মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের কবিতাগুচ্ছ
অনলাইন ডেস্ক

এখন আমি মানুষ নই

একটি একটি অক্ষরে হাতুড়ি মারা শেষে যে শব্দের গা বেয়ে উঠছি আমি- শব্দটি হাসির নাকি অতলস্পর্শী বেদনার তা জানা নেই আমার। না থাকুক পথ জানা, তবু এতটুক মনে থাকে- ‘জীবন’ লিখতে লিখতে, ‘প্রাণ’ মেরামত শেষে কখনো আমার বাড়ি ফেরা হয় না, বরং ক্রমশ ভেঙে কাত হয়ে পড়ে জীবনের বর্গীয় ‘জ’। ‘শান্তি’ শব্দটির ভারে হাপিয়ে উঠতে উঠতে ভাবি ‘দুঃখ’ শব্দটি যদি না থাকতো অথবা ‘মানুষ’- তবে বেঁচে যেতে যেতে একদিন মরে যেতাম হয়তো; এখন মরে যেতে যেতে কেবল বেঁচে আছি...

একদিন ভাবি, পারছি না আর- প্রলয়ে মুছে যাক মানুষ ও দুঃখ । বাংলা অভিধান নিয়ে পাহারা দেই রাত, হিংস্রতায় কেটে নেই ‘মানুষ’ অথবা ‘দুঃখ’ শব্দটি ...

পুড়িয়েছি অজস্র অক্ষর, পাহাড়সম গরল, বেদনার সমগ্র নদী... এখন আমি মানুষ নই। আমি মানুষ হতে পারি না...

.

পথ অথবা কবিতাটা পথিকের

পায়ে চলা পথে পা মিলিয়ে হাঁটি বহুদূরের বাঁকে

এপাশ-ওপাশ মেঘঘন ঘাস, লতাপাতা, ঝোপঝাড়

আকাশ থেকে চুঁইয়ে পড়ছে আলো, রং, নীল ঘুড়ির লেজ-

এক এক করে পথে রাখি পথ

মিলিয়ে নেই পুরোনো পদচ্ছাপ- পূর্ব পুরুষ আমার

যে ধুলোয় গেঁথে গেছেন মালা,

গেঁথে গেছেন অশ্রুফোঁটা, চিলতে হাসি

সে ধুলোয় মিশে গেছে চোখ, চুমু, আঁকা ঠোঁট-

বাঁক পেরুতেই ধুলো ভাসে বাতাসে- গোপনে

জানিয়ে রাখি শুধু,

ধুলো আমিও হবো, চোখণ্ডমন...

এমন কথা জেনে কী অ™ভুত ব্যাথাতুর বুক আমার!!

.

নিরাশাবাদী কবিতা

জীবনের প্রতিটি সকালেই গেঁথে থাকে ভাঙ্গন, পরীযায়ী সুর

আর সূর্যের প্রথম আলোয় চকচক করে উঠে দুঃখ ও গোপন ক্ষতরা...

যতই পৌঁছে যাক নদীর কিনার ধীর লয়ে, ধীরে

ঈশ্বর জানেন কত কষ্ট মেঘে. জলে, স্রোতে...

.

আঁধার অথবা চোখবিহীন

এমন রাত নামুক ঈশ্বর, দীর্ঘ-ক্লান্ত রাত-

নিকষ্ আঁধারে মুছে যাক আলো, মানুষগুলো,

কেউ যেন দেখে না কাহারে, তোমারেও নয়।

এমন অন্ধকার ঝরাও, এমন কালো ও কঠিন-

ফুলও যেন না পায় প্রজাপ্রতি, কাঁটা না দেখুক হৃদয়

কেবল উন্মাদ প্রলয়, নিস্তব্দ রাত্রীতে এঁকে দিও তিলক, ক্ষত...

এমন রাত নামাও ঈশ্বর, নীরব-নিথর;

শত শতাব্দীর আয়ূ হোক জীবনের, অন্ধ ও পাথর সে-জীবন

অথবা এও করতে পারো- আলো দাও, দগ্ধ আলোর বাজার,

আর ফিরিয়ে নাও প্রতিজোড়া চোখ, স্বপ্ন

কালো হোক তবে আদিঅন্ত রহস্য তোমার!

এত মু-ুসমেত কবন্ধমানব, ঘুরছে উড়ছে পৃথিবীতে

কালো আর শাদা মিশিয়েছে এক ফোরাতের জলে

নোনা অশ্রুতে যারা আলো দ্যাখে, হাসিতে বিষ, আঁধার-

রাত নামাও, রাত নামুক, মুছুক আলো, আঁখি-

যদি হও তুমি পক্ষবিহীন ঈশ্বর!

.

