মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

শিক্ষার মূল লক্ষ্য হোক সামাজিক  ও জাতীয় উন্নয়ন
অনলাইন ডেস্ক

প্রাণিজগতে শুধু মানুষের জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। একমাত্র শিক্ষাই মানুষকে অন্য প্রণিজগৎ থেকে পৃথক করেছে। জীবনকে অর্থবহ করতে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে ‘মানুষের মতো মানুষ’ করে গড়ে তোলার প্রয়োজন পড়ে। এ শিক্ষা যে কোনো জাতি গঠনের মূলভিত্তি। সুশিক্ষা যেমন সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নের চাবিকাঠি, কুশিক্ষা ও অব্যবস্থাপনা তেমনি জাতীয় দুর্দশা, ক্রমাবনতি ও ক্রম-ধ্বংসের চলিকাশক্তি-পারস্পরিক দুষ্টচক্র। প্রকৃত শিক্ষা সামাজিক ও জাতীয় উৎকর্ষ ও উন্নতিকে ত্বরান্বিত করে এবং কালক্রমে পারস্পরিক ক্রমোন্নতির মাধ্যমে জাতিকে শীর্ষে পৌঁছে দেয়। এভাবে শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদ গড়তে পারলে দেশকে ক্রমাগত সুখণ্ডশান্তি, সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ করা সম্ভব। শিক্ষা ও উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক ও পরিপালক। সোমবার (২২ আগস্ট) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

উপ সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, তিনটি বৈশিষ্ট্যের সম্মিলনে শিক্ষা হতে হবে-জীবনকেন্দ্রিক, কর্ম বা পেশাকেন্দ্রিক এবং মানবিক গুণাবলি-জাগানিয়া শিক্ষা। মানুষ কীভাবে জীবন অতিবাহিত করবে, পরিবেশকে বুঝতে শিখবে, জীবনের ভালো-মন্দ চিনতে শিখবে, সমাজে চলতে শিখবে ইত্যাদি জীবনকেন্দ্রিক শিক্ষা। আবার মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে রুজি-রোজগার করে খেতে হয়; কাজ করা লাগে; একটা পেশায় নাম লেখাতে হয়, আকাঙ্ক্ষার বিকাশ ঘটাতে হয়-এজন্য পেশাকেন্দ্রিক শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষা দিয়ে মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলিকে জাগিয়ে তুলতে হয়; নইলে মানুষ আর মানুষ থাকে না-অন্য প্রাণীর পর্যায়ভুক্ত হয়ে যায়, সমাজ ও রাষ্ট্র জঙ্গলে পরিণত হয়। তাই মানবিক গুণের উদ্রেককারী শিক্ষা মানুষের জন্য প্রয়োজন। মানুষের মধ্যে এই তিন বৈশিষ্ট্যের শিক্ষা না থাকলে মানুষ ‘মানুষের মতো মানুষ’ হয় না।

অশিক্ষা ও নিরক্ষরতা এক কথা নয়। শিক্ষিত লোকের মধ্যে যে যে উপাদান থাকা প্রয়োজন-সেগুলোকে শিক্ষার ভিত্তিমূল বলে গণ্য করা যায়। এগুলোকে ‘শিক্ষায় সাত আর’ (Seven Rs in Education) বলতে পারি। এসব উপাদানের ধারক ও বাহক হলে তাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা যায় বা দেশে মানবসম্পদ তৈরি হলো বলে বিবেচনা করা যায়। এগুলোকে এভাবে উল্লেখ করা যায়-

১. পড়া : শিক্ষাসাধক রোমান চার্চের সেন্ট অগাস্টিনের কনফেশনস থেকেই শিক্ষার জন্য যে তিনটি ‘আর’-এর ধারণা (learning to read, and write, and do arithmetic) পাওয়া যায়, তাদের একটা হচ্ছে পড়া। পড়তে পারাকে শিক্ষার প্রথম সোপান হিসাবে ধরা হয়।

২. লেখা : লেখা ভাব প্রকাশের অন্যতম একটা বলিষ্ঠ মাধ্যম। শিক্ষায় লেখা আছে বলে সভ্যতা টিকে আছে।

