প্রকাশ : ১০ মে ২০২২, ০০:০০
সাহিত্য সবার কথা বলে। সব বিষয়ে কথা বলে। সৃষ্টির যে কোনো বিষয় নিয়ে সাহিত্য রচিত হতে পারে। ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্বের এমন কোনো অনুষঙ্গ নেই, যা নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি হয়নি। তবে আজকের আলোচনার বিষয় সমাজ। তাই আগে জানা উচিত- সমাজ আসলে কী? যদিও সমাজ এবং সাহিত্য দুটোই মানুষের সৃষ্টি। সাহিত্য ও সমাজ একে অপরের পরিপূরক। সভ্যতার উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে সমাজ ও সাহিত্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সমাজের সমসাময়িক বিষয় নিয়েই নির্মিত হতে পারে সাহিত্য। আবার সমসাময়িক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বদলে যেতে পারে সমাজের অনুশাসন। যুগের চাহিদা অনুযায়ী সমাজ ও সাহিত্য পরিবর্তনশীল।
এবার সমাজের কথায় আসি। মানুষ সামাজিক জীব। সবাই মিলে গড়ে ওঠে একটি সমাজ। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা, অনাচার-বিশৃঙ্খলা সবই মানুষের হাতে গড়া। তাই সেই সমাজবদ্ধ মানুষই তার নিরীক্ষা থেকে সমাজকে তুলে ধরে দেশ ও বিশ্বের দরবারে। সমাজবিজ্ঞানের ভাষায়, সমাজ মূলত এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে একাধিক চরিত্র একত্রে কিছু নিয়মণ্ডকানুন প্রতিষ্ঠা করে একত্রে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলে। মানুষের ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তি একত্র হয়ে লিখিত কিংবা অলিখিত নিয়মণ্ডকানুন তৈরি করে; এ রকম একত্র বসবাসের অবস্থাকে সমাজ বলে। মানুষ ছাড়াও ইতর প্রাণীর ক্ষেত্রে সমাজের অস্তিত্ব দেখা যায়, তবে সেখানে মানুষের মতো কাঠামোবদ্ধ সমাজের দৃষ্টান্ত নজরে আসে না। সমাজের দুটো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো :
১. ট্যাবু বা নিষিদ্ধ আচার
২. টোটেম বা চিহ্ন বা প্রথা
সমাজের মধ্যে থাকে পরস্পর সৌহার্দ্য, সহযোগিতা, মমত্ব; তেমনি তৈরি হতে পারে ঘৃণা, লোভ, জিঘাংসা। তাই সমাজের মধ্যে শৃঙ্খলা ধরে রাখার স্বার্থে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অলিখিতভাবে তৈরি হয় কিছু নিয়ম, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যার লঙ্ঘন চরম অসম্মানজনক এবং সমাজের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য। তবে নিঃসন্দেহে সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থার জন্য সৌহার্দ্য, সহযোগিতা একান্ত দরকার।
এতো গেল সমাজের কথা। সাহিত্য তবে কী জিনিস? সাহিত্য বলতে কোনো লিখিত বিষয়বস্তুকে বোঝায়। সাহিত্য শিল্পের একটি অংশ বলে বিবেচিত হয়, অথবা এমন কোনো লেখনি যেখানে শিল্পের বা বুদ্ধিমত্তার আঁচ পাওয়া যায়, অথবা যা বিশেষ কোনো প্রকারে সাধারণ লেখনি থেকে আলাদা। মোটকথা ইন্দ্রিয় দ্বারা জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা, চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য্য ও শিল্পের লিখিত বা লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতি হচ্ছে সাহিত্য। ধরণ অনুযায়ী সাহিত্যকে কল্পকাহিনী বা বাস্তব কাহিনী কিংবা পদ্য, গদ্য এই দুইভাগে ভাগ করা যায়। পদ্যের মধ্যে ছড়া, কবিতা ইত্যাদি, গদ্যের মধ্যে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এছাড়াও অনেকে নাটককে আলাদা প্রধান শাখা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেন। নাটকের মধ্যে নাটিকা, মঞ্চনাটক ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
