শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর কলেজ- প্রথম প্রেম

হাসান আলী
চাঁদপুর কলেজ- প্রথম প্রেম

বসন্তের শুরুতে ১৯৭৭ সালে চাঁদপুর শহরে খালার বাসায় বেড়াতে আসলাম। আমি তখন ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। শহরে আগমনের হেতু ছিল সিনেমা দেখা। ছায়াবাণী ও চিত্রলেখায় সিনেমা দেখা শেষ হলো। কালীবাড়ি মোড়ে ওয়ান মিনিট ও কৃষ্ট ক্যাফে থরে থরে সাজানো বাহারি মিষ্টি আমাকে লোভাতুর করে ফেললো।

দর্শনীয় স্থান দেখার অংশ হিসেবে চাঁদপুর কলেজে উপস্থিত হলাম। কলেজের ভিতর ঢুকে খোলা মাঠখানির দিকে তাকিয়ে আমি বিস্মিত হলাম। জীবনে এই প্রথম এত সুন্দর সবুজ বড় মাঠ দেখলাম। মাঠে ফুটবল খেলা চলছে আর পশ্চিম দিকে বাস্কেটবল খেলা হচ্ছে। আমি আগে কখনো বাস্কেটবল খেলা দেখিনি। আগ্রহ নিয়ে বাস্কেটবল খেলা দেখতে লাগলাম। মাগরিবের আজান দিলে খেলা বন্ধ করে সবাই মাঠ ছেড়ে চলে গেল। ফিরে আসার সময় কলেজের ভবনটির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হলাম।

পরদিন দুপুরে আবার কলেজে আসলাম। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর পদচারণায় কলেজ প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে আছে। ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠলে নিমিষেই কলেজ খালি হয়ে গেল।

আমি কলেজ মাঠের উত্তর দিকে সবুজ ঘাসের উপর বসে পড়লাম। আস্তে আস্তে লোক সমাগম বাড়তে লাগলো। ফুটবল খেলা শুরু হলো। দুদলই ভালো খেলেছে। সবচেয়ে বেশি মজা লেগেছে দুদলের সমর্থকদের চেঁচামেচি আর হৈ-হুল্লুড় দেখে।

আমি চাঁদপুর কলেজের প্রেমে পড়ে গেলাম। গ্রামের ভাঙাচুরা, জীর্ণ শীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে সহপাঠীদের সঙ্গে শহরের ঝকঝকে তকতকে কলেজের বর্ণনা দিলাম। সবাই আমার কথা গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনলো। মনে মনে ঠিক করলাম আমি চাঁদপুর কলেজেই পড়বো। পড়াশোনায় আমি বরাবরই গড় মানের। রোল নাম্বার থাকতো শেষের দিকে। আমার স্কুল শিক্ষক রব স্যার ছিলেন চাঁদপুর কলেজের বিজ্ঞানের ছাত্র। তিনি আমার আগ্রহকে সমর্থন দিলেন। আমি লেখাপড়ায় অধিক মনোযোগী হয়ে গেলাম। আমাদের এসএসসি পরীক্ষা হয়েছিল ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে। আমি স্কুলে সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেয়ে পাস করলাম। পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বাড়ির কাছের ফরিদগঞ্জ কলেজ কিংবা রায়পুর কলেজে ভর্তি হবার সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে পারলাম না।

চোখের সামনে বারবার ভেসে আসে চাঁদপুর কলেজের সুন্দর ভবন আর খেলার মাঠ। প্রতিজ্ঞা করলাম, কলেজে পড়লে চাঁদপুর কলেজেই পড়বো অন্য কোনোা কলেজে নয়। আত্মীয়-স্বজনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে চাঁদপুরে খালার বাসায় চলে আসলাম।

খালা খালু আমাকে আমাদের আর্থিক সামর্থ্যরে কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। প্রতিদিন বিকেল হলেই আমি কলেজ মাঠে এসে বসতাম। খেলা শেষ হলে বাসায় ফিরে যেতাম। বিলম্ব ফি দিয়ে ভর্তি হবার মাত্র এক দিন বাকি আছে।

