শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) নিয়ে বাস্তব কথা
মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হল আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা।

ঈদ অর্থ আনন্দ। মিলাদ হল জন্ম আলোচনা। নবী হলো নবী মুহাম্মাদূর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনে খুশি হয়ে যে আনন্দ প্রকাশ করা হয়, নবীর জীবনী আলোচনা করা হয়। নবীর মিলাদ আলোচনা করা হয়। তা হল ঈদ এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

উম্মত হয়ে নবীর জন্মে খুশি না হয়ে উপায় নেই। বরং নবীজি মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর জমিনের মধ্যে আগমন করেছেন, এতে করে সকল উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হবে, খুশি হওয়ার কথা এবং এতে শুকরিয়া আদায় করার কথা।

কারণ! নবীজি মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রতিটি মুসলমান মানতে হবে। ভালোবাসতে হবে। নবীজির আদর্শ অনুসরণ- অনুকরণ করতে হবে। এতেই দুনিয়া এবং আখেরাতে কল্যাণ রয়েছে।

ঈদ কেন?

প্রশ্ন হল, ঈদ কেন? আমরা জানি বছরে মুসলমানদের জন্য দুইটি ঈদ। একটি ঈদ উল আযহা, আর অন্যটি ঈদুল ফিতর। তাহলে ঈদে মিলাদুন্নবী ইসলামী শরীয়তে আবার কি ঈদ?

যারা আলেমগণ অবশ্যই জানেন, আশুরায় দিন, মায়েদা অবতীর্ণের দিন, জুমার দিন, আরাফাতের দিন, শবে বরাত ও শবে কদরের দিনকে ঈদের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর জমিনের মধ্যে আগমন করেছেন এর চেয়ে বড় খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে এজন্যই এই দিনকে উম্মতি মোহাম্মাদি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশির দিন তথা ঈদের দিন হিসেবে বলে থাকে।

কোন আলেমই দাবি করেননি, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মতোই ঈদে মিলাদুন্নবীতে নামাজ রয়েছে। বরং এই দিনটিকে নবীর আগমন হিসেবে খুশি হিসেবে ঈদ বলা হয়।

মিলাদুন্নাবী : মিলাদুন্নবী বিষয়ে কোন তর্ক বিতর্ক থাকতে পারে না। যারা মিলাদুন্নবী নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে তারা মূলত নিজেদের আকীদা আদর্শের প্রভাবে নিজেদের পুরনো মতাদর্শের আলোকেই মিলাদুন্নবী(সাঃ) বিষয়ে তর্ক বিতর্ক করে থাকে।

কারণ! মিলাদ হলো জন্মদিন, জন্ম কাল, জন্মের বিষয়ে আলোচনা। নবী হল নবী। এখানে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্দেশ্য।

তাহলে বিষয়টি দাঁড়ালো, আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের আলোচনা হল মিলাদুন্নবী।

একটি প্রশ্ন? আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম জন্মের আলোচনা, জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা এগুলা করা কি হারাম?

উত্তর হল, অবশ্যই না। প্রতিটি মুসলমানদের জন্যই নবীজি মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম আদর্শের প্রতীক। এজন্য নবীজি মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় অধ্যয়ন করে নিজের জীবনে সুন্নতকে বাস্তবায়ন করবে।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা কি যাবে : এ বিষয়ে আমার প্রশ্ন হল? রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাসুল (সাঃ)-এর জীবনী আলোচনা। জীবনী পাঠ, জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা, সুন্নাত গুলো আলোচনা, সিরাতের আলোচনা। এগুলো কি ইসলাম কখনো নিষেধ করেছে? না! অবশ্যই না।

বরং এটি অতি উত্তম কাজ। ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নবীজি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী আলোচনা অনুষ্ঠান করা এবং নিজেদের জীবনে এগুলাকে বাস্তবায়ন করা।

ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)কিভাবে পালন করা যাবে?

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে প্রতিটি অনুষ্ঠানে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করা হয়।

প্রতিটি অনুষ্ঠানেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হামদ, সিফাত বর্ণনা করা হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত হামদ, নাত পরিবেশন করা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের আলোচনা করা হয়। জীবনী আলোচনা করা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের আলোচনা করা হয় এবং মানুষের মধ্যে রাসুল (সাঃ)-এর মহাব্বত বৃদ্ধির জন্য আলোচনা করা হয়।

মিলাদুন্নাবী (সাঃ) কিভাবে পালন করবেন?

