বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৩, ০০:০০

জ্ঞানের পরিপক্কতার অপর নাম ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
অনলাইন ডেস্ক

প্রশিক্ষণ মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি এবং বিবেককে আলোকিত করে। ব্র্যাকের পেইস প্রোগ্রামের আওতায় ২০১৩ সালে বিএলসি বাঁশেরহাট দিনাজপুরে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রশিক্ষণে নিঃসন্দেহে (৫+৫) ১০ দিন ছিলো আমার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট। তাদের সকল প্রশিক্ষণ অবশ্যই কোয়ালিটিতে সেরা। এজন্যে তাদের ট্র্রেনিং ম্যানুয়াল, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, টিপস, কৌশল, কিছু অনন্য অসাধারণ উদাহরণ নোট করে সযত্নে রেখেছি। প্রশিক্ষণে ‘মারিয়ার কাহিনী’ টপিকটি ছিল ভিন্নধর্মী বিষয়। আজকের আমাদের সমাজে কিছু কিছু সামাজিক, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, ধর্মীয় বড়-ছোট বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলে। ভিন্নমতকে আমরা পুরোপুরি মেনে না নিলেও অশ্রদ্ধা করবো না। ছোট্ট একটা কাহিনীর মাধ্যমে তা তুলে ধরছি।

এই লিখাটি ম্যাচিউরডদের জন্যে। আপনাদের সাথে আমার ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কেন আমি একটু খোলামেলা লিখলাম। মারিয়া নামে ২০ বছরের এক সুন্দরী মেয়ে ছিল। সে ছিল খুব গরীব। সে যে গ্রামে বাস করতো তার পাশেই ছিলো এক বড় নদী। নদীর অপর প্রান্তে জন নামে এক যুবক বাস করতো, যাকে মারিয়া গভীরভাবে ভালবাসতো। সেই নদীটি ছিল প্রশস্ত, খরস্রোতা এবং সেখানে কুমিরও থাকতো। একদিন মারিয়া শুনলো, জন খুবই অসুস্থ এবং যে কোনো সময় মারা যেতে পারে। এই কথা শুনে মারিয়া খুবই বিচলিত ও আতঙ্কিত হলো। কেননা সে জনকে গভীরভাবে ভালবাসতো। তৎক্ষণাৎ মারিয়া চিন্তা করলো জনের কাছে যেভাবেই হোক সে যাবে। কারণ জন যেভাবে অসুস্থ তাতে যে কোনো সময়ই সে মারা যাবে। মারিয়া জনকে দেখার জন্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে নদীর ধারে ফেরীঘাটে গেলো। ঘাটের ফেরিটি চালাতো মাইকেল। মারিয়া যখন ফেরি পারাপার হতে চাইলো তখন মাইকেল জানালো পার হতে হলে তাকে ২০০ টাকা দিতে হবে। তখন মারিয়া বললো, তার নিকট এখন ২০০ টাকা নেই, তবে পরে যেভাবেই হোক এই টাকা সে মাইকেলকে পরিশোধ করবে। মাইকেল এতে তাকে নদী পার করতে রাজি হলো না। মারিয়া তখন মাইকেলকে খুব অনুরোধ করলো নদী পার করে দেয়ার জন্যে। কেননা জন ভীষণ অসুস্থ এবং হয়তো মারা যেতে পারে। মাইকেল পুনরায় তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলো এবং বললো, আমি তোমাকে এক শর্তে নদী পার করতে পারি, তা হলো আমার ইচ্ছা পূরণে (কুণ্ডপ্রস্তাব) তোমাকে রাজি হতে হবে। মারিয়া এটা শুনে হতভম্ব ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং তার গ্রামে ফিরে যেতে হবে চিন্তা করে সে এখন কী করবে? পথিমধ্যে তার চাচাত ভাই জ্যাকির সাথে দেখা হলো এবং তাকে সব ঘটনা খুলে বলে। জ্যাকি মারিয়ার কথা শুনে বলে, এতে আমার কিছু করার নেই। এটি তোমার সমস্যা, আমাকে এর মধ্যে জড়িয়ো না। আমার এতে কিছু করার নেই বলে জ্যাকি তার গন্তব্যের দিকে চলে যায়। মারিয়া এখন কী করবে তা কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। সে মাইকেলের কুণ্ডপ্রস্তাব মানসিকভাবে ঘৃণা করে, কিন্তু জনকে সে গভীরভাবে ভালবাসে এবং চিন্তা করে, বিলম্ব হলে হয়ত জনকে আর দেখতে পাবে না। যে কোনো ভাবে হোক তাকে নদী পার হতে হবে এবং শেষে মাইকেলের কাছে ফিরে গিয়ে তার কুণ্ডপ্রস্তাবে রাজি হলো। অতঃপর সে নদী পার হলো ও অস্থিরভাবে জনের বাড়িতে পৌঁছালো। মারিয়া জনকে সেবা শুশ্রƒষা করতে লাগলো এবং শীঘ্রই জনের বিপদ কেটে গেল, কিছুটা সুস্থ হয়ে ঊঠলো। পরবর্তীতে একদিন জন মারিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো কীভাবে সে নদী পার হলো এবং টাকাটা বা কোথায় পেলো। তখন মারিয়া সম্পূর্ণ ঘটনাই জনকে খুলে বললো। ঘটনা শুনে জন খুবই রাগান্বিত ও উত্তেজিত হয়ে উঠলো। সে চিৎকার করে উঠলো এবং মাইকেলের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্যে মারিয়াকে তিরস্কার করতে লাগলো। এক পর্যায়ে সে মারিয়াকে বললো, আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয় এবং এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও। মারিয়া ভীষণ মনঃকষ্ট নিয়ে ফেরি ঘাটে এলো, পথিমধ্যে প্রতিবেশী পিটারের সঙ্গে দেখা হয়। যা যা ঘটেছিল পিটারকে তার সবই বললো। পিটার এসব শুনে খুবই রেগে গেলো এবং তার মনে প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠলো। সে উত্তেজিত হয়ে জনের বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ জনকে বিছানা থেকে নামিয়ে মারধর শুরু করলো।

