প্রকাশ : ২১ মে ২০২৪, ০০:০০
স্মৃতিময় শিক্ষাজীবন
স্মৃতি মানুষের আজন্ম সঙ্গী। কত শত স্মৃতি প্রতিদিন মনকে নাড়া দেয়। আবার কত স্মৃতি প্রতি মুহূর্তে মনে জায়গা করে নেয়। এর মধ্যে কাকতালীয় ঘটনাগুলোর কথাই মনে পড়ে বেশি। তেমনি সমাজকর্মে পড়া আমার জন্যে কাকতালীয় বটে। কাকতালীয় হলেও সমাজকর্মে পড়ার সিদ্ধান্ত আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এক. ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন সাংবাদিকতা তথা লেখালেখি করা। ভাবলাম, বাংলা সাহিত্যে অনার্স করবো। একপ্রকার মনস্থির করে অপেক্ষায় থাকি ইন্টারমিডেয়েটের পর বাংলায়ই ভর্তি হবো। এতে আমার সাংবাদিকতাণ্ডলেখালেখির ক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়ক হবে। কিন্তু পরে কাকতালীয়ভাবে সিদ্ধান্ত বদলে সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তি হই। সমাজকর্মে আনন্দ সহকারে পড়ার সুযোগ আছে। সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো, ফিল্ডওয়ার্কের মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষা অর্জন। ফিল্ডওয়ার্ক সমাজকর্মের একজন শিক্ষার্থীকে পেশাগত ও ব্যক্তিজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দুই. ক্লাস সেভেনে পড়াবস্থায় বাবা বার্ষিক পরীক্ষার ফি জমা দিয়ে বললেন, আমাকে আর পড়াতে পারবেন না। উত্তরে আমি বাবাকে বললাম, আমার জন্যে দোয়া করবেন। মূলত সেখান থেকেই আমার লড়াই। কাজ এবং পড়াশোনা দুটো একসাথে করেছি। কিন্তু সচ্ছলতা অর্জন করতে পারিনি। এমন অনেক দিন গেছে, আমি টাকার অভাবে ক্লাসে আসতে পারিনি। পরিশ্রম করতে কখনো দ্বিধাবোধ করিনি, কিন্তু অনার্স-জীবনে আমার কাছে অর্থ ছিলো সোনার হরিণের মতো। ফরম ফিলাপের সময়গুলো আমার জন্যে ছিলো চ্যালেঞ্জিং। মাঝে মাঝে মনে হতো, আমার বোধহয় আর পড়াশোনা হবে না। কিন্তু আল্লাহ আমাকে এতোদূর এনেছেন, এজন্যে শোকরিয়া আদায় করি। এক্ষেত্রে শুভাকাঙ্ক্ষীরা আস্থা ও সাহস জুগিয়েছেন। জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে যেভাবেই হোক নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। মানবিক মানুষ হতে সকলের দোয়া চাই।
তিন. চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে আমি কখনো এ কলেজে প্রবেশ করিনি। যদিও এ শহরে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। কলেজের সামনে দিয়ে যখনই যেতাম, ভাবতাম, যেদিন এ কলেজে ভর্তি হবো সেদিন কলেজে ঢুকবো। বাস্তবে তা-ই হলো। নবীনবরণ অনুষ্ঠানের দিন কলেজে প্রবেশ করে মনে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করি। কলেজের মাঠ, বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ঘুরে দেখার স্মৃতি আজও মনে পড়ে। সেদিন আমাকে ফুল দেয়ার মাধ্যমে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
চার. পড়াশোনার পাশাপাশি আমি চাঁদপুরের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে কর্মরত। ক্লাস করার জন্যে আমার পরিচিতি যতোটুকু, তারচেয়ে বেশি পরিচিতি পেশাগত কারণে। অনেকেই আমাকে ‘চাঁদপুর কণ্ঠের আলআমিন’ হিসেবে ডাকেন। এ বিষয়টি আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আলআমিন হোসাইন : সমাজকর্ম বিভাগ,
চাঁদপুর সরকারি কলেজ। সেশন : ২০১৭-১৮।
বিভাগীয় সম্পাদক, চিকিৎসাঙ্গন, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।