প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৩, ০০:০০
বর্তমান সময়ে পরকিয়া এক মহামারী রূপ ধারণ করেছে। কত সংসার, কত জীবন, কত ভবিষ্যৎ কত আশা, কত স্বপ্ন, সব ধ্বংস করে হয়ে গেছে পরাকীয়ার কারণে।
স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অনেক স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত। আবার স্বামী থাকা সত্ত্বেও অনেক স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। কেউবা পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে অন্য জনের সাথে হাত ধরে দূরে কোথাও পাড়ি জমিয়েছে।
পরকীয়ায় আসক্ত অধিকাংশ সম্পর্কের মধ্যেই ধর্ষণ, হত্যাসহ নানাবিধ অন্যায়ের কথা শোনা যাচ্ছে।
বর্তমনে একটি ঘটনা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ঝালকাঠি জেলায় এক যুবক তার আদরের স্ত্রীকে একটি ইকো পার্কে নিয়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে দুনিয়া থেকে চির বিদায় করে দিয়েছে। এরপর ফেসবুকে তাদের প্রেমের কাহিনী এবং তাদের দাম্পত্য জীবন এবং সর্বশেষ তার স্ত্রীর পরকীয়ার চিত্রটি তুলে ধরেন এবং ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, পরকালে ভালো থেকো। তিনি খুনের ঘটনা স্বীকার দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। নিজে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পন করেন।
শুধুমাত্র স্ত্রীর পরকীয়ার কারণেই দুইটি জীবন শেষ হয়ে গেল। প্রথমত স্ত্রী মারা গেল। দ্বিতীয়ত যুবকটি আর জেল থেকে ছাড়া পায় কিনা অথবা তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয় কিনা এটাই দেখার বিষয়।
স্বামী তাকে বারবার বোঝানোর পরও সে কোনভাবেই পরকীয়া থেকে সরে না আসায় এমন ঘটনা ঘটলো। অথচ তারাই ভালোবেসে একজন অন্যজনকে বিয়ে করেন। পারিবারিকভাবে মেনে না নেয়ায় তারা অন্যত্র একত্রে বসবাস করেন।
আমাদের সমাজে পরকিয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আল্লাহর বিধানকে না মানা। আল্লাহর বিধান পর্দা আমাদের মধ্যে যথাযথভাবে পালন করলে পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এতে করে পরকীয়ায় শত শত, হাজার হাজার জীবন নষ্ট হতো না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দার কল্যাণের জন্যই পর্দার বিধানকে ফরজ করে দিয়েছেন। স্বামী এবং মহরম ব্যতীত মহিলারা অন্য কারো সাথে দেখা করবে না। অন্য কারো সাথে কথা বলবেনা। নিজের সৌন্দর্য অন্য কারো সামনে প্রকাশিত করবে না। পর্দার সহিত চলাচল করবে। জবানের হেফাজত করবে। চোখের হেফাজত করবে। তবে পরকীয়া আসক্তি থেকে দূরে থাকা যায়।
পরকীয়ায় কারণে নিজের স্ত্রীকেই নিজের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয় না। নিজের স্ত্রীর চলন ও কথা বার্তা কিছুই ভালো লাগেনা। কারণ হলো যখন অপর কোন মহিলার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে অপর কোন মহিলার সৌন্দর্যে পাগল পারা হয়ে যায়। অপর কোন মহিলার মধুর কন্ঠে মাতোয়ারা হয়ে যায়। তখন নিজের স্ত্রীকে আর ভালবাসতে মন চায় না। তখনই স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের টানা পড়া শুরু হয়ে যায়।
অনেক মহিলারা নিজেদের স্বামী ব্যতীত থাকার পর ও পরকীয়া করে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুন, হত্যা, ধর্ষণের মত অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু এটা বোঝা উচিত ছিল।
পরকীয়া বা ব্যাভিচারে জড়িত হয়ে অনেক অবৈধ সন্তান জন্ম হয়। সে সকল সন্তান রাস্তার পাশে, বাগানে, বস্তায়, ব্যাগে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এটাই কি মানবতা, এটাই কি মনুষ্যত্ব।
যারা নারীদের পর্দার কথা বললে বলেন নারীদের অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়।পর্দা বরং নারীদের অধিকার ক্ষুন্ন নয়, নারীদেরকে তাদের যথাযথ সম্মান দেওয়া। নারীরা তাদের প্রয়োজনমতো চাকরি করবে, কাজ করবে, বাহিরে বের হবে। তবে নিজের ইজ্জত আব্রুর হেফাজত করে। নিজেকে অন্যের জন্য বিলিয়ে দিয়ে নয়। নিজের সৌন্দর্য অন্যের জন্য প্রকাশ করে নয়।
আমাদের পুরুষরা, আমাদের মহিলারা অপরের মন জয় করতে যত চেষ্টা করে। এই চেষ্টা যদি নিজের স্ত্রী বা স্বামীর জন্য করতো তাহলে সংসারে শান্তি বিরাজমান থাকত।
একবারও কি ভেবে দেখেছেন, একজন পুরুষ কখনোই এটা চান না, নিজের স্ত্রী অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ুক। তেমনি একজন স্ত্রীও চান না নিজের স্বামী অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ুক। অথচ গোপনে নিজে অন্যের সাথে পরকীয়া করে থাকে।
