শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

শিক্ষার সাফল্য অব্যাহত রাখতে হবে

ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার
শিক্ষার সাফল্য অব্যাহত রাখতে হবে

শহর থেকে গ্রামের দিকে গেলেই সুউচ্চ ও দৃষ্টিনন্দন একটি ভবনের দিকে সবার যে নজরটি পড়ে সেটি হচ্ছে ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। দেশব্যাপী একই ডিজাইনের এ শিক্ষা ভবনটির নির্মাতা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, তত্ত্বাবধানে মাউশি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষায় বর্তমান সরকারের অব্যাহত অনুদান, মনিটরিং এবং এর সাফল্য আজ বিশ্বনন্দিত। উপবৃত্তি, মি-ডে-ফিল্ড, বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে বই বিতরণ ইত্যাদি কল্যাণমূলক শিক্ষা প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়ার শতভাগ শিশু এখন স্কুলগামী এবং সাক্ষরতার হার বর্তমানে প্রায় ৭৫ শতাংশ।

সম্প্রতি বিশ্বমানের শিক্ষা কারিকুলাম প্রণীত হওয়ায় অচিরেই এ সাক্ষরতার হার শতভাগে পৌঁছবে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা উন্নয়নের এ ধারা শুরু করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই। তিনিই প্রথম ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব নাগরিকের শিক্ষা, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির কথা বলেছিলেন। অতঃপর সুযোগ পেয়েই ১৯৭২ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণের মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই (২৬ জুলাই) বঙ্গবন্ধু বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন গঠন করেন এবং ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আইন প্রণয়ন করেন। এভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭৩ সালে তিনি এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)’ প্রতিষ্ঠা করেন। তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তিনি ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই দেশব্যাপী ৩৬ হাজার ১৬০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ করে পুরো জাতিকে অবাক করে দিয়েছিলেন। একইভাবে মাদরাসা এডুকেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৭২, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান আদেশ ১৯৭৩, বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসন অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এবং প্রাথমিক স্কুল অ্যাক্ট ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এসে আজ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে যে চিত্রটি সবার কাছে দৃশ্যমান তা হলো বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিক্ষা অবকাঠামোতে এক অবিশ্বাস্য পরিবর্তন। নতুন নতুন স্কুল-কলেজ-মাদরাসা প্রতিনিয়তই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যেখানে লেখাপড়া করছে লাখ লাখ গ্রামের শিক্ষার্থী। বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁর কন্যাও স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পর ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। এখন শিক্ষা পরিবারে প্রাথমিক স্তরে ৬০ ভাগ নারী শিক্ষকতায় নিয়োজিত। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তিনিই। উল্লেখ্য, এখন দেশে ৫৩টি সরকারি এবং ১১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৬৫টি সরকারি ও ৫৯২টি বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্সের ছাত্রসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।

উল্লেখ করার মতো আরও যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো হলো (কম বেশি) ৭৭টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৭০টি আইন কলেজ, ৪৪টি নার্সিং ইনস্টিটিউট, ২৮টি টেক্সটাইল কলেজ, ৫৪টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ১৪টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ৫৯টি এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট, ২৭টি শারীরিক শিক্ষা কলেজ ইত্যাদি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে গত পাঁচ বছরে আরও যেসব উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে সেগুলো হলো (১) শুধু ২০২৩ সালের স্নাতক ও সম্মান পর্যায়ে ১,৪৫,৯৮৯ জন অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ৭৯,৪৭,৬১,৬৫০ টাকা উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বাবদ বিতরণ করা হয়েছে। (২) শুধু ২০২৩ সালে ষষ্ঠ থেকে স্নাতক ও সম্মান পর্যায়ে ৩৫৭১ জন অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি সহায়তা হিসেবে ২,৪৯,৫৭,০০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। (৩) সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে এমফিল এবং পিএইচডি কোর্সে গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে তিন বছর মেয়াদে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা হারে গবেষকদের ফেলোশিপ ও বৃদ্ধি প্রদান করা হয়েছে। (৪) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ১ কোটি ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর প্রোফাইল ডেটাবেজ এবং ৬১ লাখ ৭৬ হাজার শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি প্রস্তুত করা হয়েছে। (৫) ২০২৩ সাল পর্যন্ত সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ প্রোগ্রামের আওতায় মোট ২৯৮৭টি ক্লাস সম্প্রচার করা হয়েছে। (৬) ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ ৭৮৮১টি ভবন সমাপ্ত হয়েছে এবং ২০৬৫টি ভবন নির্মাণকাজ চলমান আছে। (৭) ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্কিমের আওতায় মাধ্যমিক পর্যায়ের সারা দেশে মোট ৭৫০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ, জনসম্পৃক্তি বৃদ্ধি করুন এবং জবাবদিহি পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য ৫ লাখ টাকা হারে ৩৭৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। (৮) ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৯০৭ কলেজে আইসিটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং ৪৭৯৬ জন বেসরকারি কলেজশিক্ষককে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি এবং ক্লাসে উপস্থাপনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। (৯) ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫০৬টি কলেজের ৬১২৪টি শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের এই অভূতপূর্ব সফলতা সমগ্র জাতির কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্বসমাজে পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ‘সাহসী নারী’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং ‘শান্তিবৃক্ষ’ স্মারক তুলে দেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক। সরকারের গণমুখী কার্যক্রমের ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে ঘটে চলেছে এক নীরব বিপ্লব, যা আজ সর্বত্র দৃশ্যমান। শিক্ষা সাফল্যের উপরোক্ত তথ্যপুঞ্জ আরও সমৃদ্ধ করতে কাজ করতে হবে দলমত নির্বিশেষে, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে।

লেখক : অধ্যাপক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়