প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
শিক্ষা সফর : সাজেকের রহস্যময় সকাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় আয়োজন- এবার ট্যুর হবে সাজেক। সাজেক নাকি অসাধারণ সুন্দর। সবার মুখে একই কথা- চলেন স্যার, ভালো লাগবে। এ ধরনের ট্যুরে যা হয়। প্রথমে আয়োজকরা হিমশিম খায়। এতো ছেলেমেয়ের জন্য বাস পাওয়া যাচ্ছে না- বিরাট চিন্তার বিষয়। আয়োজক কমিটির ছেলেমেয়েরা দিনরাত- ভীষণ ব্যস্ত। কিন্তু এতো ব্যস্ততার মাঝে ও তাদের মুখ হাসি হাসি। কারন এবার রেকর্ড সংখ্যক ছেলেমেয়ে যাচ্ছে । বিশাল আয়োজন। একেবারে হৈ চৈ ব্যাপার।
কিন্তু ট্যুর যতো কাছাকাছি আসে- আগ্রহী ছেলেমেয়ের সংখ্যা ততো কমতে থাকে। কোন এক বিচিত্র কারনে প্রথম দিকে সর্বাধিক আগ্রহী থাকা ছেলেমেয়েদের শেষটায় আর যাওয়া হয় না। আয়োজক কমিটির হাসিহাসি মুখে নেমে আসে ট্যুর না হওয়ার আশংকার মেঘ।
শিক্ষকদের অবস্থা অনেকটা এরকম। প্রথমে প্রায় সবাই যাচ্ছে । শেষটায় কাউকেই রাজি করানো যাচ্ছে না। আয়োজক কমিটির আবার মাথায় হাত। যদি ও আগ্রহী ছেলেমেয়ে অবশেষে পাওয়া গেছে কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষক না হলে প্রশাসন থেকে ভ্রমনের অনুমতি পাওয়া যায় না। এ পর্যায়ে তারা শিক্ষকদের রুমে সদলবলে গিয়ে বলে—'স্যার- আপনাকে যেতেই হবে’। অনিবার্য ভাবে সব শিক্ষকদের এ কথা শুনতে হয় ‘আপনি কিন্তু আমাদের প্রথম থেকেই এক নম্বর চয়েস, স্যার আপনি না গেলে ট্যুরই হবে না”।
আসলে অনেক দিন পাহাড়ে যাওয়া হয় না। মনে মনে এরকম একটা চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো মাথার উপরে থাকবে অনন্ত নীল আকাশ । । কোলাহলহীন। সকাল হবে খুব শান্ত । পাহাড়ে নিটোল সূর্যোদয় দেখবো। চারদিক থাকবে অসম্ভব সুনশান নীরবতাণ্ড স্থির। স্নিগ্ধ। সবুজের মধ্যে আকাশী নীলের পটভূমিতে একটি দিনের জন্ম হয়ে তৈরি হবে অবাক সকাল।
অতপর-আমরা যাচ্ছি ।বিভাগীয় অনেক শিক্ষকরা যাচ্ছেন-সাথে বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র ছাত্রীর্।া অনেক চরাই উৎরাই পাড়ি দিয়ে চান্দের গাড়ি চড়ার প্রথম অভিজ্ঞতা। শেষটা সেনাবাহিনীর বিশেষ প্রহরায় পৌঁছলাম অতি উঁচু সাজেকে। একেবার পাহারের উঁচু চূড়ায় । চমৎকার। সবাই চারদিকে ছড়িয়ে পরলাম। বাঁশের মধ্যে বিশেষ ভাবে মুরগী রান্না- নধসনড়ড় পযরপশবহ- আহা স্বাদই আলাদা। রাতে সবাই মিলে কবিতা , গান, জম্পেশ আড্ডা।
আমি যেন বসেই ছিলাম ভোরের প্রতীক্ষায়। প্রথম সকাল, সূর্যের আলো ফোটা শুরু করেছে । বেরুলাম ওখানে বড় দুটি হেলিপ্যাড আছে। একটিতে উঠলাম। এতো ভোরে ও বেশ কিছু ছেলেমেয়েরা এসেছে। ওরা ছবি তুলছে । কারো কারো হাতে উঝখজ. সবাই মিলে লাফ দিচ্ছে- ভোরের আলোয় উড়ন্ত সময় কে ফ্রেম বন্দী করার চেষ্টা।
আর আমি অবাক চোখে শুভ্র সকাল দেখছি। সবুজের পটভূমিতে মন ভাল করা আকাশ -প্রসারিত অনন্ত নীলিমা। যতদূর চোখ যায়- অবারিত সবুজ বন আচ্ছাদিত পাহাড়। ভোরের প্রথম আলো ছুয়ে দিচ্ছে বিশ্বচরাচর। চারদিক কেমন শান্ত , কোমল। সমাহিত। অপূর্ব নিস্তব্দতা। মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখছি
হঠাৎ পাশ থেকে এক ছাত্র বলে উঠলো স্যার দেখছেন সকালটা কঠিন না?
আমি অবাক হই বলে কি এই ছেলেএমন সহজ সরল সকাল কঠিন হয় কি ভাবে? এরপর পাশ থেকে, আমার অবাক করা মুখের দিকে তাকিয়ে ৃএকটি মেয়ে বলে উঠলো
”জটিল স্যার! জটিল সুন্দর”!!!
এবার আমি বিস্মিত ---বলে কি এই মেয়েৃ সৌন্দর্য কি ভাবে জটিল হয়?
এবার একজন অস্থির স্যার...
অমনি উঁচু গলায় সমস্বরে...অস্থির ...পুরাই অস্থির ...
এবার আমি নিজেই পুরোপুরি অস্থির বোধ করি। এই সহজ, শান্ত, স্থির সকাল হয়ে যাচ্ছে কঠিন, জটিল , অস্থির! এবং পুরাই অস্থির!
প্রিয় পাঠক- এরপর থেকে আমি একধরেনের চিরস্থায়ী অস্থিরতার মধ্যে আছি। আর আপনি?