একজন স্ত্রী পরকীয়া করে চলে গেলে তার সন্তানের জীবন কত কষ্টের হয় সেটা কি একবারও ভেবেছেন। একজন স্বামী পরকীয়া করে আরেকজন স্ত্রীকে বিবাহ করলে, নিজের সংসার অপরের সংসারে কত অশান্তি হয় একবারও কি ভেবে দেখেছেন। পরকীয়া থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসা উচিত। ইসলামের বিধান না মানায় পরকীয়ার কারণ, ইসলামের বিধান মানা পরকীয়ার সমাধান।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)
আল্লাহ তাআলা বলেন তোমরা ব্যাভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। ব্যাভিচারের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য কোনো পুরুষ মহিলার প্রতি আসক্ত হওয়া। কোন মহিলা পুরুষের প্রতি আসক্ত হওয়া। একজন অন্যজনের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়া। ব্যভিচার হওয়ার কারণ চোখের কৃ-দৃষ্টি। যদি চোখকে অবনত করে রাখা হয়, অপর কোনো মহিলার প্রতি নজর না দেওয়া হয়। অন্য মহিলার সাথে কথা বলা না হয়, অপর মহিলার সৌন্দর্য অবলোকন করা না হয়, তবে পরকীয়া থেকে মুক্ত পাওয়া যায়।
পরকীয়ার মাধ্যমে ব্যভিচারের পয়দা হয়, এজন্য আল্লাহ তায়ালা ব্যাভিচারের শাস্তি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ’ ঘা করে বেত্রাঘাত করো।’ (সুরা নূর, ২)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘অবিবাহিত নারী ও অবিবাহিত পুরুষ ব্যভিচার করলে শাস্তি : ১০০ বেত্রাঘাত ও এক বছরেরর জন্য নির্বাসন। বিবাহিত নারী বিবাহিত পুরুষের সাথে ব্যভিচার করলে শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপে হত্যা’ (মুসলিম-১৬৯০)।
জিনাকারীরা উলঙ্গ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে, যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত, এর তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে, তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছে যাবে; অতঃপর আগুন যখন স্তিমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সাথে এ আচরণ কিয়ামত পর্যন্ত করা হবে’ (বুখারি-৭০৪৭)।
হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কারণ, এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে, তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসেব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)
পরকীয়া ব্যাভিচার থেকে বাঁচতে হলে মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সূত্র দুটি কে কন্ট্রোল করার জন্য বলে দিয়েছেন। তবে হেফাজন না হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বেহেশতের জামিনদার হবেন।
হজরত সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারি. ৭৬৫৮)
দেবরের সাথে খুব ফ্রি থাকার কারণে,অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পরকিয়া বা ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ে। দেবর এবং ভাবীর সম্পর্ক সম্পর্কে ইসলাম কি বলে জেনে নেই।
হযরত উকবা ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না।’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবিজি (সাঃ) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (মুসলিম, ২৪৪৫)
পরকীয়া বা ব্যাভিচার হওয়ার জন্য, কথা বলা, দেখা, তাঁর সৌন্দর্যের মাধ্যমে পুরুষ নারীর, নারী পুরুষের প্রেমে পড়ে যায়। তা থেকে বাঁচতে নি¤েœর হাদিসটি আমাদের পালন করতে হবে। হাদীসটি যথাযথভাবে আমল করলেই ব্যভিচার বা পরকিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
হাদিসে এসেছে ‘চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, কানের ব্যভিচার শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার বলা, হাতের ব্যভিচার ধরা, পায়ের ব্যভিচার হাঁটা। মন কামনা করে আর লজ্জাস্থান তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে’ (মুসলিম-২৬৫৭)। অর্থাৎ
জিহ্বা, হাত, পা, মন, লজ্জাস্থান পরকীয়ার জন্য কাজ করে থাকে। এগুলো কন্ট্রোল করতে পারলেই পরকিয়া বা ব্যাভিচার থেকে দূরে থাকা যাবে। প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া জগন্য তম অপরাধ।
পরকীয়া বা ব্যাভিচার, পরিচিত অপরিচিত যে কারো সাথে হতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে বড় পাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নি¤েœর কথা গুলি বললেন-
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করা।’ আমি বললাম, ‘এটি নিশ্চয়ই জঘন্যতম গুনাহ। তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘তোমার সন্তান তোমার সাথে আহারে অংশ নেবে এ আশঙ্কায় সন্তানকে হত্যা করা।’ আমি বললাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া’ (সূরা আল ফুরকান-৬৮, ৬৯; বুখারি-৪৪৭৭, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; মুসলিম-৮৬; আবু দাউদণ্ড২৩১০)।
পরকীয়া বা ব্যাভিচারের কারণে অনেক অবৈধ সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জন্মগ্রহণ করে, যাদের বিভিন্ন রাস্তার পাশে, বাগানে, বস্তায়, ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
