বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

প্রিয় কলেজ
প্রফেসর অসিত বরণ দাশ

আমার জন্ম কচুয়া উপজেলার রহিমানগরের নাওড়া গ্রামে, ১৯৬৬ সালে। পরে আমরা সপরিবারে চাঁদপুরে চলে আসি। সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী হিসেবে আমরা সপরিবারে ভারতে আশ্রয় নিই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চাঁদপুরে ফিরে আসি। ১৯৭২ সালে হাসান আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। পরে হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করি।

১৯৮২ সালে আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। এ প্রসঙ্গে মজার একটি ঘটনা আছে, সে সময় চাঁদপুর সরকারি কলেজ পুরো জেলায় একমাত্র সরকারি কলেজ হওয়ায় শিক্ষার্থীসংখ্যা ছিলো প্রচুর। তৎকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন এ. ডব্লিউ. এম. তোয়াহা মিয়া স্যার। আমি হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অ্যাগ্রিকালচার বিভাগ থেকে পাস করি। ওই বছরই তোয়াহা স্যার বললেন, অ্যাগ্রিকালচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাঁদপুর কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। এ ঘোষণায় আমিসহ অন্যরা হতাশায় পড়ে যাই। কেননা আমাদের স্বপ্ন ছিলো চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়া। যদিও সে সময় অ্যাগ্রিকালচারকে সায়েন্সে রূপান্তরের একটি বিষয় ছিলো, কিন্তু শিক্ষার্থীসংখ্যা বেশি হওয়ায় স্যার প্রথমে রাজি হননি। পরে সিদ্ধান্ত দিলেন, যারা প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেছে, শুধু তাদেরকে সুযোগ দেয়া হবে। সে সময় যদি চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হতে না পারতাম তাহলে হয়তো আমি বর্তমানে অধ্যক্ষ হতে পারতাম না।

সে সময় এরশাদ সরকার ক্ষমতায় ছিলো। রাজনৈতিক একটি অস্থিরতা ছিলো। ক্যাম্পাস উত্তাল থাকতো মিছিল-মিটিংয়ে। এর মধ্যে চাঁদপুর সরকারি কলেজের পড়াশোনার মান এতোটুকুও কমেনি। নিয়মিত ক্লাস হতো। কলেজে ভবন বেশি ছিলো না। ফলে শ্রেণিকক্ষের চাপ ছিলো। মেধাবী একঝাঁক শিক্ষক ছিলেন। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তাজুল ইসলাম স্যার, ফিজিক্সের ইউনুছ স্যার, গণিতের প্রফুল্ল স্যার, মান্নান স্যার, প্রাণিবিদ্যার বদিউর রহমান চৌধুরী স্যার ছিলেন। আমাদের সময় প্র্যাকটিকাল ছাড়া কেউ উক্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতো না। যারা নানা কারণে ক্লাস করতে পারতো না, তাদেরও অন্তত প্র্যাকটিকাল করতে হয়েছে। প্র্যাকটিকালের ক্ষেত্রে বর্তমানে একটি দৃশ্যপট লক্ষণীয়, সেটি হলো কেউ হয়তো যে কোনো লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেছে, কিন্তু প্র্যাকটিকালে পূর্ণ নম্বর পেয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আসলে এটি হওয়া উচিত নয়।

চাঁদপুর সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের দক্ষতানুযায়ী পরিপূর্ণ বিকাশসাধনে শিক্ষকরা ছিলেন অত্যন্ত তৎপর। এ কলেজে পড়তে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমাদের বন্ধু ডাঃ সফিকুল ইসলাম মন্টু (মাদারীপুরের সাবেক সিভিল সার্জন) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেছে। সে আমাদের সাথে পড়াবস্থায় প্রাণিবিদ্যায় প্র্যাকটিকাল পরীক্ষায় ১৬ নম্বর পেয়েছে, কিন্তু পরে মেডিকেলে পড়েছে! এর মানে এই নয় যে, প্র্যাকটিকালে কম নম্বর পাওয়ায় সে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখানে এটিই বড় জিনিস, তা হলো- যার যেটা প্রাপ্য তাকে সেটাই দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনকার রীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্র্যাকটিকাল না করে প্র্যাকটিকাল নম্বর পাওয়াটা একেবারে বেমানান সংস্কৃতি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, চাঁদপুর সরকারি কলেজের উন্নতমানের ল্যাব আমাদের সময়ও ছিলো, এখনো আছে। আমার ধারণা, খুব কম কলেজেই এতো সমৃদ্ধ ল্যাব রয়েছে।

