সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২২, ০০:০০

মহানায়কের আলোয় উদ্ভাসিত ‘সুবর্ণ-শতক’
অনলাইন ডেস্ক

‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না,

আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই।"

জনতার সমুদ্রে দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি ক্ষমতা, নেতৃত্ব, আভিজাত্যপূর্ণ জীবনের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন না। রক্তে যার মুক্তির নেশা, চেতনায় মানবতার জয়ধ্বনি, স্বপ্নে যার সমৃদ্ধি ও আত্ম সম্মানের ঝলক তিনি নিজেকে কী করে বেঁধে রাখেন ক্ষমতার মসনদে! নিষ্পেষিত মানুষের হাহাকার, মুক্তিকামী মানুষের আকুতি কিংবা অধিকার বঞ্চিত জনতার স্লোগান মুখরিত মিছিলই ছিল যার গন্তব্য, তিনিই বাঙালির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সময়ের পরিক্রমায় ইতিহাসের পালাবদল ঘটলেও মহানায়কদের ইতিহাস বার বার লেখা হয়, অসমাপ্ত মহাকাব্যের রোমন্থনে মগ্ন হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।

স্বাধীনতা অর্জন নিঃসন্দেহে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়। এই অধ্যায়ের রচয়িতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী বাঙালি জাতির জীবনে মহাকব্যের রোমন্থন বটে।

বৈশ্বিক মহামারি সংকটের মধ্যেও নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে মুজিব জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। জাতি তার মহানায়ককে স্মরণ করছে বর্ণিল আয়োজনে ও বিনম্র শ্রদ্ধায়।

মুজিব জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে জাতির পিতার জীবন, কর্ম ও দর্শন আলোচনার প্রয়াসে স্মারক গ্রন্থ ‘সুবর্ণ-শতক’ প্রকাশ করেছে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী। সাহিত্য একাডেমীর ইতিহাসে অনন্য এক ঐতিহাসিক সংযোজন এই গ্রন্থের প্রধান পৃষ্ঠপোষক চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসান সম্পাদিত এই স্মারক গ্রন্থ নানা কারণে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও তথ্যবহুল সংকলন।

প্রবন্ধ, ছোট গল্প ও কবিতা দিয়ে সাজানো এই গ্রন্থের প্রতিটি অংশই সমানভাবে উজ্জ্বল ও প্রাসঙ্গিক।

দেশবরেণ্য অনেক লেখক, কবি, সাংবাদিক ও গবেষক তাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ করেছেন এই আয়োজন।

বইটির শুরুর দিকেই চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালকের চমৎকার স্মৃতিচারণ, সাহিত্য একাডেমীর পথচলার ইতিহাস ও স্মারক গ্রন্থ রচনার পটভূমি বর্ণনা অসাধারণ এক অভিজ্ঞতার অনুভূতি সঞ্চারণ করে। ‘নির্ঝর সাহিত্য চক্র’ থেকে যাত্রা শুরু করে আজকের সাহিত্য একাডেমী সাক্ষী হয়ে আছে অনেক সাফল্য গাথার ইতিহাসে।

জাতির পিতার রাজনীতিতে গান্ধীর অহিংস মতবাদের প্রভাব আলোচনায় প্রথিতযশা সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী তুলে এনেছেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পথচলায় নানাবিধ দর্শনের প্রভাব ও তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অনন্য প্রতিফলনের ইতিহাস।

গান্ধীর মৃত্যুর পর বিশ্বজুড়ে মার্ক্সবাদের প্রবল জোয়ারে একসময় গান্ধীর দর্শন অনেকের কাছেই অচল কিংবা ফিকে মনে হয়েছিল। কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে, ব্রিটিশ শাসন অবসানের জন্য গান্ধীজির অহিংস দর্শন অত্যন্ত সাফল্যের সাথে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পাকিস্তানি সামরিক জান্তার শাসন অবসানের জন্য শেখ সাহেব যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তার নাম ছিল অহিংস অসহযোগ আন্দোলন।

পৃথিবীর ইতিহাসে সব মহান নেতাই জাতির সংকট ও ক্রান্তিলগ্নে দেখিয়েছেন পথ নির্দেশিকা। বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলন যখন এক দফায় পরিণত হয় তখন শেখ মুজিবের আঙুলের ইশারার দিকে তাকিয়ে ছিল মুক্তিকামী জনতা। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে তেমনই এক ভাষণ যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে লেখা থাকবে চিরকাল।

১৮ মিনিটের বক্তব্যে ১৫ শ ৫ শব্দের অনবদ্য এই ভাষণ ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো কর্তৃক

‘ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়।

জাতির পিতার এই মহাকাব্যিক ভাষণের ঐতিহাসিক ও বৈশ্বিক তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় সংসদে চমৎকার এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়েছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি।‘ত্রিকালদর্শী মহানায়কের অমর কাব্য’ শিরোনামে বক্তব্যটির লিখিত রূপ গ্রন্থিত হয়েছে ‘সুবর্ণ-শতক’ গ্রন্থে।

অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে স্বাধীনতার অর্ধ শতক পার করেছে বাংলাদেশ। এই ৫০ বছরে আমাদের যেমন অনেক অপ্রাপ্তির গল্প রয়েছে, তেমনি প্রাপ্তির হিসেবও কম নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প- সাহিত্য, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অর্জনের যাবতীয় খতিয়ান মেলে ধরেছেন প্রফেসর অসিত বরণ দাশ।

‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব’ প্রবন্ধে জনাব রতন কুমার মজুমদার চমৎকার আলোচনার মাধ্যমে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে রবীন্দ্রনাথের আত্মিক ও ভাবগত সম্পর্কের রসায়ন বর্ণনা করেছেন। লড়াই সংগ্রাম ও প্রেরণায় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম চেতনার উৎস।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনেক বিদেশি লেখক, সাংবাদিক, কবি, শিল্পী, রাজনীতিবিদ প্রত্যক্ষ ভাবে সহায়তা করেছেন। তাঁদের ভূমিকা ও বঙ্গবন্ধুর সাথে সাথে তাদের চমৎকার বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরেছেন পীযূষ কান্তি বড়ুয়া তার একটি প্রবন্ধে। ফাদার মারিনো রিগান, এলেন গিন্সবার্গ, জর্জ হ্যারিসন, ইন্দিরা গান্ধী সহ আরো অনেক মহৎপ্রাণ মানুষের অবদান স্মরণ করা হয়েছে এই লেখায়। আমাদের স্বাধীনতায় তাঁদের অবদান আলোচনা করা হয়েছে।

শৈশব কাল থেকেই পারিবারিক পরিবেশের কারণে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তাঁর জানার আগ্রহ ছিল বেশি। বঙ্গবন্ধুকে তিনি পরিবারের আত্মীয় মনে করতেন। এখন কর্ম জীবনেও তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নে তৎপর। এমনই কিছু অনুভূতি ও আকাক্সক্ষার কথা প্রকাশ করেছেন চাঁদপুরের সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।

এছাড়াও অন্যান্য প্রবন্ধ যেমন- বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা; জনক-দুহিতার রসায়ন (মুক্তা পীযুষ), ছোট গল্পে মুক্তিযুদ্ধ (মুহাম্মদ ফরিদ হাসান), ছাত্রনেতা শেখ মুজিব (জাহিদ নয়ন), বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশার বাংলাদেশ (প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন)-এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, পারিবারিক জীবন ও মুক্তিযুদ্ধের নানা কথা এসেছে বিভিন্ন ভাবে।

তথ্যবহুল প্রবন্ধ আলোচনা ছাড়াও এ গ্রন্থে ২ টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছোট গল্প ও ৮ টি কবিতা রয়েছে।

গল্পের বয়ানে ছিলেন কাদের পলাশ ( না- ফেরা) ও মইনুদ্দিন লিটন ভুঁইয়া (যুদ্ধ কথা)।

কবিতায় সারথি হয়েছেন কামাল চৌধুরী, ফারুক হোসেন, হাসনাইন খুরশেদ, তছলিম হোসেন হাওলাদার, ইকবাল পারভেজ, সৌম্য সালেক, খান-ই আজম ও মোখলেসুর রহমান ভুঁইয়া।

মহামারী ও লকডাউনের কারণে থমথমে এক কঠিন সময় পার করেছে বাংলাদেশ। অনেক বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতার কেটেও ‘সুবর্ণ-শতক’ গ্রন্থটি আলোর মুখ দেখেছে সম্পাদক পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতার সুবাদে। স্বল্প সময় ও নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সম্পাদকদ্বয় তাঁদের প্রচেষ্টার সবটুকু নিংড়ে দিয়েছেন এই গ্রন্থে। মুজিব জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনের যাত্রায় এক অন্যন্য প্রয়াস হয়ে থাকবে সুবর্ণ শতক গ্রন্থ।

শতক আসে শতক যায়। কালের প্রবাহ এভাবেই বয়ে যাবে নিরন্তর। আজ থেকে শতবর্ষ কিংবা সহস্র বছর পরেও বাঙালির ইতিহাস ও অস্তিত্ব প্রসঙ্গে মুজিব থাকবেন চির প্রাসঙ্গিক। মুজিব দর্শনের চর্চা প্রবহমান থাকবে পদ্মা -মেঘনা- যমুনার মতই।

যেভাবে কবি ইকবাল পারভেজ তাঁর একটি কবিতায় বলেছেন -

"বাংলাদেশের ওপর একখানা কবিতা লিখতে বলা হলো

এক নিঃশ্বাসে লিখে দিলাম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান... "

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়