কলেজ মাঠে এক কিশোরের সাথে পরিচয় হলো। সে একাদশ বাণিজ্যে ভর্তি হয়েছে। আমাকে ভর্তি হবার পরামর্শ দিলে আমি জানলাম আমার কাছে মাত্র একশ টাকা আছে। পরিবারের সদস্যরা চায় না আমি চাঁদপুর কলেজে ভর্তি হই। একমুহূর্ত দেরি না করে ছেলেটি আমাকে বললো, আমি তোমাকে ভর্তি করিয়ে দিতে পারবো। ফুটবল খেলা শেষ হলে ছেলেটি আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল এক সুদর্শন যুবকের সামনে। তিনি ফুটবল হাতে ঘামে ভিজে কলেজ গেটের দিকে এগিয়ে আসছেন। ছেলেটি বললো, রুহুল আমিন ভাই (পরবর্তীতে অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন খান), ওর কাছে একশ টাকা আছে, ভর্তি হবার লাস্ট ডেট কালকে। ওকে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে দেন। বাকি টাকা পরে দিয়ে দিবে। তিনি হেসে বললেন, আচ্ছা ভর্তির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

কলেজ অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হালকা পাতলা ফর্সা একজনকে বললেন, ধীরেন্দ্র দা দয়া করে আপনি এই ছেলেটাকে ভর্তি করার ব্যবস্থা নিন। একশ টাকা আছে, বাকি টাকা পরে দিয়ে দিবে। আমি প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে কালকে এসে বলে যাব। আপনার কোনো সমস্যা হবে না।

আমি পরদিন যথারীতি ভর্তি হয়ে গেলাম। আমার সেই কিশোর বন্ধুটি (তাঁর নাম মনে করতে পারছি না) আমাকে ২ নাম্বার রুমের পিছনের দিকে দরজা দিয়ে ক্লাসে ঢুকিয়ে দিয়ে চলে গেল। ক্লাসে ঢোকা মাত্র ওয়ালিউল্লাহ স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আজই প্রথম ক্লাসে এসেছো? তোমার রোল নাম্বার কতো? আমি বললাম, হ্যাঁ স্যার, রোল নাম্বার ১৯১। স্যার ক্লাস নিলেন। পিনপতন নীরবতা। তিনি মঞ্চ থেকে নেমে ক্লাসের শেষ প্রান্তে এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন। ইংরেজি কবিতা ‘ক্রেবেইড এইজ এন্ড ইয়ুথ’ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম।

ঘণ্টা বেজে উঠলো, স্যার চলে গেলেন। পাশে বসা কালো রঙের হালকা পাতলা গড়নের বড় বড় সুন্দর দুটি চোখের এক কিশোর আমাকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার নাম কী? আমি ওর নাম জিজ্ঞেস করলে বললো, আব্দুল হাই, বাড়ি সফরমালী, থাকি শাহতলীতে মামা বাড়িতে। প্রতিদিন ট্রেনে আসি ট্রেনে যাই।

আমি তাকে বললাম, আপাতত খালার বাসায় থাকি। কলেজে পড়তে হলে আমাকে অন্য কোথাও থাকতে হবে। সাথে সাথেই আব্দুল হাই আমাকে বললো, তুমি তাহলে আমার মামা বাড়িতে লজিং থাক। মামাতো ভাই-বোনদের পড়াবে এবং আমার সাথে যাবে-আসবে। আবদুল হাইয়ের প্রস্তাব আমি সাথে সাথে লুফে নিলাম। আমাকে একরকম জোর করেই সেদিন শাহতলী নিয়ে গেল। সন্ধ্যায় কাচারিতে সাত আটজন ছেলে-মেয়ে পড়তে আসলো। আমার নতুন জীবন শুরু হলো। ভর্তির সময় নাম না জানা কিশোর আর সহপাঠী আব্দুল হাই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সকালে উঠে খেয়েদেয়ে কিছুটা পথ হেঁটে এসে শাহতলীতে ট্রেনে উঠতাম। দুপুরে ক্লাস শেষে কালীবাড়ি রেল স্টেশন থেকে শাহতলী ফিরে যেতাম। তিন মাসের লজিং এবং সেখান থেকে কলেজে যাওয়া-আসা জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনাগুলোর একটি। আমার শহরে থাকার সুযোগ তৈরি হলো। সক্রিয় হলাম জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের সাথে। ১৯৮০ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ‘এমদাদণ্ডজাকির’ পরিষদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সেই নির্বাচন ভণ্ডুল হয়ে যায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই হওয়ায়। ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় আমার পরিচিতি কিছুটা বেড়ে গেল। ১৯৮০ সালে জাসদ ভেঙ্গে বাসদ হলে আমি বাসদ রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকি। ছোট দলের বড় নেতা হবার কারণে আমার পরিচিতি আরো বেশি হলো। ১৯৮১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছিলাম। বাসদের ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার জন্য আমাকে দলের পরামর্শে চাঁদপুর কলেজে বি-কমে ভর্তি হতে হলো। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব বিরক্ত হলেও আমি মনে মনে অনেক খুশি হয়েছিলাম।

এরশাদ দেশে সামরিক আইন জারি করলে ছাত্র-জনতার মধ্যে তীব্র ক্ষোভ জমা হতে থাকে। চাঁদপুর কলেজে সামরিক আইন বিরোধী প্রথম মিছিলে অংশ নিতে পারার ঘটনা আমাকে মুগ্ধ করে রাখে। ভালো লাগার অনুভূতি আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।

সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি কিছুটা ঝোঁক থাকায় নির্বাচিত হলাম কুমিল্লা বোর্ড আয়োজিত অনুষ্ঠানে। সৈয়দ আবদুস সাত্তার স্যারের তত্ত্বাবধানে কলেজের একটি দলের বোর্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গেলাম। ভিক্টোরিয়া কলেজের গেটে একটা হোটেলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। চয়ন কুমার দাস, কিংশুক রায় সহ আমরা দশজন অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেবার উল্লেখযোগ্য কোনো পুরস্কার আমরা পাইনি। বিভিন্ন কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের পারফরম্যান্স দেখার সুযোগ আমাদের দুর্বলতাগুলো বুঝতে সহায়তা করেছিল।

ইংরেজির অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন স্যার এবং বাংলার অধ্যাপক খলিলুর রহমান (২) স্যারের উৎসাহে কলেজ ম্যাগাজিনে লেখা দিয়েছিলাম। ছাপার অক্ষরে এই প্রথম আমার কোনো লেখা। সাহস পেয়ে পরবর্তীতে আমি দৈনিক সংবাদের চিঠিপত্র কলামে লিখতে শুরু করি। আমাদের সময় চাঁদপুর কলেজে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার মতো কয়েকজন শিক্ষক এবং তাঁদের সাথে যোগ্য কিছু ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন। যাঁরা পরবর্তীতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছেন। বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক বদিউর রহমান চৌধুরী স্যার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন।

প্রায় দেড় বছর ধরে বড় আকারের মাসিক ‘ফুল’ নামে একটা দেয়াল পত্রিকা কলেজ লাইব্রেরির সামনে বোর্ডে সাঁটানো হতো। কলেজের বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী এতে লিখতো। সারামাস ধরে ছাত্র-ছাত্রীরা দৃষ্টিনন্দন দেয়াল পত্রিকার সামনে ভিড় করতো। এই দেয়াল পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কাজী শাহাদাত।

চাঁদপুর কলেজ সরকারি হবার আগে যাঁরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থীদের প্রতি নিবেদিত ছিলেন। তাঁরা আমাদের লেখাপড়া এবং মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। শিক্ষকরা একেকজন একেক রকমের যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন। আমাদের সময় একজন শিক্ষক খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি একাদশ দ্বাদশ শ্রেণিতে ভালো পড়াতেন, কিন্তু স্নাতক শ্রেণিতে ভালো পড়াতে পারতেন না। আমাদের স্নাতক শ্রেণিতে একজন শিক্ষক খুবই ভালো পড়াতেন কিন্তু তিনি একাদশ দ্বাদশ শ্রেণিতে ভালো পড়াতে পারতেন না। গড়ে সব শিক্ষকই ছিলেন স্ব স্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। আমি বাণিজ্যের ছাত্র হলেও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকদের স্নেহের পাত্র ছিলাম।

