প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০
মুসলিম উম্মাহর ঐতিহাসিক সাল গণনায় হিজরি সন এক মহান ঘটনার স্মারক। ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান হিজরি সন তথা আরবি তারিখ ও চন্দ্রমাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, আনন্দণ্ডউৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের উপর নির্ভরশীল। তারিখ শব্দটি আরবি যার প্রচলিত অর্থ ইতিহাস, বছরের নির্দিষ্ট দিনের হিসাব। আল্লামা ইবনে মানজুর (রহঃ) তাঁর বিখ্যাত আরবি অভিধান ‘লিসানুল আরবে’ লিখেছেন, তারিখ হলো সময়কে নির্দিষ্ট করা, সময়ের চিত্র তুলে ধরা, সময়ের ঘটনাপ্রবাহকে শব্দবদ্ধ করা। আবার কেউ কেউ বলেছেন তারিখ শব্দটি অনারবি। ‘মা’ ও ‘রোজ’ থেকে পরিবর্তন করে একে আরবিতে রূপান্তর করা হয়েছে যার অর্থ-দিন, মাস ও বছরের হিসাব।
ইসলামী বিধিবিধান প্রতিপালন ও পরিকল্পিত সন গণনার প্রয়োজনেই মূলত হিজরি সনের উদ্ভব ঘটে। জীবন সময়ের সমষ্টি। সময়কে মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহারোপযোগী করে মহান আল্লাহতা’য়ালা প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যেমন : দিন, রাত, মাস, বছর ইত্যাদি। বছরকে আমরা সাল বা সন বলি। বছর শব্দটির মূল হলো বরস যা একটি উর্দু শব্দ। সাল শব্দটি ফারসি এবং সন শব্দটি আরবি। বাংলায় বর্ষ, বৎসর ও অব্দ ব্যবহৃত হয়।
ইসলাম সৌর ও চান্দ্র উভয় সনের গুরুত্ব দেয়। কুরআন মজীদে সূর্য ও চান্দ্র প্রসঙ্গ এনে ইরশাদ হয়েছে : সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে নির্ধারিত কক্ষপথে (সূরা আর রহমান : আয়াত ৫)। তিনি (আল্লাহ্) তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে, যা অবিরাম একই নিয়মে অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে। (সূরা ইব্রাহীম : আয়াত ৩৩)।
আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু আরও ইরশাদ করেন, আমি রাত ও দিনকে করেছি দুটি নিদর্শন, রাতের নিদর্শনকে অপসারিত করেছি এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকপ্রদ, যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পারো এবং যাতে তোমার বর্ষসংখ্যা (সন) ও হিসাব নির্ণয় করতে পারো (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ১২)।
মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, “তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং উহাদের মঞ্জিল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বৎসর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো”। “আল্লাহ ইহা নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এ সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।” (সুরা ইউনুস, আয়াত-৫)।
“আর সূর্য ভ্রমণ করে উহার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, ইহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মঞ্জিল; অবশেষে উহা শুষ্ক বক্র পুরনো খর্জুর শাখার আকার ধারণ করে।” (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৩৮-৩৯)।
অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্যে’। (সূরা-আলে ইমরান, আয়াত-১৯০)।
মুহাররমসহ ১২টি মাস নিয়ে হিজরি সন। ১২ মাস নিয়ে বর্ষ গণনার এই সূত্র পবিত্র কুরআন মাজিদ থেকেই পাওয়া।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে’। (সূরা-তওবা, আয়াত-৩৬)।
