প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দেবদাস কর্মকারের কবিতা
সেই ছেলেটি
সেই ছেলেটি দাঁপিয়ে যেত বন বনানী গাঁয়ের পথে
পাখ পাখালি বনের লতা নামত যারা আলোর রথে
তাদের সাথেই সখ্যতা তার পথের ধুলার আসন তলে
সারাটা দিন হারিয়ে যেত কান্না হাসির কোলাহলে।
দশ বছরের ছেলেটি যে দেখেনি তো পিতার মুখ
অভাব ভরা সংসারে সে ভরিয়ে দিত মায়ের বুক
নিত্য দিনের টানাটানি তবু মন ভরা যে শান্তি তার
ভয়কে করে থোরাই কেয়ার জয় করে সে সকল হার।
কাজে এসে এই শহরে স্বপ্ন দেখে সকল রোজ
বাসের ভিতর রাত্রি কাটে সে কথা কে রাখে খোঁজ
হেলপারের জীবনগাথা কে বা রাখে তাদের নোটে
রাজনীতির সব খটকা যত লুকান যে জটিল ভোটে।
শিশির ঝরে গভীর রাতে হয়নি যেন তখোন ভোর
পরিশ্রমে ক্লান্ত শরীর কাটে না তো ঘুমের ঘোর
হঠাৎ কে ছুড়ল আগুন বন্ধ হলো নাকের শ্বাস
হারিয়ে গেল সেই ছেলেটি ঘটলো কী যে সর্বনাশ।
নেই তো ক্ষুধা আরতো এখন আয়রে ছেলে ফিরে আয়
মেঠো বাতাস উঠছে কেঁদে কুটছে মাথা মায়ের পায়
নিরব রাতে শব্দ ওঠে দূরের কোন নদীর পাড়ে
কেউ কি তাকে পাবে আর জ্যোৎস্না ভেজা মেঘের আড়ে?
২২ নভেম্বর ২০২৩, ঢাকা, ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০, হেমন্তকাল
কী করে হৃদয় সরিয়ে রাখি বহুদূর
ঘুম থেকে জেগে দেখি কাকের সকাল
কার্তিকের ধান ক্ষেত নুয়ে গেছে নদীর উপরে
এসেছে ধানের মোচা এলাচ ফুলের কুঁড়ি
মুক্তা দানার মতো শিশিরের ফোঁটা সারা দেহে তার।
কুয়াশার পথে হৃষ্ট পাখিদের ঝাঁক, দারুণ আকাশ
খৈ রঙা ডানার নিচে যখোন কাঠালি চাঁপার ঘ্রাণ
সূর্য জ্বলার আগে উদ্ভাসিত রৌদ্র বিন্দু নানান রঙে,
হৃদয় সরিয়ে কী করে রাখি বহুদূর!
পৃথিবীর কতো জনপদে নিগৃহীত যত মানুষের কথা
অদ্ভূত আঁধারে আত্মদীরণ চীৎকার, মৃত্যু, ছিন্ন মুণ্ডু
এই ভোরের ওপারেও কি আছে ভোর!
নিস্তব্ধ মেঘের পরে ইন্দ্রনীল পথেও অদ্ভূত বিভ্রম
মানুষের মনের ভিতর যে সিঁড়ি তা কি অধোমুখি!
নিজেই নিজের প্রতিপক্ষ আজ ভ্রান্ত মানুষ।
তবুও আকাশ উদ্ভাসিত এই মৃদু ভোর, নদী, ধানের গন্ধ
দূরে পথরেখায় ক্রমশ বিলীয়মান গাঁয়ের মেয়েটির মুখ
সরল-জটিল আবর্তন জীবনের নানান ছন্দ ঘৃণা প্রেম
এই দুদণ্ড উজ্জ্বল পরিহাস তৃণের প্রাণের রঙে
যখোন ডানার ছায়া ফেলে ওড়ে হৃষ্ট আকাশে এক ঝাঁক পাখি
এমনি সময় কী করে হৃদয় সরিয়ে রাখি বহুদূর!
০৫ নভেম্বর ২০২৩, ঢাকা, ২০ কার্তিক, ১৪৩০
ফটোক্রেডিট : ওয়াসিম।
যারা প্রভু হতে চায়
সবাই প্রভু হতে চায় পার্থিব ভুবনে
কেমন আরূঢ় ভণিতা জানে গোধূলির মেঘ
ধূসর বাতাস তবু চায়ের চুমুকে,
চারিদিকে কতো লোক কতো দুঃখ
কতো যুদ্ধ অকারণ রক্তের হোলি খেলা।
যারা প্রভু তারা বড্ডো যুদ্ধবাজ
কী বা আসে যায় তাদের অমানবিক দ্বেষে
কে শোনে কার কথা
যখোন বিশ্বময় নিকৃষ্ট জয়ের শ্লোগান।
যারা প্রভু হতে চায় তারা একবারও কি দেখে না
মাঠ জুড়ে কতো শ্যাম সোনা মুখ ধানের মঞ্জরী
কোন স্নিগ্ধ শ্যামাঙ্গীর সুগভীর জলভরা চোখ
খুদে খুদে ঘাস ফুলে কতো প্রাণ
বর্ণময় অমরত্ব নেই, শুধু সৃষ্টি জুড়ে মরত্বের জয়
যারা প্রভু হতে চায় তারা যদি গোধূলির ক্ষণে
একবার ফিরে আসে প্রেম ছুঁয়ে জোয়ারে ভাটায়।
বোবা হয়ে গেছে মুখ নক্ষত্রের অতীত সব কথা
নতুন জেগেছে যারা ঘৃণাভরে তারা প্রভু মানুষের
মধ্য পৃথিবীর কথা, অণুকণাটির উচ্ছ্বাস
প্রিয় মানুষের করুণ মুখখানি মনে যদি ভাসে একবার
হয়তো সে প্রভু নয়, মন তার ভিজে যাবে মেঘ রঙে
যেমন তরুণ আলোয় ভেজে ভোরের আকাশ।
২৫ আগস্ট ২০২৩, ঢাকা, ৯ কার্তিক ১৪৩০
কাঁটা
দুদণ্ড দাঁড়াতে যদি একবার কথা হতো তবে
শরৎ ছুঁয়েছে সবে রোদ, বৃষ্টি, আকাশের মেঘ
যখোন পিছনে টানে স্বপ্নে জোড়া দিন
লাল নীল হাজার টুকরো হীরা অভিমান।
ইচ্ছে করে না কিছু, জীবনের জট খুলে খুলে দেখি
কতো চাঁদ ভাসা আলো কতো দ্যুতি খসে পড়ে মুখে
জানালার ফাঁকে হাড় মজ্জায় টুকরো টুকরো গল্পে
মনের আড়ালে সরসরা চরে শীতের নদীর মতো।
নীল স্নিগ্ধতা মেখে বনের শেষ ঘুঘুটি যায় উড়ে
জল সেঁচে দেখি নদীর পলিতে তোমারই পায়ের ছাপ
পাথর সময়ে স্মৃতিরা পোহায় রোদ অনায়াসে
বাড়ে বেলা জীবনের কোণে আগাছার জঙ্গল
ধুয়ে মুছে ফেলি সব কাঁটা ঝোঁপ ঝাড় লতাগুল্ম
তবু দেখি চোখের কাজলে ঢাকা একটি কাঁটা
রয়ে গেছে যেন মনের গভীরে।
৬ অক্টোবর ২০২৩, ঢাকা, ২১ আশ্বিন ১৪৩০