সাহিত্যে বরাবরই সমাজ ছিল, আছে এবং থাকবে। পাশাপাশি সমাজেও সাহিত্য ছিল, আছে এবং থাকবে। তবে সাহিত্যিক এবং সমাজের রুচির পরিবর্তন ঘটতে পারে। কেননা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের পদগুলো থেকে তৎকালীন বাঙালি সমাজ জীবনের আচার-আচরণ ও সমাজের বাস্তবঘন পরিচয় পাওয়া যায়। হরিণ শিকার, নৌকা চালনা, চৈড়ারি তৈরি, কাড়া-নাকাড়া ও ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বর-কনেকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়ার বর্ণনা চর্যাপদে রয়েছে। দেখা যায়, সে সমাজে যৌতুক প্রথা প্রচলিত ছিল। সে সমাজে গরু ছিল গৃহপালিত পশু; মেয়েরা পরিধানে ময়ূরপুচ্ছ, গলায় গুঞ্জার মালা এবং কানে কুন্তল পরতো। তারা বসবাস করতো পাহাড়ে। তাই তো কবি এভাবে বলেছেন, ‘উঞ্চা উঞ্চা পাবত তহি বসই সবরী বালী।/ মোরাঙ্গ পুচ্ছ পরিহাণ সবরী গীবত গুঞ্জরী মালী।’
এরপর বাংলা সাহিত্যের কাব্যধারায় মধ্যযুগ থেকেই সমাজব্যবস্থা উঠে এসেছে। প্রথম এসেছে মানুষের কথা। তাই তো ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ কিংবা ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’ এখনো মানুষের মুখে মুখে। এই যে মানুষ কিংবা সন্তান- এরাই তো সমাজের অংশ। তাই একজন সাহিত্যিককে হতে হয় সমাজ সচেতন। সমাজের নানাবিধ অনুষঙ্গ তুলে আনতে হয় সাহিত্যে। কারণ কল্পনাবিলাস ক্ষণিকের আনন্দ দিতে পারে। বাস্তবিক ঘটনার উপযোগী বিশ্লেষণ না হলে সে সাহিত্য তার গ্রহণযোগ্যতা হারায়।
বুদ্ধদেব বসু ‘ভাষা, কবিতা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘জীবের কাছে প্রকৃতির চাহিদা এই যে, সে বংশানুক্রমে পৃথিবীতে টিকে থাকবে। এই চাহিদা মেটাবার জন্য ভাষার কোনো প্রয়োজন হয় না। আত্মরক্ষা, প্রজনন ও সন্তান পালন- এই তিন কর্মই বিনা ভাষায় সম্পন্ন ও সুসম্পন্ন হতে পারে।’ ‘সাহিত্যিকের সমাজচেতনা’ প্রবন্ধে আবু সায়ীদ আইয়ুব বলেছেন, ‘সাহিত্যিকের সমাজচেতনা যেন তাকে তাঁর ‘স্বদেশ’ থেকে নির্বাসিত না করে। তিনি সমাজের একজন বলে সামাজিক দায়িত্ব গ্রহণ করা তার কর্তব্য; সাহিত্যিক বলে সৌন্দর্যের তপস্যা তার ধর্ম। এবং ঐ বস্তু যদি একই আধারে ধৃত হয় তা হলে মানুষের মনে এমন কোনো চৈন প্রাচীর নেই যা ও-দুটিকে পৃথক রাখতে পারে।’
কবি ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ নূরুল হক তার ‘বাঙালির মননশীলতা ও কল্পনাশক্তি’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘সুচিন্তক-সাহিত্যিককে প্রথমে সমাজসচেতন হতে হয়। সমাজ সচেতনতা ভিন্ন জীবনশিল্পী হয়ে ওঠা স্বপ্নবিলাস মাত্র।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ইংরেজি সাহিত্যের শেক্সপিয়র-সফোক্লিস-হোমার-মিল্টন-এলিয়ট-ইয়েটসের সঙ্গে বাঙালি সাহিত্যিক চণ্ডীদাস-বিদ্যাপতি-মুকুন্দরামণ্ডমাইকেল-বঙ্কিমণ্ডরবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দণ্ডনজরুল-সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ-সৈয়দ শামসুল হক-আল মাহমুদণ্ডশামসুর রাহমান-শঙ্খ ঘোষ-মানিক বন্দ্যোপাধ্যয়ের সাহিত্যিক কল্পনার তুলনা করলেই প্রতীয়মান হয়, সাহিত্যিক-কল্পনায় ইংরেজরা উদ্ভট হলেও বাঙালি যৌক্তিক ও বাস্তববাদী। ইউরোপসহ পশ্চিমের সাহিত্যিকেরা যখন দেবদেবীর জয়গান গেয়েছেন, তখন বাঙালি সাহিত্যিক মানবমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছেন।’
তাই বলা যায়, সাহিত্য সমাজের দর্পণ। সমাজ সাহিত্যের ক্যানভাস। ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ তার ‘সমাজ ও সাহিত্য’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘নিঃসন্দেহে সমাজ আগে সাহিত্য অনেক পরে। সমাজ একটা বড় ব্যাপার, সাহিত্য সেখানে অনুগামী একটা শরিকমাত্র। সাহিত্য সমাজকে আমলে না আনলে সমাজের কিছু একটা যায় আসে না; কিন্তু সাহিত্য সমাজকে উপেক্ষা করতে পারে না। সমাজই হচ্ছে সাহিত্যের ক্যানভাস, সমাজ ছাড়া সাহিত্যের চলে না, সমাজ আছে বলে সাহিত্যের কাজ আছে। সমাজ নেই তো শুধু সাহিত্য কেন অনেক কিছুই নেই। তবে সাহিত্য সমাজকে বিচার-বিশ্লেষণ করে বলেই সমাজ তার অস্তিত্ব, গতিধারা এমনকি মিশন ও ভিশন নির্মাণের জন্য সাহিত্যের পথ চেয়ে থাকে।’
