প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
কুরবানীর তাৎপর্য ও মাসয়ালাহ
কুরবানী শব্দটি আরবী। আভিধানিক দৃষ্টিকোন হইতে উহার অর্থ হইল নৈকট্য লাভের উপায় হিসাবে যে কোন বস্তু ব্যবহার করা। অপর দিকে শরীয়তের পরিভাষায় কুরবানী বলা হয় ঐ নির্দিষ্ট জন্তুকে যাহা একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে একমাত্র মহান আল্লাহর নামে জবাই করা হয়।
কুরবানীর ইতিকথা ঐতিহাসিক পটভূমি :
আজ থেকে প্রায় সাত হাজার ছয় শত পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে মানব গোষ্ঠির আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) -এর সন্তান হাবিল ও কাবিল এর মধ্যে তাহাদের বোন আকলিমাকে বিবাহ করা নিয়ে কলহ বিবাদ দেখা দিলে হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ পাকের নির্দেশক্রমে তাহাদেরকে এখলাছের সহিত কুরবানী করার আদেশ দেন এবং বলেন তোমাদের মধ্যে যাহার কুরবানী গৃহীত হইবে তাহার সংগেই আকলিমার বিবাহ হইবে।
হাবিল ভেড়া দুম্বা ইত্যাদি পালন করিত সেহেতু সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কুরবানীর উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট স্থানে রাখিয়া আসিল। অপর দিকে কাবিল কৃষি কাজ করিত বিধায় সে কিছু শষ্য ও গম ইত্যাদি কুরবানীর জন্য পেশ করিল। নিয়মানুযায়ী আল্লাহ পাকের হুকুমে আকাশ হইতে অগ্নিশিখা অবতরণ করিয়া হাবিলের কুরবানীটি ভস্মিভুত করিয়া দিল এবং কাবিলের কুরবানী যেমন ছিল তেমনি পড়িয়া রহিল ৷
কাবিল হাবিলকে হত্যা করিল।
এইভাবেই সর্ব প্রথম কুরবানীর প্রথা চালু হয়।
ইব্রাহীম (আঃ) কর্তৃক ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবানীর ঘটনা :
পবিত্র কুরআনের সূরা ছফফাতে এসেছে-
অতঃপর যখন হযরত ইসমাঈল (আঃ) তাঁর পিতার সাথে চলাফেরার (নয় বৎসর) বয়সে উপণীত হইলেন তখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তদীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, প্রিয় পুত্র আমার! ‘আমি তোমাকে কুরবানী করিবার জন্য স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হইয়াছি। এ বিষয়ে তোমার অভিমত কি? পুত্র উত্তরে বলিলেন আব্বা! আপনি যাহা করিতে আদিষ্ট হইয়াছেন শীঘ্র তাহা কাজে পরিণত করুন, ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত দেখিতে পাইবেন। অতঃপর যখন পিতা পুত্র উভয়েই আত্মসমর্পণ করিলেন, আর পিতা পুত্রকে কুরবানী করিবার জন্য উপুৎ করিয়া ধরাশায়ী করিলেন। আমি তখন তাঁহাকে ডাক দিয়া বলিলাম, হে ইব্রাহীম! সত্যিই আপনি স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করিয়াছেন। আমি এই ভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করিয়া থাকি। বস্তুতঃ ব্যাপারটি একটি প্রকাশ্য পরীক্ষা মাত্র। আর আমি এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়া দিলাম। (সূরা সাফফ্ত ১০২-১০৭)
ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নে দেখলেন তিনি তাঁর প্রিয় বস্তু কুরবানী করিতে আদিষ্ট হয়েছেন।
এই স্বপ্ন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে উপর্যুপরি তিন বার অর্থাৎ ৮, ৯, ও ১০ই জিলহজ্জ তারিখে দেখানো হয়। (কুরতুবী)।