প্রশাসনের সর্বমহলে, সরকারি, বে-সরকারি, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পরিবার, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের উপর আলোচনা অথবা সুন্নাহর উপর আলোচনা অনুষ্ঠান করা যায়।

এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আল্লাহর ভয়, নবীজির মহাব্বত এবং সুন্নাহ আমলের প্রতি মানুষরা যদি আকৃষ্ট হয়। তাহলে দেশে দুর্নীতি কমবে, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, অপকর্ম কমবে। মানুষরা দ্বীনদার মুখী হবে। স্টুডেন্টরাও নবীর আদর্শে আদর্শিতবান হয়ে নিজের জীবনকে গঠন করবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মতে খুশি হয়ে গরিব অসহায় মিসকিনদের খাদ্যের ব্যবস্থা করে, বস্ত্রহীনদের বস্ত্র দান করে, অভাবীদের সহযোগিতা করে, অসুস্থদের সেবা করে। তাহলে এ কাজটি অবশ্যই কল্যাণমূলক এবং নেকের কাজ।

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে আমাদের প্রতিটি সেক্টরের মানুষরা তাদের কার্যক্রম ফ্রিভাবে মানুষকে প্রদান করতে পারে। ডাক্তার তার সেবা দিতে পারে। রক্ত ডোনাররা রক্তদান করতে পারে। ধনীরা দান সদকা করতে পারে, খাদ্য দান করতে পারে, গৃহ দান করতে পারে। এভাবে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নবীজির ভালোবাসায় সপর্দ করে দিতে পারে।

যদি এই কাজগুলার কোন গুলোই না করে। তথাপিও ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান করার পর সেখানে কিছু মিষ্টি, খিচুড়ি, বিরানি বা তাবারক হিসেবে যাই কিছু বন্টন করা হয় এই বন্টনের মাধ্যমে অনেক অসহায়, মিসকিন, গরিব মানুষরা সামান্যহলেও খাবার পেল। তাহলে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কেন্দ্র করে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, অসহায় মিসকিন, দরিদ্ররা খাবার পেল।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য নবী এবং রাসূল হিসেবে পৃথিবীর জমিনের মধ্যে পাঠিয়েছেন। এটা হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক মহা নেয়ামত। এজন্য আল্লাহর নেয়ামতের স্মরণ এবং আল্লাহর নেয়ামতের বেশি বেশি স্মরণ এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সবচেয়ে বড় নেয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলো নিম্ন তুলে ধরা হলো।

আল্লাহর নেয়ামতের স্মরণ করা : পবিত্র কুরআনে এসেছে, আর স্মরণ কর, ‘আদ জাতির (ধ্বংসের) পরে তিনি তোমাদেরকে (তোমাদের আগের লোকদের) স্থলাভিষিক্ত করেছেন। আর তিনি তোমাদেরকে যমীনে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ ও পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরী করছ।

কাজেই তোমারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।’(৭ সূরা আ'রাফ - ৭৪)

আল্লাহর নেয়ামত বেশি বেশি স্মরণ করা, আর তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা ব্যক্ত কর।(৯৩ সূরা দুহা -১১)

নবী (সাঃ) সবচেয়ে বড় নেয়ামত, আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন নবীকে পাঠিয়ে।

কুরআনে এসেছে, আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাঁর আয়াতসমূহ তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল। (৩ সূরা আলে ইমরান -১৬৪)

অনুগ্রহে আনন্দ প্রকাশ : নবী (সাঃ) এর আগমনে খুশি -বলুন, ‘এটা আল্লাহ্র অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়; কাজেই এতে তারা যেন আনন্দিত হয়।’ তারা যা পুঞ্জীভুত করে তার চেয়ে এটা উত্তম।(১০ সূরা ইউনুস -৫৮)

নবী (সাঃ) উম্মতের কাছে সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ এটা কোন উম্মত অস্বীকার করতে পারেনা।

তাই নবী (সাঃ) আমাদের কাছে অনেক বড় নেয়ামত এজন্য আমরা এদিনকে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সাঃ) হিসেবে পালন করি।

