প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বিদেশী শ্রমিকরা মালয়েশিয়ান মেয়েদের বিয়ে করলে বিতাড়িত করা হবে : ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক
মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক রুসলিন জুসোহ বলেছেন, বিদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ান মেয়েদের বিয়ে করলে বিতাড়িত করা হবে। মালয়েশিয়ায় পিএলকেএসধারী (অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট) বিদেশি কর্মীদের স্থানীয় নাগরিকদের (মেয়েদের) বিয়ে করা ইমিগ্রেশন আইনে নিষিদ্ধ। এই আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হলে তাদের ওয়ার্ক পারমিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে এবং ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৬/৬৩ (অ্যাক্ট ১৫৫) অনুযায়ী দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে। ৩ নভেম্বর বেরিতা হারিয়ানে এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক।
|আরো খবর
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, দেশের ইমিগ্রেশন আইন ভঙ্গ করে স্থানীয় নারী যদি পিএলকেএসধারী ( শ্রমিক ভিসা) কোনো বিদেশিকে বিয়ে করে, তাহলে তাদের পরিত্যক্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। দেখা গেছে, বিদেশি কর্মীরা বিয়ে করে এবং একটা সময়ে মালয়েশিয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের রেখে নিজ দেশে ফিরে যায়। তখন এই স্ত্রী-সন্তান পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এনজিও তথ্য মতে, এ কারণে মালয়েশিয়ায় সিঙ্গেল মাদারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত । তাই বিদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ার স্থানীয় নারীদের বিবাহ নিষিদ্ধ ।
পিএলকেস হলো মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ করতে বিদেশি শ্রমিকদের একটি ওয়ার্ক পারমিট, যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এক থেকে ১০ বছরের জন্যে সাতটি সেক্টরে দেওয়া হয়।
মুসলিম দম্পতির বিবাহ বৈধ হবে, যদি বিবাহের আইনি প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করে এবং বিবাহবিচ্ছেদ শুধুমাত্র তখনই ঘটতে পারে, যদি তালাকের আবেদনটি শরিয়া আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। অমুসলিম দম্পতিরাও একই ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তবে সিভিল হাইকোর্টের মাধ্যমে বিবাহ নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। পিএলকেস ধারক যারা মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী বা কর্মরত বিদেশি বিয়ে করতে চায়, তাদের আবেদন নিজ নিজ দূতাবাসে পাঠাতে হবে।
ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক রুসলিন জুসোহ বলেছেন, তার ডিপার্টমেন্ট স্থানীয় এবং বিদেশীদের, বিশেষ করে পিএলকেএস ধারকদের বিবাহের বিষয়ে রাজ্যের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলেচনা করবে।
পরিচালক বলেন, অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় এবং বিদেশি বিশেষ করে পিএলকেএস হোল্ডারদের বিয়ে সংক্রান্ত ইমিগ্রেশনের কঠোর শর্ত ও বিধি বিধান মেনে চলতে উপেক্ষা করা হয়। এ বিষয়ে বিদেশি এবং স্থানীয় বিবাহের জন্যে নির্দেশিকা এবং স্পষ্ট স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মধ্যেই মূলত রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় এবং অভিবাসন কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের অধীনে বিবাহ সংক্রান্ত নির্ধারিত আইন লঙ্ঘন করলে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা নিতে পারে।