একথা স্বীকৃত সত্য যে পয়গম্বরগণের স্বপ্ন ওহীই বটে। তাই এই স্বপ্নের অর্থ ছিল এই যে, আল্লাহ পাকের পক্ষ হইতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর প্রতি একমাত্র পুত্রকে জবাই করার হুকুম হইয়াছে। এই হুকুমটি সরাসরি কোন ফেরেস্তার মাধ্যমেও নাজিল করা যাইত কিন্তু স্বপ্নে দেখানোর তাৎপর্য হইল হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর আনুগত্য পূর্ণমাত্রায় প্রকাশ পাওয়া। স্বপ্নের মাধ্যমে প্রদত্ত আদেশে মানব মনের পক্ষে ভিন্ন অর্থ করার যথেষ্ঠ অবকাশ ছিল। কিন্তু হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ভিন্ন অর্থের পথ অবলম্বন করার পরিবর্তে আল্লাহ পাকের আদেশের সামনে মাথা নত করিয়া দেন। (তাফসীরে কবির)।
আর সাথে সাথে কুরবানীর প্রস্তুতি হিসাবে পুত্রকে সাথে নিয়া সিরিয়া হইতে মক্কা শরীফের ঐ স্থানের দিকে আগমন করেন যেখানে ১৩ বৎসর মতান্তরে ৮ বৎসর পূর্বে মা হাজেরা সহ প্রাণাধিক প্রিয় পুত্রকে রাখিয়া গিয়াছিলেন। মক্কা শরীফে পৌছাইয়া হযরত ইব্রাহীম (আঃ) স্ত্রী হাজেরা (আঃ)কে বলিলেন ইসমাঈলকে সাজাইয়া দাও এক স্থানে বেড়াইতে যাইব (মতান্তরে দাওয়াতে যাইব) সাজাইয়া দিলেন মা হাজেরা (আঃ) কলিজার টুকরা ইসমাঈলকে। পিতা চলিতেছেন গন্তব্য স্থানে পচ্চাদানুসরণ করিয়া চলিতেছেন পুত্র ইসমাঈল (আঃ) পথিমধ্যে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পুত্রকে কুরআন পাকের ভাষায় বলিলেন ইসমাঈল! আমি স্বপ্নে দেখিয়াছি যে তোমাকে কুরবানী করিতেছি। অতএব ভাবিয়া দেখ তোমার অভিমত কি? কিন্তু খলিলুল্লাহরই পুত্র ভাবী পয়গম্বর তাই তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলিলেন পিতা। আপনাকে যে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে তাহা সম্পন্ন করিয়া ফেলুন এবং সাথে সাথে পিতাকে আরো আশ্বাস দিলেন ইনশাআল্লাহ! আপনি আমাকে ধৈর্য ধারণকারীদের মধ্যে পাইবেন। অপর দিকে মুসলমানের আজীবন শক্র ইসলামের চির দুশমন ইবলীস এই দৃশ্য সহ্য করিতে না পারিয়া তাহাদেরকে প্রতারিত করার কাজে লাগিয়া গেল। তাফসীরের বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায় শয়তান প্রথমে হযরত হাজেরা (আঃ) কে প্রতারিত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায়। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ) এর প্রতি ছুটিল। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর এক বর্ণনায় পাওয়া যায় শয়তান হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে তিন বার প্রতারণা করার চেষ্টা করিয়াছে। প্রথমে বন্ধুর বেশে জমায়ে আকাবার নিকট তখন তিনি ‘আলাহু আকবার’ ধ্বনী দিয়া সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন মতান্তরে পিতা পুত্র উভয়েই সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। অদ্যবধি এই প্রশংসনীয় কাজের স্মৃতি হিসাবে মীনায় তিনবার কংকর নিক্ষেপের বিধান চালু আছে। যাহা শরীয়তে মোহাম্মদীতে ওয়াজিব। শয়তান সেখান থেকে বিতাড়িত হইয়া জমরায় উসতার নিকট বাধা প্রদান করে। কিন্তু ইব্রাহীম (আঃ) সেখানেও কংকর নিক্ষেপ করিয়া তাহাকে বিতাড়িত করেন। হতাশ হইল শয়তান অবশেষে তৃতীয় বার জুমরায়ে উলার পথ বন্ধ করিয়া দাঁড়ায়। সেখানেও ‘আল্লাহু আকবার’ বলিয়া সাতটি কংকর নিক্ষেপ করিয়া চির অভিশপ্ত শয়তানকে বিতাড়িত করিলেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর সাথে শয়তানের