নবীজি (সাঃ) রহমতের নবী : কুরআনে এসেছে, আর আমরা তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য শুধু রহমতরূপেই পাঠিয়েছি। (২১ সূরা আম্বিয়া -১০৭)

নবী কারীম (সাঃ) সমগ্র জগতের জন্য রহমত। তাই নবী (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা তাঁকে ভালোবাসার মাধ্যমে রহমত লাভ করা যায়।

রাসূল ও নবীদের বৃত্তান্ত শুনলে অন্তর দৃঢ় হয় -রাসূলকে নবীদের বৃত্তান্ত শুনানো হয়েছে অন্তর দৃঢ় হওয়ার জন্য।

রাসূলদের যে সব সংবাদসমূহ আমি তোমার কাছে বর্ণনা করলাম, এর দ্বারা আমি তোমার দিলকে মযবুত করছি, এতে তুমি প্রকৃত সত্যের জ্ঞান লাভ করবে আর মু’মিনদের জন্য এটা উপদেশ ও স্মারক। (১১ সূরা হুদ - ১২০)

নবীদের বৃত্তান্ত শুনলে দিলে ঈমান মযবুত হয়, তাই আমাদেরকে আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ)-এর জন্মে তাঁর শুরু থেকে সমগ্র জীবনী আলোচনার মাধ্যমে উম্মতের দিলে ঈমান মযবুত হবে।

এ জন্য মিলাদুন্নাবী (সাঃ)-এ আমরা প্রিয় নবী (সাঃ)-এর জীবনী আলোচনা করে ঈমানী শক্তি জামিল করি।

আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত পড়েন। এবং ঈমানদারদেরকেও সালাত ও সালাম পড়ার তাগিদ দেন, নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর। (দরূদ ও সালাম পেশ কর।) (৩৩ সূরা আহযাব -৫৬)

মীলাদ শরীফ হাদীস শরীফ হতে প্রমাণিত : তিরমিজী শরীফ ২/২০৪ পৃষ্ঠায় মীলাদুন্নবী অধ্যায়ে হযরত মুত্তালিব বিন আব্দুল্লাহ আপন দাদা কায়েস বিন মাখরিমা ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন। আব্দুল্লাহর পুত্র মুত্তালিব নিজ দাদা কায়েস বিন মাখরিমা ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি ও হযরত নবী করীম (সাঃ) হাতী সালে জন্ম গ্রহণ করেছি। হযরত ওছমান ( রাঃ ) কিবাছ বিন আশইয়ামকে প্রশ্ন করেন, আপনাদের উভয়ের মধ্যে বয়সে কে বড়? তিনি উত্তরে বলেন, বয়সের দিক দিয়ে আমি হযরত নবী করীম (সাঃ) হতে বড়, কিন্তু সম্মানে ও মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি আমার চেয়ে বড়।

অত্র হাদীছ হতে প্রমাণিত হলো ছাহাবায়ে কেরাম হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর জন্ম কাহিনী পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করতেন।

ছহীহ বুখারী শরীফ ১/২০ পৃষ্ঠায় উমাইয়্যা খলীফা হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয হতে বর্ণিত আছে, তিনি বিজিত রাষ্ট্র প্রধানের নিকট এ মর্মে পত্র লিখে পাঠিয়েছেন। যথাঃ হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর হাদীছগুলির প্রতি যত্নবান হও ও সমুদয় হাদীছগুলি লিপিবন্ধ কর। কেননা, আমার ভয় হচ্ছে ইলমে দ্বীন ধ্বংস ও বিলীন হওয়ার এবং ওলামায়ে কেরামের ইহলোক ত্যাগ করার। তাই তোমরা হাদীছ শরীফের আলোচনা মজলিস কায়েম কর যাতে অজ্ঞ লোক বিজ্ঞ হতে পারে। কেননা, হাদীছ শরীফ ধ্বংসের মূল কারণ হলো, তাবলীগ ও প্রচার বন্ধ করে দেয়া।

ইহা ধ্রুব সত্য যে, মীলাদ অনুষ্ঠান হাদীছ শাস্ত্র প্রচার করার একটি অন্যতম মাধ্যম ও এতে ফায়দা ব্যাপক।

