বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

অকৃতকার্যদের গল্পও উঠে আসুক
মাহফুজুর রহমান মানিক

পরীক্ষা নামক ছদ্মযুদ্ধে সব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয় না। ফল প্রকাশ হলে সব অভিভাবক মিষ্টির দোকানে হাজির হন না। মিষ্টি বিতরণের উৎসবেও সবাই যোগ দেয় না। সবার হাসিমাখা ছবি সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে দেখা যায় না। যাদের পরীক্ষার ফলের খবর আশপাশে জানানোর নানা আয়োজন থাকে, তারা নিশ্চয় সৌভাগ্যবান। এদের বাইরেও একটি অংশ থাকে; কেতাবি ভাষায় তারা ফেল বা অকৃতকার্য। তারাও নিশ্চয় সাধ্যমতো চেষ্টা করে। তারপরও ফল বিপর্যয় ঘটে। বিপর্যয়ের পেছনের সেই গল্প আমরা জানতেও পারি না। মোটা দাগে কিছু ধারণা করা যায়।

এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মাথায় ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এর একটি কারণ হতে পারে। কয়েক বছর ধরেই নিয়মটি কার্যকরভাবে মানা হচ্ছে। ফলে দুই মাসের মাথায়ই ফল হাতে পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যা হোক, এ বছর ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ২০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ লাখ পাস করা মানে ৪ লাখই অকৃতকার্য। স্বাভাবিকভাবেই এখন পাস করাদের নিয়েই মাতামাতি হবে। এসএসসির পর তারা কোথায় ভর্তি হবে, কোন কলেজে কত আসন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হবে। এর বিপরীতে প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী কেন পাস করতে পারল না, তাদের আলোচনাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয় কি?

এসএসসি ও সমমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষায় প্রত্যাশা থাকে- সবাই পাস করুক। বাস্তবতা হলো, সবাই পাস করে না। এসএসসিতে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল ২০২১ সালে। করোনার কারণে তিন বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীরা সহজেই পাস করেছিল। কয়েক বছরের করোনার ধাক্কা পেরিয়ে এবারের এসএসসির ফল আমরা স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে পারি। কারণ এবার সব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা হয়েছে। সে জন্য অন্তত দুই বছরের তুলনায় পাসের হার কিছুটা কমেছে। তাও স্বস্তিদায়ক, ৮০ শতাংশের ওপরে পাস করেছে।

যারা অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের কেউ কেউ হয়তো কঠিন বিষয়ে পাস করতে পারেনি। আবার কারও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকতে পারে। একই সঙ্গে চলমান সামাজিক বাস্তবতার প্রভাব থাকাও অস্বাভাবিক নয়। আমরা জানি, করোনার কঠিন সময়ে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী কাজে যোগ দিয়ে আর শ্রেণিকক্ষে আসেনি। করোনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে অনেক পরিবারই সংকটে। সচ্ছল পরিবারগুলো যেভাবে তাদের সন্তানদের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে, অসচ্ছল পরিবারের সেই সুযোগ থাকে না। ফলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য বের করলে হয়তো দেখা যাবে, তাদের অধিকাংশ অসচ্ছল পরিবারের।

এটা সত্য, সংগ্রাম করেও অনেক শিক্ষার্থী ভালো ফল করে। তাদের গল্প ‘অদম্য মেধাবী’ হিসেবে সাংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। কিন্তু ব্যতিক্রম বাদে আমাদের অসচ্ছল পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাদীক্ষা নিশ্চিতে সে ধরনের রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পেলেও মাধ্যমিকে ছেলেদের জন্য সে ব্যবস্থা নেই। সামাজিকভাবে অনেক সময় পরীক্ষার ফি জোগাড় করে দেওয়া হয়। কিন্তু দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক সহায়তার জোরালো উদ্যোগ নেই। আগে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় ছিল বলে সেটা দেখা যেত। এমনকি অনেক শিক্ষকের বিনামূল্যে ব্যক্তিগতভাবে পড়ানোর বিষয়টিও বিভিন্ন সময় শোনা যেত। অর্থের পেছনে ছোটা বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় এ ধরনের শিক্ষক কতজন আছেন?

শিক্ষার্থীরা কেন অকৃতকার্য হয়? প্রতি বছর এ রকম কিছু গল্প সামনে এলে তা অন্যদের জন্য প্রেরণার মতো কাজ করতে পারে। অনেকের অসুস্থতা থাকতে পারে। অনেকের পারিবারিক সংকট থাকতে পারে। অনেকে হঠাৎ দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। তাদের গল্পগুলো যদি প্রতিষ্ঠান হয়ে সংবাদমাধ্যমে আসে তাতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী উপকৃত হতে পারে। এমনকি এমন গল্পও আসতে পারে, যে প্রথম বছর অকৃতকার্য হয়েছে কিন্তু পরের বার পরীক্ষা দিয়ে ভালো করেছে। কীভাবে সে উঠে দাঁড়াল– তা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের তথ্য যদি যথাযথভাবে সংগ্রহ করা না হয়, তারা যদি হারিয়ে যায়, তবে শিক্ষা থেকে তারা ছিটকে পড়বে। অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যায়। এটাও সামাজিক বাস্তবতা। অকৃতকার্য হওয়া এমন সবার তথ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে থাকলে শিক্ষকসহ সবার সহায়তায় তারা ফিরে আসতে পারে।

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব যেখানে প্রধান, সেখানে বিস্ময়করভাবে আমরা দেখে আসছি, প্রতি বছর এমন কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম আসে যাদের একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারে না। এ বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৭১৪টি। এর মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। এটা স্বস্তির যে, গত বছরের চেয়ে এ বছর ২টি প্রতিষ্ঠান কমেছে। তার মানে, শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য হওয়ার কারণ যেমন বের করতে হবে তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে এমন পাসশূন্য হতে পারে, তাদের নিয়েও কাজ করা চাই।

এ বছর আরেকটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার কাহালুতে। সেখানে ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর যোগ না হওয়ায় ২৩ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। স্পষ্টতই সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বশীলদের গাফিলতি রয়েছে। এমন দুঃখজনক বাস্তবতার দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি।

অকৃতকার্য হওয়ার অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীর জন্য বেদনাদায়ক বাস্তবতা। হঠাৎ এটি মেনে নেওয়া কঠিন। অনেক সময় শিক্ষার্থী নিজে তো বটেই, মা-বাবা এমনকি আত্মীয়স্বজনও মেনে নিতে পারেন না। সে জন্য এবার এসএসসির ফল প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিজেও অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি মা-বাবার উদ্দেশে বলেছেন, সন্তানদের বকাবকি করা যাবে না। তিনি সাহস দিয়ে বলেছেন, ফেল করা শিক্ষার্থীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আগামীতে ভালোর জন্য চেষ্টার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। কবি বলেছেন– একবার না পারিলে দেখ শতবার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়