তর্ক হয় এবং হযরত ইসমাঈল (আঃ)কে এই মহান কাজ হইতে বিরত রাখার জন্য সর্বশেষ চেষ্টা প্রয়োগ করিয়া বলিল হে ইসমাঈল! তুমি কি জান? তোমার পিতা তোমাকে কোথায় নিয়া যাইতেছে। তদুত্তরে তিনি বলিলেন বেড়াইতে যাইতেছি। তখন শয়তান বলিল তুমিতো কিছুই জান না। তোমাকে তোমার পিতা হত্যা করার জন্য নিয়া যাইতেছে। উত্তরে হযরত ইসমাঈল (আঃ) বলিলেন-পিতা কি কখনো পুত্রকে হত্যা করিতে পারে? ইবলীস বলিল তাহাকে আল্লাহ তায়ালা হুকুম দিয়াছেন। তোমাকে কুরবানী করার জন্য তখন হযরত ইসমাঈল (আঃ) দৃঢ়কণ্ঠে বলিলেন ইহার চাইতে উত্তম জীবন আর কি হইতে পারে? যে জীবনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করিয়াছেন। হে শয়তান! তোর উপর আল্লাহ পাকের অভিসম্পাত অবতীর্ণ হোক তোর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এইখানেই মরদুদ নিরাশ হইয়া চলিয়া গেল।
অবশেষে পিতা পুত্র উভয়েই আল্লাহর রহমতে শয়তানের ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করিয়া কুরবানীর স্থানে মীনায় পৌঁছাইতে সক্ষম হইলেন। হযরত ইসমাঈল (আঃ) পিতাকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন আব্বাজী আর দেরী নয় এখনই বিসমিল্লাহ বলিয়া আমার গলায় ছুরি চালাইয়া দিন। তবে ইহধাম পরিত্যাগ করিবার পূর্ব মুহূর্তে আপনি আমার এই প্রার্থনাগুলি মঞ্জুর করিয়া নিন।
(ক) পিতা আমাকে খুব শক্ত করিয়া বাঁধিয়া নিন। যাহাতে আমি ছটফট করিতে না পারি।
(খ) আপনার পরিধেয় বস্ত্র সামলাইয়া নিন। যাহাতে আমার রক্তের ছিটা তাহাতে না পড়ে।
(গ) আপনার ছুরিটা ধার দিয়া নিন এবং তাহা আমার গলায় দ্রুত চালাইবেন যাহাতে আমার প্রাণ সহজে বাহির হইয়া যায়। কারণ মৃত্যর জালা কঠিন। অন্য বর্ণনা মতে হে পিতা! আপনি যখন বাড়ী তাশরীফ নিবেন তখন আমার জনম দুঃখিনী মাকে আমার রক্তমাখা জামাটা দিবেন। হয়তো ইহাতে তিনি কিছুটা শান্তনা পাইবেন। একমাত্র পুত্রের মুখে এই সব কথা শুনিয়া পিতার মানসিক অবস্থা কি হইতে পারে তাহা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু হযরত ইব্রাহীম (আঃ) দৃঢ়তার পাহাড় হইয়া জবাব দিলেন বৎস আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালন করার জন্য তুমি আমাকে চমৎকার সহযোগিতা করিয়াছ। অতঃপর তিনি পুত্রকে স্নেহের চুম্বন করিলেন এবং অশ্র পূর্ণ নেত্রে তাহাকে বাধিয়া নিলেন। কুরআন পাকের ভাষায় অতঃপর তাহারা উভয়েই নত হইয়া গেলেন (অর্থাৎ আত্ম সমর্পণ করিলেন) এবং তাহাকে উপুড় করিয়া মাটিতে শোয়াইয়া দিলেন। এই ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত পাওয়া গেলেও ঐতিহাসিক বর্ণনায় এইভাবে শোয়ানোর কারণ বর্ণিত হইয়াছে যে, শুরুতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাহাকে সোজা করিয়া শোয়াইয়া ছিলেন কিন্তু বার বার ছুরি চালানো সত্ত্বেও গলা কাটিতে ছিলনা। কেননা আল্লাহ পাক স্বীয় কুদরতে পিতলের একটি টুকরা মাঝখানে অন্তরায় করিয়া দিয়া ছিলেন। তখন পুত্র নিজেই আবদার করিলেন পিতা আমাকে কাত করিয়া শোয়াইয়া দিন। কারণ আমার মুখমণ্ডল দেখিয়া আপনার পৈতৃক স্নেহ উথলিয়া উঠে ফলে গলা সম্পূর্ণ রূপে কাটা হয়না তাহা ছাড়া ছুরি দেখিয়া আমিও ঘাবড়াইয়া যাই। সেই মতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাকে এইভাবে শোয়াইয়া ছুরি চালাইতে