ঈদে মীলাদুন্নবী(সাঃ) উদযাপন প্রসঙ্গ : বর্তমান সমাজে দেখা যায়, একদল লোক পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মীলাদুন্নবীর মাহফিল উদযাপন করেন না। বরং যারা এ পবিত্র মাহফিল কায়েম করে হুযুর পাক এর জন্মলগ্ন ইতিহাস বর্ণনা করে আনন্দ প্রকাশ করেন, সভার শেষে খুশীতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও হযরত রাসূল করীম(সাঃ) নেক নজর হাছিলের উদ্দেশ্যে আর্থিক দান ও তাবারক প্রদান করেন, এসব কাজকে জঘন্যতম গুনাহ মনে করেন। যার ফলে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই এ নেককাজে যোগদান থেকে বিরত রয়ে মীলাদুন্নবী মাহফিলের বিশেষ ছওয়াব হতে মাহরূম হচ্ছে।

কুরআন পাকে ঈদ শব্দটি এসেছে। অপরদিকে হাদীছ শরীফে বহু জায়গায় হযরত রাসূল মকবুল (সাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম ঈদ শব্দ ব্যবহার করেছেন। বিশেষতঃ জন্মকে কেন্দ্র করে স্বয়ং রাসূল মকবুল (সাঃ) এর জন্ম উৎসব বা ঈদে মীলাদুন্নবী করে উম্মতগণকে উহা পালনের জন্য উৎসাহিত করেছেন।

হুযুরের (সাঃ)-এর প্রতি যে, মহান আল্লাহর মীলাদুন্নাবীর আয়াত ও হাদীছ সমূহ বয়ান করার নির্দেশ ছিল উহা তিনি গোপন করেননি। মজলিস কায়েম করে স্বয়ং এবং কোন কোন সময় বিশেষ বিশেষ ছাহাবায়ে কেরাম দ্বারা স্বয়ং উপস্থিত থেকে বর্ণনা করায়ে নিজে ও ছাহাবায়ে কেরাম খুশী প্রকাশ করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত যত উম্মতে মুহাম্মদীর আগমন হবে তাদেরকেও বর্ণনা করতে ও আনন্দ প্রকাশ করতে বলে গেছেনন। আশাকরি তা পড়ে শুনে প্রীত ও আনন্দিত হবেন ও সংশোধন একথা দিবালোকের ন্যায় সত্য। মহান আল্লাহ মানবজাতির উপর যখন যেকোন মস্তবড় নিয়ামত অর্পন করেন, জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানবতার দৃষ্টিতে সাধারণতঃ মানুষ উহার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন। এমন কি সকলের সমন্বয়ে ঐ দিনটিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ঈদ বা উৎসব উদযাপন করে থাকেন। শরীয়তে আদিকাল থেকে আরম্ভ করে অদ্যাবধি ঐ উৎসব প্রতিপালিত হয়ে আসছে।

হযরত রাসূল মকবুল (সাঃ)-এর জন্মের ৭ম দিবসে তার দাদা আব্দুল মুত্তালিব একটি দুম্বা আকীকা করেছেন। মজলিস ডেকে সকলের মেহমানদারী করে নাতীর নামকরণ করলেন ‘মুহাম্মাদ’। এতে প্রশ্ন উঠল এ নাম তো আপনার পূর্ব পুরুষের কারো নাম ছিল না। তিনি উত্তরে বললেন, আমার ইচ্ছে হলো, যেন আসমানের প্রশংসা করেন আল্লাহ, আর যমীনে প্রশংসা করেন মানুষ।

সীরতে হলবীয়া ১ ম খণ্ড ৯৩ পৃষ্ঠায়।

বায়হাকী শরীফে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই হযরত রাসূল মকবুল (সাঃ) নবুওয়াত প্রাপ্তির পরে মদীনায় গিয়ে নিজের আকীকা করেছেন। অথচ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, তার জন্মের ৭ম দিবসে তার দাদা আব্দুল মুত্তালিব আকীকা করেছেন। আকীকা দু'বার করা হয় না। এমতাবস্থায় মুহাদ্দেছীন উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার জন্য এ বর্ণনা দিয়েছেন যে, মহান আল্লাহ তাকে রাহমাতুলল্লিল আলামীন করেছেন বিধায়, শুকরিয়া স্বরূপ এরূপ করেছেন এবং উম্মতগণকে এরূপ করার বিধান করলেন। যেমন তিনি নিজের উপর দরূদ শরীফ পাঠ করেছেন। তা শুনে যেন উম্মতগণ দরূদ পড়ার জন্য আগ্রহান্বিত হন। সুতরাং মীলাদুন্নবীর জন্য ঐ আয়াত ও এ হাদীছ শরীফই যথেষ্ঠ।

ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনে এজাম এবং আওলিয়ায়ে কেরামের বাণী সমূহ : হুযুর আকরামের সহোদর চাচা আবু লাহাবকে তার দাসী ছোয়াইলা যখন হুযুর আকরাম (সাঃ)-এর জন্মের সুসংবাদ জানালেন তৎক্ষনাৎ সে খুশীতে আত্মহারা হয়ে তাকে আযাদ করে দিলেন। কথিত আছে, উক্ত আবু লাহাবকে তার মৃত্যুর পর তার পরিবারবর্গের কোন এক ব্যক্তি স্বপ্ন যোগে দেখে জিজ্ঞেস করল কেমন আছ? সে উত্তরে বলল দোযখে পড়ে আছি, তবে সপ্তাহের সোমবার রাতে আমার শাস্তি হালকা করে দেয়া হয়। আঙ্গুলের মাথা দ্বারা সে ইশারা করে বলল, আমি এ দু'টি আঙ্গুলের মাঝে পানি চুষতে থাকি। উহার একমাত্র কারণ হলো, ছোয়াইবা দাসী আমাকে নবী পাকের জন্মের সুসংবাদ দেয়ায় এবং তাঁকে দুগ্ধ পান করানোর কারণে আযাদ করে দিয়েছিলাম। ইবনুল জাফরী বলেছেন, যে আবু লাহাব জাহান্নামী বলে কুরআন পাকে ঘোষিত, তাকে যখন মীলাদুন্নবীর খুশীতে দান করার কারণে দোযখ হতে প্রতি সোমবার নিস্তার দেয়া হয়, তাহলে যে মুসলমান মীলাদুন্নবীর ঈদ উদযাপন করেন ও তাঁর মহব্বতে মাল দৌলত অর্থাৎ জনগণকে দান খয়রাত বা তাবারক প্রদান করেন তার প্রতি মহান আল্লাহর কি পরিমাণ অনুগ্রহ ও দয়া অবতীর্ণ হতে পারে, আপনারা উহা চিন্তা করুন। (হাবীউল ফাতাওয়া-১/২৬২ পৃঃ)।

বিতর্কের সমাধান : ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়ে বিতর্কে সমাধান আমরাই করতে পারি। একদল যারা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়ে বিরোধিতা করছে। বিরোধীতা করতে গিয়ে মূলত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী আলোচনা, জীবনী পাঠ, জীবনী অধ্যায়ন, রাসুলের আদর্শ প্রচার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মনে হয় যে, বিরোধীতা এমন পর্যায়ে করছে। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম তার জীবনী আলোচনা এগুলা পছন্দ করেন না।

আরেক দল রাসুল (সাঃ)-এর মিলাদ উপলক্ষে মানুষের কাছে রাসুল প্রেম, রাসুলের আদর্শ, রাসূলের জীবনী, রাসূলের সুন্নত পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

তারা বিশ্বের মানুষের দ্বারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

সিদ্ধান্ত আপনার : এখন সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। আপনি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী আলোচনা, জন্মের আলোচনা, রাসুলের শান শওকত বর্ণনার আলোচনা মজলিস, দারিদ্র, অসহায়, মিসকিনদের খাদ্য বিতরণ বিতরণ তথা তবররুক বিতরণ এগুলাকে পছন্দ করেন। না অপছন্দ করেন?

পরিশেষে বলব, ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমরা পালন করব। এ নিয়ে তর্কে না জড়িয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহব্বত ভালোবাসা নিয়ে নবীজির জীবনী আলোচনা করব। কারণ! পবিত্র কুরআনুল কারীমে বিভিন্ন নবীদের জন্মের আলোচনা করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নিজের জন্মের আলোচনা করেছেন। তাই মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে বিশ্বকে একটি বার্তা দেওয়া যায়। মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রচার করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ মেনে জীবন পরিচালনার মাধ্যমে দুনিয়া এবং আখেরাতের কল্যাণ রয়েছে।

লেখক : মুফতি মুহা.আবু বকর বিন ফারুক।

ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়