চাঁদপুর কলেজ সরকারি হবার পর প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে আসেন এ ডব্লিউ এম তোয়াহা মিয়া। কলেজের অ্যাসেম্বলি ফ্লোরে তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। অনেক চমৎকার একটি অনুষ্ঠান সেদিন আমরা উপভোগ করেছিলাম। তোয়াহা স্যার ছাত্র হিসেবে এই কলেজ থেকে বোর্ডে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন। স্যার স্নাতক পর্যায়ে আমাদের ক্লাস নিতে আসতেন।

চাঁদপুর কলেজের কমনরুম সবসময় জমজমাট ছিল। দাবা, টেবিল টেনিস, কেরাম বোর্ড খেলা ছিল খুবই জনপ্রিয়। আমার সহপাঠী নুরুজ্জামান নিয়মিত কমনরুমে আমার সাথে দাবা খেলতো। দাবায় তাকে হারাতে আমি মরিয়া হয়ে উঠতাম। কলেজ ক্যান্টিনে সিঙ্গাড়া চায়ের আড্ডা ছিল প্রতিদিন। কখনো কখনো সাইকেল স্ট্যান্ডে বন্ধু মুজিব এবং ফারুকের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে আড্ডা দিতাম।

একবার আমাদের কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ‘ওরা কদম আলী’ নাটকটি মঞ্চায়ন করে। নাটকটি তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল।

চাঁদপুর কলেজে একটি দুঃখজনক ঘটনার জের ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা-কেন্দ্র বাতিল করে দেয়। ১৯৮৩ সালে ডিগ্রি পরীক্ষা কেন্দ্র চাঁদপুর কলেজে পুনরায় সংঘটিত হলে আমি সে বছরই বি-কম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। ভীষণ কড়াকড়ি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী পাস করে। সৌভাগ্যক্রমে আমি সে বছরই পাস করতে পেরেছিলাম।

জেলা শহরগুলোর কলেজের মধ্যে চাঁদপুর কলেজের ছিল ঈর্ষণীয় সাফল্য। চাঁদপুর কলেজ ভবনটি ছিল খুবই আকর্ষণীয়। আমরা ছিলাম মূল ভবনের ছাত্র-ছাত্রী। এই রকম পরিকল্পিত কলেজ ভবন আমি আর কোথাও দেখিনি।

আমাদের কলেজে বিজ্ঞান ও কলা বিভাগে কিছু মেয়ে পড়তো। বাণিজ্য বিভাগে কাউকে পড়তে দেখিনি। আমি বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র হওয়ায় ছাত্রীহীন নিরস ক্লাস পেয়েছি। কলেজ মাঠে কৃষ্ণচূড়া গাছটি রঙিন হয়ে আমাদের মন রাঙিয়ে দিতো।

যেসব মেয়ের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল তারা কেউই আমাকে কলেজ জীবনে তেমন একটা পাত্তা দেয় নি। এখন কারো দেখা হলে বলি, আপনাকে দেবার জন্য একটা প্রেমপত্র লিখেছিলাম। বুক পকেটে রেখেছিলাম অনেক দিন। সাহসের অভাবে দিতে পারিনি। তারা হাসতে হাসতে বলে, দিলেই পারতেন!! আবার দুষ্টু প্রকৃতির নারীরা বলে, এই কথা এ পর্যন্ত কতজনকে বলেছেন?

কেউ আবার দরদী কণ্ঠে বলে উঠেন, যেদিন গেছে সেদিন কি আর ফিরিয়ে আনা যায়?

মানুষ মরার আগে তার শৈশব কৈশোর যৌবনের স্মৃতি বিজড়িত স্থানে ফিরে যেতে আকুল হয়ে উঠে। স্বপ্নের দিনগুলো উঁকি ঝুঁকি দিয়ে উতলা করে তোলে। পাওয়া না পাওয়ার আনন্দ উচ্ছ্বাস, বিরহ বেদনা আচ্ছন্ন করে রাখে। চল্লিশ বছর আগের চাঁদপুর কলেজ প্রথম প্রেমের মতো তাড়িয়ে বেড়ায়। অনেকটা পুরানো প্রেমিকা! এখন কেমন কোথায় আছে?

হাসান আলী : প্রাক্তন শিক্ষার্থী, আই-কম ১৯৭৯-৮০; প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক; প্রকাশিত গ্রন্থ : ৩টি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়