বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

গ্রিসে গার্মেন্টস ব্যবসায় অপার সম্ভাবনা, ঝুঁকছেন বাংলাদেশিরা

মতিউর রহমান মুন্না, গ্রিস থেকে ॥
গ্রিসে গার্মেন্টস ব্যবসায় অপার সম্ভাবনা, ঝুঁকছেন বাংলাদেশিরা

ইউরোপের দেশ গ্রিসে বাড়ছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন তৈরি পোশাক কারখানা। ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করেও ক্রমান্বয়ে ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ কর্মী থেকে হয়েছেন একাধিক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক। গ্রিসে এ শিল্পে একচেটিয়া বাজার ধরে রেখেছেন বাংলাদেশিরা। গার্মেন্টস খাতে ব্যাপক সুনামও রয়েছে বাংলাদেশিদের। অনেক উদ্যোক্তাই এখন ঝুঁকছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়। তবে বর্তমানে কর্মী সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

তৈরি পোশাক শিল্পে নিয়োজিতরা জানান, এক সময় স্থানীয় ও আরবদের দখলে ছিল তৈরি পোশাক খাত। বাংলাদেশিসহ এশিয়ানরা কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন তাদের কারখানায়। নানা হয়রানির শিকারও হতেন। এরপর দিন বদলাতে শুরু করে। বাংলাদেশিরা ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন পোশাক তৈরির কারখানা। সফলতা পাওয়ায় দিন দিন বাড়তে থাকে এর সংখ্যা। বর্তমানে এথেন্সে রয়েছে বাংলাদেশিদের প্রায় চার শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ১০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি।

গ্রিসের বাংলাদেশি মালিকানাধীন গার্মেন্টস খাতে এক পরিচিত নাম শেখ আল-আমিন। তিনি গার্মেন্টসকর্মী থেকে বর্তমানে চারটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক। গার্মেন্টস ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন জাতের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রবাস থেকে বৈধপথে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের এনবিআর সিআইপি সম্মাননাও পেয়েছেন এই গার্মেন্টস ব্যবসায়ী রেমিট্যান্সযোদ্ধা।

শেখ আল আমীন জানান, তিনি প্রথমে গ্রিসে গিয়ে ৬ বছর গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তখন অনেক মালিক কর্মচারীদের বেতন দিতো না ঠিকমতো। বাংলাদেশিদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হতো। তখন তিনি গার্মেন্টস মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রতিনিয়ত স্বপ্ন তাড়া করে বেড়াত কীভাবে একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হতে পারেন। এক পর্যায়ে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়। ২০০৫ সালে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

বর্তমানে শেখ আল আমীনের চারটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২ শতাধিক বাংলাদেশির।

শেখ আল-আমীন বলেন, গার্মেন্টস কমিউনিটি ইন গ্রিস প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রিক, আরব ও অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের বাংলাদেশি শ্রমিক ভাইদের সব সমস্যা সমাধান করে আসছি। বর্তমানে বাংলাদেশি মালিকদের কাছে কাজ করে শ্রমিকরা ভালোই আছে। বাংলায় একের অন্যের সাথে কথা বলতে পারে। মালিককে বাংলায় যে কোনো বিষয়ে বলতে পারে। এই ভাইদের কারণেই আমরা ব্যবসায়ীরা আজ এই পর্যায়ে। গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকে সকল শ্রমিকের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই সফল ব্যবসায়ী।

অনেক উদ্যোক্তাই এখন ঝুঁকছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়। তবে বর্তমানে কর্মী সংকটে রয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবাসায়ীরা। গ্রিসের বাংলাদেশি মালিকানাধীন কারখানাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, স্বদেশি মালিকদের অধীনে কাজ করে খুশি কর্মীরাও।

আব্দুল আলী নামের একজন জানান, এখানে আমরা সরাসরি মালিকদের সাথে বাংলায় কথা বলতে পারি। যে কোনো সুখে-দুঃখে আমরা মালিককে পাশে পাই। আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলতে পারি। অন্যদেশি মালিকের অধীনে কাজ করলে এই সুবিধা মেলে না।’

মোহম্মদ রহমান নামের আরেকজন জানান, আগে অন্য দেশি মালিকের কাছে কাজ করতাম, মাস শেষ হলেও বেতন ঠিক মতো দিতো না, এখন আমরা মাস শেষ হওয়ার আগেই চাইলে বেতন পেয়ে যাই। এছাড়া কোনো বিপদে পড়লেও বেতনের টাকা অগ্রিম আনা যায়। বর্তমানে দৈনিক ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করে তার মাসিক আয় দেড় লাখ টাকার মতো। যারা কাজ শিখে পুরাতন হয়েছে, তাদের বেতন আরও অনেক বেশি।

গার্মেন্টস ব্যবসায়ী নুরুল জানান, বাংলাদেশিদের বিশাল একটি অংশ একটা সময় কৃষি খ্যাতে নিয়োজিত ছিলেন। এখন রাজধানীতে স্বদেশিদের কারখানা গড়ে উঠায় অনেকেই গার্মেন্টসে কাজে আসছেন। বর্তমানে গ্রিসের বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলোতে ১০ থেকে ১২ হাজার কর্মীর ঘাটতি রয়েছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস খ্যাতে কর্মী আনার সুযোগ মিললে গ্রিসে ব্যবসার পরিধি আরও বাড়বে বলেও মনে করছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতারা।

বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইন গ্রিসের সাধারণ সম্পাদক সফল গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এইচ এম জাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের বাংলাদেশি মালিকদের চার শতাধিক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে প্রায় ১০ হাজারের মতো বাংলাদেশি ভাইদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। আমাদের ফ্যাক্টরিতে শুধু বাংলাদেশিই নয়, গ্রিক, আলবেনিয়া, পাকিস্তানিসহ বিভিন্ন দেশের লোকজনও কাজ করে। গার্মেন্টস খ্যাতে বাংলাদেশিদের ৯০ শতাংশ ব্যবসায়ীরাই এখন ভালো অবস্থানে রয়েছেন।

এইচ এম জাহিদ ইসলাম আরো বলেন, এখন কর্মীরাও মালিকদের কাছ থেকে ভালো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন, কর্মীরা মালিকদের পাশে পাচ্ছেন সব সময়। আমি নিজেও আমার ফ্যাক্টরির কর্মীদের ১৫ দিন পর পর বেতন দিয়ে থাকি। অন্যান্য মালিকও ঠিকমতো বেতন পরিশোধ করেন। ফলে শ্রমিক ভাইয়েরাও সন্তুষ্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়