতিহাস পেরিয়ে নূতন সূর্যশিখার রশ্মি।
স্বাধীনতা আমার বুকভরে শ্বাস নেয়ার প্রত্যাশা
সীমান্তের অতন্দ্রপ্রহরী, বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ
আশাজাগানিয়া গান, স্বপ্ন দেখার একবুক জমিন
হাতে পাওয়া এক ফালি চাঁদ, আমার জীবনের কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা।
...
অপেক্ষা
আমি অপেক্ষা করবো অনন্তকাল
অপেক্ষা করবো প্রভাতের শিশিরভেজা শিশিরকণার পানে তাকিয়ে-
যখন কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে প্রকৃতি, জলকণায় ভিজে আসে টিনের চাল, খড়ের গাদি কিংবা কৃষকের পা।
অপেক্ষা করবো বৈশাখের তপ্ত রোদের মধ্যাহ্নে
যে দুপুরে তৃষ্ণার্ত কাক জলপানে হাহাকার করে, পাতারা ঝিমিয়ে পড়ে, ধুলোমাখা পথে ধুলোরা বিদ্রোহ করে বসে।
অপেক্ষা করবো বিকেলের
যেখানে আকাশে নীলের পাহাড় সাজে, পশ্চিমাকাশ রক্তিম লালে আভা সাজায়, সুন্দর খেলা করে যায় বিস্তৃতিজুড়ে।
অপেক্ষা করবো পাখির ঘরে ফেরার ভর সন্ধায়-
যে সময় সব কোলাহল থেমে এক অপাপবিদ্ধ জীবনের সূচনা হয়, সব পাপ পদচিহ্ন পবিত্র জলে ধুয়ে-মুছে পবিত্র হয়।
অপেক্ষা করবো পেঁচার ঘর থেকে বের হওয়া ঘুরে বেড়ানোর রাতে
যেখানে প্রেয়সীরা গল্পে মাতে, ইচ্ছেরা মাথাচাড়া দিয়ে স্বপ্নপূরণ করে,
খেলারা আসর জমায় সুরাপানে।
অপেক্ষা করবো ডাহুকের জলে ডানা মেলে ঝাপটে বেড়ানোর সময়টাতে,
যে সময়ে ভালোবাসারা আদুরে মাতে, নিরবতা গান হয়ে ফোটে।
অপেক্ষা করবো কোকিলডাকা বসন্তে
যেখানে সাজ সাজ রব উঠে, শিমুলের তুলারা আকাশে উড়ে;
নতুন কিশলয়ে সাজে কা-রা, শাখা-প্রশাখা মেলে ঊর্ধ্বে ছুটে।
অপেক্ষা করবো কদম ফোটা বৃষ্টিঝরা সন্ধ্যায়,
যখন মন খারাপের বৃষ্টি ঝরে চলে সারাদিন; একনাগাড় আনমনে, আকাশজুড়ে পিল চমকায়।
অপেক্ষা করবো কাশফুল হয়ে ফোটা এক সম্ভাবনার সময়ে
যে সময়টা হৃদয়ে ঝড় তুলবে ভালোবেসে, স্বপ্ন হয়ে সামনে এগিয়ে চলবে।
অপেক্ষা করবো লালের যখন
কৃষ্ণচূড়া ফোটে চারদিক, লালে লালে শোভিত করে প্রকৃতি; সাজ সাজ রব উঠে আঙ্গিনায়;
আমি অপেক্ষা করবো অনন্তকাল।