গল্পটি পাঠশেষে শুরু হলো বিতর্ক। পাঁচটি চরিত্র (মারিয়া, জন, মাইকেল, জ্যাকি এবং পিটার)কে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সবাই নিজ নিজ যুক্তি পেশ করলো। কেউ কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না, সবাই নিজ নিজ সিদ্ধান্তে অনড় এবং অটল। আপনি একবার ভাবুনতো, এ ধরনের লোক আমাদের সমাজে কি নেই, আছে। কেউ বিপদে এগিয়ে আসে, কেউ চুপচাপ থাকে, কেউ এড়িয়ে চলে, কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ে, কেউ ধান্ধাবাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। বিভিন্ন মনোভাব, চিন্তার ধরণ বা মানসিকতাকেই দৃষ্টিভঙ্গি বলে। একটা বিষয়কে কে কিভাবে দেখছে, ভাবছে, নিচ্ছে সেটাই হলো দৃষ্টিভঙ্গি। সব মানুষের মনোজাগতিক নীতি আদর্শ এক নয়। তাই সে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করে। মস্তিষ্ক নামক হার্ডওয়্যার আর মন নামক সফটওয়ার ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় আমরা এক হতে পারছি না। অন্যের মত এবং আমার মতামত এক নাও হতে পারে, এজন্য কাউকে বন্ধু মনে না করলেও শত্রু ভাববো না। পরিপক্ক মানুষের এটাই করা উচিত।

লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট, ০১৭১৭-৯৭৭৬৩৪, [email protected]

সদস্য, দিনাজপুর কলামিস্ট এসেসিয়েশন, দিনাজপুর। ০১৮১৮-২৩০৯৭০

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়