প্রকাশ : ০১ মে ২০২৩, ০০:০০
গণিত শাস্ত্রের ‘শূন্য’ একটি মহামূল্যবান সম্পদ। যার আবিষ্কারক ভারতীয় ঋষি ও গণিতবিদ ব্রহ্মগুপ্ত, মতান্তরে আর্যভট্ট অথবা কনাদ। শূন্যের ভূমিকা গণিতে অপরিসীম। শূন্য তার ডানদিকের সকল ধনাত্মক অংক এবং বাম দিকের সকল ঋণাত্মক অংকের মধ্যে একটা অবিকৃত ভারসাম্য বজায় রাখে। আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ডান দিকে যতদূরে ধনাত্মক অংকটির অবস্থান, বামদিকে ঠিক ততটুকু দূরেই ঋণাত্মক অংকটির অবস্থান।
এই শূন্য মহাজাগতিক বিবেচনায় নিরাকার মহাশূন্য নামে অভিহিত। এর একটা গোলাকার আকৃতি রয়েছে, তার প্রতীক হলো '০'। এটা কিন্তু যুগ্ম প্রতীক ছাড়া অর্থহীন। এর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আকৃতি হলো বলো বিন্দু .। যার শুধুমাত্র অবস্থান আছে। এই বিন্দু হলো পদার্থের অতি ক্ষুদ্রতম কণা। যার মধ্যে ৩০.৩ মিলিয়ন অশ্বশক্তি সম্পন্ন শক্তি জমা আছে। এই তথ্যটি বিজ্ঞানী আইনস্টাইন আবিষ্কার করেন। যা মানব কল্যাণে প্রভূত উন্নতি সাধিত হওয়ার পরিবর্তে মানব সভ্যতার ইতিহাসে জাপানে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের উদাহরণ হিসেবে খচিত আছে। পরমাণু ও তার অভ্যন্তরীণ শক্তি রহস্যের অন্তর্ভেদের মধ্য দিয়েই পরমাণু বোমার বীজ রোপিত হয়। এর ফলে বস্তুজাগতিক বিশ্বের সাথে মহাজাগতিক বিশ্বের যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তাতে পরিষ্কার যে, বস্তু এবং শক্তি অবিনশ্বর।
যে নিরাকার মহাশূন্যের রূপ নেই, কিন্তু জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষের প্রতি পরতে পরতে প্রতিভূ বিরাজমান, তাঁকে কল্পনার পর্দায় প্রতিষ্ঠা করা সসীম মানুষের পক্ষে অবশ্যই সাধ্যাতীত। সে অসহায়ত্ব ঘোচানোর জন্যেই চিন্ময়ী কল্পনাকে প্রতীকী কল্পনার পর্দায় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এই অবণীতে প্রায় ৭.৮৯ মিলিয়ন জনসংখ্যা আছে। যত মানুষ ততটি মন এবং মানবীয় মনের গভীরতাও তত প্রকার। কেউবা কালো, কেউবা ধলো, কেউ বা লম্বা, কেউ বা বেঁটে। এই চরাচরে ধর্ম বিশ্বাসের প্রবল বিভিন্নতা রয়েছে। মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই সকল নবজাতকই মানব শিশু মাত্র। স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে একটা নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর বিশেষ সংস্কারের মাধ্যমে হয়ে যায় ধর্মী অথবা বর্ণিল। শাশ্বত প্রচলিত ধর্মগুলোর স্রষ্টাইতো প্রতিভূ সৃষ্টি করেন। কাজেই ধর্মের তো শুধুই মান আছে। অপমানে বিশ্বাসী তো চরম মূর্খতা। জৈবিক তাগিদে মানুষ নিজেই নিজের পরিচালক। যেমন : নিজেই নিজের চাহিদা মিটাতে হয়, ক্ষুধা বা তেষ্টায় নিজেই খেতে হয় অথবা পান করতে হয়। পাপ পুণ্যের ফলাফলেও অন্য কোনো অংশীদার নেই। শেষ বিচারের দিনের অপেক্ষায় না থেকে তাৎক্ষণিক হানাহানিতে মেতে যাওয়াও ধর্মীয় বিধানের পরিপন্থি। যে যন্ত্রটির সাহায্যে মানুষ পৃথিবীতে সুবিচার, সহমর্মিতা, সৌভ্রাতৃত্ব, শান্তি ও সহনশীলতা সমৃদ্ধ এক সুন্দর পৃথিবী তৈরি করতে পারে, সেই যন্ত্রটির নাম 'মন'। যা জ্ঞান আহরণের একমাত্র সাধিত্র। কোনো ঘটনা বা বিষয়ের ওপর গভীর মনন-চিন্তন-পর্যবেক্ষণ-পরাক্ষণ-বিশ্লেষণ ও আলোচনা জ্ঞান আহরণের প্রধান উপায়। সেই বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান মানুষকে অমানবিকতা থেকে বিরত রাখবে। স্রষ্টার সৃষ্টি সকল মানুষের এক ফোঁটা রক্তে পাঁচ মিলিয়ন লোহিত কণিকা সহ অন্য সব উপাদান অভিন্ন। এটা সৃষ্টির সকল বিস্ময়ের বিস্ময় নয় কি? অগ্রে মহাশূন্যের সৌরজগত- ধরিত্রী, পশ্চাতে মানবকল্যাণে ধর্মের সৃষ্টি। মানব সৃষ্টির উপাদান যেহেতু একই, সেহেতু সকল মানুষের ধর্মও এক, আর সেটি হলো 'মানব ধর্ম'। উপাসনায় দৃঢ় প্রতীতি আনে সফলতা, ভগ্ন প্রত্যয় থাকে নিরাশায়। কেউ বা নিরাকার উপাসনায় সফল, আবার কেউবা সাকার উপাসনায় সফল। বিদায় হজ্বে বিশ্বনবীর এক মহা মূল্যবান উপদেশ 'ধর্ম নিয়া বাড়াবাড়ি নয়'।