প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
মাহে জিলহজ্ব গত হয়ে শুরু হয়েছে মুহাররম মাস। হয়েছে একটি বছরের বিদায় আর একটি বছরের সূচনা। পশ্চিমাকাশে হেসে উঠেছে মুহাররমের হেলাল- নতুন বছরের নতুন চাঁদ। জগতবাসীকে ডেকে বলবে- বিগত দিনের হিসেব মেলাও। প্রত্যয় গ্রহণ কর নতুন বছরের। পাথেয় সংগ্রহ কর পরকালের। দিন যায় রাত আসে। সপ্তাহ পেরিয়ে মাস আসে। ধীরে ধীরে তা-ও ফুরিয়ে যায়। এভাবে বারটি মাস ঘুরতেই কেটে যায় একটি বছর। শুরু হয়ে যায় আবার নতুন বছরের আয়োজন। এভাবে একদিন নিভে আসে জীবনবাতি। বুদ্ধিমানতো সে-ই যে জীবনের এ মূল্যবান সময়গুলো যথাযথ কাজে লাগায়।
বুদ্ধিমানতো সেই, যে প্রতিটি নতুন সময় ও সূচনায় নিজেকে এমন কাজে নিয়োজিত করে, যার মাধ্যমে তার আখেরাত সুন্দর হয়। আর নির্বোধ ওই ব্যক্তি, যে নতুন সময় ও সূচনায় এমন কাজকর্মে লিপ্ত থাকে, যা তার ধ্বংস টেনে আনে। তাই জীবনের প্রতিটি নতুন মুহূর্তে কল্যাণের দিকে আরো ধাবিত হওয়ার প্রত্যয় গ্রহণ করাই মুমিনের ঈমানের দাবি। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক নসিব করুন।
হিজরি বর্ষের সর্বপ্রথম মাস মুহাররামুল হারাম তথা মুহাররম মাস। হাদিসের ভাষায়- শাহরুল্লাহ আলমুহাররাম। আল্লাহ তায়ালা বছরের যে ক’টি মাসকে বিশেষ মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছেন মুহাররম তার অন্যতম। পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন : আল্লাহ যেদিন আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই মাসসমূহের গণনা আল্লাহ তায়ালার নিকট তাঁর বিধান মতে বারটি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটাই সহজ-সরল দ্বীন-এর দাবি, অতএব তোমরা এ দিনগুলোতে নিজের ওপর জুলুম করো না। (সূরা তাওবা : ৩৬)।
এ চার মাস কী কী? হাদিস শরিফে তা বলে দেওয়া হয়েছে। নবী কারিম (সাঃ) বলেন, সময়ের হিসেব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-জমিনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল। (কারণ, জাহেলি যুগে আরবরা নিজেদের স্বার্থ ও মর্জিমতো মাস-বছরের হিসেব কম-বেশি ও আগ-পিছ করে রেখেছিল।) বার মাসে এক বছর । এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক- জিলকদ, জিলহজ ও মুহাররম। আরেকটি হলো রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস। (সহিহ বুখারি : ৪৬৬২)।
হাদিসে এ মাসকে শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সাঃ) ইরশাদ করেন : রমজানের পর সবচে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ)। (সহিহ মুসলিম : ১১৬৩)।
প্রকৃতপক্ষে সকল মাসই তো আল্লাহর মাস। তথাপি এ মাসকে বিশেষভাবে ‘আল্লাহর মাস’ বলে ব্যক্ত করার মাঝে রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। যেমন পৃথিবীর সকল মসজিদই আল্লাহর ঘর। কিন্তু কাবা শরিফকে বিশেষভাবে বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর বলার হেকমত কী? কারণ এর রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। তেমনি বছরের অন্যান্য মাস অপেক্ষা মুহাররমের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে হিজরি সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন : লোকেরা আপনার কাছে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি তাদেরকে বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজ-কর্মের) হিসেব এবং হজের সময় নির্ধারণ করার জন্য। (সূরা বাকারা (২) : ১৮৯)।
মুসলমানদের বহু দ্বীনি বিষয়, বিশেষ করে হজের মতো মহিমান্বিত আমল নির্ভরশীল চাঁদের হিসেবের ওপর। আরবি মাস-বছরকে ঘিরে ইসলামের বহু বিধান আবর্তিত হয়। এই আরবি হিজরি চান্দ্রবর্ষের প্রথম মাসটিই হচ্ছে মুহাররম। মুহাররমকে ঘিরেও রয়েছে শরিয়তের সুন্দর সুন্দর বিধান ও আমল। ফলে দ্বীনি দায়িত্ববোধ থেকেই হিজরি মাস-বর্ষের গণনা এবং এর শুরু-শেষের হিসেবের প্রতি যত্নবান হওয়া মুমিনের জন্য সবিশেষ কাম্য।