৩. গণিত : অঙ্কের ধারণা ছাড়া সংখ্যাত্মক হিসাব গণনা অসম্ভব। গণিত ও বিশ্লেষণের বিভিন্ন শাখা ছাড়া বিশ্ব কর্মকাণ্ড অচল। আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও বিশ্লেষণমূলক কাজে গণিত বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই শিক্ষায় গণিত অচ্ছেদ্য।

এ তিনটি যোগ্যতার অস্তিত্ব শিক্ষিত লোকের মধ্যে থাকতেই হয়। কিন্তু আদিকালের এ তিনটি উপাদান দিয়ে বর্তমান যুগের শিক্ষার মাপকাঠি বানালে চলে না। শিক্ষা আরও ব্যাপক একটা বিষয়। এ তিনটি উপাদানের বাইরেও কিছু যোগ্যতা বা গুণাবলি একজন শিক্ষিত লোকের মধ্যে থাকা প্রয়োজন-

৪. ধর্ম : সেই আদিকাল থেকেই মানবজাতিকে এ ভূ-পৃষ্ঠে টিকিয়ে রাখার জন্য ধর্ম মানুষের কাজকর্মে, চিন্তা-চেতনায় সুস্থ মানবিক গুণাবলির বিকাশ সাধন করে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করার সুবিধা দিয়ে আসছে। ধর্ম (ধৃ+মন) মানে মন ‘মূল অনুমান’ (আন্ডারলাইং এজামশন)-এর উপর ভিত্তি করে যে ধারণা (বিশ্বাস) ধারণ করে রাখে। পৃথিবীর এমন কোনো ধর্ম নেই, যার মূলমন্ত্র ও অবস্থান মানবতার বিরুদ্ধে। ধর্ম খারাপ কাজের একটা অন্তর্নিহিত বাধা। ধর্মবিশ্বাস এমনই একটা মনের বিশ্বাস ও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ যে, তা পালনে কোনো আইনের প্রয়োগ লাগে না। শিক্ষায় ধর্মের গুরুত্ব অনস্বীকার্য ও অবিচ্ছেদ্য। নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের মানবতাবোধকে সুশোভিত করে। বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় শিক্ষার পাঠ্যসূচিতে সিএসআর, কোড অব করপোরেট গভর্নেন্স, প্রফেশনালস কোড অব এথিক্স, বিজনেস এথিক্স ইত্যাদি অনেক কোর্স চালু করা হয়েছে। এগুলো ধর্মেরই আংশিক প্রতিস্থাপন। মৌলবাদী হওয়ার ভয়ে মূলকে বাদ দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও আইন ও নিয়ম আকারে ভিন্ন নামে এগুলো চালু করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু মনের ভেতরে নৈতিকতার প্রশিক্ষণের বীজ প্রোথিত না-হয়ে থাকার কারণে সব মুখস্থবিদ্যা কাগুজে-বাঘ হয়ে দেখা দিচ্ছে।

৫. গবেষণা/অনুসন্ধান : বুদ্ধিমান প্রাণী বলে জন্মবধি মানুষ অনুসন্ধানী। অনুসন্ধান মানুষের জিজ্ঞাসু মনের পিপাসা মেটায়। আরও কোনো বিষয়ে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করে। বার বার মানুষ একই ঘটনা শুনতে শুনতে, দেখতে দেখতে মনের অজান্তেই কোনো একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। এ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানই গবেষণা। কোনো বিষয়ে অনুসন্ধান অধিক শিক্ষাকে ত্বরান্বিত করে। যে শিক্ষায় গবেষণা নেই, মনে মনে ভাবনা নেই-সে শিক্ষা অচল ও ভঙ্গুর। গবেষণাহীন বা অনুসন্ধানবিহীন শিক্ষা স্রোতহীন মজা-দুর্গন্ধময় জলাশয়ের শামিল। অনুসন্ধান সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে।

