বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩, ০০:০০

তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম
আবদুর রাজ্জাক

কী লিখব! যাকে নিয়ে লিখব তিনি কালান্তরিত। মহাকালের বুকে মিশে গেছেন। আজ তিনি মুক্ত পাখি। সকল বাঁধন কেটে অসীমের সমীপে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। তার সংসার-মায়া, যাপিত-জীবনের অন্তর্ধান হয়েছে। কবির এ কালান্তরীণে আমার বুকে একগুচ্ছ মেঘমালা চেপে আছে। অন্তরে অসীম দহন। রক্তক্ষরণ হচ্ছে হৃদয়ে। চোখে পানি, সম্মুখে অনামিশা। ভাবছি, এসব কী হচ্ছে, আর কী ঘটছে! হাত কাঁপছে। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা বোধ করছি। কবি নেই, তাই বলতে হয়-

নয়নও সম্মুখে তুমি নাই

নয়নের মাঝখানে

তুমি নিয়েছো যে ঠাঁই।

কবির এমন আকুতিই আমার বুকের জমানো মেঘমালা বজ্র হয়ে ঝরাচ্ছে। যার কালান্তরিতে এতো ব্যথা, তিনি মুক্তমনা লেখক, সংগঠক, প্রাবন্ধিক কবি তছলিম হোসেন হাওলাদার।

সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। চাকরির শুরুতেই আমার কর্ম এলাকা ছিল চাঁদপুর। সাহিত্যের সেই অনুরাগে প্রায়ই চাঁদপুর রেলওয়ে কোর্টস্টেশনস্থ বইয়ের দোকানে যেতাম। জাতীয় দৈনিক কিনতাম। কিনতাম স্থানীয় জনপ্রিয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠও। পাঠক ফোরাম ও সাহিত্যপাতা নিয়মিত পড়া হতো। সাহিত্যপাতা ও পাঠক ফোরামে চাঁদপুরের নবীন ও প্রবীণদের লেখা থাকতো। চাঁদপুরের যারা সাহিত্যচর্চা করেন তাদের সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের সাথে পরিচয় হলো। কিন্তু কারো সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না। একদিন সাংবাদিক ও গীতিকবি কবির হোসেন মিজিকে আমার লেখালিখির কথা জানালাম। তিনি আমাকে কবি ও প্রাবন্ধিক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। চাঁদপুর কণ্ঠে কবিতা পাঠালাম। ছাপা হলো। চাঁদপুরে যারা সাহিত্যচর্চা করেন তাদের সাথে পরিচয় হলো। পরিচয় হলো আমার কাঙ্ক্ষিত কবি তছলিম হোসেন হাওলাদারের সাথেও। ইতিমধ্যে আরো বেশ ক’জন সাহিত্যকর্মীর সাথে আমার পরিচয় হয় এবং গভীর সখ্যতা গড়ে উঠে। কবি ইকবাল পারভেজ, গল্পকার কাদের পলাশ, অনুবাদক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিনসহ অনেকের সাথে।

কাজ শেষে বিকেলে, গোধূলি ও সন্ধ্যায় আমরা মেতে উঠতাম আড্ডায়। কখনো আশ্রমের উঠোন, রেললাইনের পাশে চায়ের দোকান, সাহিত্য একাডেমির আঙিনা, জোড় পুকুরপাড়ে আমাদের সময় কেটেছে সমকালীন সাহিত্যের আলোচনা নিয়ে। নিজেদের লেখালেখির ফলোআপ। সমালোচনা ছিল আড্ডার প্রধান বিষয়। চাঁদপুর শহরের নানা জায়গায় আমরা সমবেত হয়েছি। কবি তছলিম হোসেন হাওলাদার পুরাণবাজার থেকে নিয়মিত আমাদের আড্ডার সারথি হতেন। তার সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি আড্ডাকে প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর করে তুলতো। তিনি আধুনিক সাহিত্যের প্রতি গুরুত্ব দিতেন। সমকালীন সাহিত্যে তার আগ্রহ ছিল। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমিতে তিনি তার ‘কুত্তা’ গল্প পাঠ করে সকল দর্শকদের মনে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কখনও শাশ্বতে’ যাপিত জীবনের নানা চিত্র চিত্রায়িত হয়েছে। তিনি মূলত তার কাব্যে সহজ-সরলভাবে সবকিছু উপস্থাপন করতে পারতেন। তার উপন্যাস ‘স্মৃতির অন্তরালে’ও, ‘সম্পর্ক’। এছাড়াও ‘আমার কথা’, ‘মাঠের যোদ্ধা চাই’ এ দুটি তার প্রবন্ধগ্রন্থ। সমাজের নানা অসংগতি তুলে এনেছেন তার প্রবন্ধে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকা অনাচার, অসত্যতা, প্রবঞ্চনা থেকে বিরত থাকা একজন মানুষের চরিত্রই মূলত তার চিত্রায়িত মাঠের যোদ্ধা। তিনি ছিলেন খাঁটি দেশপ্রেমিক। তিনি আমাকে সাহিত্যের নবীন ও আধুনিক সাহিত্যিকদের সৃজনশীল লেখাপড়ার পরামর্শ দিতেন। আমার লেখার তিনি একজন তির্যক সমালোচক ছিলেন। তিনি আমার লেখা কবিতা খুবই নিগূঢ়ভাবে ব্যবচ্ছেদ করে তাঁর নিজস্ব মন্তব্য দিতেন।

সময়ের পরিক্রমায় আমাদের বন্ধন আর সাহিত্যের আড্ডার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। যা গড়িয়েছে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে। তিনি একান্ত কাছের একজন বন্ধু ও অভিভাবকের স্থান দখল করেছিলেন। আমার স্ত্রী তাকে শ্রদ্ধা করতো এবং তার বিষয়ে খোঁজখবর নিতো।

কবি আজ নেই। তিনি শুধুই ছবি। তার স্মৃতি ছবির মতো চোখে ভাসে। এমন একজন কবি, ভালো বন্ধু ও সতীর্থকে হারিয়ে বুক থেকে দীর্ঘশ্বাসে বেরিয়ে আসে ‘কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়, কেন দুঃখ হারায় না’।

আবদুর রাজ্জাক : শিল্প সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘চন্দ্রদ্বীপে’র সম্পাদক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়