প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
‘সংগঠনে যেতে হলে তোমাকে ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করতে হবে না শুধু তোমার অভ্যাস পরিবর্তন করো, বিনয়ী হও’। জীবন মানে কিছু কাজ করার মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকা যেখানে নিজের অস্তিত্ব না থাকলেও, থেকে যাবে নামটা। আমি আমার সাংগঠনিক জীবন থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সংগঠনের সাথে কাজ করতে যেয়ে আমার ধৈর্য্য বেড়েছে, আমার মনের কোণায় জমে থাকা অহঙ্কার মিশে গেছে মাটিতে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি নামক যে মানুষটা ক্লাসে দাঁড়িয়ে কথা বলতেও লজ্জা পেতাম, সবার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হবে ভাবলেও লজ্জা আর ভয়ে বিমূঢ় হয়ে যেতাম, সেই আমি এখন হলভর্তি হাজারখানেক মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতেও ভয় হয় না বরং নিজের প্রতি কনফিডেন্স বেড়ে যায়।
আমাদের সমাজে ৯০ শতাংশ মানুষই মানতে চায় না মেয়েরা সংগঠন করবে। অনেক মানুষ মনে করে যে মেয়েরা সংগঠন করে তারা ভালো মেয়ে হতে পারে না, কারণ কখনও কখনও রাত-বিরাতে তাদের বাড়ি ফিরতে হয়, সব থেকে বড় ব্যাপার হলো কোনো মেয়ে বা ছেলে যদি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের হয়ে থাকে তাদের তো সাংগঠনিক হিসেবে সমাজের মানুষ স্বীকার করতেই কার্পণ্যবোধ করে, কারণ তাদের বক্তব্য তখন ‘নিজের ঘরে খাবার নেই তারা যায় অন্যের খাবার জোগাড় করতে’। আসলে সংগঠন করলে এমনটাই হয় নিজে খাবার না খেয়েও অন্যের জন্য খাবারের চিন্তাটা মাথায় কাজ করে। আর তখন এই চিন্তাটা করতেও ভালো লাগে, অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। অন্যকে নিয়ে ভাবতে না চাইলেও ভাবনাটা চলে আসে। আর এটা শুধু সংগঠনের কারনেই সম্ভব হয়।
সংগঠনের মানেটা যখন থেকে বুঝতাম তখন থেকেই ইচ্ছে ছিলো আমিও একদিন সংগঠন করবো। আর আমি আমার সেই ইচ্ছে পূরণ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। সাংগঠনিক জীবনে কখনও কখনও নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগটাও আসে তখন সেটাকে সঠিকভাবেই ব্যবহার করতে জানতে হবে। কারণ ‘নেতৃত্ব কোনো টাইটেল বা পদ নয়, নেতৃত্ব হলো একজন মানুষের অন্যদের প্রভাবিত এবং অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা’।
সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনকারীদের মনে সাধারণত হিংসা-বিদ্বেষ, অহঙ্কার কাজ করে না। কারণ তারা হয় বিনয়ী। আমি আমার এ শিক্ষাগুলো আমার সংগঠনগুলো থেকেই পেয়েছি। আমার তারুণ্যের অগ্রদূত থেকে আমি আমার ধৈর্য্য বাড়াতে শিখেছি। শিখেছি কীভাবে একসাথে অনেকগুলো মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে হয় সেটা। নিজের কঠিন বিপদেও কীভাবে হাসিমুখে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয় সেটা শিখেছি আলহামদুলিল্লাহ। ‘বিডি ক্লিন’-এ সংগঠন থেকে আমি আমার দেশকে, আমার চারপাশকে আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে শিখেছি, শিখেছি নিজেকে বিনয়ী করতে। আমার মনে-প্রাণে ধারণ করেছি, ‘এই দেশ আমার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও আমার’। তাই আমি সবসময় বলি ‘পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার নিজের থেকে’।
সর্বশেষ বলবো, ক্যারিয়ার এইড চাঁদপুর আমার আরেকটা ভালোবাসার সংগঠনের কথা, আমার কথা বলার স্কিল ডেভেলপমেন্ট করা, কথা বলার জড়তা দূর করা, ভবিষ্যৎ জীবনে ক্যারিয়ার গঠনের সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার সাহসিকতা অর্জন করা, এ ধরনের সবগুলো কাজ আমি ক্যারিয়ার এইড চাঁদপুর থেকে শিখেছি। সব সংগঠন থেকে সব থেকে বড় পাওয়া যেটা, সেটা হলো পরিবারের পরে আরো অনেকগুলো পরিবার পেয়েছি। তাই আমি বলবো, সংগঠন একটা ভালোবাসার জায়গা। এখানে আসলে জীবনের কিছু পরম অনুভূতি অনুভব করা যায়। আর এতে নিজেকে সুখি মনে হয়। এ সুখ অনির্বচনীয় এবং অনিন্দ্য।
জান্নাতুল ফেরদৌস ত্বন্নী : অনার্স ২য় বর্ষ, দর্শন বিভাগ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর।