প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
নীলনদ, পিরামিড ও হাজারো মিনারের দেশ মিশরে ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার পালিত হয়েছে পবিত্র মিলাদুন্নবী (সা.)। দেশটিতে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার পরই সর্বোচ্চ ধর্মীয় এবং জাতীয় উৎসব হচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। মিষ্টি ভোজনপ্রিয় মিশরীয়রা দিনটিকে মোলিদ আল নাবী বা মোলিদ আল রাসুল (সাঃ) নামেই ডাকেন।
প্রতি বছর আরবি মাস রবিউল আওয়াল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী কায়রোসহ সারাদেশের সুপারশপ থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে হালোয়েত আল-মোলিদ (নবীর জন্মদিনের মিষ্টি) নামের মিষ্টির পসরা দোকানিরা সাজিয়ে বসেন। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের বাদাম, তিল ও চিনির ঘন সিরার মিশ্রণে তৈরি করা হয় এই মিষ্টি। তার মধ্যে ‘মালবান’ নামে মিষ্টি খুবই জনপ্রিয়।
মিশরের অদ্ভুত এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ‘আরুসাত আল-মোলিদ’ ( নবীর জন্মদিনের পুতুল)। চিনি দিয়ে তৈরি এই পুতুলগুলোকে সাদা ও রঙ্গিন কাপড় দিয়ে নববধূর পোশাকের সাজে সজ্জিত করা হয়, যা 'আরুসাত আল-মোলিদ’, যেটি এদেশের শিশুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
মিশরে প্রথম মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের প্রচলন শুরু হয় ফাতিমীয় খেলাফত (১০ থেকে ১২ শতক) যুগের সময় থেকে। জানা যায়, তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী এই দিনে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জন্যে বড়ো বড়ো ভোজনের আয়োজন করতো এবং প্রচুর পরিমাণে হালাওয়েত আল-মোলিদ (মিষ্টি) বিতরণ করতো।
জনশ্রুতি আছে, ষষ্ঠ ফাতেমীয় খলিফা আল-হাকিম আল-আমর মোলিদ আল-নাবী উপলক্ষে তার স্ত্রীদের একজনকে নিয়ে শহরে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। যখন তিনি মুকুট পরে গাড়িতে জনসাধারণের সামনে হাজির হন, তখন লোকেরা তাকে দেখে এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিল যে, একজন মিষ্টির কারিগর নববধূর আকারে একটি মিষ্টির পুতুল তৈরি করে খলিফাকে উপহার দিয়েছিলেন। সেই থেকেই এ দেশে আরুসাত আল-মোলিদ প্রচলন শুরু হয়। বেশিরভাগ মিশরীয়ই মনে করেন এর সঙ্গে ধর্মীয় কোনো সম্পর্ক নেই।
শাফি মাজহাবের দেশটিতে ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত হাত তুলে দোয়া না পড়লেও গত শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর জাতীয় মসজিদে (ইমাম হোসাইন রাঃ মসজিদ) ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে দুহাত তুলে রাসূল (সা.)-এর শানে দুরুদ ও মোনাজাত পড়তে দেখা যায়।
মসজিদের বাইরে সুফি অনুসারীদের দফ বাজিয়ে ইসলামী সংগীত ও রাসূল (সা.) শানে দুরুদ পড়তে দেখা যায়।
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ১২ রবিউল আওয়ালের দু- তিনদিন আগে থেকেই সারা মিশর জুড়ে চলে মিষ্টি বিতরণ। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের হালাওয়েত আল-মোলিদ মিষ্টি বিতরণ করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। পাড়া- প্রতিবেশীরাও একজন আরেকজনকে মিষ্টি উপহার দেন।
১২ রবিউল আওয়াল বা মিলাদুন্নবীর দিনে অনেক মিশরীয় রোজা রাখেন ও অতিরিক্ত সময় ধরে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও সুন্নত নামাজ আদায় করেন। তবে কোনো মসজিদ বা অন্য কোথাও দাঁড়িয়ে মিলাদ কায়েম করতে দেখা যায় না। এদিন সন্ধ্যার পর অনেক মিশরীয় পরিবারকে দেখা যায়, ঘরে রুজ-বি-লাবান (দুধ পায়েস) তৈরি করে ছোট ছোট পাত্রে রাস্তায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে।