মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থা
অনলাইন ডেস্ক

২৫ আগস্ট ২০২২ সকাল দশটা, আমার ছুটা বুয়া হালিমা ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই বলে, ‘খালা যার যায় সেই বুঝে সে কী হারালো। মুহূর্তে মেয়েটা নাই হয়ে গেলো’। ওর কথা শুনেই বুঝতে পারি গতকালের ঘটনার কথা বলছে। ঢাকা শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত নামকরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর ২২ আগস্ট ২০২২ মঙ্গলবার আত্মহত্যা করেছে। নিজেদের বসবাস করা বাসস্থানের ১২ তলা ভবনের ছাদ থেকে সে লাফিয়ে পড়ে। ছাদে উঠার পর লাফ দেয়ার আগে ওকে অনেকেই দেখে, সবাই নিষেধ করে। কিন্তু সে এক পর্যায়ে ঠিক লাফ দেয়৷

একটু পিছনে যাই, সময়টা ২০০২ সাল। আমার বড় সন্তানকে নিয়ে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাই প্রথম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষা বলতে উনারা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে সাক্ষাৎ করে একটা ফরম দেন। ফরম পূরণ করে জমা দেয়া হয়। পরে লটারির মাধ্যমে যারা ভর্তির সুযোগ পায় তাদের ভর্তি করায়। যদিও এই লটারি সিস্টেমকে ব্যক্তিগতভাবে আমি মোটেই বিশ্বাস করি না। লটারি হলে সেটা পাবলিকের সামনেই হবে। বলে রাখা ভালো সব শিক্ষার্থীদেরকে উনারা ফর্ম দেন না। সাক্ষাতে যে মৌখিক জিজ্ঞাসা হয় তার উপরে নির্ভর করে, শারীরিক পরীক্ষা নিয়ে তারপর যাদেরকে উনাদের নিয়মে পাস বলা চলে তাদেরকে ফর্ম দেন। যথারীতি আমি আর আমার হাসবেন্ড মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত। মেয়েকে কয়েকটা প্রশ্ন করে, সে জবাব দেয়। মেয়ে একটা মিশনারী স্কুলে প্লে ক্লাস পড়ে। কিন্ডারগার্টেনে ওকে নার্সারি ক্লাসে ভর্তি করাতে নিলে তারা বলে, ও তো নার্সারির সব পড়াই পারে, ওকে কেজি ক্লাসে দিন। আমরা তাই করি। তার মানে বয়স ও ক্লাস অনুপাতে সে ২০০৩ সালে ক্লাস ওয়ানে পড়ার কথা। নার্সারি ক্লাস না পড়ার কারণে তাকে ২০০২ সালেই প্রথম শ্রেণীর ভর্তিযুদ্ধে নামতে হয়।

ভর্তি সাক্ষাৎকারে সে মৌখিক সবই পারে। উনাদের নিয়ম অনুয়ায়ী দাঁত দেখা হয়, মেয়ের দাঁত তখনও পড়েনি। মাথার উপর দিয়ে কান ধরতে বলে, সে সেটাও পারে। যিনি সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন তিনি বারবার মেয়ের পা থেকে মাথা দেখছেন। মেয়েকে নিয়ে পাশের রুমে গেলেন, পাশের রুমের উনিও মেয়ের পা থেকে মাথা দেখেন। এই দেখার কারণ হল মেয়ের লম্বাটা। অনেক ভেবে তিনি ফর্ম দিলেন। ফার্ম হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আমি উনাকে বললাম, যতবার মেয়ের পা থেকে মাথা দেখেছেন তার মাঝে একবার যদি অর্জিনাল চোখ দিয়ে আমাদের দিকে তাকাতেন, বুঝতেন ও কোন পরিবারের সন্তান। ঘটনা খুলে বলি, আমি লম্বায় পাঁচ ফিট সাড়ে ছয় ইঞ্চি, আর আমার হাজবেন্ড লম্বায় পাঁচ ফিট সাড়ে আট ইঞ্চি। আমাদের সন্তান কি দুইফিট হবে? (সব আল্লাহর দান)।

আমার সন্তান ভর্তির সুযোগ পায়নি, আমার কোন আফসোসও নেই। এই ঢাকা শহরের আরেকটা নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন আমার ননাসের স্বামী। অনেকে আমাকে বলেছে আমার মেয়ের জন্যে উনাকে বলতাম উনি যেন সেই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেন। আমি তা করিনি, আমি সন সময় মেয়েদের বলেছি নিজের যোগ্যতায় যেখানে ভর্তির সুযোগ পাবে সেখানেই পড়বে। বরং আমি অন্যদের বাচ্চাদের জন্যে সুপারিশ করি, স্কুল কলেজে অনেক বাচ্চাকে সুপারিশ করে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু নিজের সন্তানের জন্যে কারো কাছে যাইনি।

