প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
জগদ্বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করলো বাংলাদেশের সোনার ছেলেরা। এবার স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষার শীর্ষ দশে নাম লিখালেন তিন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী। গত ২০ শে সেপ্টেম্বর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তাদের ভেরিফাইড অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে স্নাতক মেধা তালিকার ফলাফল প্রকাশ করে তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
পেইজটির তথ্যমতে, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ইসলামিক থিওলজি ফ্যাকাল্টির হাদিস ও উলূমুল হাদিস ডিপার্টমেন্টের স্নাতক চার বছরের সমষ্টিগত ফলাফলে সকল বিদেশী শিক্ষার্থীর মাঝে সেরা দশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের তিন মেধাবী শিক্ষার্থী।
আল-আজহারের প্রতিটি শিক্ষাস্তরে অভূতপূর্ব সাফল্যমণ্ডিত পদচারণা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। সেই ধারাবাহিকতায় হাদিস ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের এ সাফল্য বাংলাদেশের প্রাপ্তির তালিকায় এক গৌরবময় সংযোজন।
স্নাতক সেরা দশে জায়গা করে নেওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা হলেন : ১. পাবনা জেলার গোলাম মোস্তফার সন্তান
মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম। গড় নাম্বার : ৯০%, মেধা স্থান : দ্বিতীয়। ২. ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আব্দুল হামিদের সন্তান জাফর উল্লাহ। গড় নাম্বার : ৯০%, মেধা স্থান : তৃতীয়। ৩. কুমিল্লা জেলার মাওলানা আবুল বাশারের সন্তান মুহাম্মদ আব্দুস সালাম। গড় নাম্বার : ৮৭.৪৫%, মেধা স্থান : ষষ্ঠ। তাছাড়া ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (সানুভি) পরীক্ষায় সেরা দশের ৭ জনই ছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন মিশরের গ্র্যান্ড ইমাম ও শাইখুল আজহার ড. আহমাদ আত-তাইয়্যাব। বিদেশী ছাত্রদের শিক্ষা অর্জনের জন্যে স্বদেশ ত্যাগ ও সার্বিক মেহনত-মুজাহাদার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। তিনি শিক্ষার্থীদের সফলতা কামনা করে বলেন, আমি আশা করছি তারা সকলেই নিজেদের দেশে ফিরে আল-আজহারের প্রতিনিধিত্ব করবে।
এদিকে গত শুক্রবার মিশরে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ইত্তেহাদ’-এর বার্ষিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই গৌরবময় ফলাফলের জন্যে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশী কারো সফলতার কথা শুনলে গর্বে বুক ভরে যায়। আমি কৃতী শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি'।
মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থী মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম তাঁর সফলতায় অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, সর্বপ্রথম আমি শোকরিয়া আদায় করছি সেই মহান রবের, যার অশেষ কৃপায় এই অর্জন। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি পিতা-মাতা, উস্তাদগণ ও সেই সব প্রিয়জনের প্রতি, যারা আমাকে আমার লক্ষ্যবস্তু পর্যন্ত পৌঁছতে সার্বিকভাবে সাপোর্ট করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, জীবনের এই অর্জন মোটেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যবস্তু নয়, তবে জীবনের পরবর্তী ধাপগুলোর জন্যে এটা অনুপ্রেরণা৷ মেধাবী এই তরুণের স্বপ্ন তিনি দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর খেদমত করবেন।
মেধা তালিকার তৃতীয় স্থানের অধিকারী শিক্ষার্থী জাফর উল্লাহ বলেন, আমি আমার এই সফলতার জন্যে মহান রবের দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি। পাশাপাশি আমার পরিবার, দেশ-বিদেশের সকল শিক্ষকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, যাদের সহযোগিতায় আমি আজ এ পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি। বিশেষভাবে স্মরণ করছি শরিফ উদ্দিন আব্দুল মান্নান ভাইয়ের সহযোগিতার কথা, যিনি আমাকে আল- আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ব্যাপারে অনেক সহযোগিতা করেছেন। পরিশেষে আমি সবার কাছে দোয়া চাই, আমি যেন দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্যে কাজ করতে পারি৷
মেধা তালিকার ষষ্ঠ স্থানের অধিকারী শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, মিশর ও আল আজহারে আমার শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য ছিল, আরবি ও ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ক এখানকার চর্চা ও কার্যক্রমগুলো কাছে থেকে দেখা এবং যথাসম্ভব উপকৃত হওয়া। তাই বিগত চার বছরে যতটুকু অর্জন করতে পেরেছি, তার জন্যে এবং ভালো ফলাফলের সাথে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে পারায় মহান আল্লাহর শোকর আদায় করছি৷ আরও শোকরিয়া জানাচ্ছি আমার মা বাবা, শিক্ষকবৃন্দ, আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়জনদের। সাথে সাথে নবীনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, একাডেমিক ফলাফলের সাথে শাস্ত্রীয় অধ্যয়নের প্রতিও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।