হিজরি মাসসমূহ হলো : মুহাররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউসসানী, জমাদিউল আউয়াল, জমাদিউচ্ছানী, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জিলক্বদ, জিলহজ্ব।
প্রাচীন আরবে সুনির্দিষ্ট কোন সন প্রথা প্রচলিত ছিল না। বিশেষ ঘটনার নামে বছরগুলোর নামকরণ করা হতো। যেমন-বিদায়ের বছর, অনুমতির বছর, ভূমিকম্পের বছর, হস্তীর বছর ইত্যাদি। মহানবী সাঃ যখন ইসলাম প্রচার করতে শুরু করেন, আরববাসী তখন ‘হস্তীর বছর’ থেকে কাল গণনা করছিল। ।
চন্দ্রবর্ষ সৌরবর্ষ থেকে দ্রুত ফুরিয়ে যায়। উভয়ের মধ্যে ব্যবধান ১০.৮৯ দিন। প্রতি ৩৩ চান্দ্রবর্ষ ৩২ সৌরবর্ষের সমান। চন্দ্রবর্ষ বছরের সব ঋতুতে ঘূর্ণায়মান থাকে। এটি ৩২.৫ বছরে পূর্ণতা লাভ করে। কেউ ৩২-৩৩ বছর রোজা রাখলে বছরের সব ঋতুতে রোজা রাখার সুযোগ পায়। চাঁদের হিসাব মতে, যদি ছয় চাঁদ ৩০ দিনে ও ছয় চাঁদ ২৯ দিনে হয়, তখন চন্দ্রবর্ষ ৩৫৪ দিনে হবে। সাধারণত চন্দ্রবর্ষ ৩৫৪ দিনেই হয়। আবার কখনো যদি সাত চাঁদ ৩০ দিনে ও পাঁচ চাঁদ ২৯ দিনে হয়ে থাকে, তখন চান্দ্রবর্ষ হবে ৩৫৫ দিনে। আবার কখনো যদি সাত চাঁদ ২৯ দিনে ও পাঁচ চাঁদ ৩০ দিনে হয়, তখন চন্দ্রবর্ষ হবে ৩৫৩ দিনে। (মাজমাউল আনহার, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭০, জামেউর রুমুজ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৪৭)
ইংরেজি বা সৌরবছরের বছরের মতো চান্দ্রবর্ষের লিপিয়ারের ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। অর্থাৎ চান্দ্রবর্ষ ঋতু মেনে চলে না। চন্দ্রবর্ষ চলে চন্দ্রকলা মেনে।
আমরা মুসলমান। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের অনুষ্ঠান ইসলামের আলোকেই হবে। ইসলামের বাইরে কোনো কাজ করা যাবে না। মুসলমানদের সংস্কৃতি বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই কোনো কাজ করার পূর্বে ইসলামী আদর্শ কী, ইসলামী সংস্কৃতি কী, এ বিষয়ে আমাদের জানা থাকতে হবে। আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের দিকে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো যে, খ্রিস্টীয় নববর্ষ পালনের জন্যে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অন্যান্য দেশের দেখাদেখি আমরা খ্রিস্টীয় নববর্ষ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ করে থাকি। সেখানে যুবক-যুবতীরা একত্র হয়ে নাচণ্ডগানসহ নানাবিধ অশ্লীলতাণ্ডবেহায়াপনা ও গর্হিত কাজ করে থাকে। যার কোনটিই ইসলাম সমর্থন করে না। আমরা যদি বাংলা নববর্ষের দিকে যাই তাহলে দেখতে পাবো বাংলা নববর্ষের মূল প্রবর্তক সম্রাট আকবর। তিনি খাজনা গ্রহণের সুবিধার্থে বাংলা সন প্রবর্তন করেন। সম্রাট আকবর একটি নতুন দ্বীন প্রবর্তন করেন ‘দ্বীন-এ এলাহী’ নামে, যা সম্পূর্ণ ইসলামণ্ডবিরোধী। তার সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমীর ফতেহুল্লাহ সিরাজী হিজরি সনকে গবেষণা করে বাংলা সন আবিষ্কার করেন। আর আমরা আজ এ বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতি বলে পহেলা বৈশাখ পালন করে থাকি। পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ পালনে কোনো অসুবিধা নেই; কিন্তু আনন্দণ্ডফূর্তির নামে যেসব অনৈসলামিক কার্যকলাপ হয়ে থাকে তাতেই আপত্তি। বিশেষভাবে বাঘ-হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণিদের ছবি অথবা কোনো মানুষ প্রাণি সেজে সেটা নিয়ে র্যালি খুবই দুঃখজনক। যা ইসলামে একেবারেই হারাম করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ এবং খ্রিস্টীয় নববর্ষ আমাদের দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি হতে পারে। তবে ইসলামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বহন করে হিজরি নববর্ষ। কারণ হিজরি বর্ষের মাধ্যমেই রমজানের রোজা রাখা হয়। ঈদুল আজহা, ঈদুল ফিতর, লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বারাআত, শবে মেরাজ, আশুরা, হজ্ব, কোরবানিসহ অসংখ্য ইবাদত হিজরি সন অনুযায়ী হয়ে থাকে। তাই বলা যায় হিজরি নববর্ষই ইসলামী সংস্কৃতি। হিজরি সন মুসলমানদের সন। ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর মহান আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশে আল্লাহর বন্ধু নবীজি মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করেন। মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ বা ১৫ জুলাইয়ের সূর্যাস্তের সময়কে হিজরি সন শুরুর সময় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ১৭ হিজরি (৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ) হতে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের শাসক হযরত ওমর (রাঃ)-এর শাসন আমল থেকে হিজরি সন গণনা শুরু হয়। হযরত ওমর (রাঃ)-এর কাছে ইরাক ও কুফার প্রশাসক আবু মুসা আশআরী (রাঃ) এক চিঠিতে লেখেন, হে বিশ্ববাসীর নেতা! আল্লাহর পক্ষ হতে আসা শাসন কার্যের সাথে সংশ্লিষ্ট উপদেশ, পরামর্শ এবং নির্দেশসম্বলিত বিভিন্ন চিঠিপত্র ও দলিলে কোনো সন-তারিখ না থাকায় আমরা তার সময় ও কাল নির্ধারণে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হই। অধিকাংশ সময় এসব নির্দেশনার সাথে পার্থক্য করা আমাদের জন্যে কঠিন হয়ে পড়ে বলে আপনার নির্দেশ ও উপদেশ পালন করতে যেয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ গুরুত্বপূর্ণ পত্র পাওয়ার পর হযরত ওমর (রাঃ) মুসলিম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে এক পরামর্শ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদীনায় হিজরত করার ঐতিহাসিক দিন থেকে নতুন একটি সন তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। হিজরতের ঘটনাকে স্মরণ করে হিজরি সন শুরু করার কারণ হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনায় হিজরত করার মাধ্যমে ইসলাম প্রসার লাভ করে, মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, মুসলমানদের শক্তিমত্তা বাড়তে থাকে, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, ইসলাম বিজয়ী শক্তিতে পরিণত হয় এবং ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের কথা গুরুত্বের সাথে কোরআনে উল্লেখ করেছেন। হিজরতের ঘটনাকে স্মরণ করে বানানো হয়েছে বলেই এ সনকে হিজরি সন বলা হয়। আমাদের ঈমানী দায়িত্ব হিজরি সন অনুসরণ করা। হিজরি সন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সে হৃদয় বিদারক ঘটনার কথা। সে দিনে মক্কার কাফের বেঈমানরা রাসূল (সাঃ) কে মক্কাতে তাঁর গর্দান উড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়। মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশে রাসূল (সাঃ) হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন। রাত্রিতে রাসূল (সাঃ)-এর ঘর মোবারকের চতুর্দিকে কাফিররা বেষ্টন করে রাখে। সকালে নামাজ পড়তে উঠলেই দুনিয়া থেকে চির বিদায় করে দেয়া হবে। রাসূল (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে তাঁর বিছানায় শুইয়ে দিলেন এবং মক্কার মানুষের আমানতের সম্পদ জিনিসপত্র আলী (রাঃ) কে বুঝিয়ে দিয়ে