পা ফেলে এসেছি রোদের উপর

নিজেকে রেখে প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকি দূরে

দেহসমেত পার হলাম কত পোড়া জমি, বসন্তহীন পৃথিবী

আমি তখনও বলেছি- শান্ত হও- মৃত্যুর মতো স্থির;

আমার আত্মা আর ঝড় আঁকেনি তরুণী ঠোঁটে

হাসিমুখ ছড়িয়ে দিয়েছি উঠানে, বধির বৃষ্টিতে

আমি ঈশ্বরে রেখেছি বাজি, জীবন দাও, জীবনের নহর যায় বয়ে!

পা ফেলে এসেছি রোদের উপর, সেই যৌবন মেখে তোমার

মন তো কবেই রাখা ইসরাফিলের ফুৎকারে, ফুঁ দাও-

এবং দেখ, ধ্বংস ও পতন জলে স্নান শেষে

আত্মার বাইরে দেহ আমার, দাঁড়িয়েছে দেখ!

.

আলোর নামতা

আমার আলো নেই, জোনাকির মতো

আলো নেই ধার করা কুপিতে

আগুন! আগুন! বলে চিৎকার করা হলো দ্বিগি¦দিক

সাড়া নেই, নিথর পাড়া, এ যেন দঙ্গল পাথর এক!

গভীর রাত ঘুমাতে গেলো না আলোর প্রত্যাশায়

গাছেরা চাইলো কিছু আলো জ্বালি শবমিছিলে

ফুলেরা চাইলো জ্যোৎস্না নামুক চোখে-শস্যে

তবু আমি দাঁড়িয়ে রইলাম সূর্যহীন

আমি দাঁড়িয়ে রইলাম জলের ভেতর

হাতে আগুন, পানিতে ভাসছে কুপি, তেল...

দেখতে পাচ্ছি ফেরেশতারা বিলিয়ে যাচ্ছে আলো দূরে...আরো দূরে

শব্দ শুনতে পাচ্ছি মেঘের, কান্নার...

ক্রমশ ঢেউ গিলে নিচ্ছে আমার দেহ

পুড়ে যাচ্ছে আগুনের নামতা বই

নিভে যাচ্ছে এক এক করে পিদিম, রাত্রি

অতঃপর-

শতাব্দির নিক্ষ অন্ধকারে জলোচ্ছ্বাসের মতন

নেমে এলো আলোর প্লাবন

আলোয় ভেসে যাচ্ছে দেহমন, রোদ্দুর, জল...

.

পদচিহ্নের মাটি

কিছু নিঃশ্বাস জমা থাকুক রাতের জন্য

বন্ধক থাকুক পদচিহ্নের মাটি

আর শব্দহীন কোলাহলের সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে

উঠে আসুক ভবঘুরে মাঠ, বিস্মৃত বিকেল

তবু সকাল হলেই যেন ফিরে আসে ব্যস্ত সূর্য

আল্পনা আঁকা কচি কচি পা

বাতাসে আয়েশী ওড়নার সাজে

উড়ুক ধূলিময় পাতার স্ববান্ধব কবিতা...

ওরা বলুক, ইতিহাসের বিনিদ্র রাত বলুক

চোখ ভরা জল আর দুর্জেয় হাসি নিয়ে ...

.

কম্পিত পঙ্ক্তিমালা

যে দোলাচালে আজন্ম দোল খাচ্ছে তোমার পৃথিবী, কম্পিত

নিঃশ্বাসের প্রগাঢ় জোছনা নিয়ে লুকিয়ে ছিলো যে যৌবনা

নদী- তুমি তাকে হত্যা করলে। চিরকালীন বাক্হীন

ছুরির প্রতিটি স্পর্শ তাকে বিদ্রƒপ করে নি, গেঁথে দেয় নি

আগুনের জলছাপ; তোমার নির্লিপ্ততায় পথ দেখাতে

আসেন নি গুরু নানক-চে গুয়েভারা, হয়তো পেরিয়ে গেছে

সময়ের মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। তোমার কৃত্রিমতার আবেগী

ভাষণে রুদ্ধ দেয়াল তুলেছিলো যে মহাজন; জানতে- তোমাকে

সে-ই এনে দিতো টাইটান মালা, বাসরের গুপ্তসজ্জা।

তুমি তাকেও হত্যা করলে...

আনন্দমাঠে প্রেম খুঁজে খুঁজে যারা ঘাতক পেয়েছিলো, বিবস্ত্র

ঘাতক! চেনাব নদীর জল...বোকা রোদ্র প্রতাপ- তাদের প্রথম

উপহার...

প্রেমী! তুমি হেলেন হয়েছিলে, দেবী হও নি...

.

বেদনা উৎসব

ঘুম নিয়ে চলে গেছে নদী।

শূন্য হাতে অন্ধকার

জলে পায়ের শব্দ

মিছেমিছি চাঁদ আনি ঘরে

অবিরাম ভাঙে কাচ

কত পতন, মিথ্যে শহরে...

আমাকে নিয়ে গেছে নদী।

দেহভরা পোকামাকড়

খেয়ে নেয় দৃষ্টি, চোখ

দূরে কোথাও বাজে বাউল

মানুষ

কত উৎসব নামে কত দিকে

সমূহ বেদনার...

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়