একবার ভেবে দেখুন মানুষ কত জাহেল হলে একটা জীবনকে এভাবে নষ্ট করে দিতে পারে। আর এর কারণ হচ্ছে পরকীয়া বা ব্যাবিচার।
মহিলারা একান্ত প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে পারবেন, তবে পর্দর সহিত। নিজের সৌন্দর্য যাতে প্রকাশ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
যাদের সাথে আল্লাহতালা দেখা করা জায়েজ করেছেন, তাদের ছাড়া অন্যদের থেকে নিজেকে সংযত রাখতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’। (সূরা আহযাব: ৫৩)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব: ৫৯)
পর্দা সঠিকভাবে মেনে যখন কোন মহিলা একান্ত প্রয়োজনে রাস্তায় বের হবে। তখন তাদের সম্মানে চোখে দেখবে । কিন্তু অনেক মহিলাদের দেখা যায় বোরকা পরিধান করে ফ্যাশন করে। নিজের চাল চলন অঙ্গভঙ্গিমা দ্বারা অপরকে আকৃষ্ট করতে ইচ্ছা করে। এ সমস্ত মহিলাদের জন্য আল্লাহর লানত রয়েছে।
একজন বেপর্দা নারী যখন সে রাস্তায় বের হয় তখন সকল বয়সের বদ পুরুষদের তাঁর দিকে নজর দিয়ে থাকতে দেখা যায়।
হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। (তিরমিযী: ১১৭৩)
তোমরা তোমাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করো, প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রর্দশন করো না। (সূরা আহযাব: ৩৩)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, নারী তার পালনকর্তার সর্বাদিক নিকটে তখনই থাকে যখন সে তার গৃহে অবস্থান করে। (সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৫৯৯)
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আলী (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশ্যে) বললেন, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি? তারা চুপ হয়ে গেলেন। (কেউ বলতে পারলেন না)
অতপর আমি ফিরে এসে ফাতেমা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি ? তিনি বললেন, কোনো পরপুরুষ তাকে দেখবে না (অর্থাৎ নারী পর্দাবৃত থাকবে)। তারপর আমি ঐ বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, নিশ্চয় ফাতেমা আমার অংশ, সে সত্য বলেছে)। (মুসনাদুল বাযযার: ৫২৬)
পর্দাহীন নারীর কারণেই পরকিয়া বা ব্যভিচার বেশি পয়দা হয়।
পর্দাহীন নারীরা হচ্ছে জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী। তাদের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচে নিকৃষ্ট তারাই যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (বায়হাকী: ১৩২৫৬)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সাঃ) লা’নত (অভিশাপ) দিয়েছেন সেসব নারীদেরকে যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। অর্থাৎ পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (আবু দাউদ: ৪০৯৭)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক. পিতা-মাতার অবাধ্যকারী। দুই. দাইয়ুস (অর্থাৎ এমন পুরুষ, যে তার অধীনস্ত নারীদেরকে পর্দায় রাখে না)। তিন. পুরুষের ন্যায় চলাফেরা করা নারী (অর্থাৎ বেপর্দা নারী)। (মুসতাদরাকুল হাকিম: ২৪৪)
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দুই শ্রেণীর জাহান্নামীদেরকে আমি দেখিনি (অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে সমাজে তাদের দেখা যাবে)। এক. এমন সম্প্রদায়, যাদের হাতে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, আর সেই চাবুক দিয়ে তারা (অন্যায়ভাবে) মানুষকে প্রহার করবে।
দুই. এমন নারী, যারা পোশাক পরিধান করা সত্ত্বেও নগ্ন। তারা অন্যদেরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের মাথা হবে উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়। (মুসলিম: ৫৪৪৫)
পরিশেষে বলব, পরকীয়া থেকে বাঁচতে হলে পর্দার কঠোর অনুশীলন করতে হবে। মোবাইল বা টেলিভিশনে নাচণ্ডগান, ছবি দেখা পরিহার করতে হবে।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন।’ (সূরা হুজুরাত: ১৩)
নিজের কৃত ভুলের জন্য খাঁটি ভাবে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করে এ পরকীয়া, ব্যাভিচার এবং যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে দূরে সরে আসতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তবে যে কৃত অপরাধ থেকে তাওবা করে, অতঃপর ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (সূরা আল ফুরকান-৭০)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ (সূরা আহযাব: ৩৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পরকীয়া ব্যভিচার থেকে হেফাজত করুক। আমিন।
লেখক : ইমাম ও খতিব: বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমীন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।