বললেন আগামীকাল সকালে মানুষের আমানত বুঝিয়ে দিয়ে মদিনাতে চলে আসবে। রাসূল (রাঃ) হাতে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে কাফিরদের দিকে নিক্ষেপ করলেন, কাফিররা চোখে কিছুই দেখতে পেলো না। অথচ তাদের শরীরে মাথায় চোখে বালি প্রবেশ করছে। রাসূল (সাঃ) তাদেরকে হাত দ্বারা সরিয়ে হুজরা মোবারক থেকে বের হয়ে হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ)-এর বাড়িতে গিয়ে দরজায় আওয়াজ করতেই হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ) দরজা খুলে দিলেন। উভয়ে হিজরতের জন্যে বের হয়ে পড়লেন। রাত্রিতে গারে ছাওরে গিয়ে অবস্থান করলেন। ভোর হলে কাফিররা দেখল রাসূল (সাঃ) ঘরে নেই, আলী (রাঃ) ঘর থেকে বের হলেন। তারা খোঁজতে খোঁজতে গারে ছাওরের একেবারেই নিকটে চলে আসলেন। তারা সে গুহার দিকে নজর দিয়ে দেখলো গুহার মুখে মাকড়শার জাল এবং সেখান থেকে কবুতর উড়ে যাচ্ছে। সেখানে কবুতরের ডিম। তারা ভাবলো, এখানে কেউ থাকলে মাকড়শার জাল থাকত না এবং কবুতরের বাসা থাকত না, ডিমও পাড়ত না। তারা চলে আসলো। রাসূল (সাঃ) প্রথমে কুবা পৌঁছলেন। সেখানে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। সেখান থেকে মদিনাতে (ইয়াসরিবে) চলে যান। মদিনার শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সকলেই রাসূল (সাঃ) কে স্বাগত জানিয়ে আনন্দিত হন। হিজরি সন আমাদেরকে সে হৃদয় বিদারক ঘটনার কথাই বলে দেয়। চাঁদের হিসাবেই হযরত আদম (আঃ)-এর সময় থেকেই গণনা করা হতো। তবে সন হিসেবে গণনা হতো না। হযরত ওমর (রাঃ)-এর সময় হতে হিজরি সন গণনার প্রবর্তন হয়। আজ আমরা খ্রিষ্টীয় এবং বাংলা নববর্ষ পালনের জন্যে কত আয়োজন করে থাকি অথচ হিজরি নববর্ষের কোনো গুরুত্ব দেই না। সত্যিই হইা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।
আজ আমরা ইতিহাস ভুলে গেছি। বাংলা এবং ভারত উপমহাদেশে আরব বণিকদের মাধ্যমে হিজরি সন প্রবেশ করে। ১২০১/১২০৪/১২০৯ খ্রিস্টাব্দ হতে সর্বক্ষেত্রে হিজরি সনের প্রচলন শুরু হয়। যা প্রায় ৫৫০ বছর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ছিল।
৫৯৮ হিজরি মোতাবেক ১২০১ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গবিজয়ের মাধ্যমে বাংলার জমিনে মুসলিম শাসনের ইতিহাস সূচিত হয় এবং হিজরি সন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভের মাধ্যমে জাতীয় সন গণনায় পরিণত হয়। সন গণনায় ৫৫০ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর থাকার পর ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধের পরাজয়ের মধ্যমে হিজরি সনের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার অবসান হয়।
হিজরতের দ্বারা আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ), সাহাবীদের এবং মুসলমানদের ধর্ম ও রাসূল প্রেম ফুটে উঠে। তাই বলতে হয় হিজরি সন পালনের মাঝে রাসূল (সাঃ) প্রেম রয়েছে। তাই ইহা ঈমানের দাবি।
১৪৪৩ হিজরি সন আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে ১৪৪৪ হিজরি সন আমাদের মাঝে আগমন করবে। তাই আমরা হিজরি সন উদ্যাপনে মিলাদ, দোয়া, আলোচনা, ব্যানার, লিফলেট, লিখনীসহ বিভিন্ন আয়োজন করা যায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজরি সন পালনের দাবি রইলো।
মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক : শিক্ষক : বিষ্ণুপুর সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসা; খতিব, মদিনা বাজার বাইতুল আমান জামে মসজিদ।