৬. জাগ্রত বিবেক ও মূল্যবোধ : বিবেক মানুষকে পশুধর্মী কার্যকলাপ থেকে পৃথক করেছে। শিক্ষায় মানুষের বিবেকবোধকে জাগিয়ে তুলতে হবে। অন্য কথায়, বিবেকবোধ-রহিত কোনো মানুষকে শিক্ষিত বলা যায় না। শিক্ষিত মানুষকে জাগ্রত-শাণিত বিবেকের অধিকারী হতে হবে। বিবেকহীনতা ও মনুষ্যত্বহীনতা থেকে সব অন্যায় ও অবিচারের জন্ম। মানুষের মনের অন্ধকার ও অজ্ঞতাকে দূরীভূত করে তার মধ্যে সুবিচারের ক্ষমতা ও বোধশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে, যাতে মানুষ নিজের কর্মকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই তা সম্ভব। চলার পথে মূল্যবোধ ও বিবেক অনেকটাই একে অন্যের পরিপূরক। মূল্যবোধ আমাদের ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে শেখায়। মূল্যবোধ মানসিক বিকাশের সহায়ক এবং সামাজিক অবক্ষয়-রোধক। এ দেশের শিক্ষা এবং বিভিন্ন প্রকার দেশীয় শাশ্বত মূল্যবোধ সুষ্ঠু ও বিকশিত স্বাতন্ত্র জাতি গঠনের পরিচায়ক। দেশীয় মূল্যবোধ দেশাত্মবোধের জন্ম দেয়। তাই শিক্ষিত মানুষ দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত। মূল্যবোধ জাগ্রত বিবেককে নাড়া দেয়; মিথ্যার সঙ্গে চলতে নিষেধ করে; অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করতে শেখায়।

৭. ন্যায়নিষ্ঠা : ন্যায়নিষ্ঠা শব্দটা অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ন্যায় অর্থ-নীতি, যুক্তি, যথার্থ, সত্য, সুবিচার-যা সত্যে নিয়ে যায় প্রভৃতি। নিষ্ঠা অর্থ-দৃঢ় অনুরাগ, আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভক্তি, মনোযোগ, দৃঢ়স্থিতি প্রভৃতি। ন্যায়নিষ্ঠা হলো ন্যায়পরায়ণতা, সাধুতা, পবিত্রতা, ধার্মিকতা, সততা ইত্যাদি। সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে হলে যে কয়টা গুণ অবশ্যম্ভাবী তার একটা ন্যায়নিষ্ঠা।

উল্লিখিত এ উপাদান বা গুণগুলো যত বেশি মানুষের মধ্যে শিক্ষার মাধ্যমে জাগিয়ে তোলা যায়, ততই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ। এ ভিত্তিমূলগুলো শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হলেই তাকে শিক্ষিত বলব। এভাবে শিক্ষিত মানুষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আদর্শ-জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। বিষয়গুলো পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ও উত্তরোত্তর বর্ধিষ্ণু। এখন এ ভিত্তিমানগুলো এবং আনুষঙ্গিক অন্য বিষয়গুলো নিয়ে কীভাবে সুশিক্ষিত সমাজ, জাতি ও জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব, তা নিয়ে বলব।

কেউ কেউ উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার মাধ্যমে জনগোষ্ঠীর মানসিক উন্নয়নের কথাকে নিছক কাগুজে তত্ত্ব বলে উপেক্ষা করতে চান। অথচ একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করা যায় এবং সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব হয়। প্রথমেই একটি মডেলের দিকে আমরা দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারি-

শিক্ষা এবং সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়ন মডেল

শিক্ষার ভিত্তিমূলকে ছয়টি উপকরণ প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বা মানবসম্পদে পরিণত করা যায়। শিক্ষার্থী নিজেও শিক্ষার অন্যতম উপকরণ। প্রথমেই আসে শিক্ষকের কথা। শিক্ষক ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অচল। তাই শিক্ষার জন্য আদর্শ শিক্ষকের অস্তিত্ব অনস্বীকার্য। যোগ্য-নীতিবান ব্যক্তিদের শিক্ষকতা পেশায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের পারিশ্রমিকের দিকটাও বিবেচনায় আনতে হবে। লেখাপড়া জানা সুশিক্ষিত লোক যাতে এ পেশায় আকৃষ্ট হন, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। নির্ধারিত মান, ভালো পরিবেশ, নীতিবান শিক্ষক-আশানুরূপ ফলাফল, একথা মানতে হবে।