ষষ্ঠ শ্রেণীতে সবাই আবার ভর্তিযুদ্ধে নামে কিন্তু আমি নামিনি। একইভাবে ছোট মেয়ের ক্ষেত্রে আমি আর ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানের গেইটেও যাইনি। আমার একটাই কথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবদান অনেক কিন্তু আসল হল শিক্ষার্থী আর ওর মেধা। একই বোর্ডে একই প্রশ্নপত্রে সব শিক্ষার্থীই বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে। তবে কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অন্যরকম হবে?

বড় মেয়ে যখন ৮ম শ্রেণীতে, তখন একজন ইংরেজি শিক্ষকের কাছে যাই ওকে প্রাইভেট পড়াতে। স্যার জানান এই ব্যাচ পুরোটা তথাকথিত নামকরা স্কুলের। ও একা ওদের সাথে...। আমি বললাম, স্যার আমি মেয়েকে ৮ম শ্রেণী উপযোগী শিক্ষা দিতে এনেছি, ওরাও ৮ম শ্রেণীর সমস্যা হবে না। তবে যখন ওদের রচনা বা প্যারাগ্রাফ লিখতে দিবেন ওকে ওর সিলেবাস থেকে দিবেন। স্যার শুনে খুবই খুশি হলেন। মেয়েকে পড়তে দিয়ে আমি বাইরে বসে বসে পত্রিকার লেখা লিখতাম। ওই তথাকথিত প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকরা যখন শুনতেন আমি অন্য স্কুলের উনারা আমার দিকে চিড়িয়াখানার জন্তু দেখার মত তাকাতেন। আমি পাত্তাই দিতাম না।

সব প্রাইভেট বা কোচিংয়ের শিক্ষক এক নয়। আপনাদের উচিৎ সব শিক্ষার্থীদের সাথে একই আচরণ করা। আপনারা ক্লাসে নামকরা প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দেন, আপনারা কি জানেন না এই শিক্ষার্থীদের কে বা কারা তৈরি করেছে? দেশের বা শহরের প্রতিটা প্রাথমিক বিদ্যালয় ওদের তৈরি করে। এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে সে সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভালো ফলাফল দেখিয়ে তাহারা নামকরা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পায় আর আপনারা অন্য শিক্ষার্থীদের সামনে তাচ্ছিল্য ভাষায় কথা বলেন৷ যে কোন প্রাইভেট বা কোচিংয়ের শিক্ষক বলতে পারেন কোন যুক্তিতে আমি এসব বললাম। মনে রাখবেন আমি প্রমাণ ছাড়া কাজ করিনা। নিজের পেশাগত কারণে হোক আর একজন অভিভাবক হিসাবে হোক আমি প্রায় প্রায় কোচিং সেন্টারের সামনে বা ক্লাসের পাশে সামনে বসে থাকি।

অমন নামকরা প্রতিষ্ঠান হোক বা প্রাইভেট বা কোচিংয়ের শিক্ষক হোক না কেন। শতজনের প্রশ্নের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে আমি প্রস্তুত। কারণ সত্যের জোর হল আসল জোর। নামকরা (ছেলেদের) এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাংলার স্যারের কাছে আমার মেয়েসহ ১০ জনের একটা ব্যাচ নিয়ে পড়াতে যাই। ওরা সবাই একই স্কুলের। স্যারের সাথে আমাদের সময় মিলেনা বলে রাত নয়টা থেকে দশটা উনার বাসায় পড়াতে যাই আমরা। স্যারকে শুধু বলেছিলাম, স্যার ওদেরকে আপনি ব্যায়করণ টা বুঝিয়ে দিন। গতানুগতিক পড়া লাগবে না। স্যার তাই করেন। স্যারের কাছে পড়ে আমার মেয়ে বলেছিল, মা স্যারের তো বয়স হয়েছে। উনার রক্তে রক্তে ব্যাকরণ, স্যার চলে গেলে কে এমন করে শিক্ষাবে। স্যারের উচিৎ উনার উত্তরাধিকার কাউকে তৈরি করে দিয়ে যাওয়া। শিক্ষক বলে কাদের তা বুঝাতেই এই ঘটনা বলা। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়