রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুরের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানুরাগী

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান
চাঁদপুরের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানুরাগী

গুণী শিক্ষক সৈয়দ আবদুস সাত্তার

অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুস সাত্তারের জন্ম ১৯২৮ সালের ২০ মে, শেরপুর শহরে। তিনি শেরপুর জি কে পি এম স্কুল থেকে মেট্রিক (১৯৪৬), বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে আইএ (১৯৪৯) এবং জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে বিএ (১৯৫১) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ (১৯৫৪) পাস করেন। তিনি ১৯৫৪ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষকতা করেছেন। এর মধ্যে ২৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন চাঁদপুর কলেজে। চাঁদপুরে তাঁর বহু ছাত্র রয়েছে।

সৈয়দ আব্দুস সাত্তার ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কৃষক আন্দোলনের যুক্ত থাকার দায়ে ১৯৪৮ সালে কারাবরণ করেন। পঞ্চাশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ভাষা আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৫২ সালে ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। তিনি কাগমারী সম্মেলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিলো।

তাঁর শিক্ষকতা জীবন বর্ণাঢ্য। ১৯৫৪ সালের দিকে সৈয়দ আবদুস সাত্তার ভূয়াপুর কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে চাঁদপুর কলেজে যোগদান করেন। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি এ কলেজে কর্মরত ছিলেন। অত্যন্ত জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিলো। বাংলাদেশ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি সক্রিয় ছিলেন।

সৈয়দ আব্দুস সাত্তার ১৯৫৮ সালে চাঁদপুরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ১৯৬৬ সালে চাঁদপুরে কচি কাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চাঁদপুর সংগীত নিকেতনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জামালপুর জেলা শাখার প্রথম আহ্বায়ক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া চাঁদপুর জেলা ন্যাপের সভাপতি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, চাঁদপুর খেলাঘর আসরের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।

সৈয়দ আবদুস সাত্তার ১৯৭০ সালে ন্যাপের হয়ে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে এবং ১৯৭৩ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর লেখা একাধিক গ্রন্থ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : আমার দেশ আমার জীবন।

গুণী এই শিক্ষক ২০০৩ সালের ৩ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র :

আমার দেশ আমার জীবন, সৈয়দ আবদুস সাত্তার, সুচয়নী পাবলিশার্স।

একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ

মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস

শিক্ষাবিদ ও গবেষক মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুসের জন্ম নাসিরকোটে, ১৯০৬ সালের ১ জানুয়ারি। বাবা আফসার উদ্দিন আহমেদ, মা মানিকজান। তিনি রূপসা আহমদিয়া হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক (১৯২৫), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (১৯২৭) ও বিএ (১৯২৯), ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.টি (১৯৩৩), ময়মনসিংহ প্রাইমারি ট্রেনিং কলেজ থেকে এমএড ডিগ্রি লাভ করেন। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পল্লী উন্নয়ন ও বয়স্ক শিক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

পেশাগত জীবনে তিনি হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক, স্কুল সাব-ইন্সপেক্টর, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এবং ঢাকা জুনিয়র কলেজের অধ্যক্ষ, পূর্বপাকিস্তান শিক্ষা কমিশনের সহকারী সচিব, বয়স্ক শিক্ষা শাখার এডিপিআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস আজীবন শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। কুমিল্লা মডার্ন স্কুল, শিশু সংগঠন সবুজ সংঘ, কুমিল্লা শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা- তাঁরই উল্লেখযোগ্য কীর্তি। তিনি বয়স্কদের জন্যে সহজ ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা ২৪টি। তিনি শিক্ষকদের পত্রিকা পাক্ষিক আলোর সম্পাদক এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও টেক্সট বুক বোর্ডের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন।

গবেষক ও সম্পাদক হিসেবে মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বিশেষত আঞ্চলিক ইতিহাস প্রণয়ন ও নজরুল-সাহিত্য মূল্যায়নে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ : নজরুল কাব্যে ইসলামী ভাবধারা (১৯৭০), কুমিল্লায় নজরুল (১৯৭৬), শহর কুমিল্লা (১৯৭৮), কুমিল্লা জেলায় ইসলাম প্রচার (১৯৮৩), শিশুসাহিত্যে নজরুল (১৯৮৩), কুমিল্লার স্মরণীয়-বরণীয় (১৯৮৭) ইত্যাদি। শিশুতোষ গ্রন্থ ১৫টি। তিনি কুমিল্লা জেলার ইতিহাস গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া বয়স্ক শিক্ষা, প্রাথমিক ও মক্তব শিক্ষা এবং সাক্ষরতা বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন।

দীর্ঘ কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সরকার মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুসকে তঘমা-ই-কায়েদে আজম পুরস্কার প্রদান করে। সাহিত্যচর্চার জন্যে তিনি সাহিতরত্ন উপাধি লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্যে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

বরেণ্য এ শিক্ষাবিদ ও গবেষক ১৯৮৮ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র :

১. বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, বাংলা একাডেমি, পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত তৃতীয় সংস্করণ, জুন ২০১১।

২. প্রিয়তোষ সাহা, চাঁদপুর পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য, আহমদ পাবলিশিং হাউজ, ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

৩. ছবি কৃতজ্ঞতা : গবেষক মামুন সিদ্দিকী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়