সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২২, ০০:০০

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : প্রথম দিনের আখ্যান
অনলাইন ডেস্ক

(গত সংখ্যার পর)

গাবতলী গিয়ে আমি আরিচাগামী একটি বিআরটিসি গাড়িতে বাঁ-দিকের জানালা-পাশে বসে পড়ি। অন্যান্য গাড়ির মতো এই গাড়িটি লক্করঝক্কর মার্কা নয়। বড়ো গাড়ি। পরিপাটি। সিটগুলো ফাঁকা ফাঁকা। আরামদায়ক। কন্ট্রাকটর জিজ্ঞাসা করলেন, কই যাইবেন। বললাম, জাহাঙ্গীরনগর, প্রান্তিক। তিনি আর কিছু বললেন না। এখন আর ঠিক মনে নেই কত টাকা ভাড়া দিয়েছিলাম।

কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর কোথায়? গাড়ি যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। ভেতরে ভেতরে আশঙ্কা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রেখে চলে যাচ্ছি না তো। এমন একটি বিপদের চিন্তা মাথায় বহন করে করে যখন বিরক্ত হয়ে উঠছিলাম তখনই কন্ট্রাকটরের হুঙ্কার : জাহাঙ্গীরনগর, গেটে আইয়েন। প্রান্তিকে আমরা পাঁচণ্ডছয়জন নামলাম। অথচ এদের কাউকেই আমি গাড়িতে দেখিনি। কোথায় বসেছিল এরা!

গাড়ি থেকে নেমে দেখি কলাপসিবল গেটের বাইরে হাতের ডান দিকে বেশ কিছু দোকানপাট। ডানদিকেও একটি দোকান। বেশ কয়েকজন ছেলে-মেয়ে চেয়ারে বসে, ইটের স্তূপে বসে, গাছের গোড়ায় বসে চা খাচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে। আমি অপ্রস্তুত। নবাগতে সংকোচ নিয়ে আমিও এক গ্লাস পানি আর চা চেয়ে নিলাম। চা খেতে খেতে পরিবেশটা বুঝে নিতে চেষ্টা করলাম এবং এর মধ্যেই কলা ভবনের অবস্থান জেনে নিলাম।

কলাপসিবল গেট অতিক্রম করে আমি বিস্মিত। রাস্তাগুলো সিরামিক ইটের তৈরি। ওই ইটের উপর কোনো আস্তরণ নেই। ইটের ফাঁকফোকর গলিয়ে সবুঝ ঘাসের সমারোহ। প্রাণ আর অপ্রাণের এমন সহাবস্থানে আমি মুগ্ধ হই। রাস্তার দুপাশে বৃক্ষরাজি। আকাশ সমান উঁচু বৃক্ষরাজির শাখা-প্রশাখা ও পত্র-পল্লব অতিক্রম করে সূর্যের যেটুকু আলো রাস্তায় এসে পড়ে সেই আলোটুকু আলো-আঁধারের মূর্ত-বিমূর্ত কত ছবি যে রাস্তার উপর এঁকে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। সেই সব চিত্রকর্ম আবার চলিষ্ণু। গাছের ডালে বাতাসের প্রবাহ আর ধাক্কায় যে ঢেউ তৈরি হয় তার সঙ্গে একই তালে গতি পায় রাস্তার ওই আলোর ছবিগুলো, ছবির আলোগুলো। যে ঢেউ বয়ে যায় বৃক্ষরাজির উপর দিয়ে, রাস্তায়ও যেন বয়ে যায় সেই আলোর ঢেউ, ঢেউয়ের আলো। আলোর ওই ছবিগুলো যখন নড়ে তখন রাস্তাটাও যেন নড়ে, গতি পায়। ওই আলোতে মিশে গেছে সিরামিক ইটের মেরুণ রঙের প্রবাহ। সবুজ আর মেরুণ আর ঝরা পাতার ধূসর রং মিলে-মিশে কি যে এক উচ্ছল রঙের ফোয়ারা প্রতিটি ইটের চারদিকে, রাস্তার বাতাসে বাতাসে, রাস্তার দুপাশের বৃক্ষরাজি ও আবাসিক ভবনগুলোতে ছড়িয়ে থাকছে তা থেকে কিছুতেই চোখ আর মন ফিরাতে পারছিলাম না। যে দিকে তাকাই সে দিকেই চলছে প্রকৃতির রঙের খেলা। চারদিকে চেয়ে দেখি, বৃক্ষরাজির আড়ালে-আবডালে যেসব ভবন দেখা যায়, তাও ওই সিরামিক ইটের তৈরি এবং তার মাঝে কত যে সবুজ ভূমি, কত যে ফুল-ফলের বাগান, কত যে উঁচু গাছ-গাছালি তার কোনো শেষ নেই। এই বিপুলতার মেধ্য, ঐশ্বর্য আর সমৃদ্ধির মধ্যে অতি ক্ষীণ, হতদরিদ্র আমি কত যে সংশয় আর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে হাঁটছিলাম তা আর কি বলব। সবাই হাঁটছিল। কারণ ভেতরে কোনো রিকসা ছিল না, অটো ছিল না, টেম্পু ছিল না। পরে দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলো এবং শিক্ষক ও অতিথিদের ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া কোনো সাধারণ পরিবহন চলে না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ক্যাম্পাসে। আল-বেরুনী হল থেকে মীর মশাররফ হোসেন হলে যেতে কেউ যদি বিশ্বদ্যিালয়ে বাস মিস করত তা হলে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। তবে ওই বিকল্প নিয়ে কেউ কখনো ভেবেছে বলেও মনে হয় না। কারণ, এ ছিল পায়ে হেঁটে চলার এমন এক আনন্দিত সংস্কৃতি, যেখানে বিকল্প ভাবনার প্রয়োজন হতো না। যে কেউ নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলতে বলতে চলে যেতে পারত হলে। শুধু নিজের সঙ্গে নিজে নয়- সঙ্গে থাকত ঘাস, ফুল, উঁচু গাছ, পাখি, জলাশয়, আলো-ছায়া এবং অফুরন্ত নির্জনতা।

