প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
নীল হাড়গুজি ফুল
যখোন বিকেল বেলা আমি যেন চলেছি কোন্ দূরে
এঁকে বেঁকে গেছে ক্ষীণকায় পিচঢালা গেঁয়ো পথ
শব্দহীন ত্রিচক্রযান, কোন তাড়া নেই যেন তার
সুন্দর ঘন বন লোকালয় পেয়ারা লেবু আমড়ার ঝোপ,
নদী চলেছে বয়ে ধীরে অপূর্ব জলরেখা নিয়ে বুকে
আকাশে ফাগ রঙের বিন্যাস জলের উপরে উঠেছে ফুটে।
কী সুন্দর স্বাধীনতা কতোদিন পর যেন দেখি তারে
অচেনা নারীর কাঁখে কল থেকে জল ভরা কলসীর ভার
জেগে উঠেছে আমার স্মৃতিভ্রষ্ট সনাতন মন,
মাঠে মাঠে পাকা কতো সোনালি রঙের ধান
বাতাসে ভেসে নেমেছে ক্ষেতে মুনিয়ার ঝাঁক,
শিরিষের পাতা পড়েছে নুয়ে ঘুমে।
হয়তো নেই মনে এই পথে কোনো দিন গেছি কিনা আর
ভীমরুলি কুড়িয়ানা জলাবারি ছেড়ে অন্য কোনোখানে,
পাটিতার বনে শুনি সেই শব্দ জলের মতো স্বরে
ডাকিছে লাজুক কোড়ার মুখ
আঁধার আসিছে ধীরে।
বুকের ভেতর কী যে উদাস টান
এইখানে যদি থামি একবার নদীর শিয়রে
যেখানে স্বর্ণলতায় বোনা ঝোপের আড়ালে
মহামতি গৌতমের মতো বসি ধ্যানে
হাত ভরে রাখি হাড়গুজি ফুলে
কাঁটার ভিতরে কষ্টের মতো সেই নীল নীল ফুল!
তখোন তুমি কি আসিবে নেমে?
নিভন্ত সূর্য যখোন গেছে মিশে আঁধারে আঁধারে
পৃথিবী জুড়ে কী অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা
জোনাকিরা উঠেছে জ্বলে
আকাশে হাজার নক্ষত্রের দীপাবলী
জীবন ছাড়িয়ে যে জগৎ তারে দেখেনাই কেউ
তবু মৃত্যু সত্য মানুষের, এই নিস্তব্ধতা এই প্রেম,
তোমাকেও দেখিনাই জানি,
তবু মনে গেঁথে আছে তুমিও সত্য আলোয় আঁধারে
অপার্থিব ধ্যানে,
বুকের ভিতরে রাখি যখোন কষ্টের মতো নীল হাড়গুজি ফুল!
রচনাকাল : ৯ মে ২০২২, ঢাকা, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯
সকলের অগোচরে
নিজেকে রাখি ঢেকে খুব যেন মানুষের ভিড়ে
আমার স্নায়ু জুড়ে ধেয়ে চলে মৃত্যুর উড়ানি
অদৃশ্য অন্তরে মেঘ হয়ে ভেসে যায় এলোমেলো ভাষা
নিরব কথার মতো অগোছালো জেগে ওঠে সব।
আমার রক্তের তাপে সকালের রোদ ওঠে জ্বলে
কতো গল্পকথা বাতাসে বাতাসে ধেয়ে যায় মাঠে
খুব শাদা মনে ভেসে ওঠে তার কথা
কোন এক সাঁঝ রাতে আয়নায় সেজে ছিলো সে
কী অপূর্ব সাদামাটা সৌন্দর্যের আয়োজন
কাঁঠালী চাঁপার মতো হলুদ হলুদ রঙে
সবুজ পাতার ফাঁকে কিংবা নদীর ঢেউয়ের ভাঁজে
লুকানো ছিলো তার রূপ, বাঙালি মেয়ের মতই ঠিক।
এখোন মানুষের উৎসবের আয়োজনে তৃপ্তি নেই আর
শুধু নিসাড়তা প্রেমের আবর্তনে শুধু দেহজ পিপাসা,
দেহের ছায়ার মাঝে হৃদয়ের সব আলোটুকু গেছে নিভে
অগণন মানুষের মাঝে প্রত্যেকেই খুব যেন একা।
সময় চলেছে হেঁটে, কতো কিছু গেছে ছায়াপথ থেকে সরে,
পৃথিবীর মানুষের অন্তরদীপ্ত ভাষা পারিনি যেতে জেনে
আমার স্নায়ু জুড়ে যখোন মৃত্যুর উড়ানি
তখোন উঠেছি জেগে
যে আছো তুমি মেঘলোক ছেড়ে অমেয় আকাশে
অদৃশ্য ধোঁয়ার আড়ে তোমাকেই কেন চাই ফিরে?