থাকেন। (মাযহারী)। [বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (রহঃ) মবছুত ও কাজীখান কিতাবদ্বয় থেকে হেদায়ার ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আল্লাহ পাকের নির্দেশে বেহেস্ত হইতে একটি দুম্বা নিয়া রওয়ানা হইলেন। তাহার সংশয় হইতেছিল পৃথিবীতে পদার্পন করার পূর্বেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) জবাই কাজ সম্পন্ন করিয়া ফেলিবেন। তাই হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আকাশ হইতেই উচ্চস্বরে ধ্বনী দিতে থাকেন ‘আল্লাহু আকবার’ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাহার আওয়াজ শুনিয়া দেখিলেন যে উপস্থিত কুরবানীর বস্তু ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে তিনি একটি দুম্বা নিয়া আসিতেছেন। তাই তিনি স্বতস্ফূর্তভাবে বলিয়া উঠিলেন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’। পিতার মুখে তাওহীদের অমূল্য বাণী শুনিতে পাইয়া তিনিও বলিয়া উঠিলেন। ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার-ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ তাই এই তিন মহান ব্যক্তির আমল ও কালাম গুলো দরবারে এলাহীতে এত বেশী কবুল হইল যে, কিয়ামত পর্যন্ত উক্ত বাণীগুলো ঈদুল আযহায় সমস্ত মুসলিমের কণ্ঠে উচ্চারিত হইতে থাকিবে। আল্লাহ পাকের অসীম কুদরাতে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে কুরবানী হইল একটি বেহেস্তী দুম্বা। এই ভাবেই প্রচারিত হল কুরবানীর মহান বিস্ময়কর ইতিহাস। যাহা অনন্তকাল সুন্নাতে ইব্রাহীম হিসাবে বিশ্ব মানবতার কাছে স্মরণীয় হইয়া থাকিবে।
আমাদের কুরবানী :
আমরা জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর স্মরণে কুরবানী করিয়া থাকি। সে প্রসঙ্গে হাদীস পাকে আসিয়াছে অথ্যৎ হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হইতে বর্ণিত কতিপয় সাহাবী প্রশ্ন করিলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কুরবানী কি? তদুত্তরে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন ইহা তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সুন্নাত। যদিও পরে সতন্ত্র ভাবে আমাদের উপর কুরবানীর নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। তবুও সেই নির্দেশ সুন্নাতে ইব্রাহীম (আঃ)-এর অনুসরণে দেওয়া হইয়াছে। তাই আমরা শরীয়তে। মোহাম্মাদীর এই নির্দেশ সুন্নাতে ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্মরণে পালন করিয়া থাকি।
কুরবানীর গুরুত্ব ও ফজিলত :
মিশকাত শরীফের ১২৯ পৃষ্ঠায় ইবনে মাজা ও আহমদ শরীফে হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে
- হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন কতিপয় সাহাবী প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই কুরবানী কি? তদুত্তরে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন-তোমাদের (জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সুন্নাত। পুনরায় সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করিলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের জন্য কুরবানীর মধ্যে কি রহিয়াছে? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন কুরবানীর গরু এবং বকরীর প্রতি পশমে একটি নেকী মিলিবে। তখন সাহাবায়ে কেরাম আবার জিজ্ঞাসা করিলেন তাহা হইলে দুম্বা এবং ভেড়ার প্রতি পশমের বিনিময়ে ছওয়াব মিলিবেনা? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করিয়াছেন-' দুম্বা এবং ভেড়ারও প্রতি পশমের বিনিময়ে ছওয়াব মিলিবে।
