প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ঈমান ও ইসলাম মুমিনের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ। কোরআনের ভাষায় ঈমানহীন ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু বহু মুমিন নিজের অজান্তে এমন কাজ করে, যার কারণে তাঁর ঈমান নষ্ট হয় এবং সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। নি¤েœ এমন কিছু কাজের বিবরণ দেওয়া হলোা :
১. শিরক করা : আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শিরক করা সবচেয়ে বড় অপরাধ।
শিরকের মাধ্যমে ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। ’ (সুনা নিসা, আয়াত : ১১৬)
২. কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা : সত্তা ও গুণাবলির ক্ষেত্রে কেউ আল্লাহর সমকক্ষ না। ফলে কেউ যদি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে, তবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়। ’ (সুরা ইখলাস, আয়াত : ৪)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা জেনে-বুঝে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ কোরো না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২)
৩. ইসলামকে জীবনবিধান মনে না করা : ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত চূড়ান্ত জীবনবিধান। কেউ যদি অন্য কিছুকে জীবনবিধান হিসেবে ইসলামের ওপর প্রাধান্য দেয়, তবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বিন গ্রহণ করতে চায়, তা কখনো কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)
৪. ইসলাম অপছন্দ করা : যারা ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা পোষণ করবে তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা কুফরি করেছে তাদের জন্য আছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের আমল ব্যর্থ করে দেবেন। এটা এ জন্য যে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের নিষ্ফর করে দেবেন। ’ (সুরা মুহাম্মদ আয়াত : ৮-৯)
৫. ইসলাম নিয়ে বিদ্রুপ করা : কোরআন, আল্লাহর নিদর্শন ও তাঁর নবী-রাসুলদের নিয়ে বিদ্রুপ করলে মানুষের ঈমান থাকে না। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও তাঁর রাসুলকে বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা দোষ স্খলনের চেষ্টা কোরো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরি করেছ। তোমাদের মধ্যে কোনো দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে শাস্তি দেব—কেননা তারা অপরাধী। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৬৫-৬৬)
৬. জাদু করা : জাদু করা বা কুফরি কালাম ব্যবহার করে তাবিজ-কবজ করলে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলে ব্যক্তি ঈমানচ্যুত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কাউকে (জাদু) শিক্ষা দিত না এই কথা না বলে যে আমরা পরীক্ষাস্বরূপ; সুতরাং তুমি কুফরি কোরো না। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০২)
৭. মুসলমানের বিরোধিতা করা : মুসলমানের বিপক্ষে কেউ যদি অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে সহযোগিতা করে, তবে সেই অমুসলিমদের দলভুক্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ কোরো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। ’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৫১)
৮. দ্বিনের আহ্বান উপেক্ষা করা : দ্বিনের আহ্বান পাওয়ার পর তা উপেক্ষা করা ঈমানের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষত যখন কেউ তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি দ্বারা উপদিষ্ট হয়েও তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি। ’ (সুরা সাজদা, আয়াত : ২২)
৯. দ্বিনের অংশবিশেষ অস্বীকার করা : আল্লাহ ও তাঁর রাসুল থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত কোনো বিধান বা নির্দেশনা অস্বীকার করলেও ব্যক্তির ঈমান থাকে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস করো এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান করো? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এমন করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮৫)
১০. হারাম বিষয়কে হালাল মনে করা : ইসলামী শরিয়তে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ এমন হারাম বা অবৈধ বিষয়কে হালাল মনে করলে সর্বসম্মতিক্রমে ব্যক্তির ঈমান থাকে না। যেমন ব্যভিচার, মদ, সুদ ইত্যাদি। (মাজমুউল ফাতাওয়া : ১/১৩২)
কুফরি কাজে লিপ্ত হলে করণীয় : কোনো ব্যক্তি যদি ভুলে বা স্বেচ্ছায় ঈমানবিরোধী কোনো কাজে লিপ্ত হয় এবং পরবর্তী সময়ে সে ভুল বুঝতে পারে সে তাওবা করবে এবং নতুনভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে ঈমান আনবে। আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। মহান আল্লাহ তাওবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা কোরো, হে মুমিনরা, আশা করা যায় তোমরা সফল হবে। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘যারা কুফরি করে তাদের বোলো, যদি তারা বিরত হয়, তবে যা অতীতে হয়েছে আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন। কিন্তু তারা
যদি অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি করে, তবে পূর্ববর্তীদের দৃষ্টান্ত তো আছে। ’
(সুরা আনফাল, আয়াত : ৩৮)