কলা ভবনের দিকে কিছু দূর এগোতেই আমার বিস্ময়ের সীমা রইল না। রাস্তার উত্তরে আর দক্ষিণে বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে জলাশয়। আকাশ আর বৃক্ষাদির প্রতিবিম্ব পড়েছে সেই জলাশয়ে। জলের নিচে আরেক পৃথিবী। জলাশয়ে ফুটে আছে পদ্মফুল- শ্বেতপদ্ম, লালপদ্ম, নীলপদ্ম। জলের উপর গভীর মমতায় শুয়ে আছে পদ্মপাতা। মৃদু বাতাসে জলে ঢেউ উঠেছে। সেই ঢেউয়ে পদ্মপাতাগুলো দুলছে। দুলছে পানির নিচের আকাশ, বৃক্ষরাজি, প্রতিবিম্বিত পৃথিবী। শাপলা-শালুক এবং আরও কত বিচিত্র জলজ উদ্ভিদ যে আপন আপন স্বভাব, সৌন্দর্য আর নির্জনতা নিয়ে জলাশয়ে বিস্তৃত হয়ে আছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তীরে বাঁশের একটি কঞ্চির উপর বসে আছে মাছরাঙা। গোলাপী বুকের নিচে ধূসর বাঁশের কঞ্চিটি মিশে গেছে। মাঝে মধ্যে সাদা ছোপ এবং নীল আর বেগুনীর মিশ্রণে তার পালক সাদা মেঘ কিংবা নীল আকাশ কিংবা পত্রপল্লবের গাঢ় সবুজের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। সে আছে তন্ময় হয়ে। জলের ভেতরে কোনো মৎস বা মৎস সাবকের অপেক্ষায়। এ ছাড়াও কোথাও হাঁস, পানকৌড়ি, গয়ার, বাটান, পিপি, টিটি, বক, ডাহুক এবং আরও কত যে জলজ পাখি এই জলাশয়গুলোকে ঘিরে রাজত্ব বিস্তার করে আছে তাদের কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। আর আছে প্রজাপতির জগৎ। শত-সহস্র রঙের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে ঘাসের ডগায় ডগায়, গাছের পাতায় পাতায়। হাতের বাঁ দিকে আল বেরুনী হল রেখে আমি সোজা চলে গেলাম কলা ভবনে। সেই সময় কোনো কিছুই ভালো করে দেখার ফুরসৎ ছিল না। দরখাস্ত করতে হবে বিভিন্ন বিষয়ে। কোনো রকমে এইচএসসি পাস করা আমি অধিকাংশ সাবজেক্টে দরখাস্ত করার সুযোগ পাব না। তারপরও খুব ভালো করে দেখতে হবে, কোন কোন সাবজেক্টে দরখাস্ত করা যায়। ইতিহাস ডিপার্টেমেন্টটা তখন কলা ভবনের দোতলায়ই ছিল। ওখানে দরখাস্ত করলাম। তারপর যাব জিওগ্রাফি ডিপার্টমেন্টে। ইংরেজি বিভাগে দরখাস্ত করার যোগ্যতা নেই। প্রিয় বিষয় অর্থনীতিতেও না। বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। কিন্তু বিজ্ঞানের কোনো বিষয়েই দরখাস্ত করতে পারবো না। বাংলায় পড়ে কে? বাংলা আবার পড়ার কী আছে? বাংলা পড়তে তো জানিই। সুতরাং বাংলায় দরখাস্ত করলাম না। ভূগোল বিভাগে গেলাম পায়ে হেঁটে। হাঁটা যে এত মধুর হতে পারে তা জানা ছিল না। দুই দিকে জলাশয় আর বিস্তৃত বনভূমি ছাড়া আর কিছু নেই। সিরামিক ইটের তৈরি রাস্তাগুলো সবুজ বনভূমির ভেতর দিয়ে শিল্পীর আঁকা মেরুণ রঙের আল পথের মতো কোথায় চলে গেছে! বাতাসে জলের গন্ধ, পাতার গন্ধ, ঘাসের গন্ধ, ফুলের গন্ধ, মাটির গন্ধ, রোদের গন্ধ। এমন ভালো লাগার অনুভূতি ওই প্রথম। কলা ভবন থেকে ভূগোল বিভাগ খুব কাছে নয় আবার অনেক দূরেও নয়। ডান দিকে মানে পশ্চিম দিকে নির্মাণাধিন লাইব্রেরি আর পদার্থ-রসান বিভাগ রেখে আমি চলে গেলাম বাঁদিকে, সামান্য পুবে। ভূগোল বিভাগের স্থাপত্য সৌকর্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। একদম একা একটি প্রতিষ্ঠান। ভেতরে অল্প কয়জন শিক্ষক এবং অনুপাতে তারচেয়ে অল্প শিক্ষার্থী। আমার বড়ো বোনের দেবর শাহজাহান ভাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভূগোল বিভাগেরই ছাত্র- সে কথা আমি বেমালুম ভুলে গেছি। সুতারং কারো খোঁজখবর না-নিয়ে একটি দরখাস্ত জমা দিয়ে আমি আরও একটু পুবদিকে এগিয়ে যাই। জানলাম, এটি ক্যাপেটেরিয় এবং এর থেকে সামান্য দক্ষিণে মুক্তমঞ্চ। মুক্তমঞ্চের উপরে বিস্তৃত খেলার মাঠ। আমার বিস্ময়ের আর সীমা রইল না। এই ক্যাপেটেরিয়া, এই মুক্তমঞ্চ, এই খেলার মাঠ- প্রতিটি ভূমিরূপ, প্রতিটি স্থাপনা, স্থাপনাগুলোকে ঘিরে প্রকৃতির অফুরন্ত দাক্ষিণ্য দেখে দেখে আমি সমৃদ্ধ হয়ে উঠছিলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালকে আমার মনে হলো একটি রহস্যময় কবিতা।