দীর্ঘদিন অব্যবস্থাপনার মধ্যে থেকে এবং সস্তা জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটতে গিয়ে শিক্ষা-মানের এ অবনতি। শিক্ষার মান নামানো যত সহজ, বাড়ানো বেশ কঠিন। শিক্ষকরা প্রতিটি শ্রেণির জন্য ত্রিপক্ষীয় ‘শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবক’ সম্বন্ধ (ট্রাই-পর্টাইট রিলেশনশিপ) তৈরি করবেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত বসবেন। অভিভাবককে সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীর পারফরম্যান্স জানাবেন। প্রয়োজনে অভিভাবককে মোটিভেট করবেন, ছাত্রছাত্রীর উন্নয়নে এগিয়ে আসতে বলবেন। শিক্ষা প্রশাসন অভিভাবক ট্রেনিংয়ের অবশ্যই ব্যবস্থা করবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অভিভাবকমহলের প্রত্যক্ষ, আন্তরিক ও সক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় অভিভাবকদের সহযোগিতা ছাড়া শুধু শিক্ষকের একার পক্ষে ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাদান সম্ভব নয়। অভিভাবকদের বোঝাতে হবে-পারিবারিক শিক্ষা ছাত্রছাত্রীর জীবনে অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করে, যা এ দেশের যান্ত্রিক জীবনে প্রায় বিলীন হতে চলেছে। মূল কথা, এ দেশে শিক্ষার পরিবেশের বড় অভাব। সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ শিক্ষার ওপর দারুণ প্রভাব বিস্তার করে। সেজন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুখের দিকে চেয়ে হলেও অন্তত শিক্ষাঙ্গন নিয়ে রাজনীতির ব্যবসাটা বন্ধ করতে হবে। এ দেশে এমন কোনো জেলা, উপজেলা, গঞ্জ নেই যেখানে কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব নেই। পত্রিকার পাতা খুললেই প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে কিশোর গ্যাং ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। কিশোর গ্যাংয়ের দলীয় গডফাদাররা পর্দার অন্তরালে থেকে পুতুল নাচাচ্ছে। অশিক্ষা, কুশিক্ষা, নেশা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি এর প্রধান কারণ। এজন্য আইনের শাসন দরকার। ছোটবেলায় দেখেছি, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বোর্ডের মেধা তালিকায় স্থান করে নিতে। চাকরিতেও তারাই বড় বড় পদে গেছেন। স্কুলে নীতিবান শিক্ষকরা ছিলেন, শক্ত মেরুদণ্ডসম্পন্ন হেডমাস্টার ছিলেন। এখন সেখানে দলবাজদের অবাধ বিচরণ আর শিক্ষকদের টিউশনির রমরমা ব্যবসা।

প্রযুক্তিগত পরিবেশ ছাড়া বর্তমান ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্র-সভ্যতা অচল। বর্তমান কর্মের হাতিয়ার প্রযুক্তি। যে সমাজে প্রযুক্তির ব্যবহার যত বেশি, সে সমাজ তত সমৃদ্ধ। শিক্ষাঙ্গনে যেখানে যতটুকু দরকার প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে ও শেখাতে হবে।

শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পরিবেশ একটা বিষয়। এ দেশের অধিকাংশ স্কুল-মাদ্রাসায় গণহারে শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে অগণিত ছাত্রছাত্রীকে একসঙ্গে দায়সারা পাঠদান করা হয়। এভাবে চলতে চলতে হাউজ-টিউটরের কাছে পড়া বাধ্যতামূলক ও অবশ্যম্ভাবী একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে বা বলা যায় হাউজ-টিউটরের ভূমিকা স্কুলে পড়ার তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে স্কুলের পড়া স্কুলেই শিখিয়ে দিতে হবে। ছাত্রছাত্রীকে স্কুলে বেশি সময় ধরে রাখতে হবে। পড়া আদায় করে নিতে হবে। এতে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসশিক্ষায় মনোযোগী হবে এবং হাউজ-টিউটরের প্রতি নির্ভরতা ক্রমেই কমবে।

সরকার থেকে আরবি, কুরআন-হাদিসসহ কওমি মাদ্রাসায়ও সাধারণ স্কুল-কলেজের মতো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইত্যাদি কোর্সের পাঠদান বাধ্যতামূলকভাবে করতে হবে। সরকার ইচ্ছা করলেই এগুলো পারে। এতে মাদ্রাসা শিক্ষার মান নিয়ে জনমনে যে অবমূল্যায়নের মানসিকতার জন্ম নিয়েছে, তা দূরীভূত হবে।

লেখক : প্রফেসর ড. হাসনান আহমেদ, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়