সে হিসেবে সমালোচকগণ মনে করেন, লিও তলস্তয়ের ‘আনা কারেনিনা’র চরিত্রগুলোয় রাশিয়ার সমকালীন সমাজজীবনে আবহমান আভিজাত্যবোধের ক্যানভাসে মানব-মানবীর শাশ্বত সম্পর্কের সংশয়-সন্দেহের সখ্যের সর্বনাশের আখ্যান ফুটে উঠেছে। ক্ষয়িষ্ণু আর উঠতি সমাজের দ্বন্দ্ব ও মেলবন্ধনের কাব্যিক বর্ণনায় লেখক তলস্তয় প্রকারান্তরে সামন্তবাদী সমাজজীবনের নেতিবাচক ও ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো এমনভাবে তুলে ধরেছেন, সমাজ দর্শন বিবর্তনের এক বিস্তারিত বৈশ্বিক পাঠ তাতে প্রতিভাত হয়েছে। শেক্সপিয়রের সেনাপতি, রাজা, যুবরাজ, প্রেমিক, ভাঁড়, এমনকি কূটবুদ্ধির চরিত্রগুলো হরহামেশা সমাজদর্শনের কথা বলে, তাতে যুগযুগান্তের সঞ্চিত অভিজ্ঞতার নির্যাস বেরিয়ে আসে। নিছক মনোরঞ্জনের জন্য নয়, সমাজকাঠামোর মধ্যকার সবল ও দুর্বল দিকগুলোকে শনাক্তকরণের উদ্দেশ্য, সেখানে অগোচর থাকে না। দস্তয়ভস্কির ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্টের কুশীলবরা সমাজের ন্যায়-অন্যায়ের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতীকপীড়ায় ভোগে, প্রশ্ন তোলে কারণ ও প্রতিক্রিয়ার আনুভূমিক সম্পর্ক ও তার চৌহদ্দি সম্পর্কে। কমলকুমার মজুমদারের অন্তর্জলী যাত্রা কিংবা হাসান আজিজুল হকের জীবন ঘষে আগুনের গল্পগুলো জীবনের যে উপলব্ধির আখ্যান নির্মাণে নিবেদিত, তা তো ঘুণে ধরা সমাজের পরিবর্তন প্রয়াসের প্রতিচ্ছবি।
পক্ষান্তরে মধ্যযুগের মহাকাব্যে উঠে এসেছে সমাজবাস্তবতা। ধর্মের গুণকীর্তন করার উদ্দেশ্যে এসব আখ্যান রচিত হলেও তাতে সমাজ এবং মানুষ উঠে এসেছে ধর্মের প্রয়োজনেই। মঙ্গল কাব্যেও আমরা সমাজের বাস্তবিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করি। কালকেতু উপাখ্যান থেকে শুরু করে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনেও তৎকালীন সমাজব্যবস্থার স্বরূপ উঠে আসে। কালকেতু উপাখ্যানে কালকেতুর উপার্জনের প্রধান মাধ্যম শিকার করা। কালকেতুর স্ত্রী ফুল্লরা সঞ্জয় কেতুর মেয়ে। সে পতিব্রতা, আবার কখনো বিদ্রোহী নারী। সে পরিশ্রমী। স্বামীর পাশাপাশি উপার্জনের জন্য হাটে বিকি-কিনি করে। সে মধ্যযুগীয় নারী সমাজের প্রতিনিধি। কালকেতুর স্ত্রীর গর্ভধারণ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মযজ্ঞেও আমরা তৎকালীন সামাজিক অবস্থা দেখতে পাই। অপরদিকে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনে সমাজের নারীরা দুধ বা দধি নিয়ে মথুরা যায় বিক্রি করতে। সেখানকার সমাজে আমরা অগ্রসর নারীদের দেখতে পাই। প্রাচীনকাল থেকেই প্রতিটি কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধে এভাবেই উঠে আসে সমসাময়িক সমাজের প্রতিচিত্র।
ফলে কবি-সাহিত্যিকরা কখনো কখনো হয়ে উঠেছেন সমাজ সংস্কারক। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। তৎকালীন হিন্দু সমাজের সতীদাহ প্রথা, বিধবা বিবাহে প্রতিবন্ধকতার মতো কুসংস্কারকে তিনি সংস্কার করেছেন। তার লেখনিতে সমাজের কুসংস্কারগুলো উঠে এসেছে। এমনকি রাজা রাম মোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও সমাজের নানাবিধ অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। তারা সাহিত্যের মধ্য দিয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এখনো সাহিত্যে পরিবর্তন আসছে সমাজের প্রয়োজনেই। গণমানুষের কথা বলতে গেলেই এ পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।
