রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ইসলামে যুদ্ধনীতি ও বিজীতদের প্রতি আচরণ
অনলাইন ডেস্ক

ইসলামে যুদ্ধনীতি : ইসলাম নিপীড়িত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত মানবতাকে রক্ষার জন্য, সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ বা সংগ্রামের কথা বলে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছ না কেন? অথচ দুর্বল-অক্ষম, নারী-পুরুষ, শিশুরা চিৎকার করে বলছে, হে আমাদের রব! জালিম অধ্যুসিত এ দেশ থেকে আমাদের বের করুন।’ (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-৭৫) এ কারণে ইসলামের যুদ্ধ কখনোই মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের কারণ হয় না বরং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কারণ হয়। ভয়ানক যুদ্ধাবস্থায়ও ইসলাম নারী, শিশু, বৃদ্ধ, রোগী, যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কহীন বেসামরিক ব্যক্তি, স্থাপনা ও ফসলাদিকে যুদ্ধের বাইরে রাখার নীতি অনুসরণ করে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তবে সীমালঙ্ঘন কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (আল কুরআন: সূরা বাকারা-১৯০) হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ)-এর সময় কোনো একটি যুদ্ধে একজন নারীকে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেলে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। (সহীহ বুখারী-২৭৯৩) রাসূল (সাঃ) সেনাপতি খালিদ (রাঃ) কে নির্দেশ দেন যে, যুদ্ধে নারী, শিশু ও দুর্বলদের যেন হত্যা না করে।(আবু দাউদ) ইমাম আওযায়ীর মতে, যুদ্ধের সময় অকারণে অমুসলিমদের ধন-সম্পদ বিনষ্ট করা যাবে না। ইমাম মালিকের মতে, যুদ্ধকালীন সময়ে গৃহপালিত পশু ও মৌচাকও ধ্বংসের আওতামুক্ত থাকবে। ইসলামি আইনজ্ঞগণ সবাই এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, যারা যুদ্ধে যোগদান করেন না যেমন নারী, শিশু, পাদ্রি, ফকির, বৃদ্ধ, অন্ধ, প্রতিবন্ধি এই ধরণের লোকদের কোন পীড়ন করা যাবে না এবং অকারণে সম্পদ, বাড়ী-ঘর পোড়ানো বা ধ্বংস করা যাবে না।

যুদ্ধবন্দি ও বিজীতদের প্রতি আচরণ : ইসলাম সাধারণভাবে সবার সঙ্গে সদাচরণের যে নির্দেশ প্রদান করেছে, যুদ্ধবন্দিদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় না। যুদ্ধবন্দি যদি ভয়ানক অপরাধে অপরাধী না হয়, মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার ভূমিকা যদি চরম শত্রুতা ও ষড়যন্ত্রমূলক না হয় তাহলে এদের সাথে উত্তম আচরণের কথা ইসলাম বলেছে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা যুদ্ধবন্দিদের মুক্ত কর, ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান কর এবং পীড়িতদের সেবা কর।’ (সহীহ বুখারী-২৮১৯) হযরত আলী (রাঃ) তাঁর সহীফায় রক্তপণ, যুদ্ধবন্দি মুক্তকরণ এবং কাফিরকে হত্যার শাস্তিস্বরূপ মুসলমানকে হত্যা না করার নির্দেশ থাকার কথা হযরত আবু হুজাইফা (রাঃ) কে অবহিত করেন।(সহীহ বুখারী-২৮২০) সুতরাং যুদ্ধবন্দিরা সাধারণত জীবন, ধর্ম পালন, আহার বা খাদ্য পাওয়ার, বসবাসের সুন্দর স্থান পাওয়ার, পরিধেয় প্রয়োজনীয় পোষাক পাওয়ার, সদাচরণ পাওয়ার, মর্যাদা পাওয়ার, আইনি অধিকার পাওয়ার, বন্দিদশা থেকে মুক্তি লাভ করার, নিকটাত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রাখার সকল মানবিক অধিকার লাভ করার সাথে সাথে কষ্ট, নির্যাতন, অঙ্গহানিসহ বিভিন্ন ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অধিকার লাভ করবেন। তবে কোন যুদ্ধবন্দি যদি ইসলাম, মুসলমান ও দেশের জন্য চরমক্ষতিকর প্রমাণিত হয় তার হিসাব আলাদা। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘খাবারের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা অভাবী, ইয়াতীম ও বন্দিদের খাবার দান করে। তারা বলে: কেবল আল্লাহর সন্তষ্টি পাওয়ার আশায় আমরা তোমাদেরকে খাবার দান করি। এ জন্য আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোনো বিনিময় চাই না, কোন কৃতজ্ঞতাও চাই না।’ (আল কুরআন: সূরা আদ দাহর-৮ ও ৯) বদরের যুদ্ধে হযরত আব্বাস (রাঃ) যুদ্ধবন্দি হয়ে আসছিলেন, তাঁর গায়ে কোন জামা ছিল না। রাসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের নিকট থেকে একটি জামা নিয়ে সেটি তাঁকে পরিয়ে দিলেন। (সহীহ বুখারী-২৭৮৭)

ইসলাম বিজীত এলাকার মানুষের প্রতি যে সাম্য, মানবতার ও ক্ষমার অপূর্বআচরণ করে তার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে নজীরবিহীন। মক্কাবাসীরা যখন তাদের দ্বারা নির্যাতিত, বিতাড়ীত, চরম প্রতিহিংসার শিকার মুহাম্মদ (সাঃ) এর হাতে চরম দন্ড পাওয়ার আশঙ্কায় প্রহর গুণছিলো, সেদিন শান্তির দূত হযরত মুহাম¥দ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃশর্ত ক্ষমা করে দয়া ও ক্ষমার অপার মহিমান্বিত ইতিহাস রচনা করেন, যা কল্পনাতীত। মক্কা বিজয়ের পর কাবার প্রাঙ্গণে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন; ‘তোমরা কি জান আজ আমি তোমাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করব? জনসমুদ্র থেকে সমস্বরে ধ্বনিত হল, ‘আপনি একজন সম্ভ্রান্ত ভাই ও সম্ভ্রান্ত ভাইয়ের সন্তান।’ মানবতার নবী তখন বললেন, ‘আজ তোমাদের উপর আমার কোন প্রতিশোধ স্পৃহা নেই, যাও তোমরা সবাই মুক্ত স্বাধীন।’ রাসূল (সাঃ) আরো বললেন, আমার ভাই ইউসুফ (আঃ) ও একই কথা তাঁর ভাইদেরকে বলেছিলেন, ‘আজ তোমাদের উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তিনি দয়াশীলদের চেয়েও বেশি দয়ালু।’ (আল কুরআন: সূরা ইউসূফ-৯২) তিনি শুধু ক্ষমাই করেনি, মক্কার তৎকালীন নেতৃবৃন্দের ঘরে আশ্রয় লাভকারীদেকে নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। তাইতো ঐতিহাসিক গিবন বলেছেন, ‘In the long history of the world there is no instance of mangnamity and forgiveness which can approach those of Muhammad (s) when all his enemies lay at his feet and he forgave them one and all.”

লেখক : প্রভাষক (ইসলাম শিক্ষা), বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়