মুক্তমঞ্চটা আমার কাছে একেবারেই অন্য রকম মনে হলো। এ ধরনের নাটমঞ্চের ধারণা কোথা থেকে এসেছে সে সম্পর্কে পরে জানতে পেরেছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যান্ডস্কেপ এমন যে, কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। ছোট টিলার মতো আছে কোথাও। বিস্তৃত খেলার মাঠটি বেশ উঁচু। ক্যাপেটেরিয়া ও ভূগোল বিভাগ অনেকটাই নিচুতে। ভূমির এই গড়নটিকে মুক্তমঞ্চ তৈরিতে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রাচীন কালে গ্রিক দেশে পাহাড়ের পাদদেশকে মঞ্চ এবং পাহাড় কেটে সিঁড়ির মতো বানিয়ে দর্শকদের বসার ব্যবস্থা করা হতো। তখন এইসব তত্ত্ব জানার আগ্রহ ছিল না। প্রয়োজনও ছিল না। শুধু এই ভেবে বিস্মিত হয়েছি যে, শিশুদের কৌতূহল থেকে নির্মিত খেলনার মতো এই যে মঞ্চটি বনানো হয়েছে তার সবটুকু ঘিরে আছে প্রকৃতির মতো স্বতঃস্ফূর্ত জীবনাখ্যানের নিত্য মঞ্চায়ন অভিপ্রায়। কোনো সাজ নেই, সজ্জা নেই, আরম্ভর নেই- এক কথায় বলা যায় মঞ্চের একটি অংশ ঘিরে একটি দেয়াল ছাড়া আর কিছু নেই। দর্শক সারিতে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম আমি। আর ভাবছিলাম, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য হয়তো হবে না, এতটা বাজে রেজাল্ট করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়া যায় না। কিন্তু যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হলো তার মূল্য তো কম নয়। যে পথে এখানে এসেছিলাম সে পথ ধরেই আবার প্রান্তিকের দিকে (পরে জেনেছি, এই গেটটির নাম জয় বাংলা গেট) হাঁটতে শুরু করলাম।