কুরবানীর মহত্ত ও ফজীলত সম্পর্কে আল্লাহ পাক সূরা হজ্জের ৩৭ নং আয়াতে। এরশাদ করিয়াছেন-এগুলোর (কুরবানীর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছেনা বরং কুরবানীর ভিতর দিয়া তোমাদের তাকওয়া-পরহেজগারী বা আল্লাহ ভীতিই আল্লাহর নিকট পৌঁছে। এমনি ভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করিয়া দিয়াছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব হোষণা কর একারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করিয়াছেন। সুতরাং সৎ কর্মশীলদের সুসংবাদ শুনাইয়া দাও। তিরমিযী ও ইবনে মাযাহ শরীফে হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত হাদীসে শরীফে বর্ণিত হইয়াছে-হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, আদম সন্তান কুরবানীর দিন যে সব নেকীর কাজ করিয়া থাকেন। তন্মধ্যে আল্লাহ পাকের নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হল কুরবানী করা। কাল কিয়ামতে কুরবানীর পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হইবে (যা কুরবানী দাতার পাল্লায় দেওয়া হইবে যাহাতে নেকীর পাল্লা ভারী হইয়া যাইবে) কুরবানীর পশুর রক্ত জমীনে পড়ার পূর্বেই উহা আল্লাহ পাকের নিকট কবুল হইয়া যায়। অতএব, তোমরা এই পুরস্কারে আন্তরিক ভাবে খুশী হও।
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হইল যে, কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলাম ধর্মের একটি বড় নিদর্শন বরং উদ্দেশ্য আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ইব্রাহীম। (আঃ) এর স্মৃতি রক্ষা করা এবং আল্লাহ পাকের রেজামন্দি লাভ করা।
অন্য হাদীসে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-কুরবানীর পশু পুলসিরাতের উপর তোমাদের বাহন হইবে। তাই তোমরা মোটা তাজা (জানোয়ার) কুরবানী কর। (বাদায়ে ১ম খঃ ৮ পৃঃ)।
তাবরানী শরীফে হযরত ইমাম হাসান বিন আলী (রাঃ) হইতে বর্ণিত হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে সন্তুষ্ট চিত্তে খুশি হইয়া কুরবানী করিবে এ কুরবানী তাহাকে জাহান্নামের আগুন হইতে মুক্ত রাখিবে। তাবরানী শরীফের অন্য এক হাদীসে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন কুরবানীর উদ্দেশ্যে ঐ দিনে যে অর্থ ব্যয় করা হয় উহার তুলনায় অন্য কোন ব্যয়ই উত্তম। নয়। অন্য হাদীসে হযরত আয়েশা (রাঃ) হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, কর্জ করিয়া কুরবানী করিব কিনা? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিলেন, হ্যাঁ করো। আল্লাহ তায়ালা কর্জ পরিশোধের ব্যবস্থা করিয়া দিবেন। (দারেকুতনী ৪-২৭৭ পৃঃ)।
অন্য এক বর্ণনায় একদা হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমা (রাঃ)কে ডাকিয়া এরশাদ করেন-হে ফাতেমা! তুমি তোমার কুরবানীর জন্তুর নিকটে যাও কেননা কুরবাণীর-জন্তু জবাই করার পর রক্তের প্রথম ফোটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথে তোমার যাবতীয় গুনাহ মাফ হইয়া যাইবে। হযরত ফাতেমা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! এইটা কি শুধু আমার জন্য? রহমাতুল্লিল আলামীন জবাব দিলেন এইটা আমাদের জন্য ও সকল মুসলমানদের জন্য। (তারগীব)
