বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

শিক্ষকতা নিছক চাকরি নয়
সুধীর বরণ মাঝি

শিক্ষকতা একটি প্রামাণ্য শিক্ষাগত দায়িত্ব। শিক্ষকতা শুধু একটি চাকরি নয়, শিক্ষকতা হলো একটি ব্রত, একটি আদর্শ, একটি নৈতিক মানদ-। কোনোভাবেই একে কলঙ্কিত করা যাবে না। জন অ্যাডামস শিক্ষককে ‘গধশবৎ ড়ভ গধহ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার।’ একজন আদর্শ শিক্ষক হবেন চরিত্রবান। তিনি আদর্শের প্রতীক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তাদের চরিত্রে, কথায় ও কাজে কোনো পার্থক্য থাকবে না।’

শিক্ষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যা সমাজের সবচেয়ে মৌলিক স্তরের উন্নতি ও উন্নত সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। আর এখানে শিক্ষার আসনে যিনি বসে থাকেন এবং সমাজের সবচেয়ে মৌলিক স্তরের উন্নতি ও উন্নত সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যান তিনিই শিক্ষক। ‘যিনি জানেন, তিনি করেন, যিনি বোঝেন, তিনি পড়ান’- অ্যারিস্টটল। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হলে শিক্ষকরা হলেন স্নায়ুতন্ত্র। যার ভেতর দিয়ে সব সময় প্রবাহিত হয় জ্ঞানের নতুন ধারা, নতুন সভ্যতা। সভ্যতার সুচারু কারিগর হলেন শিক্ষক। একজন শিক্ষক সর্বদাই মানবিক, নৈতিক। তিনি কখনোই ব্যবসায়িক চিন্তা করেন না এবং ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে সামষ্টিক উন্নতির চিন্তায় রত থাকেন। তিনি শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরোধী এবং সার্বজনীন ও মানসম্মত শিক্ষার নিরলস প্রচেষ্টায় মত্ত থাকেন। যিনি শিক্ষক তার পক্ষে শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীর কোনো রকম ক্ষতি সাধন সম্ভব হয় না। তিনি সর্বদা সৃজনশীল, অধিকার চেতা। তিনি ছাত্রদের প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্বপ্নের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, অন্ধকার দূর করে আলোর পথ দেখান, ছাত্রের ভেতরকে জাগিয়ে তোলেন, সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করেন। শিক্ষক সেই যিনি সমাজে সম্প্রীতির বন্ধন ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং পরিবেশ সৃষ্টিতে বা তৈরিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন। যিনি প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করেন সত্য এবং সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করতে। যার কাছ থেকে ছাত্ররা সত্যকে সত্য বলতে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে শিখে, বলার সাহস সঞ্চয় করে। একজন শিক্ষকই সমাজে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠা করতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যিনি শিক্ষক তিনি কখনোই ছাত্রদের শুধু পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন না। শিক্ষক শিক্ষিকা মা-বাবার পরে এ মানুষগুলো আমাদের হাঁটতে শিখান সঠিক পথে। না, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। তবুও আমাদের কোনো সাফল্যে তাদের চোখ জলে ছলছল করে। মা-বাবার পরে তারাই হোক আমাদের শ্রেষ্ঠ উপহার।

শিক্ষক শব্দটি বহুরূপীভাবে সম্পর্কিত। তার মূল অর্থ হলো শেখানো বা শিখানো। শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, সংস্কার এবং নৈতিক মূল্যগুলো স্থাপন করতে দায়ী হন। তারা একজন ভৌগোলিক এলাকা থেকে অন্যত্রে শিক্ষা দেন এবং তাদের শিক্ষার্থীদের জীবনে পরিবর্তন উপস্থাপন করেন। শিক্ষকরা একটি সমৃদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা আত্মপ্রসূত শিক্ষা পদ্ধতিতে কাজ করতে পারেন।

