প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩, ০০:০০
২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর ছিলো আমার অনার্স জীবনের প্রথম দিন। ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় আমার ফোনে একটি কল আসে এবং আমাকে বলা হলো আগামীকাল আপনাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান হবে, সকাল ৯টায় বিভাগে উপস্থিত থাকবেন। সে রাতে আমার ঘুম হয়নি। একটু পর পর শুধু চিন্তা হতো কালকে আমার কলেজে প্রথম দিন। জানি না কেমন হবে। কালকে কলেজে প্রথম দিন কীভাবে কলেজ যাবো, একটু তো ভালোভাবে কলেজ যেতে হবে। মনের ভেতর এক অন্যরকম অনুভূতি ছিলো। সকালে রেডি হয়ে কলেজ গেলাম। ক্লাসরুমে ঢুকতেই দেখলাম খুব সুন্দর করে রুমটি সাজানো। সত্যি এতো সুন্দর করে সাজানো দেখে খুব ভালো লাগলো। আস্তে আস্তে সবাই আসলো। স্যার, ম্যাডাম আসলেন। বিভাগের বড় আপু ও ভাইয়ারা আসলেন। নবীনবরণ অনুষ্ঠান শুরু হলো। আমাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করা হলো। কলেজ প্রিন্সিপাল স্যার এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যান স্যার তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য রাখলেন। অবশ্যই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তা শিক্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো। সেখানে উপস্থিত আরও স্যার-ম্যাডাম ছিলেন। বিভাগের বড় ভাই ও আপুরা তাদের কিছু মূল্যবান কথা বললেন আমাদের উদ্দেশ্য। নতুন শিক্ষকদের সাথে পরিচয় হলাম, নতুন সহপাঠীদের সাথে পরিচয় হলাম এবং মিজান ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলাম। সবার পরিচয় ও আলোচনা শেষে শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তখন আমি একটি গান গাই এবং আরও অনেকে গান, নাচ করে। সব কিছু মিলিয়ে সত্যি কলেজের প্রথম দিনটি খুবই সুন্দর এবং স্মরণীয় ছিলো।
পরে আমাদের ক্লাস করা শুরু। প্রতিটি ক্লাসেই স্যার, ম্যাডামরা বইয়ের পড়ার পাশাপাশি জীবনের জন্য কিছু শিক্ষণীয় কথা বলতেন। যা আামাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আমরা সমাজকর্মের ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে সমাজসেবা, সামাজিক উন্নয়ন, সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জ্ঞানদান করতেন। প্রতিটি ক্লাসই খুবই ভালো লাগতো। তবে ফাতেমা ম্যাডাম ক্লাসে মাঝে মাঝে রাগের মধ্যেও খুব সুন্দর হাসি দিতেন। মেমের হাসিটা বড়ই ভালো লাগতো। হাসিটি ছিলো ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। বাড়ি দূরে হওয়ায় মাঝে মাঝে ক্লাস মিস হতো, তখন খুব খারাপ লাগতো। সহপাঠীদের ফোন দিতাম আজকে ক্লাসে কী পড়িয়েছে, কী বললো, স্যার-ম্যাডাম। কলেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করি আমি। বিভাগীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভাগের সকল ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত থাকতো। সকলের এই উপস্থিতি মিলিয়ে আমরা হতাম একদল সমাজকর্ম পরিবার। এভাবে আমার কলেজ জীবনের অধ্যায়টি চলতে থাকলো।
২০২০ সালে করোনাভাইরাসের জন্য কলেজ জীবনের অনেকগুলো দিন সময় নষ্ট হয়ে যায়। তখন স্যার-ম্যাডামদের ক্লাস করানো ও সহপাঠীদের খুব মিস করতাম। খুবই খারাপ সময় ছিলো তখন। বড় আশায় থাকতাম, আবার কবে কলেজ যাবো। সহপাঠীদের সাথে কলেজ মাঠে আবার কবে আড্ডা দিবো, কবে স্যার, ম্যাডামদের ভালো লাগার ক্লাসগুলো ফিরে পাবো। প্রায় ২ বছরের কাছাকাছি সময় কলেজ খুলে। আবার কলেজ যাওয়া শুরু করলাম। তখন মনে হতো জীবন থেকে মাঝখানের এই সময়গুলোতে ছাত্র-জীবনের অনেক কিছু হারিয়ে ফেললাম। আবার আস্তে আস্তে কলেজের সকল কার্যক্রম আগের মতো হতে লাগলো। এভাবে চলে আসলাম অনার্স জীবনের শেষ অধ্যায়ে।
অনার্স জীবনের এই ছয়টি বছর স্যার-ম্যাডামদের শাসন, আদর, স্নেহ, ভালোবাসা এবং জীবনের জন্য তাদের মূল্যবান উপদেশগুলো মিস করবো। মিস করবো আমাদের প্রিয় মিজান ভাইকে, যাকে কলেজের যে কোনো কাজে আমরা পাশে পেয়েছি। কখনোই আমাদের উপর মিজান ভাই রাগ করেননি। মিস করবো আমার প্রিয় সহপাঠীদের। তাদের সাথে কাটানো সেই কলেজ মাঠের আড্ডা, এক সাথে কলেজ লাইব্রেরিতে বই পড়া এবং মিস করবো কলেজের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া। এই সব কিছুই জীবনের একটি সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে। কলেজ জীবনের এই শেষ সময়ে বলতে চাই, সমাজকর্মে পড়ে অবশ্যই আমি একজন সমাজকর্মী। আর তাই সমাজকর্মে পড়া সকল ছাত্র-ছাত্রীর উচিত নিজেকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে উদ্যোগী করে তোলা। এই ছিলো আমার ৬ বছরের অনার্স জীবনের একটি অধ্যায়। হয়তো এখানে আরও অনেক কথা স্মৃতি উল্লেখ করতে পারিনি।
ফাতেমা আক্তার : সমাজকর্ম বিভাগ, সেশন : ২০১৭-১৮, চাঁদপুর সরকারি কলেজ।
* লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]