একদিকে যেমন কুরবানীকারীর জন্য বহু প্রতিদান ও খোশ খবরি রহিয়াছে অপর দিকে সক্ষম ব্যক্তির পক্ষে কুরবানী না করা বা অবহেলা করার কুফলের কথাও বাদ দেওয়া হয় নাই। যেমন ইবনে মাযাহ শরীফে বর্ণিত হইয়াছে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যাহার কুরবানী করার ক্ষমতা আছে অথচ সে কুরবানী করিতেছে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত :
হিজরী ২য় সনে ঈদুল আযহার নামায ও কোরবানী আমাদের জন্য ওয়াজিব করা হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। (তিরমিজী, মিশকাত শরীফ-২২৯পৃঃ)
নিম্ন লিখিত শর্ত পাওয়াগেলেই আমাদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
(ক) কুরবানীর দিন মালেকে নেছাব হওয়া। কাজেই গরীবের উপর কুরবানী ওয়াজিব নহে
(খ) সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি হওয়া। কাজেই বিকৃত মস্তিস্ক তথা পাগলের উপর কুরবানী ওয়াজিব নহে।
(গ) স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া। কাজেই দাস-দাসীর উপর কুরবানী ওয়াজিব নহে।
(ঘ) মুসলমান হওয়া। কাজেই অমুসলিমের উপরে কুরবানী ওয়াজিব নহে।
(ঙ) বালেগ হওয়া। কাজীখানের মতে নাবালেগের প্রতি কুরবানী ওয়াজিব নহে।
(চ) মুকিম হওয়া অর্থাৎ নিজ বাড়ীতে অবস্থান করা। কাজেই মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নহে।
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও উপার্জনের উপকরণ ইত্যাদি) বাদ দিয়া যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সারে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য কিংবা উহার মূল্য বা সমমূল্যের অন্য কোন মালের মালিক হয়।
নেছাব পরিমাণ মাল জিলহজ্জ মাসের ১০ ১১ ও ১২ এই তিন দিনের যেই কোন দিন মালিক হইলে তাহার উপর কুরবানী ওয়াজিব হইবে। (শামী ১৯৮ পৃঃ)
কুরবানী না করে সে পরিমান টাকা সদকা করে দিলে :
কুরবানী করা ওয়াজিব সে যদি কুরবানী না করিয়া উহার মূল্য কুরবানীর দিনগুলোর মধ্যে সদকা করিয়া দেয় তবে কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হইবে না। তাহাকে অবশ্যই বিধি মোতাবেক কুরবানী করিতে হইবে। (বাহার)।
নিজের কুরবানী অন্যের নামে দিলে হবে কি :
যাহার প্রতি কুরবানী ওয়াজিব তাহাকে কুরবানী করিতেই হইবে। নিজের কুরবানী পরিবারের অন্য কাহারও নামে করিলে আদায় হইবেনা। (হিন্দিয়া ৬-১৯৫০২)
আইয়্যামে তাশরীকের দিনগুলোতে কুরবানী দাতার করণীয় :
৯ই জিলহজ্জের ফজর হইতে ১৩ই জিলহজ্জ আছর পর্যন্ত প্রতিটা মুকীম বালেগ পুরুষের জন্য ফরজ নামায বাদ তাকবীর বলা ওয়াজিব। এটা শুধু কুরবানী দাতার করণীয় নয় বরং সকল মুসলমানের দায়িত্ব। মুসলিম শরীফ ও মিশকাতের ১২৭ পৃষ্ঠায় হযরত উম্মে সালমা হইতে একখানা হাদীসে বলা হইয়াছে যে, কুরবানী দাতা কুরবানী না করা পর্যন্ত যেন নখ, চুল, ও অন্যান্য ক্ষৌরকাজ না করে। সেই হিসাবে জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন কুরবানী দাতার জন্য উক্ত কাজ গুলো না করা মুস্তাহাব।