শিক্ষকতার মূল দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের শেখানো, উন্নত করা এবং তাদের নৈতিক আত্মবিশ্বাস উন্নত করা। এছাড়া, শিক্ষকদের কাছে অধ্যাপনা এবং শিক্ষার প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণ, বিদ্যার্থীদের একটি উপস্থিতি স্থাপন, শিক্ষার উন্নতিতে সহায়ক ও প্রোৎসাহন দেয়া এবং তাদের জীবনে একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা। শিক্ষা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি একজন ব্যক্তির জীবনে স্বপ্ন এবং লক্ষ্যের দিকে নেমে যায়। শিক্ষা দ্বারা ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নতি সম্ভব হয় এবং এটি একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ মূল্যগুলো প্রতিষ্ঠানে সাহায্য করে। শিক্ষা ব্যবস্থা সমৃদ্ধির জন্য একটি কুঁড়েঘর। এটি সমৃদ্ধির সাধারণ উপায়, বিশেষভাবে শিক্ষা প্রদান, শিক্ষার মান এবং শিক্ষার উন্নতির দিকে নিয়ে যায়। সরকার এবং সমাজ শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে দায়ী হয়ে ওঠে এবং শিক্ষা প্রণালি নির্ধারণ এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা করে তুলতে সাহায্য করে। শিক্ষকতা আমাদের সমাজের উন্নতি এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক স্বরূপে সম্পর্কিত এবং মানসম্মতভাবে উন্নত করতে সাহায্য করে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রণালিও একটি শক্তিশালী ও উন্নত অংশ হয়ে ওঠে, যা আমাদের সমাজের উন্নতির দিকে নিয়ে যায়।

শিক্ষকতা একটি সমাজের শিক্ষার্থীদের জীবনে অমূল্য মূল্য যোগাযোগ তৈরি করে, তাদের বৃদ্ধি ও উন্নতির দিকে প্রাণস্পর্শী ভূমিকা পালন করে। শিক্ষক একটি দুর্মিল পেশার প্রতিষ্ঠাতা, একটি নির্মাতা, একটি গবেষক, একটি পরিশ্রমী, একটি গুরু এবং একটি প্রেরণাস্ত্রোত। এ পেশার মাধ্যমে শিক্ষক নতুন প্রজšে§র জীবন প্রস্তুত করে তোলে এবং তাদের সমৃদ্ধি ও সামাজিক জীবনে সঙ্গে নেয়। শিক্ষকতা একটি মানসম্মত পেশা, কারণ এটি নতুন প্রজšে§র বৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত যোগাযোগ যাত্রা, শিক্ষকের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সময় এবং দিনের শেষে প্রত্যেকটি ছাত্রের কৌশল ও জ্ঞানে পরিণত হওয়ার সময় হয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বৃদ্ধি এবং উন্নতি নির্ধারণ করা, তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে সাহায্য করা, তাদের জীবনে সমস্যার সমাধানে সাহায্য করা, উৎসাহ, সমর্থন প্রদান করা এবং নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রস্তুত করা। এ দায়িত্বগুলো একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত যত্ন ও সমর্থনের মাধ্যমে পালন করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের সর্বোত্তম স্বপ্ন এবং লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। একজন মানসম্মত শিক্ষক হতে হলে, শিক্ষকের ব্যক্তিগত ও পেশাগত সমর্থন নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিক্ষকের নিজের শিক্ষাগত প্রস্তুতি, তার অধ্যাপনা দক্ষতা, এবং সমাজের প্রতি একটি দায়িত্বমূলক বৈচিত্র্যের সঙ্গে যোগাযোগ সাধন করে। শিক্ষকরা নতুন প্রজšে§র বৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধির সঙ্গে একটি সামর্থ্যপূর্ণ সমাজ নির্মাণ করতে সাহায্য করে এবং আমরা সমাজে উন্নতি এবং উন্নতির দিকে একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

সুধীর বরণ মাঝি : শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়