বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

৫০ বছরের নার্সারি ব্যবসায়ী নাছির মোল্লার বৃক্ষমেলায় গাছ বিক্রিতে চমক
মোঃ আবদুর রহমান গাজী ॥

এক সময় নার্সারি ব্যবসা শুধু ফুলের মালা, বুকেট কিংবা গাছের চারা বিক্রিতেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তবে সময়ের সঙ্গে বদলেছে এই ব্যবসার ধরণ। এখন বাসা-বাড়ির বারান্দা আর ছাদে গাছ লাগানোর পাশাপাশি শহরের অফিস-রেস্তোরাঁয়ও সৌন্দর্যবর্ধনের অন্যতম অনুষঙ্গ নানা জাতের গাছ-গাছালি। এমনকি অনুষ্ঠানেও শোভা বাড়াতে নার্সারি থেকে গাছগাছালি ভাড়া নিয়ে আসেন আয়োজকরা। প্রতিষ্ঠিত নার্সারির পাশাপাশি অনেকে বাড়ির ছোট্ট আঙ্গিনায় উৎপাদিত গাছের চারা বিক্রি করছেন অনলাইনে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি আমদানিও হচ্ছে গাছের চারা। আর এতে দিন দিন বেড়ে চলেছে চাঁদপুরে নার্সারি ব্যবসা।

সবজির চারা উৎপাদনে দেশের অন্যতম বৃহৎ নার্সারি এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ এখন চাঁদপুর। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের হিসেবে, চাঁদপুরে উৎপাদিত চারা দেশের ১০টির বেশি জেলায় যায়। অন্যান্য বছর এখানে প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি চারা বিক্রি হলেও এবার মাত্র ১ কোটি টাকা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। এই হিসেবে শুধু চাঁদপুরে কৃষকদের প্রায় ৭০ লাখ টাকা লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের পাইকাররা এসে ভ্যান ও মিনি পিকআপে করে চারা নিয়ে যান। লক্ষ্মীপুর, ফেণী ও নোয়াখালীতে বেশি বিক্রি হয় চাঁদপুরের নার্সারির চারাগুলো।

করোনা ভাইরাসের কারণে গত কয়েক বছর ধরে মন্দা ব্যবসার কবলে চাঁদপুরের নার্সারি মালিকরা। এতে কমপক্ষে তিন কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় নার্সারী ব্যবসায়ীদের।

চাঁদপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১শ’ ২০টি নার্সারি রয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির বনজ এবং ফলদ গাছের চারা বিক্রি করা হয় এসব নার্সারিতে। স্থানীয়ভাবে বেশ চাহিদা ও ভালো বাজার দরের কারণে লাভবান ছিলেন জেলার নার্সারি ব্যবসায়ীরা। এ প্রতিবেদকের সাথে এমনই একজনের দেখা মিলে চাঁদপুর বৃক্ষ মেলায়।

তিনি চাঁদপুর পৌরসভার টেকনিক্যাল এলাকার মোঃ নাছির মোল্লা। অভাবের কারণে ১৯৭২ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেন নি। তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। সে কারণে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে কর্মের পথ খুঁজছিলেন। পরে এলাকার একজনের মাধ্যমে নার্সারি থেকে গাছ বিক্রির পরামর্শ পান। সে সুবাদে তখন থেকেই টেকনিক্যাল এলাকার বন বিভাগের নার্সারি থেকে গাছের চারা নিয়ে বর্তমানে চাঁদপুর পৌরসভার ঈদগাহ ময়দানে বিক্রি শুরু করেন। ১৯৭৩ সাল থেকেই পুরোপুরি নার্সারি ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি মোল্লা নার্সারির স্বত্বাধিকারী। তিনি একটি জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন। জমিটির লোকেশন হচ্ছে মঠখোলা মাজারের দক্ষিণ পূর্ব দিকে দালাল বাড়ির সামনে। বিশাল এলাকাজুড়ে এ মোল্লা নার্সারি।

নাছির মোল্লা একাগ্রচিত্তে লেগে যান নার্সারিতে। ৫০ বছর আছেন এই নার্সারি ব্যবসায়। এতে কিছুটা আশার আলো দেখতে পেয়েছেন। চিন্তা করতে থাকেন কীভাবে ব্যবসা প্রসারিত করা যায়। তবে নার্সারির জন্যে নিজস্ব জমি না থাকায় অস্বস্তিতে থাকেন তিনি। তিনি দাবি জানান, সরকার যদি আমাদের খাস জমি লিজ দেয়, তাহলে আমরা স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারতাম।