ভূগোল বিভাগে যাওয়ার পথে কেন আমার চোখেই পড়েনি জানি না, এখন ফেরার পথে বাঁদিকের লেকের একদম পশ্চিম পাড়ের কচুরিপানা, ক্ষুদেপানা, শাপলা-শালুক আর অসংখ্য জলজ উদ্ভিদগুলোর সঙ্গে ভাসছে অসংখ্য অতিথি পাখি। তাদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠছে জলজ জীবন। বলাকার মতো সারি বেঁধে আকাশে উড়ে যাচ্ছ এক সঙ্গে। এবং ডানায় রোদ মেখে, গায়ে উষ্ণতা নিয়ে আবার ফিরে আসছে লেকের জলে। এই জল, এই বৃক্ষরাজি, এই অতিথি পাখি এবং এই তাদের কোলাহল ঘিরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অপার্থিব যে পরিবেশ বিরাজমান ছিল তা উপভোগের জন্য খুব বেশি মানুষ দেখিনি তখন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আবাসিক শিক্ষকদের পরিবারের লোকজন, কর্মচারি-কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের লোকজন এবং এখন এই ভর্তির সময়ে বহিরাগত কিছু শিক্ষার্থী ও তাদের সজন যারা বিশ্বদ্যিালয়ে এসেছেন তারা এই বিপুল ক্যানভাসের কোথায় যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নাই হয়ে আছেন তাদের দেখা পাওয়া যায় ক্বচিৎ। বিস্তীর্ণ ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো এই মানুষগুলোকে আমার এলিয়েন বলে মনে হয়। যেন এই গ্রহের লোক নয় তারা- একটি ভুল গ্রহে চলে এসেছে। তারা পথ ভুলে গেছে, হারিয়ে গেছে নিজের কাছ থেকে নিজেও। এই নতুন গ্রহে তাদের কোনো কাজ নেই। সুতরাং তারা নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলে। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলা মানুষগুলো মুসকিলের। অন্যের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তারা হোঁচট খায়, খেই হারিয়ে ফেলে। জিগগ্যেস করলাম একজনকে, ভাই ঢাকা যাবেন? বলল সে, কী বলছেন? আমাকে বলছেন? আমি বললম, না, কিছু বলিনি, ঠিক আছে, ভালো থাকেন। আমি আবার প্রান্তিকের পথে হাঁটতে শুরু করলাম।

প্রান্তিকে গিয়ে বিস্কুট, কলা, চা, সিগারেট খেয়ে আমি যখন ঢাকার গাড়িতে উঠতে যাবো তখন দেখি খালেদ গাড়ি থেকে নামছে। খালেদ হোসাইন। সরকারি তোলারাম কলেজে পড়ার সময় হাতে গোণা যে কয়জন বন্ধু আমার ছিল, তাদের অন্যতম। ও আমাকে আর গাড়িতে উঠতে দিল না। হাত প্যাঁচিয়ে ধরল। কিছুতে ছুটতে পারা যায় না এমনভাবে হাত প্যাঁচিয়ে ধরত খালেদ এবং পরে দেখেছি কফিলকে। সুতরাং তখনই আমার ঢাকায় ফেরা হলো না। ওকে সঙ্গ দিতে হবে। বাংলা ছাড়া আর কোনো বিষয়ে ও দরখাস্ত করবে না। সুতরাং আমরা সোজা চলে আসলাম কলা ভবনে, বাংলা বিভাগে। আমাকে বলল, তুইও বাংলায় কর। আমি বললা, দূর, বাংলা একটা পড়ার বিষয় হলো! তুই ছড়া-কবিতা লেখস, তুই পড়। আমার দরখাস্ত করার ইচ্ছা নেই, টাকাও নেই। বাদ দে। কিন্তু খালেদ নাছোড় বান্দা। নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে সে আমার নামে একটি দরখাস্ত জমা দিয়ে দিল। এবং তারপর আমাকে বাংলায়ই পড়তে হয়েছে। কিন্তু সে অন্য এক অধ্যায়। (সমাপ্ত)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়