প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
যেখানেই রাখি হাত
যেখানেই রাখি হাত কেবল শূন্যতা
এই গৃহকোণ অগাধ প্রশান্ত স্বপ্ন
হাত রাখি বৃক্ষের ডালে, এ অনন্ত বীথি আমার নয়,
কী করে ভাবি তোমাকে উপেক্ষার কথা
বৃষ্টিভেজা ভোর হাওয়া দেয় চোখে মুখে
জলমেঘ ছুটে আসে জানালায়
কী করে এড়াই সব নিজের মতো করে।
কতো সব আসটে হৃদয় কতো মানুষের,
কতো রূঢ়তা আত্মকেন্দ্রিক জীবনের গান
বিদ্রূপ করে তারা হৃদয় রেখেছে দূরে
ভালোবাসা মরে গেলে কী থাকে আর ?
মেঘের আকাশে যেন আকাঙ্ক্ষার শরীর
নিবিষ্ট মনীষায় করি অনুভব নিটোল মুখের ছবি।
উঠানের কোণে ভিজে মৃত্তিকায় পড়ে ছায়া
সজিনার ফুলে ফুলে কতো সন্ধি নিত্য বাতাসের
যে তুমি সুন্দর আমার জীবন মৃত্যু নিয়ে করো খেলা
কী করে বলি তোমাকে উপেক্ষার কথা
যখোন আকাশরেখার পাশে আমার আমন্ত্রণবীথি,
সুদূর অনন্ত পথ,
ঠেস দেই মুখোমুখি জানালায়,
সকল শূন্যতা ভেঙ্গে মলিন সবুজে দেখি জলমেঘ
চঞ্চল ছুটে আসে কাছে।
২৪ জুন ২০২৩, ঢাকা, ১০ আষাঢ় ১৪৩০
তাড়া
তাড়া আছে বলেই অন্য আকাশ
নির্জন ঘুমের ঘোরে রাত্রির ছায়া উঠে জেগে
ক্লান্ত প্রবাসে অনুপম কতো নীলাভ আলো
চাঁদ জ্যোৎস্নার বিমিশ্রিত খেলা
শুধুই রহস্য জীবন বেলার, কিসের এই তাড়া!
ডেকে যায় যেন দূরের কুহক।
নিরূপায়, তাড়া দেয় বুঝিবা অধম অন্ধকার,
যতদিন না যতিহীন আলোর উৎসব
আকাঙ্ক্ষার রূপালি নদী বয়ে যায় একা
অপেক্ষার পালা তোমার সৃষ্টির আবেগ
করো পূর্ণ হে বিচিত্র কতো বিচিত্র সুরে
কী বার্তা পাঠাও প্রাণে, বহুদূর থেকে?
কতোটুকু কাছে আসো যতোটুকু না এলেই নয়
খুব তাড়া ফিরে যেতে, নরোম নিবিড় স্বরে
যেন সে বলে "ও তুমি বুঝবে না আর"
চোখের জানালা বেয়ে যেন নেমে আসে মেঘ
কাচঘেরা ছাদ চুঁইয়ে নামে বৃষ্টি
যায় ভেসে জলে সব খৈ রঙা পথ
ভিজে বেদনার মাঝে করবী ফুলের ঘ্রাণ
কখোন ফুরাল যেন জীবন জীবন খেলা
কতো কৃষ্ণাচতুর্দশীর রাত, ধান ভরা মাঠ
ক্ষীর নদী, বৃষ্টির ডাক, নাকছাবি মুখ, ভাঙ্গা খুঁটি
আরও কতো কিছু,
তাড়া, ফিরে যাবো জানি,
না হয় কিছুটা সময় যদি থাকি অতল অবধি।
১ জুলাই ২০২৩, ঢাকা, ১৭ আষাঢ় ১৪৩০
প্রত্যাবর্তন
মাঝে মাঝে নিভে গেলে, কতোটা খারাপ হয় সব
ধানের ফুলের গন্ধ তখোন বাতাসে উঠে ভেসে
রাতের আকাশ জুড়ে টিম টিমে তারা ঢাকে মেঘে
প্রান্তর ভরা ঘাসের ভিতর নির্বাক কীটের শরীর।
মাঝে মাঝেই ডুবে গেলে নদীও শুয়ে থাকে একা
কতোটা গভীর তার বিপুল বেদনার স্বর
চুপি চুপি কতো স্বপ্ন হৃদয় মানুষের,
আকীর্ণ ধূসর প্রশ্ন, আনন্দের অব্যক্ত অন্তরাল
কতো অতীত কতো চেনা মুখ কতো করুণ সৌন্দর্য
অজ্ঞাত পৃথিবীর সকল নরোম ঘ্রাণ
অপূর্ণ ইচ্ছার কথা কেবা রাখে মনে!
যখোন কৌতুকী ঠোঁট মরণেরে ভোলে অনায়াসে
কতো শান্তি, শ্রাবণ রাতের ঘুমের ভিতর
নিরালোকে যেন ব্যথা নেই আর
তবু হলুদ পাতার অতলে ঢাকে ছায়ার শরীর
নীলাভ খোঁপার কথা মেঘ জ্যোৎস্নার আলো
নির্জন পৃথিবীর একপাশে, মনে পড়ে
খুব পড়ে মনে, নিভে গিয়ে ফিরে আসো যখোন আবার।
১২ জুলাই ২০২৩, ঢাকা,
২৮ আষাঢ় ১৪৩০
সহজ কথার মতো পথ
হেঁটে যেতে যেতে সহজ কথার মতো পথ
ছেঁড়া ফাড়া, রোমাঞ্চিত জীবন এই পৃথিবীর
রৌদ্র সবুজে ধীরে ধীরে নেমে আসে কতো ক্ষয়
ঝাউয়ের সড়ক চলে যায় কোনো সমাধি বেদীতে,
শস্যের উৎসবে এসেছিল যখোন প্রথম মানবী
শঙ্খের মতোন দেহে আদিম মাটির ঘ্রাণ নিয়ে বুকে।
সময়ের সেতু ভেঙ্গে এখনও সে যায় বহুদূর
কতো অবরোধ বঞ্চনা কতো রোষানল, ক্রুদ্ধ পুরুষ
সভ্যতার ঊষালগ্নে যা ছিল এখনও তা আছে
তবুও মহূয়া মাতাল ঘোরে কুহক উঠে জেগে
যুথবদ্ধ হতে স্বপ্নাতুর নেশা ঘোর, কতো সাধ মানুষের।
পৃথিবীর মিহি রোদের ভিতর চোখের সৌন্দর্য
সমস্ত প্রণয়ের কথা সমস্ত বোধ গ্লানি জয় পরাজয়
ঈর্ষা গৌরব দ্বেষ যৌনতা অন্তরের উৎসারিত রস
পচা সব উদ্ভিদের মাঝে শব্দহীন অণুজীব।
মাছি ওড়ে ঘাসের উপর
নল খাগড়ার শিরে লাগে হাওয়া,
সবুজ বৃক্ষ শুষে নেয় মানুষের বিষ
শস্যের প্রথম উৎসবে শঙ্খ শরীরে এসেছিল প্রথম মানবী কাছে,
আকাশের নীলে স্থলে জলে ডুবিয়ে নিজের শরীর
নিঃশব্দে ছড়াল সে সুগন্ধ, সৌন্দর্যের ফুল
কতো কতো ব্যথিত অতীত
ধূলো মাখা পথে সব পদচিহ্ন মুছে যায় শেষে
সময় ফুরালে কেবা আর কাকে রাখে মনে!
২১ জুলাই ২০২৩, ঢাকা, ৬ শ্রাবণ ১৪৩০