শিক্ষাজীবনে অসংখ্য গুণী, মেধাবী ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন শিক্ষকের সান্নিধ্য আমি পেয়েছি। ফলে আমার প্রিয় অনেক শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ইংরেজি বিভাগের এবিএম ওয়ালিউল্লাহ স্যার, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তাজুল ইসলাম স্যার, ফিজিক্সের ইউনুছ স্যার, গণিতের প্রফুল্ল স্যার, মান্নান স্যার, প্রাণিবিদ্যার বদিউর রহমান চৌধুরী স্যার উল্লেখযোগ্য। স্যারদের শাসন ছিলো মধুর। এতে ভয় যেমন ছিলো, আবার স্যারদের প্রতি আকর্ষণও কাজ করতো। মোট কথা, স্যারদের শাসন ছিলো অভিভাবকের ন্যায় পরম মমতায় আগলে রাখার মতো। কখনো স্যারদের পর মনে হয়নি, মনে হতো একান্ত আপনজন, যাঁরা আমাদের সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

সহপাঠীদের মধ্যে সবার সাথেই বর্তমানে যোগাযোগ আছে। আমাদের ১৯৮২-৮৩ ব্যাচের সহপাঠীদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছে। অনেকেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ করে অনেকে ইঞ্জিনিয়ারিং, স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত।

আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সরকার ও রাজনীতি’ বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করি। যে বিষয়টাকে অনেকেই ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান’ কিংবা ‘রাজনীতি বিজ্ঞান’ বলে। ১৯৯০ সালে মাস্টার্স পাস করি। ১৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করি। আমার প্রথম পোস্টিং হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজে। এতে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। তবে একটু অস্বস্তি ছিলো, সেটা হলো শ্রদ্ধেয় যে স্যারদের কাছ থেকে আমি শিক্ষাগ্রহণ করেছি, আজ সেই শিক্ষকদের সাথে সহকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। সে সময় অধ্যক্ষ ছিলেন কাজী আমিন আহমেদ। নিয়োগ পাওয়ার পর আমি অধ্যক্ষ স্যারের রুমে গেলে দেখি আমার ছাত্রজীবনের শিক্ষক তাজুল ইসলাম স্যার, মান্নান স্যার ও বদিউর রহমান চৌধুরী স্যার উপস্থিত। ফলে স্যারদের সামনে বসতে আমার অস্বস্তি হয়। তখন স্যাররা আমাকে অভয় দিলে বললেন, তুমি নির্দ্বিধায় বসতে পারো। তুমি এখন আমাদের সহকর্মী। সম্মানিত শিক্ষকদের আমি সহকর্মী হিসেবে পেয়ে যেমন শ্রদ্ধাবোধ কাজ করেছে, তেমনি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আন্তরিকতাবোধ কাজ করেছে। ফলে প্রাণের প্রতিষ্ঠানের প্রতি দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পেরেছি।

এ কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কিন্তু দুর্দান্তভাবে কাজ করেছি। কেননা মাথার উপর ছাতার মতো অধ্যক্ষ স্যার ছিলেন। আমি অধ্যক্ষ হিসেবে পেয়েছিলাম প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন স্যারকে। তিনি ছিলেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই। স্যার আমার ভীষণ পছন্দ ও পরম শ্রদ্ধার একজন মানুষ। উপাধ্যক্ষ থাকাবস্থায় যে কোনো কাজে স্যারের পূর্ণ সহযোগিতা পেতাম। স্যারের দিকনির্দেশনায় সহজেই যে কোনো কাজ সম্পন্ন করতাম। কিন্তু যখন অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি পেলাম, তখন চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। এতে যেমন আনন্দ, তেমনি বিষাদও ছিলো। কেননা প্রিয় অধ্যক্ষ স্যারের ছায়া থেকে বঞ্চিত হলাম। একজন অধ্যক্ষের দায়িত্ব অনেক। প্রচুর চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করতে হয়। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ একযোগে কাজ করলে যে কোনো প্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত এগিয়ে যায়। আমি বলতে পারি, বর্তমান উপাধ্যক্ষও সে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আমরা একসাথে কাজ করি। অন্যান্য সহকর্মীর সাথে সমন্বয় করেই আমরা কলেজের সামগ্রিক উন্নয়ন ও পড়াশোনার মান নিশ্চিতে কাজ করি।

আমার ছাত্রাবস্থায় এ কলেজের কাঠামোগত এতো বিস্তার হয়নি। সে সময় শুধু একটি ভবন ছিলো এ কলেজের। খেলাধুলার পরিবেশ ছিলো। আন্তঃক্রীড়া অর্থাৎ টেবিল টেনিস, ক্যারাম, দাবা, হ্যান্ডবল ও বাস্কেটবল খেলা হতো। বাস্কেটবল খেলায় চাঁদপুর সরকারি কলেজের গৌরবোজ্জ্বল সাফল্য রয়েছে। কেননা এ কলেজের বাস্কেট গ্রাউন্ড স্বনামধন্য অনেক খেলোয়াড় জন্ম দিয়েছে, যারা বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এছাড়া কমনরুম ছিলো। বিতর্ক প্রতিযোগিতা হতো। আমি আগেই বলেছি, সে সময় চাঁদপুর কলেজের বিস্তার এতো ছিলো না। শিক্ষার্থীসংখ্যাও কম ছিলো। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক খুবই ভালো ছিলো। খেলাধুলা ও সাঁতার প্রতিযোগিতায় এ কলেজ সবসময় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতো। ইংলিশ চ্যানেলজয়ী সাঁতারু আঃ মালেক ও অবিরাম সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ডধারী অরুন নন্দী এ কলেজের শিক্ষার্থী। খেলাধুলার বিষয়ে তৎকালীন ক্রীড়া শিক্ষক স্বপন কুমার সাহা ছিলেন অত্যন্ত তৎপর, এখনো তিনি আছেন।

বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি কলেজের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। শিক্ষার্থীসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীসংখ্যা ১৬ হাজার। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বর্তমান প্রজন্ম খেলাধুলার প্রতি খুব বেশি আগ্রহী নয়। এটি আমাদের জাতীয় সমস্যায় রূপান্তর হয়েছে। এ প্রজন্ম খেলাধুলা দেখতে ভালোবাসে, ক্রিকেট ভালোবাসে, ফুটবল ভালোবাসে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে মাঠে গিয়ে খেলছে না। মোট কথা, খেলাধুলা নিয়ে তারা মননে অনুশীলন করছে, কিন্তু নিজে খেলছে না। ফলে আমাদের ক্রীড়াক্ষেত্রে যতটুকু সাফল্য অর্জনের কথা ছিলো, তা কিন্তু হয়নি।

আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগের বিষয়। অতীত আর বর্তমান চাঁদপুর সরকারি কলেজের পার্থক্য তো অবশ্যই থাকবে। চল্লিশ বছর আগের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যকার পার্থক্য তো বিশাল। বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের চাঁদপুর সরকারি কলেজের বেশ পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের চেষ্টারও কমতি ছিলো না। আগে এতো ভবনের বিন্যাস ছিলো না। বর্তমানে মূল ভবনের পাশাপাশি ভবন ২-৩, রাজু ভবন ও বর্তমান প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ হয়েছে। গোডাউন হয়েছে। আগে ছাত্রীনিবাস ছিলো না, এখন দুটি ছাত্রীনিবাস আছে। আগে কলেজ মসজিদ ছিলো টিনশেড, বর্তমানে পাঁচতলাবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মাঠ সংস্কারের কাজ চলছে। পুরাতন বাস্কেট গ্রাউন্ড ভেঙ্গে তদস্থলে সম্পূর্ণ নূতনভাবে করা হয়েছে। স্মারক স্তম্ভ ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ করা হয়েছে। চাঁদপুর জেলার প্রথম শহিদ মিনার স্থাপন করা হয় এই কলেজে। সে শহিদ মিনারটি সম্পূর্ণ অক্ষুণ্ন রেখে নতুন শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। আগে কলেজের ভেতরে রাস্তা ছিলো না, বর্তমানে চতুর্দিকে দৃষ্টিনন্দন রাস্তা করা হয়েছে। কলেজের পুকুরের গাইডওয়াল করা হচ্ছে। গাছপালা একেবারে ছিলো না বললেই চলে, বর্তমানে সারি সারি গাছ রোপণ করা হয়েছে। তৎকালে চাঁদপুর কলেজ মাঠ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত অবস্থায় ছিলো। কলেজের চতুর্দিকে নিরাপত্তাবেষ্টনী অর্থাৎ দেয়াল ছিলো না। তৎকালীন চাঁদপুর কলেজের প্রধান ফটক দুর্বল ছিলো। আমরা সে সময় পশ্চিম দিকের ফটক ব্যবহার করতাম, এটিই ছিলো মূল ফটক। পূর্বদিকের ফটক খুব বেশি ব্যবহৃত হতো না। বর্তমানে পূর্বদিকের ফটকটি ভেঙ্গে দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। কলেজের অন্যান্য সম্পদণ্ডস্থাপনাও আগে বেদখল ছিলো। আমাদের শের-ই-বাংলা হোস্টেল, প্রফেসরপাড়াস্থ ছাত্রীনিবাস ছিলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত। কলেজের সম্পত্তি বেদখল থাকায় আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি ছিলো হাতছাড়া। কিন্তু বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ২০০৯ সালে চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনে নির্বাচিত হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান পদে অধিষ্ঠিত হয়ে আমাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে দেন। এজন্যে আমরা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। তিনি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের সমমানে আমাদের কলেজকে উন্নীত করেন। ফলে ক্রমান্বয়ে কলেজটি উন্নত হতে থাকে। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির ডিও-লেটারে কলেজের সামগ্রিক উন্নয়নের কাজ গতিশীলতা লাভ করে।