নাছির মোল্লা জানান, রাজশাহীর বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারা, যশোর থেকে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফল, বরিশাল থেকে নারকেল, তেজপাতা, দারুচিনি, কাগজী, কাঁঠাল, মন্ডফল, আমড়া, লিচু, আমলকি এনে বিক্রি করি। এছাড়া আমরা নিজেরাও চারা করি। তার মধ্যে রয়েছে থাই পেয়ারা, কাজী পেয়ারা, আপেল পেয়ারা, বরিশালী পেয়ারা, দেশী পেয়ারা, ডালিম, আনার, পেঁপে ও কাগজি লেবু। আর কাঠের মধ্যে আমরা করি চাম্বুল, একাশিয়া, সেগুন, মেহগনি ও রেন্ডি (রেইন ট্রি)। নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী-বিদেশী গাছের চারা থাকে। সিজনে কোটি টাকার মালও নার্সারিতে থাকে। অনেক সময় টাকার অভাবে মাল আনতে পারি না। দেশি-বিদেশি অনেক চারা আছে। যেগুলোর মধ্যে ৪ থেকে ৫ কেজি আম ধরে। সে সকল চারা রাখতে হলে সিকিউরিটি রাখতে হয়।

নাছির মোল্লা বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকেই আমি নার্সারি ব্যবসা করে আসছি। আমার স্ত্রী রোকেয়া বেগম, ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে মোঃ আল আমিন সুমন। সে এসএসসি পাস করে এখন বাবুরহাট বাজারে হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী। মেজো ছেলে মামুন হোসাইন বিএ পাস করেছে। সেও ব্যবসা করে। আর ছোট ছেলে মোঃ নাহিদুল ইসলাম অনার্সে অধ্যয়নরত চাঁদপুর পুরানবাজার কলেজে। বড় মেয়ে নূর নাহার স্মৃতি বাংলাদেশ টাকসালে চাকুরি করে। মেজো মেয়ে শাহনাজ ও ছোট মেয়ে সানজিদা। আমি নার্সারি ব্যবসায় জড়িয়ে ভালোই আছি। সফলতা হলো আমি আমার ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার মাধ্যমে ভালো মানুষ হবার পথ দেখাতে পেরেছি। আমার ছেলেরা আমাকে কাজে সহযোগিতা করে। আমার এখনও যৌথ পরিবার। ছেলেদের বিয়ে দিয়েছি। সবাইকে নিয়ে আমরা একসাথেই থাকি।

'৫০ বছরের গাছ বিক্রিতে কোন্ সময় বেশি গাছ বিক্রি করতে পেরেছেন' এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ১৯৮০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত লাখ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করেছি। সেই তুলনায় মানুষ এখন সচেতন হলেও গাছ রোপণ করে কম। বর্তমানে আমার নার্সারিতে ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। ৬০০ টাকা করে হাজিরা দেই। অনেক সময় এই হাজিরায় শ্রমিক পাওয়া যায় না। তখন আমার ছেলেদেরকে নিয়ে কাজ করতে হয়। ৫০ বছর ধরে কত জায়গায় নার্সারি করলাম। নিজস্ব জায়গায় আসার মত এখনও সুযোগ হলো না। সরকারের অনেক জমি বেদখল হয়ে আছে। আমাদের সে সকল জমি লীজ দিলেও আমরা আরো ভালো করতে পারতাম।

'২০২৩ সালের বৃক্ষ মেলায় কেমন গাছ বিক্রি করেছেন' এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, মানুষ বৃক্ষ মেলায় আসে মেলা উপভোগ করতে। গাছ কিনতে আর ক'জনই আসে। কিন্তু মেলায় এসে আমার স্টলের কাছে যারা আসে তাদের একটি না একটি গাছের চারা কিনতে হয়। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আমি মানুষকে ঠকাই না। গাছ রোপণে উদ্বুদ্ধ করি। জীবনের পঞ্চাশটা বছর পার করলাম গাছ বিক্রিতে।

চাঁদপুর সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, নাছির মোল্লা একজন মজার মানুষ। তিনি মানুষের সাথে মিলেমিশে ব্যবসা করেন। নার্সারিতে তার ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বৃক্ষ মেলায় গাছ বিক্রিতে অন্যদের তুলনায় চমক দেখিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়