বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

‘শতভাগ সাক্ষরতা’ : এখনো গেলো না আঁধার
মাহফুজুর রহমান মানিক

আধুনিক এই সময়ে বিশ্বের সামর্থ্যবান প্রায় সব দেশ শতভাগ সাক্ষরতার দিকে যাচ্ছে। এমনকি পূর্ব আফ্রিকার দেশ যে উগান্ডাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল হয়, সেই দেশটিও সাক্ষরতায় আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তবে এতদিনে আমাদেরও শতভাগ সাক্ষরতা অর্জিত হওয়ার কথা!

বাংলা গানের কথা আমরা জানি- ‘হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ’। নিরক্ষর মানুষেরও একই দশা। যাদের অক্ষরজ্ঞান নেই; সত্যিকার অর্থে চোখ থাকার পরও তারা অন্ধ। আমরা ভাষার গৌরব করি। একজন লেখক খেটেখুটে সর্বোচ্চটা দিয়ে একটা লেখা লিখলেন। এটা কারও জন্য মহাসম্পদ হলেও অক্ষরজ্ঞানহীনের কাছে নিছক আঁকিবুঁকি ছাড়া কিছু নয়! তাঁর কপাল মন্দ; তিনি অক্ষরজ্ঞান পাননি। আমাদের পোড়া কপাল, আমরা তাদের আলোকিত করার গুরুত্ব সেভাবে অনুভব করছি না।

হতবাক হওয়ার কিছু নেই, এই নিরক্ষর মানুষ একজন- দুজন নয়; দেশের প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ মানুষেরই সাক্ষরতা নেই। অর্থাৎ আলোহীন প্রায় ৪ কোটি মানুষের অভিশাপ আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। অক্ষরজ্ঞান দেওয়ার কাজটি কঠিন কিছু নয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা দুই বছর আগেই উদযাপন করেছি; কিন্তু এই সহজ কাজটি আমরা করতে পারিনি সেভাবে অগ্রাধিকার দিইনি বলে। এক যুগ আগে ফিরি। ২০১০ থেকে ২০১২ সালে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হতো, ২০১৪ সালের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতা নিশ্চিত করা হবে। এমনকি সাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারি প্রতিষ্ঠান উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ওয়েবসাইট খুললেই তখন নজরে পড়ত- ‘উই আর কমিটেড টু এনশিওর হান্ড্রেড পার্সেন্ট লিটারেসি বাই ২০১৪’; অর্থাৎ ২০১৪ সালের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতা নিশ্চিত করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এর পেছনের কারণটি অবশ্য স্পষ্টই ছিল। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করার ঘোষণা দেয়। সরকার গঠনের পর এর আলোকে তারা দুটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। তিন হাজার কোটি টাকার ওই দুটি প্রকল্প শেষ পর্যন্ত অর্থের অভাবে পাস হয়নি বলে জানা যায়। ফলে ওই সময়ের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জিত হয়নি। এমনকি তার ৯ বছর পরও আমরা দেখছি, এখনও এত মানুষ নিরক্ষর। এতে প্রশ্ন জাগছে, বর্তমানে শতভাগ সাক্ষরতার বিষয় সরকারের কতটা অগ্রাধিকার রয়েছে?

আমরা দেখছি, সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বাস্তবায়নাধীন আরও অনেক মেগা প্রকল্প। কিন্তু দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য এক যুগ আগে নেওয়া সরকারের মাত্র তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কেন বাস্তবায়ন হলো না? তার চেয়েও আশ্চর্যের বিষয়, তখন এ নিয়ে যতটা তোড়জোড় ছিল, এর পর কেন সব থেমে গেল? ওই সময় সাক্ষরতার বিষয়টা যতটা গুরুত্ব পেয়েছিল, সেই অগ্রাধিকার বজায় থাকলে এতদিনে আমরা হয়তো শতভাগের কাছাকাছি পৌঁছে যেতাম।

গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বছরে প্রায় ১ শতাংশ করে সাক্ষরতার হার বাড়ছে। এই হারে বাড়লে শতভাগ সাক্ষরতা হতে আরও ২৫-৩০ বছর লেগে যাবে। তাহলে আমাদের এসডিজির কী হবে? ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। এই গতি দিয়ে সেই লক্ষ্যের কাছে পৌঁছানো কীভাবে সম্ভব?

এরই মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২২ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয়শুমারিতে আমরা দেখছি, দুই বছরে ১৮ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সেগুলো বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার পরও বিষয়টি শতভাগ সাক্ষরতার পথে একটা ধাক্কা। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সবাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছে কিনা, সেই তথ্য যদিও নেই। তারা যাতে ঝরে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। মনে রাখতে হবে, এখনও প্রায় ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। ঝরে পড়া বন্ধ করা এবং ঝরে পড়া কিংবা বিদ্যালয়ের বাইরের শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারলে নিরক্ষরতার হারও বেড়ে যাবে। এবারের সাক্ষরতা দিবসের শ্লোগান ‘পরিবর্তনশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সাক্ষরতার প্রসার’।

বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে। সমাজে শান্তি আনার ক্ষেত্রেও যখন কাউকে বার্তা দেবেন, তখন পড়ার উপকরণ দিতে হয়। অথচ অক্ষরজ্ঞানহীনরা পড়তে পারে না। সেজন্যই সাক্ষরতার প্রসার এবং শতভাগ সাক্ষরতা জরুরি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ বছরের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। তবে জুলাইয়ে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার প্রায় ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক সাক্ষরতার হিসাব করলে হারটি আরও কমে যাচ্ছে। যারা পড়তে পারেন, লিখতে পারেন, বুঝতে পারেন ও গণনা করতে পারেন তাদেরই প্রায়োগিক সাক্ষরতা রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের অর্জন কম নয়। এমনকি এ সময়ে সাক্ষরতার হারও অনেক বেড়েছে। কিন্তু সাক্ষরতা শতভাগ হওয়াই ছিল প্রত্যাশিত। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে এর গুরুত্ব যেভাবে অনুধাবন করেছিল, এখন কেন সেভাবে করছে না?

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কিছু তৎপরতা আমরা দেখছি। এর সঙ্গে ধীরে চলো গতিতে চলছে দুটি প্রকল্প। এভাবে দিবস ও প্রকল্পনির্ভর সাক্ষরতার মাধ্যমে শতভাগ সাক্ষরতা কত দিনে অর্জিত হবে- সেটাই প্রশ্ন। নিরক্ষরতা দূরীকরণ কার্যক্রমে দেশের সাক্ষর মানুষ এবং বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর পরামর্শ অনেকেই দিয়েছেন। সরকার পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়