ছাত্রজীবনে বহু স্মরণীয় ঘটনা রয়েছে আমার। চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করা ছিলো আমার জন্যে বিশাল স্বপ্নের বিষয়। কেননা এ কলেজে পড়ার স্বপ্ন আমি মনের গহীনে লালন করতাম। ১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারিনি। স্বপ্ন দেখতাম, স্কলারশীপ নিয়ে দেশের বাইরে পড়াশোনা করার। সে সময় মস্কো ইউনিভার্সিটি প্রতি বছর স্কলারশীপ দিতো। চাঁদপুরের অনেকেই সে স্কলারশীপে সুযোগ পেয়েছে। মস্কো ইউনিভার্সিটিতে পড়ার স্বপ্ন ছিলো, সেজন্যে আমি প্রচুর পড়াশোনা করেছি। কিন্তু যতোটুকু ফলাফল অর্জন করলে সেখানে সুযোগ পাওয়া যায় তা আমি অর্জন করতে পারিনি। সেজন্যে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে একবছর বিরতি দিয়ে ১৯৮৫ সালে পুনরায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিই। তাতেও ব্যর্থ হই।

শিক্ষকতা জীবনের মধুর স্মৃতি রয়েছে। মনে আছে, চাঁদপুর সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানকালে প্রথমে কিছুদিন অস্বস্তি হতো। কেননা শ্রদ্ধেয় যেই স্যারদের কাছ থেকে আমি শিক্ষাগ্রহণ করেছি, আজ সেই শিক্ষকদের সাথে সহকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। পরে অবশ্য সব ঠিক হয়ে যায়। আমি যেহেতু এ কলেজেরই শিক্ষার্থী ছিলাম, সেজন্যে আমার সব শিক্ষক ও অন্য কর্মচারীদের যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করতাম। এখনো সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ফলাফলসহ সার্বিক দিকে বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি কলেজ খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি ও সহপাঠক্রমিকে এ কলেজ চমৎকার অবস্থানে রয়েছে। আমরা যদি চাঁদপুর সরকারি কলেজকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কলেজে রূপান্তর করতে চাই, তাহলে এ অবস্থানকে ধরে রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। আর এটাই এখন আমাদের স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এ স্বপ্নপূরণ খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। এজন্যে প্রয়োজন সুনির্দিষ্টভাবে কাজ তথা দায়িত্ব পালন। চাঁদপুর সরকারি কলেজ হবে সবার জন্যে উন্মুক্ত। যে যেই বিষয়ে ভালো সে সেই বিষয়ে এখানে পড়াশোনা করবে।

প্রফেসর অসিত বরণ দাশ : প্রাক্তন শিক্ষার্থী, এইচএসসি (বিজ্ঞান বিভাগ), শিক্ষাবর্ষ : ১৯৮২-৮৩;

অধ্যক্ষ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়