মৃত্যু ব্যক্তির নামে কুরবানী : যদি কোন ব্যক্তি আম্বিয়া (আঃ), আউলিয়া, পীর, ওস্তাদ, মাতা পিতা বা যে কোন মৃত ব্যক্তির পক্ষ হইতে কুরবানী করে তাহা হইলে এই কুরবানী শুদ্ধ হইবে। কুরবানী দাতা ধনী হইলে উল্লিখিত ক্ষেত্রে তাহার কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হইয়া যাইবে।।। (শামী ২ / ২৮ পৃঃ কাজী খান ৩ / ৪৮ পৃঃ)
উল্লেখ্য যে, গরীব দুই ভাই বা কয়েক ভাই যদি মিলিয়া একটি বকরী ক্রয় করে অতঃপর তাহারা কোন এক ভাইকে ঐ বকরীর মালিক বানাইয়া দেয় এবং মালিক মৃত পিতা বা মাতা বা অন্য কোন মৃত আত্মীয়ের পক্ষে ঐ কুরবানী করে তাহা হইলে মালিক ও মৃত উভয়ই কুরবানীর ছওয়াব পাইবে এবং অন্যান্য ভাইরা সাধারণ সদকার ছওয়াব পাইবে আর গোস্ত সকলেই খাইতে পারিবে।
কুরবানীর পশুর বয়স :
গরু, মহিষ, বলদণ্ডগাভীর জন্য দুই বৎসর পূর্ণ হওয়া জরুরী।
উট ও উটনীর পাঁচ বৎসর পূর্ন হওয়া শর্ত। একদিন কম হইলে কুরবানী জায়েয হইবেনা। (রদ্দুল মুখতার ৫ / ২০৫পৃঃ) ছাগল, ভেড়া, দুম্বা,নর-মাদীর জন্য এক বৎসর পূর্ণ হওয়া শর্ত।
তবে যদি ছয়মাস বয়সের ভেড়া ও দুম্বা মোটা তাজায় এক বৎসর বয়সের ভেড়া ও দুম্বার সমতুল্য মনে হয় তাহা হইলে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয আছে।
কিন্তু ছাগল যতই মোটা তাজা হোক এক বৎসরের একদিন কম হইলেও কুরবানী হইবেনা।(জাইয়ালী ৬/৭পৃ:রদ্দুল মোখতার ৫/২০১পৃ:)
কুরবানীর পশুতে অংশীদারে কুরবানীর বিধান :
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক ব্যক্তির অধিক শরীক হইয়া কুরবানী করা জায়েয নাই।
গরু, মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে একের অধিক সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হইয়া কুরবানী করিতে পারিবে।
একজন সাত ভাগের একাধিক ভাগে শরীক হইতে পারিবে। কিন্তু সাত ভাগের এক অংশের কম হইলে কাহারও কুরবানী হইবে না। তবে গোস্ত ওজন করিয়া সমান ভাবে ভাগ করিয়া লইতে হইবে কোনরূপ অনুমান করিয়া লইলে হইবেনা। তাহার পরেও কম বেশীর জন্য একে অপর হইতে ক্ষমা চাহিয়া দাবী ছাড়াইয়া নেওয়া। প্রয়োজন।
সাত ভাগের পশুতে মৃত পিতা-মাতা আত্মীয় বা যে কোন মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা :
সাত ভাগের পশুতে নবী, অলী, পীর, ওস্তাদ, পিতা, মাতা বা যে কোন মৃত ব্যক্তির নামে শরীক হইয়া কুরবানী করা যাইবে। বরং কুরবানী দাতা ধনী হইলে তাহার ওয়াজিব আদায় হইয়া যাইবে। (শামী-২ / ২৮পৃঃ কাজীখান ৪ / ৪৮)
কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে :
কুরবানীর পর যদি পেটে জীবিত বাচ্চা পাওয়া যায় তবে উক্ত বাচ্চাটি জবাই করিয়া শরীকদারদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করিয়া লইতে হইবে এবং উহার মূল্য পরিমাণ, অর্থ সদকা করিয়া দিতে হইবে। আর যদি বাচ্চাটি রাখিয়া দেওয়া হয় তবে কুরবানীর বয়স হয় তবেও উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয হইবে না বরং উহার মূল্য পরিমাণ অর্থ সদকা করিতে হইবে। (কাজীখান, আলমগীরী)
ত্রুটিযুক্ত জন্তু দ্বারা কুরবানী :
পাগল জন্তু যদি ঘাস পানি খায় মাঠে চরে তাহা হইলে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয হইবে অন্যথায় কুরবানী জায়েয হইবে না। (শামী ৫ / ২৮০ পৃঃ)।
যে সব পশুর শিং জন্মগত ভাবে নাই কিংবা মধ্যভাগে ভাঙ্গিয়া গিয়াছে তাহার দ্বারা করবানী জায়েয হইবে। তবে শিং যদি গোড়া হইতে একেবারে ভাংগিয়া যায় তবে তাহা দ্বারা কুরবানী জায়েয হইবে না। (শামী ৫ / ২৮০ পুঃ)।