সাহিত্যে সমাজের অবস্থান যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি সমাজেও সাহিত্যের অবস্থান জরুরি। কিন্তু সমাজে সাহিত্যের অবস্থান কতটুকু- সেটিও ধর্তব্য বলে মনে করি। প্রশ্ন উঠতে পারে, সমাজে কি সাহিত্যের প্রভাব পড়ে? এ প্রশ্নের জবাবে এককথায় বলা যায়, অবশ্যই পড়ে। কারণ সমাজকে কেন্দ্র করেই যদি সাহিত্য রচিত হয়, তাহলে সে সাহিত্যও সমাজে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। যে কথা আমি একটু আগেই বলেছি। সাহিত্যের মাধ্যমেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজের পরিবর্তন এনেছিলেন। সাহিত্যের চরিত্রগুলো আমাদের সমাজেরই কেউ না কেউ। একটি চরিত্র উপস্থাপিত হলে তার প্রভাব অপর ব্যক্তির ওপরও পড়ে। গল্পের ছলে হলেও তিনি নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করতে পারেন। নিজেকে কল্পনা করে হতে পারেন লজ্জিত। ফলে তার ব্যক্তি জীবনেও আসতে পারে পরিবর্তন।
সমাজের যে কোনো সংকটে সাহিত্যের দ্বারস্থ হতে দেখা যায়। একজন সাহিত্যকর্মী সাহিত্যের ভাষায় একটি সাধারণ বিষয়কে সাহিত্য রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। সেই সাহিত্যই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। তারা জাতীয় মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতি, শালীনতা, সেবা, আনুগত্য, ন্যায়-অন্যায়, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, ভালোবাসা, সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যবান কথাশিল্প নির্মাণ করেন। শুধু তাই নয়, প্রবন্ধে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ-অকল্যাণ তুলে ধরেন। সেই প্রবন্ধ দেশ-বিদেশে পাঠকের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। দিগন্ত জোড়া উন্নতি ও সফলতা ফিরে আসে। দেশ ও জাতিকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করেন। খুলে যায় সফলতার সব চাবিকাঠি।
আমাদের সমাজজীবনে সাহিত্যের অনেক প্রয়োজন। কেননা সাহিত্যের সাথে মানুষের সুগভীর সম্পর্ক সুপ্রাচীনকাল থেকেই। সাহিত্য উড়িয়ে দেয় জীবনের বিষণœতাকে। সাহিত্য ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। সাহিত্যের মাঝে মানুষের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, ব্যথা-বেদনা, মান-অভিমান, মায়া-মমতা ও ভালোবাসা প্রকাশ পায়। ব্যক্তি, সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। সাহিত্যই জীবন ও সমাজের প্রতিচ্ছবি। সাহিত্যিকগণ ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার, মানবতাবোধ এবং পৃথিবীর করুণ আর্তনাদ তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কবি ও সাহিত্যিকগণ মনের উৎকর্ষ সাধন করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের আঁকাণ্ডবাঁকা চড়াই-উতরাই পথ পেরিয়ে আবিষ্কার করেন সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। সেই দিগন্তের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাণ্ডচেতনায় নতুন পথ আবিষ্কার করেন।
সেই নতুন পথ ধরে এগিয়ে যায় সাহিত্য ও সমাজ। সাহিত্যের প্রয়োজনে সমাজ এবং সমাজের প্রয়োজনে সাহিত্য- একে অপরের গলাগলি ধরে হাঁটে। বাস্তবিক সমাজব্যবস্থা রঙিন ও কল্যাণকর হয়ে ওঠে সাহিত্যের সংস্পর্শে। সাহিত্যে যেমন সমাজ উঠে আসে, সমাজেও তেমন সাহিত্য সমাদৃত হোক। পাঠকের মনে তৈরি হোক সাহিত্যের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। সমাজেই টিকে থাকুক সাহিত্য। সাহিত্যের উৎকর্ষতা আসুক সমাজের গহীন অসুখ থেকে। আমাদের ঘুণে ধরা সমাজ সাহিত্যের মলাটের মতো রঙিন ও মনোরম হয়ে উঠুক। পৃথিবীজুড়ে সগৌরবে এগিয়ে যাক শুদ্ধাচার। সাহিত্য ও সমাজের মঙ্গল কামনা করছি।