প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ভেনিস আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে দুই নিয়মে প্রার্থীর জয়ে অনিয়মের অভিযোগ
নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ইতালির ভেনিস আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শেষে হয়েছে এগারো নভেম্বর। সম্মেলন শেষে সাংগঠনিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে পাতানো সম্মেলন করার অভিযোগ করেন ভেনিসের একাধিক নেতা-কর্মী।
তারা বলছেন, সম্মেলনের আলোচনা শুরু হয় একটি উৎসবমুখর পরিবেশে। হঠাৎ করে সম্মেলন ঘোলাটে হতে থাকে। এরপর সম্মেলনের হল রুমে হৈ-হুল্লোড় বেঁধে যায়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আলোচনা চলতে থাকে। ভেনিসের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সভাপতি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, যাতে কারো কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নির্বাচন করতে কেন ভোটের দিকে না গিয়ে সিলেকশনে চলে গেলেন--এ প্রশ্ন ছোড়েন নির্বাচন কমিশনারদের প্রতি
যথাক্রমে আব্দুর রউফ ফকির, হাজী জসীম উদ্দিন ও শাহ আলম। সম্মেলনে তাদের বিপত্তি এ কারণে দেখা দেয়। তারা বার বার অভিযোগ করেন, ভোটের একটি সুন্দর পরিবেশে সভাপতি ভোটে জয় লাভ করেছেন। তাহলে সম্পাদক পদে ভোটাভুটি দিতে সমস্যা কোথায় ছিল?
তৃণমূল নেতাদের প্রশ্ন, একই সম্মেলনে ভোটের ব্যবস্থা থাকতে সেখানে সভাপতি প্রার্থী ভোটে জয় পেলেন, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নির্বাচন করতে কেন ভোটে না গিয়ে সিলেকশনে গেলেন নির্বাচন কমিশন?
এ নিয়ে শুরু হয় কানাঘুষা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেনিস আওয়ামী লীগের এক নেতা অভিযোগ তোলেন, তাহলে কি আমরা ধরে নিব আর্থিক কোনো লেনদেন হয়েছে? এর ফলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নির্বাচন করতে ভোটে না গিয়ে সিলেকশন করা হলো। এটা নিশ্চয়ই সাংগঠনিক অনিয়ম। তাহলে গঠনতন্ত্র কী বলে? ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনের কাছে আমরা এ রকম আশা করিনি। নেতারা বলছেন, এখনও সময় আছে। ভেনিস আওয়ামী লীগের কমিটি সুন্দরভাবে সাজানোর অনুরোধ করছি।
প্রসঙ্গত, ভেনিস আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে দুজন সভাপতি প্রার্থী এবং চারজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করার কথা থাকলেও সম্পাদক প্রার্থী শাহাদাত হোসাইনের জনসমর্থন দেখে সভাপতি পদে ভোট করে, সম্পাদক পদে সিলেকশন করে বলে এ অভিযোগ উঠে। যার ফলে সম্মেলন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
এরপর সম্পাদক প্রার্থী শাহাদাত হোসাইন এরকম অসংগাঠনিক সম্মেলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের কষ্টের কথা তুলে ধরেন। ৩০ হাজারের বেশি তা দেখেন এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত।
তিনি বলেন, প্রথমে স্মরণ করছি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি,স্বাধীন বাংলার রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হই। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী, বিশ্বনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্যে প্রবাসের মাটিতেও আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি। তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাই। আমরা চাই, বর্তমানে বাংলাদেশে যে উন্নয়নের মহাযাত্রা প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ ভিশন, তা বাস্তবায়ন করার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, সেই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে প্রবাসে একজন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে সব সময় কাজ করে যেতে চাই।
তিনি বলেন, জয়পরাজয় আমি মেনে নিতে প্রস্তুত, তবে যদি ভোটাভুটির মাধ্যমে হতো। আমাকে তো সে সুযোগ দেওয়া হযনি। সিলেকশনে নির্বাচন করলে আমার তো জনপ্রিয়তা যাচাই করার সুযোগ থাকলো না। তাই এভাবে পরাজয় খুবই লজ্জার। মোস্তাক ভাইয়ের সাথে আমাকে ভোটের সুযোগ দিলে সেখানে পরাজয় হলে হাসিমুখে মেনে নিতাম। তিনি আরও বলেন, একই সম্মেলনে সভাপতি পদের জন্য ভোট, সাধারণ সম্পাদক পদ সিলেকশন! কেন ভোট হবে না? কেন এই অনিয়ম?
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইতালি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভোটের বিষয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে চারজন সম্পাদক প্রার্থীর মধ্যে দুজন সম্পাদক প্রার্থী বর্তমানে যিনি সিলেকশনে মনোনীত সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মোস্তাক আহমেদ, তাকে শাহাদাত হোসাইন ছাড়া বাকি দুজন সমর্থন করায় ভোটের দরকার হয়নি। আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ এসেছে, এ রকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এ ব্যাপারে জানতে ভেনিস আওয়ামী লীেেগর সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনার হাজী জসিম উদ্দিনকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ১০ বছর পর ভেনিস আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে চলতি বছরের নভেম্বর মাসের এগারো তারিখে।