চর্মরোগে আক্রান্ত পশু যদি শক্তিশালী ও মোটা তাজা হয় তাহা হইলে উহা দ্বারা। কুরবানী জায়েয হইবে। কিন্তু চর্ম রোগের কারণে যদি এমন দুর্বল হয়ে যায় যে, কুরবানীর স্থানে পৌছাইতে অক্ষম তাহা হইলে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয হইবে না।। (শামী ৫ / ২৮০ পৃঃ)
অন্ধ, কানা, অতি দুর্বল (যাহার হাড়ে মগজ নাই) ও পঙ্গু পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয নাই। তবে উক্ত পঙ্গৃু পশু যদি তিন পা দিয়া চলাচল করে এবং চতুর্থ পা দ্বারা কিছু কিছু টেক লাগাইয়া হাটিতে পারে তবে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয হইবে। (শামী ৫ / ২৮১ পৃঃ)
যে পশুর জন্মগতভাবে একটা বা দুইটা কান সম্পূর্ণ নাই বা অধিকাংশ (অর্থাৎ সম্পূর্ণ কানের এক তৃতীয়াংশের বেশী) কাটা থাকে অনুরূপ লেজেরও অধিকাংশ কাটা থাকে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয হইবে না। আর যদি উহার চাইতে কম হয় তবে। কুরবানী জায়েয হইবে। অনুরূপ জন্মগত কান যদি খুব য়োটও হয় তবু কুরবানী জায়েয হইবে। (শামী ৫ / ২৮২ পৃঃ)
খাশী করা পশু বা স্বভাবগত এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট। খাশী করা পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয এবং উত্তম। অনুরূপ স্বভাবগতভাবে এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট পশুও কুরবানী জায়েয হইবে। (শামী ৫ / ২৮২ পৃঃ ও ইমদাদুল ফতোয়া ৩ / ৪ ৭২ পৃঃ)
অধিকাংশ দাঁত বিশিষ্ট পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয তবে দাঁত মোটেই নাই যার ফলে খাদ্য গ্রহণ করিতে পারেনা এই ধরনের প- দ্বারা কুরবানী জায়েয নাই। তবে যদি দাঁত ক্ষয় হইয়া যাওয়ার পরেও খাদ্য গ্রহণে কোন রূপ অসুবিধা না হয় এবং সুস্থ থাকে তবে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয হইবে। (শামী ৫ / ২৮৩ পৃঃ) সিরাজিয়া।
যে পশুর পুরুষাঙ্গ কাটা হওয়াতে সংগমে অক্ষম এবং বৃদ্ধ হওয়াতে বাচ্চা জন্মাইতে অক্ষম উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয হইবে না।
যে পশুর স্তনের প্রথমাংশ কাটা বা রোগের কারণে দুধ শুকাইয়া গিয়াছে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয নাই।
ছাগলের স্তন হইতে দুই বোটার একটি ও গরু বা মহিষের স্তনের চারিটি বোটা হইতে যদি দুইটি কাটিয়া যায়। তবে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয হইবে না। (শামী ৫ / ২৮৪ পৃঃ)
খোজা যাহাকে প্রচলিত ভাষায় খোনছা বলে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয কিন্তু সমলিঙ্গ ওয়ালা পশুর কুরবানী জায়েয নাই। (শামী ৫ / ২৮৪ পৃঃ)।
যেই পশুর জিহবা নাই অথবা অধিকাংশ কাটা গিয়াছে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয নাই।
ফতোয়ায় তাতারখানিয়ায় বলা হইয়াছে জিহবা কাটা যাওয়ার কারণে পশুর যদি আহার করা বন্ধ হইয়া যায় তবে কুরবানী শুদ্ধ হইবে না, আহার বন্ধ না হইলে কুরবানী জায়েয হইবে।
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী বলিয়াছেন কাটা অংশ যদি এক তৃতীয়াংশ হইতে বেশী হয় তাহা হইলে শুদ্ধ হইবে না। আর কাটা অংশ যদি এক তৃতীয়াংশ বা তাহার চাইতে কম হয় তবে উহা দ্বারা কুরবানী জায়েয হইবে। আর ইহাই বিশুদ্ধমত।। (আলমগীরী)
লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।