পরিচালক বলেন, স্থানীয় দম্পতি এবং পিএলকেস হোল্ডারদের বিবাহের বিষয়ে অভিবাসন আইন অনুযায়ী অবিলম্বে প্রদত্ত পারমিট বাতিল করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারি ।
স্থানীয় নারীদের ব্যবহার করা :
সম্প্রতি বেরিতা হারিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি পুরুষরা, বিশেষ করে পাকিস্তানিরা এদেশে থাকার জন্যে এবং ব্যাবসা করার জন্যে আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় মালয় নারীদের বিয়ে করে। পাকিস্তানিরা অধিকাংশ বয়স্ক মালয় নারীদের বিয়ে করে। পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত এমন একটি কেস লক্ষ্য করেছে যে , পাকিস্তানি একজন বয়স্ক মালয়েশিয়ান নারীকে বিবাহ করেছে এবং সে স্ত্রীর নামে ব্যবসা করছে। গত বছর কেলান্টান ইমিগ্রেশন ডিরেক্টর আজহার আব্দুল হামিদকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশিদের দ্বারা করা ১৫ টি আবেদন বাতিল করা হয়েছিল। কারণ, বিদেশিরা শুধুমাত্র তাদের মালয়েশিয়ান স্ত্রীদের নাম ব্যবহার করেছিল ব্যবসা করার জন্যে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেরিতা হারিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় নারীদের বিয়ে করা পাকিস্তানি পুরুষদের দ্বারা ব্যবহৃত কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হলো, ব্যবসা পরিচালনা করার জন্যে শহর এবং বস্তির উপকণ্ঠে অবস্থান করে। যেখানে কর্তৃপক্ষ খুব কমই নজরদারি করে। আরেকটি কৌশল, তারা স্থানীয় নাগরিকের নাম ব্যবহার করে বা ব্যবসার লাইসেন্সে নাম পরিবর্তন না করে নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করে একজন স্থানীয় বাসিন্দার মালিকানাধীন একটি বিদ্যমান ব্যবসা দখল করে নেয়।
সাবাহ থেকে পাকিস্তানি পুরুষ এবং স্থানীয় নারীদের দম্পতিও রয়েছে, যারা বিদেশি স্বামীর সামাজিক ভিজিট পাসের জন্যে আবেদন করে। ২০১৭ সালের মে মাসে বেরিতা হারিয়ানের ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে, সেলাঙ্গর এবং পাহাং-এর ইসলামিক ধর্ম বিভাগ অভিবাসন আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে বিদেশি কর্মীরা সহজেই স্থানীয় লোকদের বিয়ে করতে পেরেছে। প্রকৃতপক্ষে স্থানীয় নারীরা অভিবাসন আইনে নির্ধারিত বিয়ের শর্ত এবং পদ্ধতিগুলো মেনে বিদেশী কর্মীদের বিয়ে করে না, যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসীদের (পাটি) আশ্রয় দেবার অপরাধে বিচার করা যেতে পারে। পিএলকেএসধারী স্থানীয় নারীকে বিবাহ করলেই অবৈধ হয়ে যায় এবং স্বামীর দাবি নিয়ে এই অবৈধ অভিবাসীর তথ্য গোপন করা বা রক্ষা করার কাজটি আইন ১৫৫ (সংশোধনী ২০০২)-এর ধারা ৫৫ই(১) লঙ্ঘন করে, যা অপরাধ এবং এ কারণে দোষী সাব্যস্ত হলে ১০ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত জরিমানা বা সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ছয়টি বেত্রাঘাত দণ্ড হতে পারে। রুসলিন বলেছেন, বিদেশি যারা স্থানীয় নাগরিকদের বিয়ে করতে চান, তাদের নিয়োগকর্তার তথ্য সহ সম্পূর্ণরূপে একটি বিশেষ ফরম পূরণ করতে হবে। এই পদ্ধতিটি শনাক্ত করতে পারে যে বিদেশিকে বিবাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কিনা।
তিনি বলেন, যে সকল ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ বিদেশিকে বিয়ে করার আবেদনের প্রাথমিক তথ্য পান, তাদের উচিত সে তথ্য অভিবাসনকে জানিয়ে দেওয়া। যে আইন ভঙ্গ করছে কি না তা নিশ্চিত হতে। পরিচালক বলেছেন, বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় বিদেশী শ্রমিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় শুধুমাত্র ভিসায় উল্লেখিত নির্ধারিত সেক্টরে কাজ করার জন্যে, বিয়ে করার জন্যে নয়।