সব পিপাসার অবসানে যেন শ্রান্তির আয়োজন
তবুও জাগে ঘোর আশ্চর্য উচ্ছ্বাস লক্ষ কোটি ঘাসে
অতি ক্ষুদ্র ফুলে ফুলে প্রবাহিত কতো জীবেনের কথা
যেতে যেতে চুপি চুপি পৃথিবীর কানে বলে যাবো,
বলে যাবো সেই কথা সকলের অগোচরে।
রচনাকাল : ০২ মে ২০২২, ঢাকা, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
বলে যাব তারে
চারিদিকে নেমেছে কোন রুদ্ধ বাতাস
মানুষ যেতেছে সুচারু পথ থেকে নেমে
পাথরে গিয়েছে ঢেকে তার মানবিক হাত
পৃথিবীর ধূলা মাটি জলে কী এক অশুভ সংকেত
উড়ানি হৃদয় তার সে কিনেছে যেন ঋণে।
আকাশ ছাড়িয়ে দূরে লালসার ঘরে
ফ্যাকাসে জীবনে কতো দূর যেতে পারে সে?
বুনো মানুষেরা করে আহ্বান,
কোন উষর মাঠের কাছে পাহাড়ি গুহায়
গৃহকোণে প্রান্তরে, ধর্মের প্রশান্তি ভেঙ্গে বিনাশী স্রোতে,
পণ্য সভ্যতার আগ্রাসী সুরে যায় ভেসে অগাধ সময়
ঘুঘুর দুপুরে যখন সব প্রেম গেছে মরে।
দিন রাত্রির এ কেমন যুদ্ধ মানুষের,
নিদারুণ লোভ, গোলার আঘাতে নিভে যায় প্রাণ
জন্মান্ধ চোখে শূন্য মানবতা, ঈশ্বর পাপ পুণ্যের উৎসবে।
চারিদিকে কতো আলো
তবু কেন যেন মৃত্যুর ছায়া ভাসে স্বপ্নের ভিতরে
উজানের জলে ভাসে কালো বিষাক্ত ভয়
সংবৃত ধ্যানে জেগে ওঠে জীবনের প্রতিবিম্ব।
আগুনের কথা বলি, আলোর কথা বলি
ঝোপের আড়ালে জোনাকির কথা বলি,
জলের পাশে ঝুঁকে পড়া বৃক্ষের কাছে
অন্তরদীপ্ত হৃদয়ের কষ্টের কথা বলি,
প্রতিধ্বনি ওঠে নদীর ওপারে
দূরাগত অলৌকিক শব্দ ।
আচ্ছন্ন আঁধারে ঢেকে যায় বুঝি জীবনের বেলা
কাকে দিয়ে যাই গোধূলির রঙে হৃদয়ের সব গুরুভার,
আমাদের মগজের সব শীত কেটে গেলে
শেষ হবে কি মানুষের সব ভেদাভেদ!
উড়ানি মেঘেরা যাবে আকাশের ধারে
ঘুমের গন্ধের মতো প্রিয়তর জীবনের সবটুকু কথা
ধোঁয়া হয়ে যেতে যেতে ঠিক বলে যাবো তারে।
রচনাকাল : ১০/০৪/২০২২, ঢাকা।